চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিবাকরূণী
চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিবাকরূণী (জন্ম: ২৯ জুলাই, ১৯৫৬[২]) একজন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখিকা, কবি, এবং ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল রচনা প্রকল্পের (Creative Writing Program) বেটি অ্যান্ড জিন ম্যাকডেভিড প্রফেসর অফ রাইটিং (রচনা অধ্যাপক)।
চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় দিবাকরূণী | |
---|---|
জন্ম | চিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় জুলাই ২৯, 1956[১] কলকাতা, ভারত |
পেশা | ঔপন্যাসিক, অধ্যাপিকা, কবি, প্রবন্ধকার, ছোট গল্প লেখক, কল্পকাহিনী লেখক, তথ্যভিত্তিক লেখক, শিশুদের কল্পকাহিনী লেখক, তরুণদের কল্পকাহিনী লেখক, বই সমালোচক, কলমলেখক |
জাতীয়তা | ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান |
ধরন | কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাস; অলীক কল্পনা, ঐন্দ্রজালিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী |
ওয়েবসাইট | |
http://www.chitradivakaruni.com/ |
১৯৯৫ সালে তার লেখা ছোট গল্প অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ (Arranged Marriage) আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড (American Book Award) পুরস্কার লাভ করে। তার দু’টি উপন্যাস দ্য মিস্ট্রেস অফ স্পাইসেস (The Mistress of Spices) ও সিস্টার অফ মাই হার্ট (Sister of My Heart) এবং একটি ছোট গল্প দ্য ওয়ার্ড লাভ (The Word Love)-এর উপর চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে সিস্টার অফ মাই হার্ট, ওলিয়্যান্ডার গার্ল (Oleander Girl), প্যালেস অফ ইলুশান্স (Palace of Illusions) এবং ওয়ান এমেইজিং থিং (One Amazing Thing) চলচ্চিত্রে অথবা টিভি ধারাবাহিক নাটকে রূপান্তরের অপেক্ষায় আছে।
চিত্রার বেশিরভাগ কর্মই ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভিত্তি করে লেখা, যা সাধারণত দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের অভিজ্ঞতার উপর কেন্দ্রীভূত। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু সবার জন্যই লেখেন এবং তিনি বিভিন্ন বিষয়ের উপর, যেমন বাস্তবানুগ কল্পকথা, ঐতিহাসিক কল্পকথা, ঐন্দ্রজালিক বাস্তবতা, পুরাকথা এবং অলীক কল্পনা, ইত্যাদির উপর লিখে থাকেন।
পটভূমি
সম্পাদনাচিত্রার জন্ম ভারতের কলকাতা শহরে। তিনি ১৯৭৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। একই বছর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান, যেখানে তিনি রাইট স্টেট ইউনিভার্সিটি (Wright State University) থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলি থেকে ইংরেজিতে ডক্টরেট লাভ করেন। তাঁর ডক্টরেট তত্ত্বালোচনা ছিল ক্রিস্টোফার মারলো (Christopher Marlowe)।
পেশা
সম্পাদনাস্নাতকোত্তর শিক্ষার সময় চিত্রা এটা ওটা কাজ করেন যেমন, বেবিসিটার, দোকান কর্মচারী, বেকারিতে রুটি কাটা, রাইট স্টেট ইউনিভার্সিটিতে গবেষণাগার সহযোগী, এবং বার্কলির ইন্টারন্যাশনাল হাউযে ভোজন কক্ষ পরিচারিকা হিসেবে। তিনি ইউ সি বার্কলিতে গ্র্যাজুয়েট টিচিং এসিস্ট্যান্ট ছিলেন। তিনি ক্যালিফর্নিয়ার ফুটহিল কলেজ ও দিয়াবলো ভ্যালী কলেজে শিক্ষিকার দায়িত্ব পালনে ছিলেন। চিত্রা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে বাস করেন, যেখানে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টন ক্রিয়াটিভ রাইটিং প্রোগ্রামের (University of Houston Creative Writing Program) ম্যাকডেভিড প্রফেসর।
চিত্রা “মৈত্রি” নামে একটি হেল্পলাইনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক সভাপতি। “মৈত্রি” ১৯৯১ সালে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার দক্ষিণ এশীয় নারীদের সাহায্যের লক্ষ্যে গঠিত হয়। তিনি বর্তমানে এই সংগঠনটির পরামর্শদাতা এবং আরেকটি একই রকমের সংগঠন হিউস্টনের “দয়া” তে পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাহিত্যকর্ম
সম্পাদনাকল্পকাহিনী ও কবিতা
সম্পাদনাচিত্রার সাহিত্য কর্ম নিউ ইয়র্কার ও দ্য এটলান্টিক মান্থলিসহ ৫০টিরও বেশি সাময়িকীতে ছাপা হয়েছে। তার লেখা বেস্ট আমেরিকান শর্ট স্টোরিজ, ও’হেনরি প্রাইজ স্টোরিজ এবং পুশকার্ট প্রাইজ এন্থলজিসহ ৫০টিরও বেশি সাহিত্য সঙ্কলনে স্থান পেয়েছে। তার কল্পকাহিনী ২৯টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে, যেমন বাংলা, ডাচ, হিব্রু, ইন্দোনেশিয়ান, তুর্কি এবং জাপানী।
চিত্রা তার লেখার জীবন শুরু করেন কবিতার মাধ্যমে। তার সর্বশেষ দু’টি কবিতার সঙ্কলন হচ্ছে “ব্ল্যাক ক্যান্ডল” (Black Candle) এবং “লিভিং ইউবা সিটি” (Leaving Yuba City)। কবিতার জন্য তিনি গারবোড এওয়ার্ড (Gerbode Award), বারব্রা ডেমিং মেমোরিয়াল এওয়ার্ড (Barbara Deming Memorial Award) এবং এলেন গিন্সবার্গ এওয়ার্ড (Allen Ginsberg Award) লাভ করেন।
চিত্রা সর্বপ্রথম বই পড়ুয়াদের দৃষ্টিগোচর হন তার গল্প সঙ্কলন এরেঞ্জড ম্যারেজ এর মাধ্যমে, যা আমেরিকান বুক এওয়ার্ড (American Book Award), পেন জোসেফিন মাইলস পুরস্কার (PEN Josephine Miles Award) এবং বে এরিয়া বুক রিভিউয়ার্স এওয়ার্ড (Bay Area Book Reviewers Award) এ পুরস্কৃত হয়। তার গুরুত্বপূর্ণ উপন্যাসগুলি হচ্ছে “দ্য মিস্ট্রেস অফ স্পাইস”, “সিস্টার অফ মাই হার্ট”, “কুইন অফ ড্রিমস”, “ওয়ান এমেইজিং থিং”, “প্যালেস অফ ইলুশান্স”, “ওলিয়ান্ডার গার্ল”, এবং “বিফোর উই ভিসিট দ্য গডেস”। তার তরুণদের জন্য লেখা ধারাবাহিক অলীক কল্পনা “দ্য ব্রাদারহুড অফ দ্য কঙ্খ” (The Brotherhood of the Conch) এর পটভূমি পুরোটাই ভারতের উপর এবং সেখানে রূপ পায় ভারতের সংস্কৃতি ও লোককাহিনী। এই ধারাবাহিকের প্রথম বই দ্য কঙ্খ বেয়ারার (The Conch Bearer) ২০০৩ সালে ব্লুবনেট এওয়ার্ডের জন্য মনোনিত হয়। ধারাবাহিকের দ্বিতীয় বই দ্য মিরর অফ ফায়ার এন্ড ড্রিমিং ২০০৫ সালে প্রকাশ পায় এবং ধারাবাহিকের তৃতীয় ও শেষ বই শ্যাডোল্যান্ড প্রকাশিত হয় ২০০৯ সালে।
চিত্রার উপন্যাস দ্য প্যালেস অফ ইলুশন্স (The Palace of Illusions) এক বছরেরও বেশি সময় ভারতের ন্যাশনাল বেস্ট সেলার ছিল।[৩] বইটির কাহিনী হচ্ছে দ্রৌপদীর দৃষ্টিতে মহাভারত পুনর্পাঠ।[৪]
ছায়াছবি, টেলিভিশন, মঞ্চ এবং অপেরা
সম্পাদনাদ্য মিস্ট্রেস অফ স্পাইসেস ছায়াছবি আকারে মুক্তি পায় ২০০৫ সালে। এটার পরিচালক ছিলেন পল মায়েদা বারজেস (Paul Mayeda Berges), এবং পান্ডুলিপি লেখেন বারজেস এবং তার স্ত্রী গুরিন্দার চাধা। ছবির তারকা ছিলেন ঐশ্বর্যা রাই এবুং ডিলেন ম্যাকডার্মট (Dylan McDermott)।
এছাড়া তার উপন্যাস সিস্টার অফ মাই হার্ট তামিল ভাষায় টেলিভিশন ধারাবাহিক হিসেবে রূপ পায়।
তার এরেঞ্জড ম্যারেজের অন্তর্গত ক্লোদস (Clothes) মঞ্চ নাটকের রূপ পায় এবং এটায় অংশ নেয় স্যাক্রামেন্টো থিয়েটার কোম্পানী ২০১০ সালে।
২০১৩ সালে তিনি হিউস্টনে একজন ভারতীয় নারীর জীবনের উপর ভিত্তি করে রিভার অফ লাইট নামে একটি চেম্বার অপেরা লিখেন। এটি ২০১৪ সালে হিউস্টন গ্র্যান্ড অপেরা প্রদর্শন করে ও প্রচুর প্রশংসা লাভ করে।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাচিত্রা তার স্বামী মুর্থির সাথে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনে বসবাস করেন। তার ২ ছেলে আনন্দ এবং অভয় এর নাম তিনি শিশুদের জন্য লেখা গ্রন্থগুলিতে ব্যবহার করেন।
সাহিত্যকর্ম সমূহ
সম্পাদনাকল্পকাহিনী
সম্পাদনা- এরেঞ্জড ম্যারেজ স্টোরিজ (১৯৯৫)
- দ্য মিস্ট্রেস অফ স্পাইসেস (১৯৯৭)
- সিস্টার অফ মাই হার্ট (১৯৯৯)
- দ্য আননোউন এরর্স অফ আওয়ার লাইভস (২০০১)
- দ্য ভাইন অফ ডিযায়ার (২০০২)
- কুইন অফ ড্রীমস (২০০৪)
- দ্য লাইভস অফ স্ট্রেঞ্জার্স (২০০৫)
- দ্য প্যালেস অফ ইলুশন্সঃ এ নভেল (২০০৮)
- ওয়ান এমেইযিং থিং (২০১০)
- ওলিয়েন্ডার গার্ল (২০১৩)
- বিফোর উই ভিযিট দ্য গডেস (২০১৬)
শিশু ও তরুণদের জন্য
সম্পাদনা- নীলাঃ ভিক্টোরি সং (২০০২)
- গ্র্যান্ডমা এন্ড দ্য গ্রেট গোর্ড (২০১৩)
ব্রাদারহুড অফ দ্য কঙ্খ ধারাবাহিক
সম্পাদনা- দ্য কঙ্খ বেয়ারার (২০০৩)
- দ্য মিরর অফ ফায়ার এন্ড ড্রিমিং (২০০৫)
- শ্যাডোল্যান্ড (২০০৫)
কবিতা
সম্পাদনা- দ্য রিজন ফর ন্যাস্টারশামস (১৯৯০)
- ব্ল্যাক ক্যান্ডল (১৯৯১)
- লিভিং ইউবা সিটি (১৯৯৭)
- ইন্ডিয়ান মুভি, নিউ জার্সি
- টাইগার মাস্ক রিচুয়াল
সঙ্কলন
সম্পাদনা- মাল্টিচুড, ক্রস কালচারাল রিডিংস ফর রাইটার্স (১৯৯৩)
- উই টু সিং আমেরিকা (১৯৯৭)
- ক্যালিফোর্নিয়া আন কভার্ডঃস্টোরিজ ফর দ্য ২১স্ট সেঞ্চুরী (২০০৪)
পুরস্কারসমূহ
সম্পাদনা- ১৯৯৫: দ্য আমেরিকান বুক এওয়ার্ড, এরেঞ্জড ম্যারাজ এর জন্যঃ গল্প
- ১৯৯৫: পেন ওকল্যাণ্ড/জোসেফিন মাইলস লিটারারি এওয়ার্ড, এরেঞ্জড ম্যারেজ এর জন্যজঃ গল্প
- ১৯৯৫: বে এরিয়া বুক রিভিউয়ার্স ফর ফিকশা, এরেঞ্জড ম্যারে এর জন্যঃ গল্প
- ১৯৯৭: দ্য এলেন গিন্সবার্গ পোয়েট্রি প্রাইজ এবং পুশকার্ট প্রাইজ, লিভিং সিটে'র কবিতার জন্য
- ১৯৯৭: নির্বাচিত মিস্ট্রেস অফ স্পাইসেস, অরেঞ্জ প্রাইজের জন্য
- ১৯৯৭: লস এঞ্জেলেস টাইমস বেস্ট বুক্স অফ ১৯৯৭, মিস্ট্রেস অফ স্পাইসএর জন্য
- ১৯৯৮: সিয়াটল টাইমস পেপারব্যাক্স অফ ১৯৯৮, মিস্ট্রেস অফ স্পাইস এর জন্য
- ১৯৯৯: "মিসেস দত্ত রাইটস এ লেটার" Best American Short Stories এর অন্তুর্ভুক্ত
- ২০০৩: "দ্য লাইভস অফ স্ট্রেঞ্জার্সঃ O'Henry Prize Stories এ অন্তুর্ভুক্ত
- ২০০৩: পুশকার্ট প্রাইজ, লাইভস অফ স্ট্রেঞ্জার্স এর জন্য
- ২০০৭: ডিস্টিঙ্গুইষড রাইটার এওার্ড - সাউথ এশিয়ান লিটারারি এসোসিয়াশন
- ২০০৮: ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া এট ইন্টার্ন্যাশনাল হাউজ বার্কলি এলাম্না অফ দ্য ইয়ার এওয়ার্ড
- ২০০৯: কালচারাল জুয়েল এওয়ার্ড - ভারতীয় সংস্কৃতিক সংস্থা, হিউস্টন
- ২০১১: লাইট অফ ইন্ডিয়া জুরি এওয়ার্ড, সাংবাদিকরা ও সাহিত্যের জন্য
- ২০১৫: প্রেমিও স্কান্নো এওয়ার্ড ফর লিটারেচার, ইতালি
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ http://www.encyclopedia.com/article-1G2-3416300043/divakaruni-chitra-banerjee-1956.html
- ↑ Davis, Rocio G (২০০৩)। Chitra Banerjee Divakaruni (1956– )। Asian American Short Story Writers: An A-to-Z Guide. Westport, CT: Greenwood Press। পৃষ্ঠা 65। আইএসবিএন 0-313-32229-5।
- ↑ "Archived copy. Archived from the original"। Archived from the original on ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১।
- ↑ Bhattacharyya, Madhumita। "Dreams and dislocation"। The Telegraph. Calcutta, India। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০০৫।