বাংলায় শহরটি চট্টগ্রাম নামে পরিচিত। নামটি চাটগাঁইয়া সংস্কৃতি, ভাষা এবং ইতিহাস থেকে এসেছে। চট্টগ্রামের বিভিন্ন ইতিহাস এবং চাটগাঁইয়া ভাষায় এটির বেশ কয়েকটি নাম আছে। চাটগাঁইয়া ভাষায় প্রায় ৫০% আরবি উৎসের শব্দভান্ডার রয়েছে।[]

টলেমির বিশ্ব মানচিত্রে পূর্বদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তারিত। গঙ্গার উপসাগর (বঙ্গোপসাগর) বাম, কেন্দ্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় উপদ্বীপ, দক্ষিণ চীন সাগর ডানদিকে, "সিনাই" (চীন) সহ।

চাটগাঁইয়া নাম

সম্পাদনা

চাটগাঁইয়া ভাষায় চট্টগ্রামের নাম চিটাঙ। অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে চাটগা, চৈট্ট্যভূমি এবং চট্টলা[] চট্টগ্রামের চাটগাও নামটি এখনো হিন্দি, পাঞ্জাবি, এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় ব্যবহার করা হয়। উর্দু এবং ফারসী ভাষায় চট্টগ্রামের নাম চাটগাম। এছাড়া চিটাগং নামটি চট্টগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে এবং বাংলার পূর্ব উপভাষাও প্রচলিত, "গ্যাং" এর অর্থও গ্রাম। ইসলামাবাদ নামটি চট্টগ্রামের আরো একটি বহুল ব্যবহৃত নাম, যেটি মোঘল বিজয়ের পর দেয়া হয়। এবং এটি দ্বারা মূলত চট্টগ্রাম বিভাগীয় রাজধানী অর্থাৎ চট্টগ্রাম শহরকে বুঝানো হয়। এই নামেও চট্টগ্রাম সুপ্রসিদ্ধ। চাটগাঁইয়া ভাষাতেও চট্টগ্রাম শহর বুঝাতে এই নামের ব্যবহার আছে।

বাংলা নাম

সম্পাদনা

বাংলা নাম চট্টগ্রাম-এর প্রত্যয় রয়েছে "-গ্রাম" যা প্রমিত বাংলা গ্রাম থেকে এসেছে, এবং "চট্ট" শব্দটি "চাটি" অর্থাৎ বাতি থেকে উৎপন্ন। একটি কিংবদন্তি অনুযায়ী নামটি ইসলামের প্রসারের সময়ে, যখন একজন মুসলমান শহরের একটি পাহাড়ের চূড়ায় একটি চাটি (বাতি) জ্বালিয়েছিলেন এবং নামাজ আদায় করার জন্য (আজান) আহ্বান করেছিলেন।[] এইভাবে, অনেকে শহরকে বলতে থাকেন, চাটিগ্রাম বা চাটিগাঁও, যেখানে গাঁও অর্থ গ্রাম।

আরবি নাম

সম্পাদনা

আরব ব্যবসায়ীরা নবম শতাব্দীতে চট্টগ্রামে উন্নত মুদ্রা, ব্যাংকিং এবং শিপিং দেখেছিল। শুরুর দিকের বিশ্বজনীন মুসলমানরা সমুদ্র বাণিজ্যের একটি প্রবেশপথ হিসেবে বন্দরের উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।[] ভৌগোলিকভাবে, গঙ্গা বদ্বীপ বাংলায় অবস্থিত। আরবি শব্দ শাত (شط) যার অর্থ বদ্বীপ, এটি চট্টগ্রাম, গঙ্গা বদ্বীপ, শাত আল-গঞ্জ (شط الغانج) এর ব্যুৎপত্তিও হতে পারে। [][][] মরক্কোর ভ্রমণকারী ইবনে বতুতা চট্টগ্রাম বন্দরকে সাদকাওয়ান (سدكاوان) বলে উল্লেখ করেছেন। [][] বর্তমানে চট্টগ্রামের আরবি নাম হল শীতাগুং (شيتاغونغ), যা চট্টগ্রামের ইংরেজি নাম থেকে উৎপন্ন।

আরাকানি নাম

সম্পাদনা

বাংলা সালতানাত থেকে আরাকানের স্বাধীনতার পর ম্রাক ইউ রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর শহর ছিল চট্টগ্রাম। শহরের ব্যুৎপত্তির বার্মিজ ঐতিহ্য হল, ৯ম শতাব্দীতে আক্রমণকারী একজন আরাকানীয় রাজা শহরটিকে সিট-টা-গুং নাম দিয়েছিলেন (যার অর্থ যুদ্ধ করা অনুচিত)। []

পর্তুগিজ এবং ডাচ নাম

সম্পাদনা
 
আদি ডাচ বাংলার মানচিত্র

পর্তুগিজরা বন্দর শহরটিকে পোর্টো গ্র্যান্ডে ডি বেঙ্গালা বলে উল্লেখ করেছিল, যার অর্থ "বাংলার বৃহৎ পোতাশ্রয়"। শব্দটি প্রায়শই পোর্টো গ্র্যান্ডে হিসাবে সরলীকৃত ছিল। [১০] অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে ডাচ থেকে সেশিগান [১১], সেটিগাম, এবং শাতিগাও একটি আদি বাংলা নাম থেকে এসেছে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

ঐতিহাসিক নাম এবং ডাকনাম

সম্পাদনা
 
ওলন্দাজ জাহাজ ১৭০২ সালে মুঘল আমলে চট্টগ্রাম পরিদর্শন করে

চট্টগ্রামের মুঘল বিজয় বাঙালি নিয়ন্ত্রণ পুনরায় প্রতিষ্ঠা করে এবং স্থিতিশীলতা ও বাণিজ্যের যুগের সূচনা করে। শহরটির নামকরণ করা হয় ইসলামাবাদ (ইসলামের শহর) এবং পুরনো শহরে এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে।[১২][১৩]

রোমান ঐতিহাসিক প্লিনি দ্য এল্ডারের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরকে এরিথ্রীয় সাগরের পেরিপ্লাসে গঙ্গাবাজার (Gongabazaar) অর্থ "গঙ্গার বাজার" হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। বর্ণিত স্থানটি সম্ভবত সীতাকুণ্ড, সীতাকুণ্ড উপজেলায় অবস্থিত। [১৪]

প্রাচীন তিব্বতীয় গ্রন্থে শহরটি জ্বালানধারা (Jaalondhaara) নামে পরিচিত ছিল এবং আরব ভৌগোলিক গ্রন্থে সামান্দর (Samandar) নামে পরিচিত ছিল। [১৪]

শহরটি বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার (বাংলাদেশের প্রবেশপথ) এবং সেইসাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী নামে পরিচিত। [১৫]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. আ.ত.ম মুছলেহউদ্দীন (২০১২)। "আরবি"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. শরীফ, আহমেদ (২০১১)। চট্টগ্রামের ইতিহাসআগামী প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ৯। আইএসবিএন 978-984-401-637-8 
  3. "The Asian University for Women"দ্য ডেইলি স্টার। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মে ২০১৩ 
  4. https://articles.latimes.com/2010/oct/24/opinion/la-oe-kaplan-20101024
  5. O'Malley, L.S.S. (১৯০৮)। Chittagong। Eastern Bengal District Gazetteers। The Bengal Secretariat Book Depot। পৃষ্ঠা 1। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৫ 
  6. শিরীন হাসান ওসমানী (২০১২)। "চট্টগ্রাম নগরী"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  7. Bernoulli, Jean; Rennell, James (১৭৮৬)। Description historique et géographique de l'Inde (ফরাসি ভাষায়)। C. S. Spener। পৃষ্ঠা 408। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৫ 
  8. Ibn Battutah। تحفة النظار فى غرائب الأمصار و عجائب الأسفار المسماة رحلة ابن بطوطة – الجزء الثانى (আরবি ভাষায়)। 
  9. Ibn Battutah। The Rehla of Ibn Battutah 
  10. Mendiratta, Sidh Losa; Rossa, Walter। "Enquadramento Histórico e Urbanismo"Heritage of Portuguese Influence (পর্তুগিজ ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০১৫ 
  11. Sircar, D. C. (১৯৭১)। Studies in the geography of ancient and medieval India (2nd সংস্করণ)। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 138। আইএসবিএন 8120806905 
  12. এম. ইনামুল হক (২০১২)। "ইসলামাবাদী, মওলানা মনিরুজ্জামান"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  13. Kabir, Nurul (১ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Colonialism, politics of language and partition of Bengal PART XVII"New Age। Dhaka। ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  14. [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  15. "Rediscovering Chittagong - the gateway to Bangladesh"। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০১৩