চার দরবেশের গল্প (ফার্সি: قصۀ چهار درویش কিস্সা-ই চাহার দরবেশ, আক্ষ.'চার দরবেশের গল্প'), উর্দুতে যার শিরোনাম বাগ-ও বাহার (উর্দু: باغ و بہار‎‎, আক্ষ.'বাগান ও বসন্ত') সেটি ১৩ শতকের গোড়ার দিকে ফার্সি ভাষায় লেখা আমির খসরুর রূপক গল্পের একটি সংকলন।[]

জনশ্রুতি আছে যে আমির খসরুর গুরু এবং সুফি সাধক নিজামউদ্দিন আউলিয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাঁকে উৎসাহিত করার জন্য, আমির খসরু তাঁকে সহস্র এক আরব্য রজনী-এর শৈলীতে ধারাবাহিক আকারে গল্প বলতে শুরু করেন।[]

বইটি সহস্র এক আরব্য রজনী -র মতো, অসমাপ্ত গল্প প্রণয়ন করে পরের গল্পটির সাথে সংযোগ ঘটিয়ে দিনের পর দিন গল্পের শৃঙ্খল চালিয়ে যাবার পদ্ধতিতে গল্প বলা। এর কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছে একজন রাজা, আজাদ বখত, যে নিজের মৃত্যুর কথা চিন্তা করে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে এবং নিজের প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে পড়ে জ্ঞানী ব্যক্তিদের খোঁজ করতে। সে একটি কবরস্থানে চারজন দরবেশের কাছে আসে এবং তাদের চমৎকার গল্প শোনে। প্রতিটি দরবেশ তার নিজস্ব গল্প বর্ণনা করে, যা মূলত তাদের নিজস্ব অতীত জীবনের প্রেম এবং বিশ্বস্ততার অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে বলা। চতুর্থ দরবেশ যখন তার গল্প শেষ করে, তখন রাজা আজাদ বখত হঠাৎ জানতে পারে যে তার এক স্ত্রী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে আজাদ বখত বিরাট এক ভোজের ব্যবস্থা করার আদেশ দেয়। জিন সমাজের মহান রাজা মালিক সিহপালের সহায়তায়, আজাদ বখত সমস্ত বিচ্ছিন্ন প্রেমিকদের একে অপরের সাথে মিলিয়ে দিতে বিয়ের ব্যবস্থা করে, যেমন ইয়েমেন থেকে বণিকের পুত্রের বিয়ে হয় দামসিকের রাজকুমারীর, ফার্সের রাজপুত্রের বিয়ে হয় বসরার রাজকুমারীর সঙ্গে, আজমের রাজকুমারের সাথে বিয়ে হয় ফারাংয়ের রাজকুমারীর, জিনদের রাজকুমারীর বিয়ে হয় নিমরোজের রাজকুমারের সঙ্গে এবং মালিক সাদিক দ্বারা অপহরণ করা দরবারীর কন্যার সঙ্গে চীনের রাজকুমারের বিয়ে হয়। আনন্দের সাথে প্রত্যেকেই ইচ্ছা পূরিত হয়।

অনুবাদ

সম্পাদনা

এই গল্পগুলি মূলত আমির খসরু লিখেছিলেন ফার্সি ভাষায়, যার শিরোনাম ছিল কিস্সা-ই চাহার দরবেশ। প্রাথমিকভাবে এটি উর্দুতে অনুবাদ করেছিলেন মীর হোসেন আতা তেহসিন এবং তার শিরোনাম ছিল নভ তরজ-ই-মুরাসা (نو طرزِ مُرصّع, "নতুন অলঙ্কৃত শৈলী")।[] তবে ভাষাটি অত্যন্ত উচ্চস্তরের ছিল এবং তাই সাধারণ জনগণ এটি উপভোগ করতে পারেননি। ১৮০১ সালে, কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ ভারতীয় সাহিত্য অনুবাদের একটি প্রকল্প শুরু করে। সাহিত্যের একজন বিখ্যাত পণ্ডিত জন বোর্থউইক গিলক্রিস্ট কলেজের একজন কর্মচারী মীর আম্মানকে বলেছিলেন এই বইটি সহজ উর্দু ভাষায় অনুবাদ করতে।[] মীর আম্মান এটিকে ফার্সি থেকে সহজবোধ্য উর্দুতে অনুবাদ করেন, তিনি এর নাম দেন বাগ ও বাহার[] পরে, ১৮৫৭ সালে, ডানকান ফোর্বস এটিকে ইংরেজিতে পুনরায় অনুবাদ করেন। মীর আম্মানের অনুবাদ এখনও তাঁর সময়ের সাধারণ দৈনিক ভাষার জন্য উর্দু সাহিত্যের একটি ধ্রুপদী রচনা হিসাবে উপভোগ করা হয়।[]

পরিবর্তিত আকার

সম্পাদনা

ভারতীয় চলচ্চিত্রে প্রফুল্ল ঘোষের চার দরবেশ (১৯৩৩) এবং হোমি ওয়াদিয়ার চার দরবেশ (১৯৬৪), এই গল্পগুলির উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল।[]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Khusrow, Amir (২০১৮-০৬-২১)। Bagh-O Bahar (Urdu ভাষায়)। Amman, Mir কর্তৃক অনূদিত। Createspace Independent Publishing Platform। আইএসবিএন 978-1-7216-9700-7 
  2. "THE TALE OF THE FOUR DERVISHES and Other Sufi Tales."Goodreads (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১১ 
  3. "Nau Tarz-e-Murassaa"Urdu Gah 
  4. "Early 19th Century Translations in Hindustani/Hindi/Urdu and the Question of 'National Language'" (পিডিএফ)National Translation Mission। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  line feed character in |শিরোনাম= at position 35 (সাহায্য)
  5. "Bagh o Bahar - Qissa-ye Chahār Darvēsh"Urdu Gah 
  6. "The Tale Of The Four Dervishes"Academic Accelerator। সংগ্রহের তারিখ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  7. Rajadhyaksha, Ashish; Willemen, Paul (১৯৯৯)। Encyclopaedia of Indian cinema। British Film Institute। সংগ্রহের তারিখ ১২ আগস্ট ২০১২ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা