গোণ্ড জাতি

নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠী

গোণ্ডি (Gōndi) গোঁড় অথবা গোণ্ড জাতি একটি ভারতীয় আদিবাসী জাতি যারা দ্রাবিড় ভাষায় কথা বলে। এই জাতির মানুষ মধ্যপ্রদেশ, পূর্ব মহারাষ্ট্র (বিদর্ভ)[] ছত্তিসগড়, উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার পশ্চিম ওড়িশায় প্রভৃতি এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে।

গোণ্ড
উমরিয়া জেলায় গোণ্ডি জাতির মহিলা
মোট জনসংখ্যা
১৩,২৫৬,৯২৮[][]
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
ভারত
মধ্যপ্রদেশ৫,০৯৩,১২৪[]
ছত্তিসগড়৪,২৯৮,৪০৪[]
মহারাষ্ট্র১,৬১৮,০৯০[]
ওড়িশা৮৮৮,৫১৮[]
উত্তরপ্রদেশ৫৬৯,০৩৫[]
অন্ধ্রপ্রদেশ (বিভাজন পূর্ব)৩০৪,৫৩৭[]
বিহার২৫৬,৭৩৮[]
কর্ণাটক১৫৮,২৪৩[]
ঝাড়খণ্ড৫৩,৬৭৬[]
পশ্চিমবঙ্গ১৩,৫৩৫[]
গুজরাত২,৯৬৫[]
ভাষা
গোণ্ডি, হিন্দি, মারাঠি, তেলুগু
ধর্ম
হিন্দুধর্ম []
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
দ্রাবিড় জাতি, মুরিয়া জনজাতিমাড়িয়া জাতি

গোণ্ডদের রাজ গোণ্ডও বলা হয়ে থাকে। ১৯৫০-এর দশকে শব্দটির বহুলভাবে ব্যবহৃত হলেও, বর্তমানে এর ব্যবহার হয় না বললেই চলে, এর কারণ সম্ভবত গোণ্ড রাজাদের রাজনৈতিক ক্ষমতার বিলোপ।[][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন] গোণ্ডি ভাষা দ্রাবিড় ভাষা পরিবারের অংশ এবং তেলুগু ভাষার সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। গোণ্ডি জাতির প্রায় অর্ধেক লোক গোণ্ডি ভাষায় কথা বলে এবং বাকিরা হিন্দি, মারাঠি সহ অন্যান্য ইন্দো-আর্য ভাষায় কথা বলে।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের আদমশুমারি অনুযায়ী, তাদের জনসংখ্যা ৫.০১ মিলিয়ন। ১৯৯১-এর আদমশুমারিতে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯.৩ মিলিয়ন হয়[][পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]এবং ২০০১ আদমশুমারিতে প্রয় ১১ মিলিয়ন হয়ে যায়। গত কয়েক দশক ধরে তারা ভারতের মধ্যাঞ্চলের নকশাল–মাওবাদী বিদ্রোহের সাক্ষী।[] নক্সাল বিদ্রোহীদে বিরুদ্ধে লড়তে গোণ্ডি জাতির লোকেরা, ছত্তিসগড় সরকারের নির্দেশে সালওয়া জুড়ুম নামে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করে।[]

ইতিহাস

সম্পাদনা

ইতিহাসবিদগণ ধারণা করেন যে, গোণ্ড জাতির রাজাগণ ১৩ম শতক থেকে ১৯শ শতকের মাঝামাঝি সময় গণ্ডোয়ানা নামক অঞ্চলটি শাসন করতেন; যা বর্তমানে পূর্ব মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও পশ্চিম ওড়িশার অন্তর্গত। মুসলিম লেখকগণ ১৪ম শতকরের পরবর্তী সময়ে গোণ্ড রাজত্বের উত্থানে বর্ণনা দিয়েছেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

গোণ্ডরা ১৬ম শতক ও ১৮ম শতকের মাঝামাঝি সময়ে মধ্য ভারতের চারটি রাজ্যে (গার্হা রাজ্য, দেওগড়, চন্দ, ও খের্লা রাজ্য) রাজত্ব করেন। সেসময় তারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দুর্গ, প্রাসাদ, হ্রদ, ও মন্দির নির্মাণ করেন। গণ্ডোয়ানা রাজ্য ১৬ম শতাব্দীর শেষার্ধ সময় পর্যন্ত ঠিকে ছিল। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠাগণ কর্তৃক মুঘলরা পরাস্ত হলে মালবা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গোণ্ডরা ফিরে পায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে মারাঠাগণ গণ্ডোয়ানা দখল করে নিজেদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করে। মারাঠাগণ গোণ্ড রাজাদের উৎখাত করে এবং তাদের অধিকাংশ এলাকা দখল করে নেয়, যদিও কিছু গোণ্ড জমিদারি সাম্প্রতিক সময় পর্যন্ত ছিল।[]

বিজ্ঞান ও ধর্ম

সম্পাদনা

বহু জ্যোতির্বিদ্যাগত ধারণা সম্পর্কে প্রাচীন গোণ্ডরা অবহিত ছিলেন।[] সূর্য, চাঁদ, নক্ষত্রপুঞ্জ ও ছায়াপথের জন্য গোণ্ডদের নিজস্ব স্থানীয় নাম ছিল। এই ধারণার অধিকাংশই ছিল তাদের সময়-পালন এবং পঞ্জিকাগত কার্যকলাপ ভিত্তিক। গোণ্ড জাতি ছাড়াও, লম্বাণিকোলাম জাতির লোকেরাও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে জ্ঞান রাখত।[১০]

তাদের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী মৃত্যুকে তারা এক প্রকার রাগ হিসেবে বর্ণনা করে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে এটি জাদুকর ভূতদের দ্বারা সৃষ্ট হয়।[১১] তাদের ধর্ম ছিল মূলত গোষ্ঠী ও গ্রাম-দেবতার উপাসনা, সেইসাথে পূর্বপুরুষগণের উপাসনা করা।[১২]

বর্গীকরণ

সম্পাদনা

তারা অন্ধ্রপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাত, ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে তফসিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত।[১৩]

উত্তরপ্রদেশ সরকার গোণ্ডি জাতিকে তফসিলি উপজাতির অন্তর্ভুক্ত করে কিন্তু ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ তারা উত্তরপ্রদেশে তাফসিলি জনগোষ্ঠী হিসেবে নিবন্ধিত ছিল।[১৪] ২০১৭ সালের হিসাবে, এই উপজাতীয় পদটি কেবল নির্দিষ্ট জেলাতেই প্রযোজ্য, সম্পূর্ণ রাজ্যে নয়।[১৫] ২০১১-এর জনগণনায় উত্তরপ্রদেশে তফসিলি উপজাতি ভুক্ত গোণ্ডদের সংখ্যা ২১,৯৯২ দর্শানো হয়।[১৬]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "List of notified Scheduled Tribes" (পিডিএফ)। Census India। ৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ডিসেম্বর ২০১৩ 
  2. "A-11 Individual Scheduled Tribe Primary Census Abstract Data and its Appendix"Census of India 2011Office of the Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-২৯ 
  3. "ST-14 Scheduled Tribe Population By Religious Community"www.censusindia.gov.in। Census of India Website : Office of the Registrar General & Census Commissioner,India। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৬-২৯ 
  4. Deogaonkar, Shashishekhar Gopal (২৩ নভেম্বর ২০১৭)। "The Gonds of Vidarbha"। Concept Publishing Company – Google Books-এর মাধ্যমে। 
  5. Verma, R. C. (২০০২)। Indian Tribes Through the Ages। Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। আইএসবিএন 978-8-12300-328-3 
  6. Rashid, Omar (২৯ আগস্ট ২০১৫)। "Bringing rural realities on stage in urban India" – www.thehindu.com-এর মাধ্যমে। 
  7. "Salwa Judum is the only effective weapon against Maoist terror at present"। ৬ জুন ২০১৭।  অজানা প্যারামিটার |Accessdate= উপেক্ষা করা হয়েছে (|accessdate= ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য)
  8. Bates, Crispin (১৯৯৫)। "Race, Caste and Tribe in Central India: the early origins of Indian ...anthropomorphize"। Robb, Peter। The Concept of Race in South Asia। Delhi: Oxford University Press। পৃষ্ঠা 233। আইএসবিএন 978-0-19-563767-0। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১২-০২ 
  9. https://arxiv.org/ftp/arxiv/papers/1306/1306.2416.pdf
  10. https://arxiv.org/ftp/arxiv/papers/1406/1406.3044.pdf
  11. Santrock, John W. (২০১৭)। Life-Span Development (16th International সংস্করণ)। McGraw Hill। পৃষ্ঠা 598। আইএসবিএন 9781259254833 
  12. "Gond | people"Encyclopedia Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ০৮ জুলাই, ২০১৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  13. "List of notified Scheduled Tribes" (পিডিএফ)। Census India। ৭ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৮ জুলাই, ২০১৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  14. Darpan, Pratiyogita (জুলাই ২০০৭)। "State At A Glance - Uttar Pradesh"Pratiyogita Darpan2 (13): 81। 
  15. "State wise Scheduled Tribes — Uttar Pradesh" (পিডিএফ)। Ministry of Tribal Affairs, Government of India। 2016-11-23 তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ০৮ জুলাই, ২০১৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  16. "A-10 Individual Scheduled Caste Primary Census Abstract Data and its Appendix - Uttar Pradesh"। Registrar General & Census Commissioner, India। সংগ্রহের তারিখ ০৮ জুলাই, ২০১৮  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)

আরও পড়ুন

সম্পাদনা
  • The tribal art of middle India - ভেরিয়ার এলউইন - ১৯৫১
  • Savaging the Civilized, Verrier Elwin, His Tribals & India - Ramachandra Guha - The University of Chicago Press - 1999
  • Beine, David m. 1994. A sociolinguistic survey of the Gondi-speaking communities of central India. M.A. thesis. San Diego State University. 516 p.
  • Banerjee, B. G., and Kiran Bhatia. Tribal Demography of Gonds. Delhi: Gian Pub. House, 1988. আইএসবিএন ৮১-২১২-০২৩৭-X
  • Elwin, Verrier. Phulmat of the Hills; A Tale of the Gonds. London: J. Murray, 1937.
  • Fürer-Haimendorf, Christoph von, and Elizabeth von Fürer-Haimendorf. The Gonds of Andhra Pradesh: Tradition and Change in an Indian Tribe. London: George Allen & Unwin, 1979. আইএসবিএন ০-০৪-৩০১০৯০-৩
  • Kaufmann, Walter. Songs and Drummings of the Hill Maria, Jhoria Muria and Bastar Muria Gonds. And, the Musical Instruments of the Marias and Murias. 1950.
  • Mehta, B. H. Gonds of the Central Indian Highlands: A Study of the Dynamics of Gond Society. New Delhi: Concept, 1984.
  • Museum of Mankind, Shelagh Weir, and Hira Lal. The Gonds of Central India; The Material Culture of the Gonds of Chhindwara District, Madhya Pradesh. London: British Museum, 1973. আইএসবিএন ০-৭১৪১-১৫৩৭-১
  • Pagdi, Setumadhava Rao. Among the Gonds of Adilabad. Bombay: Popular Book Depot, 1952.
  • Pingle, Urmila, and Christoph von Fürer-Haimendorf. Gonds and Their Neighbours: A Study in Genetic Diversity. Lucknow, India: Ethnographic & Folk Culture Society, 1987.
  • Sharma, Anima. Tribe in Transition: A Study of Thakur Gonds. India: Mittal Publications, 2005. আইএসবিএন ৮১-৭০৯৯-৯৮৯-৮
  • Singh, Indrajit. The Gondwana and the Gonds. Lucknow, India: The Universal publishers, 1944.
  • Kangalee, Motiram Chhabiram, Paree Kupar Lingo Gondi Punemi Darshan (In Hindi),Publisher ujjvala society Nagpur,2011
  • Vatti, Jalpati,Mava sagaa padeeng, in Gondwana sagaa Patrika published (In Hindi) in October 1986

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

এই নিবন্ধটিতে ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের সার্বজনীন ডোমেইন লাইব্রেরি অব কংগ্রেস কান্ট্রি স্টাডির উপাদান রয়েছে