গৌরাঙ্গপুর
গৌরাঙ্গপুর হলো পূর্ব ভারতে অবস্থিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বর্ধমান বিভাগের অন্তর্গত পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুর মহকুমার কাঁকসা সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকের একটি গ্রাম। এই গ্রামটি গোপভূমের রাজা ইছাই ঘোষের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। মনে করা হয় যে গোপভূম রাজ্যের সদর ঢেকুড় ছিলো গৌরাঙ্গপুরের নিকটেই। সেই সময়ে গৌরাঙ্গপুর সেনপাহাড়ী পরগনার অন্তর্গত ছিলো।
গৌরাঙ্গপুর | |
---|---|
গ্রাম | |
পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতে গৌরাঙ্গপুরের অবস্থান | |
স্থানাঙ্ক: ২৩°৩৬′২৯″ উত্তর ৮৭°২৭′১৩″ পূর্ব / ২৩.৬০৮১° উত্তর ৮৭.৪৫৩৬° পূর্ব | |
রাষ্ট্র | ভারত |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
জেলা | পশ্চিম বর্ধমান |
আয়তন | |
• মোট | ১.২৩ বর্গকিমি (০.৪৭ বর্গমাইল) |
জনসংখ্যা (২০১১) | |
• মোট | ১১০ |
• জনঘনত্ব | ৮৯/বর্গকিমি (২৩০/বর্গমাইল) |
ভাষা | |
• দাপ্তরিক | বাংলা, ইংরাজী |
সময় অঞ্চল | আইএসটি (ইউটিসি+০৫:৩০) |
পিন | ৭১৩১৫২ |
লিঙ্গানুপাত | ১০০০/১০৩৭ |
লোকসভা নির্বাচনকেন্দ্র | বর্ধমান-দুর্গাপুর |
বিধানসভা নির্বাচনকেন্দ্র | গলসি |
ওয়েবসাইট | paschimbardhaman |
ইতিহাস
সম্পাদনাগবেষক ও সাংবাদিক বিনয় ঘোষ|বিনয় ঘোষের মতে, বর্তমান পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ছিলো প্রাচীন গোপভূম অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলে দুটি রাজত্ব তথা দুজন সদগোপ রাজা শাসানকার্য চালাতেন। পূর্বে অবস্থিত রাজ্যর শাসক আমরারগড়ে রাজধানী স্থাপন করেছিলেন ও অপর রাজত্বের রাজধানী ছিলো বর্তমান কাঁকসার গৌরাঙ্গপুরের নিকট ঢেকুরে, যা ত্রিষষ্ঠীগড় নামেও পরিচিত ছিলো। দিনাজপুরের রামগঞ্জে ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দের কিছু পুর্বে ইছাই ঘোষ তথা ঈশ্বর ঘোষের রাজত্বকালের একটি তাম্রলিপি পাওয়া যায়। প্রাপ্ত সেই তাম্র অনুশাসন অনুসারে ঈশ্বর ঘোষ ছিলেন ধবল ঘোষের পুত্র, বল ঘোষের পৌত্র ও ধূর্ত ঘোষের প্রপৌত্র। তবে মঙ্গলকাব্য ধর্মমঙ্গল কাব্যের পঙ্ক্তি অনুসারে ইছাই ঘোষের পিতার নাম ছিলো সোম ঘোষ।কিছু বৈষম্য বাদ দিলে ইছাই ঘোষের অস্তিত্বের কাব্যিক এবং ঐতিহাসিক উভয় অস্তিত্বের প্রমাণই পাওয়া গিয়েছে। তিনি ছিলেন সামন্তদের রাজা, তথা গোপভূম যে সমস্ত সামন্তরাজাদের অধীনস্থ ছিলো তার অধিপতি ছিলেন তিনি। একাদশ খ্রিস্টাব্দের আশেপাশে তার রাজত্বের উল্লেখ পাওয়া যায়, অর্থাৎ বলা যায় তিনি ছিলেন পাল সাম্রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাসক প্রথম মহীপালের সমসাময়িক। মনে করা হয় ইছাই ঘোষ শুধু একজন আঞ্চলিক শাসক ছিলেন না, কারণ প্রাপ্ত তাম্র অনুশাসনে লেখা রয়েছে যে বিভিন্ন আঞ্চলিক সামন্ত রাজা ও শে পাশের ছোটো রাজারা তার শাসন ও আইনানুসারে চলতেন। এটাও মনে করা হয় যে ইছাই ঘোষ বাংলার একটি বৃহৎ অঞ্চলে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন কারণ ঐসময়ে পাল সম্রাট প্রথম মহীপালকে দক্ষিণ ভারত থেকে আসা চোলদের ও মধ্য ভারতের কালাচুরিদের প্রতিহত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়।[১]
ধর্মমঙ্গল কাব্যে গোপভূমের রাজ ইছাই ঘোষের সাথে বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নার নিকট অবস্থিত অপর একটি সামন্ত রাজ্যের রাজা লাউ সেনের যুদ্ধের বর্ণনা রয়েছে। এই যুদ্ধটি অজয় নদের দক্ষিণ তীরে কাঁদুনেডাঙ্গার নিকট হয়েছিলো বলে উল্লেখ রয়েছে। ধর্মমঙ্গল কাব্যে হরিশ্চন্দ্র বলে অপর একটি রাজ্যের রাজfর কথা উল্লেখ থাকলেও তার সঠিক ইতিহাস আজ অবধি বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি।[১](ভারতীয় হিন্দু মহাকাব্যে বর্ণিত ভারতের প্রতাপশালী বিখ্যাত রাজা হরিশ্চন্দ্রের সাথে এই চরিত্রের মিল নেই।)
রাজা সুরথের দুর্গাপূজার জন্য গড় জঙ্গল পড়ুন।
অবস্থান
সম্পাদনাগৌরাঙ্গপুর ২৩°৩৬′২৯″ উত্তর ৮৭°২৭′১৩″ পূর্ব / ২৩.৬০৮১° উত্তর ৮৭.৪৫৩৬° পূর্ব স্থানাঙ্কে অবস্থিত।
গ্রামটি ঘনজঙ্গলে জেরা এবং অজয় নদের দক্ষিণ পাড়ে অবস্থিত গ্রামটি উত্তর পাড়ের জয়দেব কেন্দুলি থেকে নদী বরাবর দক্ষিণে অবস্থিত।[১]
জনতত্ত্ব
সম্পাদনা২০১১ সালের ভারতের জনগণনা অনুসারে গৌরাঙ্গপুর গ্রামের মোট জনসংখ্যা ১১০ জন, যার মধ্যে ৫৪ জন পুরুষ এবং ৫৬ জন নারী। ছয় বৎসর অনূর্ধ্ব শিশু সংখ্যা ২২ জন যা জনসংখ্যার ২০ শতাংশ। মোট ছয় বৎসরোর্ধ্ব জনসংখ্যা ৭৪ জন তথা ৮৪.০৯ শতাংশ সাক্ষর।[২]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ Ghosh, Binoy, Paschim Banger Sanskriti, (বাংলা), part I, 1976 edition, pages 123-129, Prakash Bhaban, Kolkata
- ↑ "2011 Census – Primary Census Abstract Data Tables"। West Bengal – District-wise। Registrar General and Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২০ জুন ২০১৭।
চিত্রাবলী
সম্পাদনা-
গৌরাঙ্গপুরে ইছাই ঘোষের দেউলে খোদিত ভাস্কর্য
-
বানকাটিতে অবস্থিত গোপালেশ্বর বা গোপেশ্বর শিব মন্দির
-
বানকাটির গোপেশ্বর শিব মন্দিরের টেরাকোটার নামসূচী
-
বানকাটির কালীতলার আটচালা মন্দির
-
বানকাটির হট্টলে অবস্থিত শিবমন্দির
-
হট্টল শিব মন্দিরের টেরাকোটার কাজ