গোবিন্দাপ্পা ভেঙ্কটাস্বামী
গোবিন্দাপ্পা ভেঙ্কটাস্বামী (১ অক্টোবর ১৯১৮ - ৭ জুলাই ২০০৬) ছিলেন একজন স্বনামধন্য ভারতীয় চক্ষুরোগ বিশষজ্ঞ চিকিৎসক, যিনি অপ্রয়োজনীয় অন্ধত্বের বিরুদ্ধে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি বিশ্বের বৃহত্তম চোখের যত্ন গ্রহণকারী সংস্থা, অরবিন্দ আই হসপিটালসের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। অল্প খরচে লক্ষ লক্ষ জনগণের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার মতো উচ্চতম মান এবং পরিমাণের পরিসেবার ব্যবস্থা করার জন্যে তিনি বহুল পরিচিত ছিলেন। শুরু থেকে অরবিন্দ আই কেয়ার সিস্টেম (একটা নথিভুক্ত অলাভজনক সংস্থা) ৫.৫ কোটি চক্ষু রোগীকে পরীক্ষা করেছে, এবং ৬৮ চোখের অস্ত্রোপচার করেছে।[১] সংস্থার ৫০ শতাংশের বেশি রোগী হয় বিনা পয়সায় অথবা উচ্চহারে ভর্তুকি নিয়ে চিকিৎসা পেয়েছে।[২] এর কর্মকুশলতা এবং নিজস্ব সামর্থ্য ১৯৯৩ হার্ভার্ড বিজিনেস কেস স্টাডিতে অরবিন্দ মডেলে উন্নীত করেছিল।[৩] ভেঙ্কটাস্বামী ৩০ বছর বয়স থেকে স্থায়ী গ্রন্থিবাতজনিত পঙ্গুত্বের শিকার ছিলেন। তিনি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে শিক্ষা সম্পূর্ণ করেন, এবং ব্যক্তিগতভাবে ১০০,০০০ ব্যক্তির চোখে অস্ত্রোপচার করেন।[৪] একজন সরকারি কর্মী হিসেবে তার অগ্রগামী চিন্তা এবং সহায়তায় চক্ষু পরিসেবা ক্যাম্পের ধারণা গড়ে ওঠে; এর ফলে ভারত সরকার ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তাকে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত করে।[৫] ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে ভেঙ্কটাস্বামী এবং তার অরবিন্দের সহকর্মীরা মিলে 'অরোল্যাব'[৬] নামে এক আন্তর্জাতিকভাবে প্রসংশিত অন্তর্দৃষ্টি লেন্স তৈরির সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে আন্তর্জাতিক মূল্যের এক-দশমাংশ, যেটা উন্নয়নশীল দেশের মানুষের পক্ষে দেওয়া সম্ভব, দিয়ে চোখের লেন্স সংগ্রহ করা যায়। [৭] বর্তমানে অরোল্যাব চোখের ওষুধপত্র, যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম, এছাড়াও অন্তর্দৃষ্টি লেন্স তৈরি করে, এবং সারা বিশ্বে ১৬০ সংখ্যক দেশে রপ্তানি করে। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে ভেঙ্কটাস্বামীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় 'লায়ন্স অরবিন্দ ইন্সটিটিউট ফর কমিউনিটি অপথাল্মোলজি (এলএআইসিও)।[৮] এলএআইসিও হল একটা ট্রেনিং এবং পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান যারা ভারত এবং অন্যান্য ৩০টা উন্নয়নশীল দেশের ৩৪৭ সংখ্যক হাসপাতালে অরবিন্দ মডেলের প্রতিরূপে কাজ করতে সাহায্য করে।[৯]
গোবিন্দাপ্পা ভেঙ্কটাস্বামী নায়ডু | |
---|---|
জন্ম | অয়ন বড়ামালাপুরম, বিলাতিকুলম, থুতুকুড়ি জেলা, মাদ্রাস প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমান তামিলনাড়ু,ভারত) | ১ অক্টোবর ১৯১৮
মৃত্যু | ৭ জুলাই ২০০৬ মাদুরাই, তামিলনাড়ু, ভারত | (বয়স ৮৭)
ছোটোবেলা ও কর্মজীবন
সম্পাদনাগোবিন্দাপ্পা ভেঙ্কটাস্বামী নায়ডুর জন্ম হয়েছিল ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুতে। [১০] এক কৃষক পরিবারে পাঁচজন সন্তানের তিনি সকলের বড়ো ছিলেন। তাকে প্রত্যেক দিন দু-কিলোমিটার হাঁটতে হোত এবং তার পাঠ লেখা চলত নদীতিরের বালিয়াড়ির ওপর। [১১] তার গ্রামে কোনো ডাক্তার ছিলনা, এবং দশ বছর বয়সে তিনি তিনজন জ্ঞাতি ভাইবোনকে গর্ভসংক্রান্ত জটিলতার কারণে হারিয়েছেন। ওই অসময় মৃত্যু তাকে ডাক্তার হওয়ার জন্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রেরণা জুগিয়েছে। [১২] একজন যুবক হিসেবে তিনি মহাত্মা গান্ধি স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রী অরবিন্দের শিক্ষা অনুসরণ করতেন। ভেঙ্কটাস্বামী ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে মাদুরাইয়ের আমেরিকান কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক হন। ১৯৪৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মাদ্রাসের স্ট্যানলি মেডিক্যাল কলেজ থেকে দ্বিতীয় বিভাগে মেডিক্যাল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মাদ্রাসের সরকারি চক্ষু হাসপাতালে চক্ষুরোগে বিশেষজ্ঞ বা এমএস হন। যখন তিনি মেডিক্যাল স্কুলে ছিলেন তখন তার পিতার জীবনাবসান হয়, ফলে বড়ো হিসেবে পরিবারের দায়িত্ব তার ওপর বর্তায়। মেডিক্যাল ডিগ্রি পাওয়ার পর ভেঙ্কটাস্বামী ১৯৪৫ থেকে ১৯৪৮ পর্যন্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন ডাক্তার হিসেবে চাকরি করেন। গ্রন্থিবাতজনিত রোগগ্রস্ততার ফলে তার ওই চাকরি ছাড়তে হয়; তখন তার বয়স ৩০ বছর। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি স্থায়ী হয়ে আঙুলের আকার বদল হয়, এবং দু-বছরের জন্যে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে যান। [১৩] মেডিসিনের চিকিৎসায় ফিরে আসার পর ধাত্রীবিদ্যায় কাজ করতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তিনি কাজের ক্ষেত্র পরিবর্তন করেন। পরিবর্তে তিনি চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।[১৪]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ {{Cite book|title=Infinite Vision: How Aravind Became the World's Greatest BusinessCaseforCompassion|url=https://archive.org/details/infinitevision0000pavi|last=Mehta|first=Pavithra|last2=Shenoy|first2=Suchitra|publisher=Harper Collins India|year=2012|isbn=9350292130|location=India|pages=[https://archive.org/details/infinitevision0000pavi/page/289 289], 290}}
- ↑ Samaranayake, Sadna (২০১১-১১-১৬)। "Where Free, Profitable, Impact and Scale Intersect: Insights From the Story of Aravind"। NextBillion (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-২৮।
- ↑ Rangan, V. Kasturi (১৯৯৩-০৪-০১)। "Aravind Eye Hospital, Madurai, India: In Service for Sight, The" (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ "Govindappa Venkataswamy, MD | ASCRS"। ascrs.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-২৮।
- ↑ "Padma Awards Directory (1954–2009)" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs। ১০ মে ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Aurolab"। www.aurolab.com। ২০১৮-১০-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-০১।
- ↑ Madhavan, N.। "Aurolab: Eyeing Success"। Business Today।
- ↑ "Lions Aravind Institute of Community Ophthalmology"। www.laico.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১০-০১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Basu, Soma (২০১৮-০৯-২৯)। "An engagement that multiplies performance"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-২৯।
- ↑ Tabin, Geoffrey (অক্টোবর ২০০৭)। "The Cataract Blindness Challenge Innovations Case Discussion: Aravind Eye Care System)"। Innovations: Technology, Governance, Globalization। 2 (4): 53–57। আইএসএসএন 1558-2477। ডিওআই:10.1162/itgg.2007.2.4.53।
- ↑ Varadarajan, Nitya। "Man of Vision"। archives.digitaltoday.in। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৯-২৯।
- ↑ Mehta, Pavithra; Shenoy, Suchitra (২০১১)। Infinite Vision: How Aravind Became the World's Greatest Business Case for Compassion। San Francisco: Berrett-Koehler। পৃষ্ঠা 59। আইএসবিএন 9781605099798।
- ↑ Venkataswamy, Govindappa (১৯৯৪)। Illuminated Spirit। USA: New York: Paulist Press।
- ↑ Mehta, Pavithra; Shenoy, Suchitra (২০১১)। Infinite Vision: How Aravind Became the World's Greatest Business Case for Compassion। San Francisco: Berrett-Koehler। পৃষ্ঠা 60, 61। আইএসবিএন 9781605099798।