গোপী
গোপী (गोपी) হল সংস্কৃত ভাষার শব্দ গোপাল থেকে উদ্ভূত যার অৰ্থ হচ্ছে গো পালক বা গরুর লালন-পালনকৰ্তা। হিন্দু ধৰ্মের বৈষ্ণবমতের আখ্যানসমূহে গোপিকা (গোপীর স্ত্ৰীবাচক রুপ) শব্দ গোয়ালিনীদের(পশুপালনে জড়িত বালিকা) এক বিশেষ গোষ্ঠীদের বুঝাতে বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়। ভাগবত পুরাণ ও অন্যান্য পুরাণে বৰ্ণিত ব্যাখ্যা অনুসারে এই ব্রজদেবীগণ ভগবান কৃষ্ণের প্ৰতি নিঃশ্চৰ্ত ও অচলা ভক্তি প্ৰেমে সমর্পিত ছিল। এই ব্রজদেবী বৃন্দের মধ্যে দেবী রাধা ( রাধিকা হিসেবেও পরিচিত) কে হিন্দুদের বহু ধৰ্মীয় পরম্পরাতে বিশেষ করে গৌড়ীয় বৈষ্ণবমতে স্বয়ং মহালক্ষী হিসাবে গণ্য করা হয় ও উচ্চ শ্ৰদ্ধাপূৰ্ণ স্থান ও গুৰুত্ব প্ৰদান করা হয়। [১] গৌড়ীয় বৈষ্ণবমতে বৃন্দাবনের ১০৮ গোপিকার উল্লেখ আছে। উল্লেখ্য যে, দেবী রাধা ও অন্য গোপীদের গোয়ালিনী হিসেবে অভিহিত করা হয়। যদিও বৈষ্ণবমতের ধৰ্মতাত্ত্বিক গূঢ়াৰ্থ অনুসারে তারা পরম-পুরুষ শ্ৰীকৃষ্ণের চিরন্তন সেবিকা ও শক্তি। এই ব্রজদেবীগণ অভ্যন্তরীণ (আন্তঃ) শক্তি বা অন্তঃরঙ্গ শক্তি ও পরম-পুরুষ ঈশ্বরের আন্তঃ-শক্তির বিস্তার।
প্ৰসিদ্ধ গোপীগণ
সম্পাদনাবৃন্দাবনে ব্রজদেবী/গোপীর সংখ্যা গৌড়ীয় বৈষ্ণবমতে ১০৮ ধরা হয়। ব্রজদেবী গণ সকলেই হলেন দেবী লক্ষীর অবতার। কৃষ্ণ চরিত মতে এই সংখ্যা ১৬,০০০। ভক্তিপ্ৰেমের নিদৰ্শন বহনকারী গোপীবৃন্দ বৃন্দাবনের অবিনশ্বর আবাসী। রাধা বা দেবী রাধিকাকে বৃন্দাবনের রাণী হিসেবে গণ্য করা হয় ও প্ৰায়ই রাধারাণী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। গোপীগণকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা যায়: কৃষ্ণের প্ৰায় সমবয়সী বান্ধবী গোপীবৃন্দ; দাসী গোপীবৃন্দ ও বাৰ্তাবাহিকা গোপীবৃন্দ। কৃষ্ণের সমসাময়িক প্ৰথম গোষ্ঠীর গোপীগণ সকলে বেশি মহিমামণ্ডিত (বরিষ্ঠ); দ্বিতীয় গোষ্ঠীর গোপীগণ সকলে তার দাসীস্বরুপ ও দ্বিতীয় সবচেয়ে মহিমামণ্ডিত (বড়) ও তৃতীয় গোষ্ঠীর বাৰ্তাবাহিকা গোপীগণের স্থান তাদের পরে। বরিষ্ঠ গোষ্ঠীর গোপীগণ সকলে বেশি প্ৰসিদ্ধ। তাদের মধ্যে রাধা কৃষ্ণের চিৰন্তন অন্তরঙ্গ প্ৰাণের সখী। দিব্য-যুগলের (কৃষ্ণ-রাধা) প্ৰেমের সমকক্ষতা বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডে আর নেই। [২] শ্ৰীমতী রাধারাণীর পর মুখ্য নয় গোপীকে কৃষ্ণের সৰ্বাগ্ৰগণ্য ভক্ত বা সেবিকা হিসেবে গণ্য করা হয়। তাদের নামসমূহ হল:
- ললিতা সখী
- বিশাখা সখী
- চম্পকলতা সখী
- চিত্ৰা সখী
- তুঙ্গবিদ্যা সখী
- ইন্দুলেখা সখী
- রঙ্গদেবী সখী
- সুদেবী সখী
- অনুরাধা সখী
- শ্বেতা সখী
নিঃশর্ত প্ৰেম
সম্পাদনাহিন্দু ধৰ্মের বৈষ্ণবীয় ধৰ্মতত্ত্ব অনুসারে গোপীগণের আখ্যানসমূহ বিশুদ্ধ-ভক্তির নিদৰ্শন তুলে ধরে। এই বিশুদ্ধ-ভক্তিই হচ্ছে 'ঈশ্বরের(কৃষ্ণ) প্ৰতি সমৰ্পিত সৰ্বোত্তম নিঃশ্চৰ্ত প্ৰেম'। ভাগবত পুরাণের পরের অধ্যায়সমূহে কৃষ্ণের বৃন্দাবন লীলা ও সন্ত উদ্ধবের আখ্যানসমূহে গোপীবৃন্দের কৃষ্ণের প্রতি প্ৰকাশিত স্বতঃস্ফূৰ্ত ও অচলা ভক্তি গভীরভাবর ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
তথ্যসূত্ৰ
সম্পাদনা- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২১।
- ↑ [১]