গুলঞ্চ

উদ্ভিদের প্রজাতি

গুলঞ্চ লতা (পদ্ম গুলঞ্চ) বা টিনোস্পোরা (সংস্কৃত নাম : অমৃত, তন্ত্রিকা, কুণ্ডলিনী, চক্রলক্ষ্মীণি) হচ্ছে একটি মেনিসপার্মেসিয়া পরিবারের অর্ন্তভূক্ত পর্ণমোচী উদ্ভিদ যা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে বহুলভাবে জন্মায়। [] যার বৈজ্ঞানিক নাম: টিনোস্পোরা কর্ডিফোলিয়া। এর সাধারণ নাম: পদ্ম গুলঞ্চ, ঘোড়া গুলঞ্চ, পদ্মলঞ্চি, গুড়ুচ, গিলয়, গুডুস, গুড়ুচি, গুলবেল, হার্ট-লিভড মুনসিড (heart leaf moonseed), টিনোস্পোরা।

গুলঞ্চ (গিলয়)
Tinospora cordifolia
টিনোস্পোরা উদ্ভিদের পাতা
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
বিভাগ: ট্র্যাকিওফাইট 
শ্রেণী: Magnoliopsida
বর্গ: Ranunculales
পরিবার: মেনিসপার্মেসিয়া
গণ: টিনোস্পোরা
প্রজাতি: টি. কর্ডিফোলিয়া
দ্বিপদী নাম
টিনোস্পোরা কর্ডিফোলিয়া
(Thunb.) Miers

প্রশমণের গুণ এবং স্বাস্থ্যকর উপাদানের জন্য আয়ুর্বেদিক এবং ঘরোয়া চিকিৎসায় এটির কদর অসামান্য। বস্তুত, স্বাস্থ্যের সার্বিক উপকারিতার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতার জন্য আয়ুর্বেদে এটিকে ‘‘রসায়ন’’ নামে অভিহিত করা হয়। সংস্কৃতে এটিকে ‘‘অমৃত’’ বলা হয়েছে, যার অর্থ ‘‘অমরত্বসুধা’’। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য ঐতিহ্যবাহী ওষুধের শতাব্দী ব্যবহারের সত্ত্বেও, কোনও উচ্চমানের ক্লিনিকাল প্রমাণ নেই যে এটিতে রোগের উপর কোনও প্রভাব আছে। []

উদ্ভিদসংক্রান্ত বর্ণনা

সম্পাদনা

গুল্মটি অন্য গাছের ওপরে বেয়ে ওঠা লতানো উদ্ভিদ। কাণ্ডের উপরিভাগ খসখসে ফাটল যুক্ত। বিস্কুট রং এর চামড়া। পাতা পানপাতার মত হৃদয় আকৃতির এবং লম্বা বোটা যুক্ত। লম্বা সুতার মত অসংখ্য বায়ুবীয় মূল যা ঝুলন্ত কাণ্ড থেকে মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত। এই গাছে গ্রীষ্মকালে ফুল ফোটে এবং শীতকালে ফল পাকে। পূংকেশর এবং স্ত্রীকেশর ভিন্ন ফুলে থাকে। এর কাণ্ড দুর্বল এবং রসালো। কাণ্ডের রং হচ্ছে সাদা থেকে ধূসর এবং তা ১-৫ সেমি পর্যন্ত মোটা হতে পারে। গুলঞ্চের পাতা দেখতে হৃদয়ের (হার্ট) আকারের এবং তাতে মেমব্রেন (ঝিল্লি) আছে। তাতে গ্রীষ্মকালে সবজেটে-হলুদ রঙের ফুল ফোটে আর গুলঞ্চের ফল সাধারণত শীতকালে দেখা যায়। গুলঞ্চের সবুজ রঙের আঁটিযুক্ত ফল (ড্রুপ) হয়ে থাকে যা পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। গুলঞ্চের কাণ্ডেই অধিকাংশ নিরাময়যোগ্য গুণ আছে, তবে পাতা, ফল, এবং শিকড় বা মূলেও অল্পবিস্তর গুণ আছে।

উৎপত্তি

সম্পাদনা

আদি কাল থেকেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, মণিপুর, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, অরুণাচল, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মায়ানমার, ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্যও দেশে পাওয়া যায়।

ব্যবহার

সম্পাদনা

ব্যবহৃত অংশ: কাণ্ড, পাতা।
এ লতায় আছে আশঁ (১৫ - ১৯%), প্রোটিন (৩.১%) এবং প্রতি ১০০ গ্রামে ২৯২.৫৪ ক্যালরি পুষ্টি শক্তি। এ লতায় আরো আছে নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ যেমন জিঙ্ক, ম্যাঙ্গানিজ, ফ্লোরিন, ক্যালশিয়াম, টাইটানিয়াম, ক্রমিয়াম, আয়রন, কোবাল্ট, নিকেল, কপার, ব্রমিন, ষ্ট্রোনশিয়াম এবং পটাশিয়াম। জানামতে পটাশিয়াম (০.৮৪৫%) যা স্নায়ুবিক শক্তিবৃদ্ধি করে। ক্রমিয়াম (০.০০৬%) শর্করা ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। আয়রন (০.২৮%) যা হেমোগ্লোবিন বৃদ্ধি করে এবং ক্যালশিয়াম (০.১৩%) স্নায়ু, হৃদযন্ত্র এবং পেশি শক্তি বৃদ্ধি করে। এ গাছের রস বেশ তিতা তবে এর মধ্যে আছে এন্টি-অকসিডেন্ট, এন্টিহাইপার গ্লাইসেমিক, এন্টি- নিওপ্লাসটিক, এন্টিডোট, এন্টি-প্লাসমোডিক, এন্টি-হাইপারটিক, এন্টি-এলার্জিক, এন্টি-ইনফ্লামেটরি, এন্টিহাইপার লাই পেডেমিয়া, এন্টি-এষ্ট্রেস সমৃদ্ধ গুনাবলী। এর মধ্যে আরো আছে এলকালয়েড, ডিটারপিনয়ড, ল্যাকটোনস, ষ্টেরয়েডস, গ্লাইকোসাইডস, এলিফ্যাটিক যৌগ এবং পলিসাকারাইড। যুগযুগ ধরে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে জন্ডিস, ডায়াবেটিস, আর্থ-রাইটিস, ক্যান্সার, ডেঙ্গুজ্বর, আমাশয়, গনোরিয়া, সিফিলিস, হেপাটাইটিস, চর্মরোগ, রক্তশূন্যতা, ব্রনকাইটিস, এজমা, পাইল্স, কিডনি রোগ, এবং সাপের বিষের এন্টিডোট হিশাবে ব্যবহার হয়।


১. পুরাতন বা জীর্ণ জ্বরে: গুলঞ্চের পাতা শাকের মতো কুচিয়ে ভেঙ্গে খেলে জ্বর ছেড়ে যায়। পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব না হলে ৮ থেকে ১০ গ্রামের মতো গুলঞ্চের ডাঁটা অল্প জল দিয়ে থেতো করে নিংড়ে ঐ রসকে ছেঁকে, অল্প গরম করে খেতে হবে, এটাতেও কাজ হবে অথবা থেতো করা ঐ গুলঞ্চ এক কাপ জলে সিদ্ধ করে আধা কাপ থাকতে নামিয়ে ছেঁকে অল্প চিনি মিশিয়ে খেতে হবে অথবা গুলঞ্চের রস বা ক্বাথ দিয়ে ঘি তৈরী করে খেতে হবে। এতে জ্বর ছেড়ে যায়।[]

২. অরুচিতে: যাঁদের মুখে কিছু ভাল লাগে না, খেতে ইচ্ছে হয় না, তাঁরাও এই পাতা ভেজে খেয়ে দেখুন, তাহলে অরুচি চলে যাবে।

৩. বাতের যন্ত্রণায়: প্রায়ই হাত পা কনকন করে, এই ক্ষেত্রে ১০ গ্রাম অন্দাজ গুলঞ্চ ছেঁচে উপরিউক্ত নিয়মে ক্বাথ করে অল্প একটু দুধ মিশিয়ে কয়েকদিন খেলে ওটা উপশম হবে। তবে যে সব কারণে যেমন আহার, বিহারের জন্য বাত বাড়ে সেগুলিকে বর্জন তো করতেই হবে।

৪. পচা ঘায়ে: ১০ থেকে ১৫ গ্রাম থেঁতো গুলঞ্চের ক্বাথ করে সেটা দিয়ে ক্ষত ধুলে পচা ঘায়ের ব্যথা কমে যাবে।

৫. হৃৎ কম্পনে: ৫ থেকে ৭ গ্রাম গুলঞ্চকে ক্বাথ করে খেলে ওটা কমে যাবে, তবে ২ গ্রেণ বা একরতি গোল মরিচের গুড়া মিশিয়ে খেতে হবে।

৬. রক্তার্শে: যাঁরা এ রোগে ভুগছেন, তাঁরা ৫ থেকে ৭ গ্রাম গুলঞ্চকে ক্বাথ করে খেতে হবে তাহলে প্রশমিত হবে। তবে এই ক্বাথকে ভাগ করে দুই বেলায় খেতে হবে।

৭. দ্বিতীয় যোগ (অর্শের): একটা মাটির বাটি বা খুরিতে গুলঞ্চের রস মাখিয়ে, সেই পাত্রে দই পেতে সেই দই খেলে অর্শের উপকার হয়।

৮. আগ্নিমান্দ্যে: খাওয়ার ইচ্ছে যেমন কম, আবার খেলেও হজম হতে চায় না, যাকে বলা হয় অগ্মিমান্দা রোগ বা শ্লেষ্মাপ্রধান অগ্নিমান্দা, এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চ শুকিয়ে গুড়া করে প্রত্যহ ১ গ্রাম করে জলসহ খেতে হবে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ক্ষিধে বেড়ে যাবে।

৯. স্বরভঙ্গে: স্থুলকায়, তার সঙ্গে আবার কফের যোগ হলে অনেকের স্বরভঙ্গ হয়, সেখানে গুলঞ্চের ক্বাথে কাজ হয়।

১০. কাসিতে: অনেক সময় কাসি হেকে ডেকে আসে না, খসখসে, সেখানে একটু গুলঞ্চের ক্বাথে মধু মিশিয়ে খেলে অসুবিধাটা কমে যাবে।

১১.বাতরক্তে: অনেক সময় গায়ে চাকা চাকা হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে শক্ত হয়, আবার ব্যথাও থাকে; এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের রস বা ক্বাথ দিয়ে তৈরী তেল মাখা, অভাবে গুলঞ্চের রস গায়ে মাখা ও গুলঞ্চের ক্বাথ খাওয়া, এর দ্বারা ঐ বাতরক্তজনিত অসুবিধা যেটা আসছে সেটা দূর হবে। তবে এটি যদি পদ্মগুলঞ্চ হওয়া দরকার, তা না হলে আশানুরূপ উপকার হয় না।

১২. কমলা বা ন্যাবা রোগ: ২ ইঞ্চি পরিমাণ গুলঞ্চ চাকা চাকা করে কেটে ১ কাপ জলে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালে সেই জলটায় একটু চিনি মিশিয়ে খেতে হবে।

১৩. বাতজ্বরে: সর্দি কাসি কিছুই নেই, হঠাৎ হাই উঠে কেঁপে জ্বর আসে, আবার খানিকক্ষণ বাদে কমে যায়, একে বলে বাতিকের জ্বর, এ ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ গ্রাম গুলঞ্চকে থেঁতো করে তার ক্বাথ ছেঁকে ঠাণ্ডা হয়ে গেলে খেতে হবে।

১৪. শুল ব্যথা: গুলঞ্চ চূর্ণ ১ গ্রাম, গোল মরিচের গুঁড় সিকি গ্রাম একসঙ্গে গরম পানি দিয়ে খেতে হবে।

১৫.বসন্ত রোগে: হাত পা অসম্ভব ব্যাথা করে এক্ষেত্রে গুলঞ্চ রস করে অল্প জল দিয়ে থেঁতো করলেই এর রস সহজে বেরোয়; সেই রস হাত পায়ে লাগালেই ঐ জ্বালা কমে যাবে।

১৬. পেটের দোষে: প্রায়ই ভুগে থাকেন, পেট জ্বালাও করে, সঙ্গে সঙ্গে ফ্যাকাসে ভাব আসছে, এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের ক্বাথ কাজে আসে।

১৭. সোরিয়াসিসে (Psoriasis): গায়ে চাকা চাকা হয়ে ওঠে, মুমড়ি পড়তে থাকে, আবার কোনো কোনো জায়গা থেকে রস গড়তে থাকে, এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের ক্বাথ খাওয়া, গুলঞ্চের রস দিয়ে তৈরী তেল মাখা, আর গুলঞ্চ রস করে গায়ে মাখা। অদ্ভুত ফল পাবেন।

১৮. পিত্ত বমিতে: পেটে কিছু থাকছে না, সে ক্ষেত্রে আধ কাপ জলে দেড় বা দুই ইঞ্চির মতো গুলঞ্চ পাতলা চাকা চাকা করে কেটে জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে, তারপর তা থেকে ছেঁকে ২ থেকে ১ চামচ করে জল নিয়ে তার সঙ্গে ২ থেকে ১ চামচ দুধ মিশিয়ে খেতে হয়। অবশ্য এটা পিত্তশ্লেষ্মা জন্য বমনেই ভাল।

১৯. পিপাসায়: ঐভাবে কাটা গুলঞ্চ ও মৌরী একসঙ্গে ভিজিয়ে ঐ জল একটু একটু করে খেতে হবে তাহলে পিপাসা চলে যায়।

২০. মেদবৃদ্ধিতে: যারা না খেয়েই মোটা আর খেলে তো কথায় নেই, তাঁরা ৮ থেকে ১০ গ্রাম গুলঞ্চের ক্বাথ করে বা ১ কাপ আন্দাজ; তাতে ১ চামচ মধু মিশিয়ে খেয়ে হবে, তবে ২ থেকে ৪ দিন খেয়েই হতাশ হলে চলবে না।

২১. ক্রিমিতে: গুলঞ্চের ক্বাথ একটু একটু খেতে হবে, বা খেলে ক্রিমি সমস্যার সমাধান হবে।

গুলঞ্চের চিনি বা শ্বেতসার প্রস্তুত

পরিণত বয়সের মোটা মোটা গুলঞ্চকে টুকরো টুকরো করে কেটে থেঁতো করে ৮ গুণ জল দিয়ে ভাল করে মসটে, যাকে বলা হয় চটকে নিয়ে, একটু চুবড়িতে ঢেলে দিলে সিটেগুলি মোটামুটি ভাবে বেরিয়ে যাবে, তারপর ঐ জল থিতিয়ে গেলে উপরের ঐ জল আস্তে আস্তে ঢেলে ফেলতে হবে। নিচে যেটা থিতিয়ে বসে আছে সেইটাই রোদে শুকিয়ে ছেকে নিলেই গুলঞ্চের শ্বেতসার পাওয়া যায়; একেই গুলঞ্চের চিনি বলে। বহু রোগের ক্ষেত্রে এই চিনি ব্যবহার করা হয়।

২২. মস্তিকের দূর্বলতা: গুলঞ্চের চিনি ৩ রতি থেকে এক আনা মাত্রায় একটু দুধের সঙ্গে খেলে ঐ দূর্বলতাটা কেটে যায়।

২২. দূর্বলতা: দীর্ঘদিন থেকে চলছে, অস্থির কোনো পোষণ নেই; সেক্ষেত্রে অল্প ঘিয়ের সঙ্গে গুলঞ্চর চিনি ১ গ্রাম আন্দাজ মিশিয়ে চেটে খেলে আস্তে আস্তে সমস্যার ঠিক হয়ে যাবে।

২৩. প্রমেহ রোগে: প্রমেহ কথাটার দ্বারা প্রস্রাব ঘটিত বহু, রোগের ইঙ্গিত বহন করে, তার মধ্যে যে মেহে প্রস্রাবের পূর্বে বা পরে লালার মত নির্গত হয় তাকে বলা হয় লালা মেহ । এই ক্ষেত্রে গুলণ্ডের চিনি হাফ গ্রাম এবং তার সঙ্গে কাবাবচিনি হাফ গ্রাম মাত্রায় একত্রে দুধসহ খেলে কয়েক দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফল পাওয়া যায়। আমাদের দেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত যে, নিম গাছের গুলঞ্চই বেশী তিক্ত হয়, এবং সেই গাছের গুণ গ্রহণ করে। এরা অপরাশ্রীতা লতা হলেও অপরের রস গ্রহণ করার উপযোগী পরিবেশই বা কোথায় ? তারা তো মাটি থেকে রস গ্রহণ করে। তবে প্রজাতি ভেদে সে যে গাছই আশ্রয় করে থাকুক না কেন, স্বল্প বা তিক্ত হবেই। সাধারণ গুলঞ্চ যাকে আমরা চলতি কথায় বলি ‘ঘোড়া গুলঞ্চ’ (Tinospora cordifolia). সে গুলঞ্চ নিমগাছের হলে সে তিক্ত হবে। আবার পদ্মগুলঞ্চ যদি আমড়া গাছেও হয়, তার তিক্ততা যে কেমন তা যে পান করে সেই বুঝবেন।

২৪.মাথায় ছোট ছোট ফুসকুড়ি ও ব্যথাও আছে, আবার মুখে মামড়িও পড়ে; এটি পিত্তশ্লেষ্মাজ ব্যাধি। এ ক্ষেত্রে গুলঞ্চের রস দিয়ে তৈরী তেল মাথায় লাগালে ভাল কাজ হয়, তা না হলে ১ চামচ রস ৩ থেকে ৪ চামচ জল মিশিয়ে একটু গরম করে সেইটা প্রত্যহ একবার করে কয়েকদিন লাগানো আর গুলঞ্চের রস খেতে হবে।

গুলঞ্চের স্বাস্থ্য উপকারিতা

সম্পাদনা

আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা শাস্ত্রে গুলঞ্চ একটি পরিচিত গুল্ম। গুলঞ্চের কাণ্ড শুধুমাত্র নিরাময়ের একটি চমৎকার এজেন্ট নয়, কিন্তু রাসায়নিকভাবে এটি আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যাতে ঠিকভাবে এবং তাদের সম্পূর্ণ শক্তি-সহ কাজ করে তা নিশ্চিত করে। এই আয়ুর্বেদিক মহৌষধের বহু স্বাস্থ্যের উপকারিতা রয়েছে।

  • ওজন কমাতে গুলঞ্চ:

গুলঞ্চ হাইপোলিপিডেমিক হিসাবে কাজ করে বলে নিয়মিত সেবন করলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে চমৎকার কাজ দেয়। শরীরের পরিপাক প্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটাতে সাহায্য করে এবং যক্কৃৎ রক্ষা করে।

  • জ্বর উপশমে গুলঞ্চ:

দীর্ঘস্থায়ী জ্বরের চিকিৎসার জন্য চিরাচরিতভাবে গুলঞ্চ ব্যবহার হয়। বিভিন্ন প্রাণীর ওপর প্রয়োগ করে গুলঞ্চের অ্যান্টিপাইরেটিক কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডেঙ্গির বিরুদ্ধে কার্যকারিতা বুঝতে শারীরিক পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে জ্বর উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে। তবে কীভাবে এই গুল্ম কাজ করার জন্য শারীরের তাপমাত্রা কমে তার তেমন কোনও নির্দিষ্ট কারণ পাওয়া যায়নি। কাজেই গুলঞ্চের অ্যান্টিপাইরেটিক কার্যকারিতা সম্পর্কে জানতে কোনও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের কাছে এ ব্যাপারে জেনে নেওয়া প্রয়োজন। গুলঞ্চ ইমিউনোমডিউলেটরি প্রক্রিয়া করে এবং তার অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান আছে। ডেঙ্গি জ্বরের মতো জীবাণুর সংক্রমণের হাত থেকে এটি রক্ষা করে।

  • ডায়বিটিসের প্রতিরোধে গুলঞ্চ:

ইনসুলিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম হয় বলে ডায়বিটিসের ক্ষেত্রে এটি কার্যকরী হয়।

  • শ্বাসকষ্ট রুখতে গুলঞ্চ:

দেখা গিয়েছে, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস-এর চিকিৎসায় গুলঞ্চ কার্যকরী ভূমিকা নেয় এবং হাঁপানি বা অ্যাজমার উপসর্গ কমানোর ক্ষেত্রেও এটি কাজে লাগে।

  • মহিলাদের জন্য গুলঞ্চ:

রোগ প্রতিরোধী উপাদানগুলির জন্য রজঃনিবৃত্তি উত্তর (পোস্টমেনোপজাল) মহিলাদের জন্য গুলঞ্চ খুব কাজে লাগে। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান অস্টিওপোরোসিস (হাড়ের ক্ষয়)  রোধ কমাতে পারে।

  • পুরুরষদের জন্য  গুলঞ্চ:

গুলঞ্চের ব্যবহারে বীর্যধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে পুরুষদের যৌন ক্ষমতা বা ইচ্ছা বৃদ্ধি পায়।

  • ক্যান্সারের প্রতিরোধে গুলঞ্চ:

কয়েকটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গুলঞ্চের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদানের জন্য গুলঞ্চের ব্যবহার করা যেতে পারে।

  • মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুলঞ্চ:

দুশ্চিন্তা, অবসাদ এবং অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গুলঞ্চের ব্যবহার হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Tinospora"। Drugs.com। ১৫ জুলাই ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  2. ভট্টাচার্য, শিবকালী (প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৬৭-১৭১)। চিরঞ্জীব বনৌষধি (খন্ড ১)। কলকাতা: আনন্দ পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা। পৃষ্ঠা প্রথম প্রকাশ ১৩৮৩, পৃষ্ঠা, ১৬৭–১৭১। আইএসবিএন 978-81-7066-611-0  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা