গোবিন্দভোগ চাল
গোবিন্দভোগ চাল হল এক প্রকারের সুগন্ধি চাল, যা পশ্চিমবঙ্গে চাষ করা হয়।[২] এটি খানিক চটচটে ভাব যুক্ত ঘিয়ের গন্ধ যুক্ত চাল। গোবিন্দ বা কৃষ্ণের ভোগ রান্নার জন্য এই চাল ব্যবহার করা হয় বলে এই চালের নাম গোবিন্দভোগ চাল।[৩]
গোবিন্দভোগ চাল | |
---|---|
ভৌগোলিক নির্দেশক | |
বর্ণনা | পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত সুগন্ধযুক্ত চাল |
ধরন | সুগন্ধযুক্ত চাল |
অঞ্চল | পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি ও রাঢ় অঞ্চল |
দেশ | ভারত |
নথিবদ্ধ | ২৪ অক্টোবর ২০১৭[১] |
প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট | ipindiaservices.gov.in |
গোবিন্দভোগ ঐতিহ্যগতভাবে প্রায় ৪০০-৫০০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন গাঙ্গেয় সমভূমি ও রাঢ় অঞ্চলে জন্মে। ঐতিহাসিক, কৃষি-বাস্তুসংস্থান ও আর্থ-সামাজিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গোবিন্দভোগ ধানের চাষ মূলত স্থানীয় এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী ৪-৫টি জেলায় কেন্দ্রীভূত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ৩৮,০০০-৪০,০০০ হেক্টর জমিতে গোবিন্দভোগ ধান চাষ করা হয়।[৪]
উৎপাদন ক্ষেত্র
সম্পাদনা১৯তম ও ২০তম শতাব্দীর ডিস্ট্রিক্ট গেজেটিয়ার অনুসারে, প্রায় ৪০০-৫০০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে গোবিন্দভোগ ধান চাষ করা হয়। উপলব্ধ তথ্য ও সমীক্ষা-সম্পর্কিত তথ্যের উপর ভিত্তি করে, অনুমান করা হয় যে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি বছর ১,০০,০০০-১,১০,০০০ জনেরও বেশি কৃষক প্রায় ৩৮ হাজার-৪০ হাজার হেক্টর জমিতে গোবিন্দভোগ ধান চাষ করে।[৫]
পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় গোবিন্দভোগ ধান চাষের জন্য সবচেয়ে বেশি জমি রয়েছে। এই দুটি জেলায় মোট ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে গোবিন্দভোগ ধান চাষ করা হয়। এই জেলায় গোবিন্দভোগ চাল'কে খাস বলা হয় এবং এই চালের সবেদা মিহিদানা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। [৬] এছাড়াও বাঁকুড়া জেলায় ৪ হাজার হেক্টর, হুগলি জেলায় ৩.৫ হাজার হেক্টর, নদীয়া জেলায় ৩.৫ হাজার হেক্টর), বীরভূম জেলায় ১.২ হাজার হেক্টর, মুর্শিদাবাদ জেলায় ৯০০ হেক্টর, উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলায় ৮০০ হেক্টর এবং হাওড়া জেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে 'গোবিন্দভোগ' ধান চাষ করা হয়।[৫]
নামকরণ
সম্পাদনাননীচোরা কৃষ্ণ তথা গোবিন্দের ভোগের জন্য গোবিন্দভোগের চাষ শুরু হয়। কথিত আছে, কলকাতা শহরের তখন পত্তন হচ্ছে। হুগলি জেলার চার বসাক এবং এক শেঠ পরিবার গোবিন্দপুর গ্রামে বসতি স্থাপনের সময় বনজঙ্গল পরিষ্কার করতে গিয়ে একটি গোবিন্দ মন্দিরের সন্ধান পান। এই পাঁচ পরিবার নদীর তীরবর্তী জমিতে সুগন্ধি ধানের চাষ শুরু করেন। ওই ধানের চাল দিয়েই তারা গোবিন্দকে ভোগ নিবেদন করতেন। সেই থেকেই চালটির নামকরণ হয় গোবিন্দভোগ চাল।[৬]
ভৌগোলিক স্বীকৃতি
সম্পাদনাস্টেট এগ্রিকালচার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে গোবিন্দভোগ চালের জন্য ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই ট্যাগের আবেদন করেন। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে গোবিন্দভোগ চালকে পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্য হিসাবে স্বত্ব প্রদান করা হয়। প্রাপ্ত সনদপত্র অনুযায়ী, পণ্যটির নিবন্ধন বা রেজিস্ট্রেশন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে আগস্ট পর্যন্ত বৈধ থাকবে।[১][২]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Application details of the Gobindabhog Rice - Geographical Indications"। search.ipindia.gov.in (ইংরেজি ভাষায়)। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ইন্ডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- ↑ ক খ ঘোষাল, সুতনুকা (২৮ আগস্ট ২০১৭)। "Gobindobhog rice gets geographical indication status"। দ্য ইকোনমিক টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- ↑ Patri, Purnendu (জুন ২০১০)। পুরনো কলকাতার কথাচিত্র (Bengali ভাষায়) (5th সংস্করণ)। Kolkata: Dey's Publishing। পৃষ্ঠা 347। আইএসবিএন 8170797519।
- ↑ "অলিম্পিক মাতাবে তুলাইপাঞ্জি, গোবিন্দভোগ"। Anandabazar Patrika (Bengali ভাষায়)। Kolkata। ২৪ জুলাই ২০১২। ২১ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ক খ "GEOGRAPHICAL INDICATIONS JOURNAL NO.96" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- ↑ ক খ "কৃষ্ণ অনুসঙ্গের মিষ্টি ও অন্ন"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৮-২৪।
গ্রন্থপঞ্জি
সম্পাদনা- "Geographical Indications Journal No. 96"। জিওগ্রাফিকাল ইন্ডিকেশন্স জার্নাল (ইংরেজি ভাষায়)।