গারট্রুড এমারসন সেন
গারট্রুড এমারসন সেন (৬ মে ১৮৯০ - ১৯৮২) ছিলেন বিশ শতকের প্রথম দিকের এশিয়া বিষয়ক মার্কিন বিশেষজ্ঞ, "এশিয়া" পত্রিকার সম্পাদক, ভূগোলবিদ এবং "সোসাইটি অফ ওম্যান জিওগ্রাফারস"- এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। [১][২]
গারট্রুড এমারসন সেন | |
---|---|
জন্ম | ৬ মে ১৮৯০ |
মৃত্যু | ১৯৮২ |
পেশা | শিক্ষাবিদ, লেখক, সম্পাদক |
দাম্পত্য সঙ্গী | বশীশ্বর সেন |
আত্মীয় | আলফ্রেড ই এমারসন (ভ্রাতা); এডিথ এমারসন (ভগিনী) |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী(১৯৭৬) |
প্রাথমিক জীবন এবং শিক্ষা
সম্পাদনাগারট্রুড এমারসনের জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য ইলিনয়ের লেক ফরেস্টে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে। পিতা আলফ্রেড এমারসন, সিনিয়র ছিলেন কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং মাতা এলিস এডওয়ার্ডস এমারসন ছিলেন একজন পিয়ানোবাদক।[১]প্রখ্যাত কীটতত্ত্ববিদ আলফ্রেড ই.এমারসন ছিলেন গারট্রুডের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা। ফিলাডেলফিয়ার উডমেয়ার আর্ট গ্যালারির সভাপতি ও কিউরেটর (১৯৪৯-১৯৭৮) ছিলেন তার ভগিনী শিল্পী এডিথ এমারসন। [৩]তার আর এক ভ্রাতা উইলার্ড ছিলেন ব্যাঙ্কার। [৪]
গারট্রুড এমারসন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস ও সাহিত্যে স্নাতক হন । [৫]
কর্মজীবন
সম্পাদনাশিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর গারট্রুড ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে চলে যান জাপানে তার পিতামহের কাছে। জাপানে অবস্থানকালে তিনি ইংরাজী শেখানোর পাশাপাশি নিজে জাপানী ভাষা, জাপানী বাঁশের বাঁশি 'শাকুহাচি' বাজাতে শেখেন আর নিমগ্ন থাকেন জাপানের সংস্কৃতিতে, শিক্ষা ব্যবস্থা, জাতীয় গর্বে, জাতি গঠনে ইতিহাসের ভূমিকা সম্পর্কে বিশদ অবগত হতে আর কবিতা লেখায় ও বাগান পরিচর্যা করতে। তার লেখালেখির মধ্যে স্বাভাবিকভাবে সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ এসে পড়ে। বান্ধবী এলসি উইলের সঙ্গে পূর্ব এশিয়ায় যান সাংবাদিকতার কাজে।[৬] ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রেরএক হিতৈষী দম্পতি উইলার্ড স্টেইট ও ডরোথি স্টেইট প্রতিষ্ঠিত এশিয়া ম্যাগাজিন-এ সহযোগী সম্পাদক হওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন।১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফটোগ্রাফার ডোনাল্ড সি. থম্পসনের ও তার স্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকতার কাজে ভ্রমণ করেন। [৬] ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি ব্লেয়ার নীলস, মার্গারিট হ্যারিসন,গারট্রুড ম্যাথিউস শালবি'দের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন 'সোসাইটি অফ উইমেন জিওগ্রাফার্স' এবং তিনি দীর্ঘদিন এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য ছিলেন।১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের পর লেবাননের বৈরুত, আরব মরুভূমি এবং আফগানিস্তান হয়ে খাইবার পাস ধরে ভারতের নেপাল-উত্তর প্রদেশ সীমান্তে বলরামপুরের পাচপেড়ওয়া (পাঁচটি গাছ তথা 'পেড়' আছে এমন গ্রাম) নামের এক ছোট্ট গ্রামে আসেন। [৬]১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি এশিয়া ম্যাগাজিন-এর অবদানকারী সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হন এবং ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই কাজের যুক্ত ছিলেন।
অবশেষে ঘটনাক্রমে গারট্রুড এমারসন ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দ হতে উত্তর-পূর্ব ভারতের আলমোড়ায় বসবাস শুরু করেন, সেখানকার গ্রামীণ জীবনে একাত্ম হয়ে যান। স্বামী বশীশ্বর সেনেরবিবেকানন্দ গবেষণাগার ভারতীয় সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শুরু করেন। তার সেই একাত্মতা প্রতিফলিত হয়েছে রচিত নিম্নবর্ণিত গ্রন্থ সমূহে -
- ভয়েসলেস ইন্ডিয়া (১৯৩০), [৭]
- পাজেন্ট অফ ইন্ডিয়া'জ হিস্ট্রি (১৯৪৮), [৮] এবং
- কালচারাল ইউনিটি অফ ইন্ডিয়া (১৯৬৫) [৯]
সম্মাননা
সম্পাদনা১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পাজেন্ট অফ ইন্ডিয়া'জ হিস্ট্রি বইটির জন্য যৌথভাবে স্বামী বশীশ্বর সেনের সঙ্গে ওয়াটমুল পুরস্কার লাভ করেন। [৬]
১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি শিক্ষা ও সাহিত্যের জন্য ভারত সরকারের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মশ্রী লাভ করেন। [১০]
গারট্রুড এমারসন রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবন
সম্পাদনাগারট্রুড এমারসন ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ২ নভেম্বর কলকাতায় ভারতীয় বাঙালি বিজ্ঞানী বশীশ্বর সেনকে বিবাহ করেন।[১] বশীশ্বর সেন ছিলেন একজন কৃষি বিজ্ঞানী এবং কিংবদন্তি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রিয় ছাত্রদের একজন। এছাড়াও তিনি স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্যা ভগিনী নিবেদিতার খুব ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন।
গারট্রুড এমারসন সেন ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে ৯২ বৎসর বয়সে পরলোক গমন করেন। মৃত্যুর পর তার পারিবারিক সমস্ত কিছুই (যেমন, চিঠিপত্র, 'এশিয়া'র জন্য রচিত প্রবন্ধাদি, স্মারক ইত্যাদি) নিউ ইয়র্ক পাবলিক লাইব্রেরিতে তার ভগিনী এডিথ এমারসন ও পরিবারের অন্য সদস্যরা দান করে দেন। তার প্রতিষ্ঠিত সোসাইটি অফ উইমেন জিওগ্রাফার্স এখনও সমানভাবে কাজ করে চলেছে। মহিলা ভূগোলবিদদের ফেলোশিপ প্রদান করে চলেছে।
সূত্র
সম্পাদনা- গিরীশ এন. মেহরা, - "নিয়ারার হেভেন দ্যান আর্থ—দ্য লাইফ অ্যান্ড টাইমস অফ বশী সেন অ্যান্ড গারট্রুড এমারসন সেন", এমএস স্বামীর মুখবন্ধসহ। নতুন দিল্লি: রুপা অ্যান্ড কোং, ২০০৭।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ গ "গারট্রুড এমারসন সেন (ইংরাজীতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০৭।
- ↑ B. N. Tandon (২০০৭)। "Untitled [review of Nearer Heaven than Earth: The Life and Times of Boshi Sen and Gertrude Emerson Sen, by Girish Mehra]"। Indian Literature। Sahitya Akademi। 51 (3 (239)): 199–203। আইএসএসএন 0019-5804। জেস্টোর 23340474।
- ↑ "Obituary, Edith Emerson"। The Philadelphia Inquirer। নভেম্বর ২৩, ১৯৮১।
- ↑ "Dr. Emerson Dead; Archaeologist, 84"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৪৩-১০-২০। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১৯।
- ↑ "Gertrude Emerson Wed in Calcutta; Author of "Voiceless India" Married to Basiswar Sen, Scientist, on Nov. 2"। The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯৩২-১১-০৭। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১১-১৯।
- ↑ ক খ গ ঘ "The story of Gertrude Emerson, the globe trotting adventurer who made India her home"। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৬-০৮।
- ↑ Sen, Gertrude Emerson (১৯৩০)। Voiceless India (ইংরেজি ভাষায়)। Doubleday, Doran, Incorporated।
- ↑ Sen, Gertrude Emerson (১৯৪৮)। The Pageant of India's History (ইংরেজি ভাষায়)। Longmans, Green।
- ↑ Sen, Gertrude Emerson (১৯৬৫)। Cultural Unity of India (ইংরেজি ভাষায়)। Publications Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India।
- ↑ "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫।