চাপাতি

রুটিজাতীয় খাবার

চাপাতি (চপাতি, চাপ্পাতি, ছাপ্পাতি, চাপাথি, চাপ্পাথি নামেও পরিচিত) একধরনের রুটি যা ভারতীয় উপমহাদেশের দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় খুবই জনপ্রিয়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রবাসীদের জন্য চাপাতি সারা বিশ্বেই পরিচিত। বিশেষ করে হিন্দু ব্যবসায়ীদের হাত ধরে মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকাক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে[] চাপাতি বিস্তৃতি লাভ করেছে।

চাপাতি
আলু মটরের সাথে চাপাতি
অন্যান্য নামরুটি, রোটি, রোটলি
উৎপত্তিস্থলদক্ষিণ এশিয়া
অঞ্চল বা রাজ্যSouth Asia, Central Asia, Southeast Asia, East Africa
প্রধান উপকরণময়দা

ইতিহাস

সম্পাদনা

চাপাতি হলো রুটি বা রট্টা (রুটি) এর একটি রূপভেদ। এই শব্দগুলো প্রায়ই ব্যবহৃত হয়। চাপাট (মারাঠি: चापट) শব্দটির মানে হলো "থাপ্পড়" বা "তালু", যা প্রথাগত তৈরী পদ্ধতির বর্ণনা দেয়, যেখানে পাতলা আটা দিয়ে গোল আকারের রুটি তৈরি করতে আটা দুই হাতের ভেজা তালুতে থাপ্পড় মেরে তৈরী করা হয়। প্রতিটি থাপ্পড়ের পর আটা ঘুরিয়ে নেওয়া হয়।

চাপাতি শব্দটি ১৬ শতকে লেখা আইন-ই-আকবরিতে, মুঘল সম্রাট আকবর এর মন্ত্রীক আবুল ফজল ইবনু মুবারক দ্বারা উল্লেখ করা হয়েছে।[]

চাপাতি, রুটির সঙ্গে, ভারতীয় উপমহাদেশে একটি মুখ্য খাদ্য হিসেবে প্রায়ই খাওয়া হয়। মহেঞ্জোদাড়োতে খননের সময় পাওয়া কার্বনে রূপান্তরি গমের দানা একটি স্থানীয় প্রজাতির, যা এখনও ভারতের কিছু অংশে পাওয়া যায়। সিন্ধু উপত্যকা গম চাষের প্রাচীন ভূমি হিসেবে পরিচিত।

চাপাতি, রুটির মতো, ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে অভিবাসীদের মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে পরিচিত হয়েছিল, বিশেষ করে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা যারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে বসবাস শুরু করেছিলেন।

১৮৫৭ সালে, চাপাতি সম্ভবত ভারতীয় বিদ্রোহ চাপাতি আন্দোলন-এ একটি ভূমিকা পালন করেছিল।

বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত রুটি
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
৪৬.৩৬ g
চিনি২.৭২
খাদ্য আঁশ৪.৯ g
৭.৪৫ g
১১.২৫ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
থায়ামিন (বি)
৪৮%
০.৫৫ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি)
১৭%
০.২ মিগ্রা
নায়াসিন (বি)
৪৫%
৬.৭৮ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি)
০%
০ মিগ্রা
ভিটামিন বি
২১%
০.২৭০ মিগ্রা
ফোলেট (বি)
০%
০ μg
ভিটামিন ই
৬%
০.৮৮ মিগ্রা
ভিটামিন কে
০%
০ μg
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
৯%
৯৩ মিগ্রা
লৌহ
২৩%
৩ মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম
১৭%
৬২ মিগ্রা
ম্যাঙ্গানিজ
০%
০ মিগ্রা
ফসফরাস
২৬%
১৮৪ মিগ্রা
পটাশিয়াম
৬%
২৬৬ মিগ্রা
সোডিয়াম
২৭%
৪০৯ মিগ্রা
জিংক
১৭%
১.৫৭ মিগ্রা

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল

চাপাতি তৈরি করা হয় গমের ময়দা এবং পানি দিয়ে একটি নরম আটা প্রস্তুত করে।[] এটি সাধারণত পশ্চিমা পদ্ধতির গমের ময়দার তুলনায় অনেক সূক্ষ্মভাবে পেষা হয়।

চাপাতি তৈরির জন্য খামির সাধারণত ময়দা এবং পানি দিয়ে প্রস্তুত করা হয়, তারপর আঙুলের সাহায্যে মাখানো হয় এবং কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ মিনিট বা এক ঘণ্টা বিশ্রাম দেওয়া হয় যাতে খামির ফুলতে পারে। বিশ্রামের পর খামির নমনীয় হয়ে ওঠে। খামির থেকে ছোট অংশ নিয়ে গোল আকারে বলের আকারে তৈরী করা হয়, তারপর দুই হাতে চেপে গোল গঠন করা হয়, যা পরবর্তীতে ময়দায় ডুবিয়ে একটি রুটির আকারে রোল করা হয় (একটি চাকলা) এবং রোলিং পিন বা বেলন ব্যবহার করে সমতল করা হয়।[] এখন কিছু স্বয়ংক্রিয় রুটি প্রস্তুতকারক যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছে যা পুরো প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করে।[]

প্রস্তুত করা চাপাতি পরবর্তীতে তাওয়ার উপর গরম করা হয় এবং চাপাতির উভয় পাশেই সেঁকা হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু অঞ্চলে চাপাতি তাওয়াতে আংশিক সেঁকা হয় এবং পরে সরাসরি আগুনের উপর ফেলে এটিকে ফাঁপিয়ে তোলা হয়। গরম বাষ্প চাপাতিকে দ্রুত ভিতর থেকে সেঁকে ফেলে। উত্তর ভারত এবং পূর্ব পাকিস্তানে এটিকে ফুলকা বলা হয়, এবং দক্ষিণ ভারতের কিছু অংশে এটি পুলকা নামে পরিচিত। তাওয়াতে সরাসরি রুটি ফাঁপানো সম্ভব।[] একবার সেঁকা হলে, চাপাতিতে প্রায়ই মাখন বা ঘি দিয়ে সাজানো হয়।[] মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলে, কিছু তেল রুটির মধ্যে যোগ করা হয় এবং পরে তাওয়াতে সেঁকা হয়; এটি পরোটা থেকে আলাদা।

চাপাতির ব্যাস এবং পুরুত্ব অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। ঘরোয়া রান্নাঘরে তৈরি চাপাতি সাধারণত ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি) থেকে ১৮ সেন্টিমিটার (৭ ইঞ্চি) ব্যাসের মধ্যে থাকে, কারণ তাওয়া সাধারণত এমন আকারের হয় যা একটি ঘরোয়া চুলার জন্য উপযুক্ত। ঐতিহ্যগতভাবে তাওয়া মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো, তবে এখন এগুলি সাধারণত ধাতুর তৈরি হয়। বেলনের আকারও অঞ্চলভেদে পরিবর্তিত হয়। কিছু পরিবার রান্নাঘরের কাজের পৃষ্ঠকেই পেস্ট্রি বোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে, কিন্তু চাপাতি রোল করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি কাঠ, পাথর বা স্টেইনলেস স্টিলের গোলাকার সমতল "বোর্ড" পাওয়া যায়।

ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চলে, চাপাতি এবং অন্যান্য সম্পর্কিত সমতল রুটির মধ্যে পার্থক্য করা হয় যেমন রুটি, পরোটা, কুলচা, পুরি এবং নান, যা রান্নার পদ্ধতি, টেক্সচার এবং বিভিন্ন ধরনের ময়দার ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে তোইরী করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পরোটা তৈরি করতে ময়দা ঘি বা তেল দিয়ে মাখা হয়, তারপর তা ভাঁজ করা হয় এবং আবার রোল করা হয়, যা রান্না হওয়ার পর খাস্তা হয়ে ওঠে, অথবা এটি পালং শাক, ডাল বা সিদ্ধ মুলা অথবা আলু দিয়ে ভরা হয়। পরোটা সাধারণত সম্পূর্ণ গমের ময়দা না ব্যবহার করে সাধারণ ময়দা দিয়ে তৈরি হয়।[]

ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে চাপাতির অনেক ধরনের রয়েছে:

পনির চাপাতি: কুচানো পনির সাধারণ চাপাতি ময়দায় যোগ করা হয়, যেটি 'পনির পরোটা' নামেও পরিচিত। মুলা চাপাতি: কুচানো মুলা এবং হলুদ গুঁড়ো আটা ময়দায় যোগ করা হয় এবং চাপাতি সাধারণত মোটা হয়। এটি প্রায়ই লরি চালকরা দীর্ঘ সফরের সময় রাস্তায় ধাবায় বসে খায়। একে 'মুলি পরোটা'ও বলা হয়। সবজি-ভর্তি চাপাতি: গাজর, আলু, মটর, এবং মেথি সঠিকভাবে মশলা সসে হালকা করে ভাজা হয়। এই চাপাতি সাধারণত রোল করা হয় এবং বিভিন্ন পরিবার তাদের নিজের পছন্দের সবজি মিশিয়ে তৈরি করে।

মালদ্বীপে, চাপাতি ঐতিহ্যগতভাবে মাস হুনি নামক একটি খাবারের সাথে প্রাতঃরাশ হিসেবে খাওয়া হয়।[]

ভারতীয় খাদ্যে সমতল রুটি একটি প্রধান খাদ্য। চাপাতি সাধারণত কারি, শুস্ক সবজি বা সবজি (গ্রেভি-তে রান্না করা সবজি), চাটনি অথবা ডাল দিয়ে খাওয়া হয়।[১০]

ছবি প্রদর্শনী

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Bruce Kraig, Colleen Taylor Sen (2013) "Street Food Around the World: An Encyclopedia of Food and Culture", p.124
  2. Of Bread ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে Ain-i-Akbari, by Abu'l-Fazl ibn Mubarak. English tr. by Heinrich Blochmann and Colonel Henry Sullivan Jarrett, 1873–1907. The Asiatic Society of Bengal, Calcutta, Volume I, Chap. 26, page 61.
  3. "India Curry.com About Wheat"। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুলাই ২০১৫ 
  4. Caballero, Benjamin; Finglas, Paul M.; Toldra, Fidel, সম্পাদকগণ (২০১৫)। Encyclopedia of Food and Health1। Elsevier। পৃষ্ঠা 731। আইএসবিএন 978-0-12-803511-5 
  5. "Roti-makers for quick and efficient preparation of rotis & pooris - Times of India"The Times of India। ১৯ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ আগস্ট ২০২০ 
  6. Archived at Ghostarchive and the Wayback Machine: "Soft Roti/Fulka/Chapati Recipe With And Without Gas Flame"YouTube  অজানা প্যারামিটার |1= উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য)
  7. Achaya, K. T. (১৯৯৪)। Indian Food: A Historical Companion। Oxford University Press। পৃষ্ঠা 28। আইএসবিএন 978-0-19-562845-6 
  8. Chapman, Pat (২০০৭)। India: Food and Cooking: The Ultimate Book on Indian Cuisine। New Holland। পৃষ্ঠা 49আইএসবিএন 978-1-84537-619-2 
  9. Xavier Romero-Frias, The Maldive Islanders: A Study of the Popular Culture of an Ancient Ocean Kingdom, Barcelona 1999, আইএসবিএন ৮৪-৭২৫৪-৮০১-৫
  10. Vanamali (জানুয়ারি ১৯৯৩)। The Taste Divine: Indian Vegetarian Cooking the Natural Way। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 60। আইএসবিএন 0-7914-1188-5 

টেমপ্লেট:ইন্দোনেশীয় রুটি টেমপ্লেট:ইন্দোনেশীয় রন্ধনশৈলী টেমপ্লেট:বর্মী রন্ধনশৈলী টেমপ্লেট:মালয়েশীয় রন্ধনশৈলী