গ্যালভানিক কোষ
গ্যালভানিক কোষ যা লুইজি গ্যালভানির নামানুসারে গঠিত হয়েছে, তা দুটি আলাদা ধাতুর তৈরি তড়িতদ্বারকে একটি লবণ সেতু বা দুটি আলাদা অর্ধকোষকে একটি পোরোয়াস ডিস্কের সংযোগে তৈরি করা হয়। একে ভলটায়িক কোষ বা ইলেকট্রোকেমিক্যাল কোষও বলা হয়ে থাকে।
ইতিহাস
সম্পাদনা১৭৮০ সালে লুইজি গ্যালভানি আবিষ্কার করেন যে, দুটি ভিন্ন ধাতু যেমন: তামা ও দস্তাকে একসাথে যুক্ত করে একটি ব্যাঙের একটি স্নায়ুর আলাদা অংশে যুক্ত করলে পা দুটি দুলে ওঠে। তিনি এটিকে প্রাণী বিদ্যুত বলে আখ্যা দেন। ১৮০০ সালের দিকে আলেসান্দ্রো ভোল্টার তৈরি ভোল্টায়িক পাইল গ্যালভানিক কোষের অনুরূপ। এই আবিষ্কার ব্যাটারী বা বিদ্যুত কোষ আবিষ্কারের পথ সুপ্রসন্ন করে।
বিবরণ
সম্পাদনাএকটি গ্যালভানিক কোষে দুটি অর্ধকোষ থাকে। প্রতিটি অর্ধকোষে একটি ইলেকট্রোড যা জিঙ্ক ও কপারের পাত এবং একটি ইলেকট্রোলাইট যা এদের জলীয় দ্রবণ ZnSO4 ও CuSO4। ধাতব ইলেকট্রোডের ধাতু মিশ্রণের সাথে দ্রবীভূত হতে পারে এবং এর ফলে ইলেকট্রোলাইটে ধনাত্মক আয়ন যুক্ত হয় এবং ইলেকট্রনে ঋনাত্মক চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড থাকে। এভাবে সকল অর্ধকোষে নিজস্ব অর্ধ-বিক্রিয়া ঘটে। চিত্রে প্রদর্শিত ডেনিয়েল কোষে Zn অনুর দ্রবীভূত হবার প্রবণতা Cu অণু থেকে বেশি। নির্দিষ্ট করে বললে, জিঙ্ক ইলেকট্রোডের ইলেকট্রনগুলোতে কপার ইলেকট্রোডের ইলেকট্রনের তুলনায় বেশি শক্তি থাকে। কেননা ইলেকট্রনের আধান ঋনাত্মক, এখন ইলেকট্রনকে আরো শক্তি দিতে হলে জিঙ্ককে কপারের চেয়ে বেশি ঋনাত্মক ইলেকট্রিকাল পোটেনশিয়াল থাকতে হবে। অবশ্য ইলেকট্রোডদ্বয়ের মধ্যে বাহ্যিক সংযোগ না থাকলে বিদ্যুত প্রবাহিত হয় না।
যখন ইলেকট্রোড দুটিকে বাহ্যিকভাবে সংযুক্ত করা হয় তখন ইলেকট্রনগুলো ঋনাত্মক ইলেকট্রোড জিঙ্ক থেকে ধনাত্মক ইলেকট্রোড কপারের দিকে অগ্রসর হয়। ইলেকট্রনের ঋনাত্মক আধান থাকার কারণে ইলেকট্রন প্রবাহের বিপরীত দিকে বিদ্যুত প্রবাহিত হয়। একই সময়ে ইলেকট্রোলাইটের ভিতর দিয়ে সমান পরিমাণ আয়নিক প্রবাহ চলে। বহিঃস্থ সংযোগের মাধ্যমে প্রতি দুটি ইলেকট্রন জিঙ্ক ইলেকট্রোড থেকে কপার ইলেকট্রোডের দিকে প্রবাহিত হবার সময় একটি Zn অণূ অবশ্যই দ্রবণে Zn2+ আয়ন হিসেবে চলে যাবে এবং চলে যাওয়া দুটি ইলেকট্রনকে প্রতিস্থাপিত করবে। সংজ্ঞানুযায়ী অ্যানোড হলো সেই ইলেকট্রোড যেখানে জারণ বিক্রিয়া সংঘটিত হয়, অর্থাত গ্যালভানিক কোষে জিঙ্ক ইলেকট্রোড একটি অ্যানোড। কপার ইলেকট্রোডে গৃহীত দুটি ইলেকট্রন দ্রবণে গিয়ে একটি Cu2+ আয়নের সাথে যুক্ত হয়ে কপার অণু গঠন করে যা Cu ইলেকট্রোডে যুক্ত হয়। একইভাবে ক্যাথোডে বিজারণ সংঘটিত হয় বা ইলেকট্রন গৃহীত হয়, তাই এখানে কপার ইলেকট্রোডটি একটি ক্যাথোড।
কোন ইলেকট্রোডে কোন বিক্রিয়া সংঘটিত হয় তা মনে রাখার একটি সহজ পদ্ধতি হল anode ও oxidation উভয়েই ইংরেজি স্বরবর্ণ দ্বারা সূচীত হয় এবং reduction ও cathode উভয়েই ব্যঞ্জনবর্ণ দ্বারা সূচীত হয়।
গ্যালভানিক কোষে অ্যানোড ঋণাত্মক চার্জযুক্ত ও ক্যাথোড ধানত্বক চার্জযুক্ত। কিন্তু সকল ক্ষেত্রে অবশ্য মনে রাখা প্রয়োজন যে, অ্যানোড এ সবসময় জারণ অর্ধবিক্রিয়া ও ক্যাথোড এ বিজারণ অর্ধবিক্রিয়া ঘটে।গ্যালভানিক কোষ এর গঠন ব্যাখ্যা করার জন্য প্রায় সময়ই ড্যানিয়েল কোষের কার্যপ্রণালী ব্যাখ্যা করা হয়। বিজ্ঞানী Daniel এই তড়িৎ রাসায়নিক কোষ আবিষ্কার করেন।
গ্যালভানিক কোষ বলতে কি বুঝায়?
যে তড়িৎ রাসায়নিক কোষে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে বিদ্যুৎ শক্তি তৈরী করা হয় তাকে গ্যালভানিক কোষ বলে।গ্যালভানিক কোষে যে পাত্র দুটি ব্যাবহৃত হয় সেই পাত্র দুটিকে সল্ট ব্রিজ দ্বারা সংযুক্ত করা হয়। সল্ট ব্রীজে KCl লবণ আগারআগার দ্রবণের মাঝে দেওয়া হয়।
গ্যালভানিক কোষের ইলেকট্রিক পটেনশিয়াল
সম্পাদনাআদর্শ ইলেকট্রোড পটেনশিয়ালের তালিকা থেকে একটি কোষের ইলেকট্রোড পটেনশিয়াল নির্ণয় করা যায়। জারণ পটেনশিয়াল টেবিলও ব্যবহার করা যায়, তবে বিজারণ তালিকাই অধিক মাত্রায় গ্রহণীয়। প্রথমে কোষের দুটি ধাতুকে চিহ্নিত করে প্রত্যেক অর্ধ বিক্রিয়ার Eo (আদর্শ ইলেকট্রোড পটেনশিয়াল) কে লক্ষ করতে হবে। কোষের ইলেকট্রোড পটেনশিয়াল হল বেশিমাত্রায় ধনাত্মক Eo এর মান থেকে বেশিমাত্রায় ঋনাত্মক Eo এর মানের বিয়োগফলের সমান।
বহিঃসংযোগে
সম্পাদনা- Galvanic (Voltaic) Cells and Electrode Potential. Chemistry 115B, Sonoma.edu.
- Making and testing a simple galvanic cell. Woodrow Wilson Leadership Program in Chemistry, The Woodrow Wilson National Fellowship Foundation.
- Galvanic Cell An animation.