গোপীমোহন ঠাকুর

বাংলার জমিদার ও সমাজসেবী

রাজা গোপীমোহন ঠাকুর ( ১৭৬১ – ১৬ সেপ্টেম্বর ১৮১৯ )[] ছিলেন কলকাতার পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুর পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম। ভারতীয় উপমহাদেশের অবিভক্ত বাংলার বিখ্যাত জমিদার ও সমাজসেবী। []

গোপীমোহন ঠাকুর
গোপীমোহন ঠাকুরের প্রতিকৃতি (আনু ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে)
জন্ম১৭৬১
মৃত্যু১৬ সেপ্টেম্বর ১৮১৯(1819-09-16) (বয়স ৫৭–৫৮)
দাম্পত্য সঙ্গী 
সন্তানহরকুমার ঠাকুর
প্রসন্নকুমার ঠাকুর সহ ছয় পুত্র ও এক কন্যা ব্রহ্মময়ী
পিতা-মাতাদর্পনারায়ণ ঠাকুর (পিতা)
তারিণী দেবী (মাতা)    

জীবন এবং কাজ

সম্পাদনা

গোপীমোহন ঠাকুরের পিতা দর্পনারায়ণ ঠাকুর ছিলেন চন্দননগরে ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান। তিনিই ঠাকুর পরিবারের পাথুরিয়াঘাটা শাখা পত্তন করেন। তার দুই পত্নী ছিল। প্রথমা পত্নী তারিণী দেবীর পুত্র, গোপীমোহন সংস্কৃত, ফরাসি, পর্তুগিজ, ইংরেজি, ফরাসি ও উর্দু ভাষা জানতেন।[] গোপীমোহন ঠাকুর উত্তরাধিকার সূত্রে বহু সম্পদের জন্য সুপরিচিত ছিলেন এবং ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে, কালীঘাটের কালী মন্দিরে সোনার সবচেয়ে বড় উপহার প্রদান করেন।[]তিনি ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদে ছিলেন। ইংরাজী শিক্ষার প্রচারকল্পে, হিন্দু কলেজ স্থাপনে এককালীন দশ হাজার টাকা দান করেন। ইংরাজী শিক্ষার প্রসারে এই কলেজ (যা পরবর্তীতে প্রেসিডেন্সি কলেজ নামে পরিচিত হয়) প্রতিষ্ঠায় কলকাতার যে পাঁচজন বাবুর দান উল্লেখযোগ্য ছিল তাদের অন্যতম ছিলেন রাজা গোপীমোহন ঠাকুর। বর্ধমান মহারাজের পরই তার অনুদান ছিল বড় অনুদান। সেকারণেই বংশানুক্রমে কলেজের গভর্নরপদ লাভ করেন। [] লাইব্রেরি কক্ষে তার মার্বেল ট্যাবলেট স্থাপন করা হয় এবং যোগ্য ছাত্রদের জন্য তার নামে একটি ছাত্রবৃত্তি চালু করা হয়।[]

গোপীমোহন কলকাতায় জাঁকজমকের সাথে দুর্গাপুজোর আয়োজন করতেন।  জেনারেল ওয়েলেসলি সহ অনেক ইউরোপীয়রা তার  আয়োজিত উৎসবে এবং নৈশভোজে অংশ নিতেন।[]


গোপীমোহন সংস্কৃতচর্চায় উৎসাহী ছিলেন। শিল্প, সঙ্গীত এবং ক্রীড়ার মহান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন এবং এই উদ্দেশ্যে উদারভাবে দান করতেন। বিখ্যাত কুস্তিগীর রাধা গোয়ালা, গীতিকার লক্ষ্মীকান্ত এবং সে সময়ের প্রখ্যাত গায়ক কালী মির্জা নিয়মিত মাসোহারা পেতেন। []

তিনি শোভাবাজার রাজের রাজা রাজকৃষ্ণ দেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি একবার যশোরের রাজা বরদাকান্ত রায়ের পিতাকে সহায়তা করেছিলেন ।

তিনি ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা সফরকারী ব্রিটিশ শিল্পী জর্জ চিননারির সহায়তায় ঠাকুর পরিবারের শিল্প সংগ্রহ শুরু করেছিলেন । তিনি শ্যামনগরের দ্বাদশ শিব লিঙ্গ স্থাপন ও মুলাজোড় কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি ১৮০২ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে এবং অতিথিভবন নির্মাণ ও মন্দিরের ব্যয় নির্বাহের জন্য বহু সম্পত্তি দান করেন।

গোপীমোহন ঠাকুরের ছয় পুত্র ও এক কন্যা ছিল। সুর্য কুমার, চন্দ্র কুমার, নন্দকুমার, কালী কুমার, হরকুমার এবং প্রসন্নকুমার। যাদের মধ্যে হরকুমার ঠাকুর এবং প্রসন্নকুমার ঠাকুর উভয়েই ঠাকুর পরিবারের উত্তরাধিকারকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. সুবোধ সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, নভেম্বর ২০১৩, পৃষ্ঠা ১৯৮, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬
  2. The Modern History of the Indian Chiefs, Rajas, Zamindars, &c। জে.এন. ঘোষ। ১৮৮১। পৃষ্ঠা 163। সংগ্রহের তারিখ ৩ এপ্রিল ২০১৭ 
  3. Dutta, Kalyani, "Kalighat", in "Calcutta, the Living City", Vol I, edited বাই Sukanta Chaudhuri, p 25, Oxford University Press, আইএসবিএন ০-১৯-৫৬৩৬৯৬-১