চীনের মূল ভূখণ্ড (চীনা মূল ভূখণ্ড নামেও পরিচিত) হলো গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের (পিআরসি) সরাসরি এখতিয়ারভূক্ত ভৌগোলিক এবং ভূ-রাজনৈতিক অঞ্চল। হাইনান প্রদেশও এর অন্তর্ভুক্ত তবে চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকং এবং মাকাও আংশিকভাবে মূল ভূখণ্ডে পড়লেও এ দুটি চীনের মূল ভূখণ্ডের আওতাধীন নয়।

চীনের মূল ভূখণ্ড
মানচিত্রে কমলা রঙে চিহ্নিত অঞ্চলসমূহকে সাধারণভাবে মূল ভূখণ্ড হিসেবে অবহিত করা হয়।
সরলীকৃত চীনা 中国大陆
ঐতিহ্যবাহী চীনা 中國大陸
আক্ষরিক অর্থমহাদেশীয় চীন
বিকল্প চীনা নাম
সরলীকৃত চীনা 中国
ঐতিহ্যবাহী চীনা 中國
আক্ষরিক অর্থঅন্তর্দেশীয় চীন

"ভূখণ্ড" বুঝাতে চীনে দুটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়:

  • Dàlù (大陆; 大陸), যার অর্থ "মহাদেশ" এবং
  • Nèidì (内地; 內地), literally "দেশের অভ্যন্তর" বা "অন্তর্দেশ"।

চীনে এ পরিভাষা দুটি সতন্ত্রভাবে ব্যবহৃত হয়। সরকারিভাবে চীনে তাইওয়ানকে তাদের ‘মূল ভূখণ্ডের অংশ’ মনে করা হয় যদিও তাইওয়ান ‘তা মনে করে না’। তবে হংকং এবং মাকাওকে চীনা সরকার ‘কেন্দ্রীয় প্রজাতন্ত্রের’ সরকার হিসেবে উল্লেখ করে। এ দুটির ক্ষেত্রে অন্তর্দেশ পরিভাষাটি ব্যবহার করা হয়। ‘চীন প্রজাতন্ত্রের মুক্ত অঞ্চল’-এর বিপরীত পরিভাষা হিসেবে চীনা সংবিধানে ‘মূল ভূখণ্ড’ ব্যবহৃত হয়।[]

পটভূমি

সম্পাদনা

১৯৩০-এর দশকে জাপন এই অঞ্চলে অভিযান চালায়।[] চীনা গৃহযুদ্ধের সময় ১৯৪৯ সালের মধ্যে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সামরিক শাখা পিপল’স লিবারেশন আর্মি চীনের অধিকাংশ অঞ্চল তৎকালীন কুমিনটেঙ শাসনের অধীন থেকে মুক্ত করে। ফলশ্রুতিতে কুমিনটেঙ সরকার চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে সড়ে গিয়ে তুলনামুলক নিরাপদ স্থান তাইওয়ানে সরকার স্থানান্তর করে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান আত্মসমর্পণ করলে তাইওয়ান চীনা কর্তৃপক্ষের অধীনে আসে। ১৯৪৯ সালের ১ অক্টোবর গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা হয় এবং চীনের সব অঞ্চলে কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত।[] পরবর্তী সময়ে চীনের মূল ভূখণ্ড এবং তাইওয়ানের মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হতে শুরু করে। উভয় পক্ষই নিজেদের মূল কর্তৃপক্ষ হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে।

চীনা মূল ভূখণ্ড পরিভাষাটি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এবং চীন সরকার কর্তৃক সরাসরি নিয়ন্ত্রণকৃত এলাকা বুঝাতে ব্যবহার হওয়া শুরু হয়। ১৯৭০-এর দশকের পূর্ব পর্যন্ত তাইওয়ান এবং চীন ভূখণ্ড একে অপরের প্রতি সামরিক হুমকি দেওয়া অব্যহত রাখে। পরবর্তীতে তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ চীন কর্তৃপক্ষকে ‘কমিউনিস্ট ডাকাত’ (共匪) অপরপক্ষে চীন তাইওয়ান কর্তৃপক্ষকে ‘চিয়াং ডাকাত’ নাম অবহিত করা শুরু করে। ১৯৯০-এর দশকে তাইওয়ানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়া শুরু হলে মূল ভূখণ্ড পরিভাষাটি জনপ্রিয়তা লাভ করতে শুরু করে।

যেহেতু ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় হংকং ও মাকাও বিদেশি কলোনি ছিলো তাই পরিভাষটি এ দুটির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় না। ১৯৯৭ সালে হংকং এবং ১৯৯৯ সালে মাকাও চীনের অধীনে আসার পরও তারা নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক, আইনি এং একটি আলাদা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এ দুটির জন্য চীনা সরকার ‘এক রাষ্ট্র, দুই ব্যবস্থা’ নীতি গ্রহণ করেছে।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Additional Articles to the Republic of China Constitution, 6th Revision, 2000
  2. "...imperial Japan launched its invasion of the Chinese mainland in the 1930s" The Two Koreas and the Great Powers, Cambridge University Press, 2006, page 43.
  3. Jeshurun, Chandran, সম্পাদক (১৯৯৩)। China, India, Japan and the Security of Southeast Asia। Singapore: ISEAS। পৃষ্ঠা 146আইএসবিএন 9813016612 
  4. LegCo. "Legislative council HK." Mainland Judgments (Reciprocal Enforcement) Bill. Retrieved on 2008-03-10.