গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস

কলম্বীয় লেখক

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস (জন্ম: ৬ মার্চ, ১৯২৭ - মৃত্যু: ১৭ এপ্রিল, ২০১৪ ), যিনি গাবো নামেও পরিচিত ছিলেন, একজন কলম্বীয় সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকাশক ও রাজনীতিবিদ এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। নিঃসঙ্গতার একশ বছর বইয়ের লেখক হিসেবে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। কলম্বিয়ার সন্তান গার্সিয়া মার্কেস জীবনের বেশিরভাগ সময় বসবাস করেছেন মেক্সিকো এবং ইউরোপের বিভিন্ন শহরে।[]

গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস
কলম্বিয়ার বাইয়েদুপার শহরে ভ্রমণকালে গার্সিয়া মার্কেস (১৯৮৪ সালে)
কলম্বিয়ার বাইয়েদুপার শহরে ভ্রমণকালে গার্সিয়া মার্কেস (১৯৮৪ সালে)
জন্ম(১৯২৭-০৩-০৬)৬ মার্চ ১৯২৭
আরাকাতকা, মাগদালেনা, কলম্বিয়া
মৃত্যু১৭ এপ্রিল ২০১৪(2014-04-17) (বয়স ৮৭)
মেক্সিকো সিটি
পেশাঔপন্যাসিক, ছোটগল্প লেখক এবং সাংবাদিক
জাতীয়তাকলম্বীয়
ধরনজাদুবাস্তবতা
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
(১৯৮২)

স্বাক্ষর
মার্চ ২০০৯ সালে মেক্সিকোর গুয়াদালাজারাতে গুয়াদালাজারা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে কলম্বিয়ার সংস্কৃতি মন্ত্রী পলা মোরেনোর (বাম) সঙ্গে গার্সিয়া মার্কেজ

এই বিশ্ব বিখ্যাত কলম্বীয়, স্প্যানিয় ভাষী ঔপন্যাসিক বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ দুই যুগ তিনি ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচেছিলেন। এ সময় তার লেখালেখি কমে আসে; জনসংযোগ ও ভ্রমণ হয়ে পড়ে সীমিত। এমনকী ২০০২-এ আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড লিভিং টু টেল আ টেইল প্রকাশের পর পরিকল্পিত ২য় এবং ৩য় খণ্ড আর রচনা করা হয়ে ওঠেনি। তিনি দূরারোগ্য লিম্ফেটিক ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১২'র জুলাই থেকে তিনি স্মৃতি বিনষ্টিতে আক্রান্ত হন।[] মৃত্যুকালে তিনি একটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি রেখে গিয়েছেন।[]

সাহিত্যবিশারদদের মতে তিনি হোর্হে লুইস বোর্হেস এবং হুলিও কোর্তাসারের সাথে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দক্ষিণ আমেরিকান কথাসাহিত্যিক। একই সঙ্গে জনপ্রিয় এবং মহৎ লেখক হিসেবে চার্লস ডিকেন্স, লেভ তলস্তয়আর্নেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে তার নাম এক কাতারে উচ্চারিত হয়। ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সময় সুইডিশ একাডেমি এমত মন্তব্য করেছিল যে তার প্রতিটি নতুন গ্রন্থের প্রকাশনা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মতো। জনমানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তিনি ছিলেন বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। কিউবার নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল প্রবাদপ্রতীম।[]

জীবন ও কর্ম

সম্পাদনা

স্পেনীয় ভাষায় তার পূর্ণ নাম Gabriel José de la Concordia García Márquez গাব্রিয়েল্‌ খ়োসে দে লা কোঙ্কোর্দিয়া গার্সিয়া মার্কেস্‌

গার্সিয়া মার্কেস ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে আইন পড়া বন্ধ করে এল এস্পেক্তাদোর সংবাদপত্রে সাংবাদিকতা শুরু করেন। তার প্রথম ছোটগল্প লা তের্সেরা রেসিগ্নাসিওন‌ এল এসপেক্তাদোর পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। গার্সিয়া মার্কেস তার পেশাজীবন শুরু করেন আঞ্চলিক সংবাদপত্রে সাংবাদিকতার মাধ্যমে। তিনি বারানকিইয়া শহরের এল এরাল্‌দো পত্রিকায় রিপোর্টার এবং কার্তাহেনা শহরের এল উনিবের্সাল পত্রিকায় সম্পাদকের কাজ করেন। এই সময়েই তিনি অপ্রচলিত লেখক এবং সাংবাদিকদের দল হিসেবে পরিচিত বারানকিইয়া গ্রুপে যোগ দেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি তার পরবর্তী সাহিত্যজীবনের অনুপ্রেরণা লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় আসেন এবং এল এস্পেক্তাদোর পত্রিকায় কাজ করেন। পরবর্তীকালে তিনি রোম, প্যারিস, বার্সেলোনা, ক্যানসাস এবং নিউ ইয়র্কে একজন বিদেশী সংবাদদাতা হিসেবে কাজ করেন।

তার প্রথম বৃহদাকার কাজ ছিল “দ্য স্টোরি অব এ শিপরেক্‌ড সেইলর” (রেলাতো দে উন্‌ নাউফ্রাগো), যা তিনি ১৯৫৫ সালে পত্রিকা ধারাবাহিক হিসেবে রচনা করেন। একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা এ বইয়ে ফুটে ওঠে কলম্বিয়ার নৌবাহিনীর একটি দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজের কাহিনী; জাহাজটি চোরাচালানির পণ্যের অতিরিক্ত ভারে ডুবে গিয়েছিল। বইটি নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়, কেননা এর কাহিনীর সাথে প্রকৃত ঘটনাটির সরকার কর্তৃক প্রকাশিত বিবরণের মিল ছিল না। সরকারি বিবরণীতে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে ঝড়ের কথা বলা হয়েছিল এবং জীবিত নাবিকদের বীরের মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। এর ফলশ্রুতিতেই মার্কেসের বিদেশী সংবাদদাতা জীবন শুরু হয় কেননা দেশে তখন তিনি জেনারেল গুস্তাবো রোহাস পিনিয়ার চক্ষুশূল হয়ে গিয়েছিলেন। এই সিরিজটি পরবর্তীকালে একটি ১৯৭০ সালে প্রকাশিত হয় এবং অনেকে এটিকে উপন্যাস হিসেবেই গ্রহণ করেন।

 
জাদুবাস্তবতার যাদুকর মার্কেস

গার্সিয়া মার্কেসের অনেক কাজ কল্পকাহিনী এবং বাস্তবধর্মী সমবায় রচিত। “ক্রোনিকা দে উনা মুয়ের্তে আনুন্সিয়াদা” (Crónica de una muerte anunciada, ১৯৮১) পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিশোধমূলক খুনের ঘটনা অবলম্বনে রচিত এবং “এল আমোর এন লোস তিয়েম্পোস দেল কোলেরা" (El amor en los tiempos del cólera, ১৯৮৫) গল্পে তার অভিভাবকের আদালত জীবনের বর্ণনা রয়েছে। এই দুটি কাজ ছাড়াও তার অনেক কাজই “গাব্রিয়েল গার্সিয়ার বিশ্বে” সংঘটিত হয় যেখানে চরিত্র, স্থান এবং ঘটনাসমূহ বারবার বিভিন্ন বইয়ে পুনর্ঘটিত হতে দেখা যায়।

তার সবচাইতে ব্যবসাসফল উপন্যাস "নিঃসঙ্গতার এক শতাব্দী" (Cien años de soledad সিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ) সারা বিশ্বে ২৫টি ভাষায় অনূদিত হয়ে ১৯৬৭-২০১৪ এই ৪৫ বৎসরে প্রায় ৫ কোটি কপি বিক্রি হয়।[] এতে বুয়েনদিয়া পরিবারের বেশ কিছু প্রজন্মের কাহিনী চিত্রিত হয় যাদের বাস দক্ষিণ আমেরিকার কল্পিত গ্রাম মাকোন্দোতে। এই বইটির জন্য তিনি ১৯৭২ সালে রোমুলো গ্যালাওস পুরস্কার জিতে নেন। তিনি ১৯৮২ সালে নোবেল পুরস্কার জয়লাভ করেন যার ভিত্তি হিসেবে তার ছোট গল্প এবং উপন্যাসকে বিবেচনা করা হয়।

১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে সালে তার লিম্ফাটিক ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং চিকিৎসা শুরু হয়। এই ঘটনা তার মধ্যে স্মৃতিকথা লেখার অনুপ্রাণনা সৃষ্টি করে। ২০০০ সালে পেরুর দৈনিক লা রিপাবলিকা তার মৃত্যুর ভুল সংবাদ ছাপে।

২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তার তিন খণ্ডের আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড হিসাবে স্মৃতিগ্রন্থ বিবির পারা কোন্ত্রালা প্রকাশিত হয় যা স্পেনীয় ভাষাভাষীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে এবং দ্রুত বেস্টসেলারে পরিণত হয়। ২০০৩ এর নভেম্বরে এডিথ গ্রসম্যানের ইংরেজি অনুবাদ “লিভিং টু টেল দ্য টেল” প্রকাশিত হয় যা ছিল আরেকটি বেস্টসেলার। ২০০৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বোগোতা দৈনিক এল তিয়েমপো মার্কেসের একটি নতুন উপন্যাসের কথা ঘোষণা করে, যার নাম মেমোইরা দি মিস পুতাস ত্রিসতেস। প্রেমের এই উপন্যাসটি অক্টোবরে প্রকাশিত হয় এবং এর প্রথম সংস্করণের দশ লক্ষ কপি নিঃশেষিত হয়ে যায়। উল্লেখযোগ্য ক্যান্সারের প্রকোপে মার্কেসের এতটাই শারীরিকভাবে অশক্ত হয়ে পড়েন যে তার পক্ষে আর লেখালিখি করা সম্ভব হচ্ছিল না। তার আত্মজীবনীর বাকী দুই অংশ রচনা তথা প্রকাশের অবকাশ তিনি পান নি।

মৃত্যুকালে তিনি একটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি রেখে গিয়েছেন। এটি একটি নভেলা। ২০১৪-এর আগস্টে এই উপন্যাসটির প্রকাশনার ব্যাপারে তার পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে। ২০০০ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে তিনি এই রচনাটি লিখে থাকবেন।[]

পছন্দ-অপছন্দ

সম্পাদনা

তার প্রিয় রং ছিল হলুদ। সাহিত্যিক প্রিয় চরিত্র ছিল কাউন্ট ড্রাকুলা আর গার্গানতুয়াগার্সিয়া। ঐতিহাসিক চরিত্রের মধ্যে প্রিয় ছিল জুলিয়ো সিজার। সংগীতস্রষ্টার প্রিয় বেলা বাতকের। আর সবচেয়ে অপছন্দ করতেন ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে। প্রিয় খাবার ছিল ফরাসি ‘কানা অ লরাঞ্জ’, এটি কমলার সসে রান্না করা হাঁসের রোস্ট। কলম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের বাইয়েনাতো সংগীত ছিল তার জীবন ও লেখালেখিতে অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ।

প্রেম ও বিয়ে

সম্পাদনা

মার্কেসের জীবনে সাফল্য আর খ্যাতির পেছনে সবচেয়ে বেশি যাঁর অবদান, তিনি হলেন মিশরীয় বংশজাত কলম্বিয়ান তার স্ত্রী মের্সেদেস বার্চা। কাছের লোকজন তাকে ডাকেন ‘গাবা’ নামে। মার্কেসের বয়স যখন মাত্র ১৪ বছর আর মের্সেদেসের বয়স ৮। তখনই তাদের প্রথম দেখা হয়। প্রথম দেখা হয়েছিল উত্তর কলম্বিয়ার মাগদালেনা তীরবর্তী ছোট শহর মাগানগেতে। সেই দেখাতেই প্রেম পড়ে যান; আর সেদিনই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ‘এই বালিকাই একদিন আমার স্ত্রী হবে।’ ১৯৪৫ সালে তাকে নিয়ে কবিতাও লিখেছিলেন। সত্যিই সত্যি সেই ভবিষ্যদ্বাণী সত্যি হয় ১৯৫৮ সালে। দীর্ঘ দিনের প্রেমের পরিণত হয় বিয়ের বন্ধনে।

পরিবার

সম্পাদনা

মার্কেসের স্ত্রীর নাম মের্সেদেস বার্চা। তার দুই ছেলে রোদ্রিগো আর গোন্সালো ও পাঁচ নাতি-নাতনি।[]

রচনাশৈলী

সম্পাদনা

১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যামস লা ওহারাস্কা (পাতার ঝড়)।, কিন্তু রচনাশৈলী ধারাবহিকভাবে বদলে যেতে থাকে যতদিন ১৯৬৫-৬৭ কালপর্বে তিনি রচনা করেন সিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ ( "নিঃসঙ্গতার এক শতাব্দী")। এ উপনস্যাসে তিনি তার স্বকীয় লেখনীশৈলীটি খুজেঁ পান। তাকে বলা হয় জাদু বাস্তবতার মহাধিরাজ। উপন্যাসের শৈলী হিসেবে জাদু বাস্তবতা তার আবিষ্কার নয় বটে কিন্তু এই রচনাশৈলীকে তিনি যেভাবে স্বকীয় করে নিয়েছিলেন তা আর কেউ করেন নি। তার উপন্যাসের কাহিনী প্রোথিত থাকে বাস্তবে কিন্তু এই ভিত্তির এপর কল্পনার ফানুস উড়য়ে দেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, যেদিন ইউনুস নবী (আ:) ৩০ বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর বাসায় ফিরে তার স্ত্রীকে জানান দেন যে তিমি মাছ তাকে গিলে ফেলেছিল এবং এ কারণেই তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন, সেদিনই কথাসাহিত্যের গোড়াপত্তন হয়েছে। মার্কেস মনে করেন না যে পাঠক গল্প-উপন্যাসে বাস্তব পরিবেশের অনুপুঙ্খ বর্ণনা খুব বেশি আশা করে। এটা ঠিক যে মার্কেসের কল্পনাপ্রবণতা পাঠককে আনন্দ দেয়, কিন্তু একই সঙ্গে কাহিনীর রাজনৈতিক দিগদর্শন চিন্তায় আলোড়ন তোলে।[]

মার্কেসের গল্প সংলাপবহুল নয়, বর্ণনামূলক, যেখানে লেখক সবজান্তার ভূমিকা পালন করেন। তার গদ্য ঘনবুনোটে লেখা, দীর্ঘ ও জটিল বাক্যে তিনি অভিব্যক্ত করেন তার বক্তব্য। পাঠক পংক্তিতে-পংক্তিতে অনুভব করেন যে একজন গদ্যের জাদুকর অনায়াসে দৃঢ় গদ্যের গাঁথুনি রচনা করে চলেছেন। মানুষের মনস্তত্ত্ব তার উপজীব্য নয়, তিনি মানুষের আচরণ বর্ণনা করে চরিত্র ফুটিয়ে তোলেন। এই ক্ষেত্রে কখনো তিনি অতিশোয়াক্তির আশ্রয় গ্রহণ করেন। তিনি বর্ণনাকালে বাস্তবতার সঙ্গে অকাতরে মিশের দেন কাল্পনিক ঘটনার।

রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা

সম্পাদনা

মার্কেসের সঙ্গে কিউবার কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এই ঔপন্যাসিকের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অন্যতম স্বাক্ষর। এই বন্ধুত্ব কেবলই বহুল বিদিতই নয়, তার মার্কেসের জন্য বয়ে এনেছে দীর্ঘমেয়াদী সমালোচনা। মার্কেসের মৃত্যুতে দীর্ঘদিন যাবৎ রোগাক্রান্ত ফিদেল কাস্ত্রো গভীরভাবে শোকাহত হন।[]

মার্কেসকে দক্ষিণ আমেরিকান কিছু বৈপ্লবিক দলের প্রতি সহানুভূতিশীল মনে করা হয়। তিনি কলম্বিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও একজন কঠোর সমালোচক। কলম্বীয় সরকার-দলীয় সমর্থকেরা তার বিরুদ্ধে গেরিলা গ্রুপ, বিশেষ করে এফএআরসিইএলএন-কে সাহায্য করার অভিযোগ করলেও এর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি টেলিভিশন এবং চলচ্চিত্র পরিচালক রোদ্রিগো গার্সিয়ার বাবা।[]

এক নজরে

সম্পাদনা
  • ১৯২৭: কলম্বিয়ার ক্যারিবীয় উপকূলের কাছে আরাকাটাকা শহরে ৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন মার্কেস।
  • ১৯৪০: উচ্চবিদ্যালয়ে পড়তে বন্দরনগর বারানকুইল্লা যান। ১৯৪৭ সালে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এ সময় তার দুটি ছোট গল্প পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
  • ১৯৫৯: বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো কিউবার ক্ষমতায় আসার পর তার আমন্ত্রণ পেয়ে কিউবায় যান। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
  • ১৯৬৭: উপন্যাসওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অব সলিটিউড প্রকাশিত। ১৯৭৫-৭৬ সালে প্রকাশিত হয় অটাম অব দ্য প্যাট্রিয়ার্ক।
  • ১৯৮১: সামরিক বাহিনীর হাতে নিগ্রহের আশঙ্কায় দেশ ত্যাগ।
  • ১৯৮২: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ।
  • ১৯৯৯: ক্যান্সার ধরা পড়ে, চিকিৎসা শুরু হয়।
  • ২০১৪: কয়েক দিন হাসপাতালে থাকার পর মেক্সিকো সিটিতে মৃত্যু।

মৃত্যু

সম্পাদনা

তিনি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ এপ্রিল মেক্সিকো শহরে ৮৭ বছর বয়সে পরলোক গমন করেন।[১০] তার মৃত্যুতে বিশ্বসাহিত্যে "মার্কেস পর্বের" যবনিকাপাত হয়। তার মৃত্যু ছিল সংঘর্ষপ্রপীড়িত কলম্বিয়া নামক দেশটির সবচেয়ে গৌরবের মানুষটির অবসান। তার মৃত্যুতে কলম্বিয়াতে নেমে আসে গভীর নি:স্তব্ধতা। "কলম্বিয়া তার শ্রেষ্ঠ সন্তানকে হারালো" - এই ছিল সাধারণ মানুষের অনুভূতি। সারা পৃথিবীর গল্পপ্রেমী মানুষ এই প্রিয় লেখকের চিরবিদায়ে শোকাতুর হয়ে পড়ে।[১১]

মৃত্যুর পর শেষকৃত্যের জন্য একই দিন অপরাহ্নে তার মরদেহ মেক্সিকো শহরে সান হেরোনিমো এভিনিউতে অবস্থিত একটি ফিউনেরাল হোম-এ নিয়ে যাওয়া হয়। বিনা বিলম্বে ১৯ এপ্রিল একটি পারিবারিকক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তার দাহ অনুষ্ঠিত হয়।[১২] ২১ এপ্রিল সোমবার মেক্সিকো শহরের প্যালেস অব ফাইন আর্টস-এ একটি স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয় যাতে মেক্সিকো এবং কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টদ্বয় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জন্মভূমি কলম্বিয়ায় একটি প্রতীকী শেষকৃত্যানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার পাঠক ও গুণগ্রাহী এই সকল অনুষ্ঠানে ভক্তিআকুল চিত্তে অংশ গ্রহণ করে।[১৩][১৪][১৫]

প্রকাশিত গ্রন্থাবলি

সম্পাদনা

উপন্যাস

সম্পাদনা
  • La mala hora লা মালা ওরা (১৯৬৭)
  • Cien años de soledad সিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ (১৯৬৭)
  • Crónica de una muerte anunciada ক্রোনিকা দে উনা মুয়ের্তে আনুন্সিয়াদা (১৯৭৫)
  • El amor en los tiempos del cólera এল আমোর এন লোস তিয়েম্পোস দেল কোলেরা (১৯৮৫)
  • Del amor y otros demonios দেল আমোর ই ওত্রোস দেমোনিওস (১৯৯৪)

চলচ্চিত্র

সম্পাদনা

মার্কেসের বিভিন্ন গল্প-উপন্যাস চলচ্চিত্র আকারে নির্মিত হয়েছে।[১৬][১৭]

প্রতিষ্ঠান

সম্পাদনা

নোবেল সাহিত্য পুরস্কারের (১৯৮২) অর্থ দিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দুটি প্রতিষ্ঠান:

  • সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণবিষয়ক ‘ফুন্দাসিয়োন নুয়েবো পেরিয়োদিসমো ইবেরোআমেরিকানো’ (নিউ আইবেরোআমেরিকান জার্নালিজম ফাউন্ডেশন, মেহিকো)
  • সিনেমার কৃৎকৌশল শেখানোর ‘এস্কুয়েলা ইন্তেরনাসিয়োনাল দে সিনে ই তেলিবিসিয়োন’ (ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অব সিনেমা অ্যান্ড টেলিভিশন, কুবা)।

স্বীকৃতি ও পুরস্কার

সম্পাদনা
  • ১৯৫৫: First Prize in the competition of the Association of Writers and Artists (1955) for his story "A day after the Sabbath."
  • ১৯৬১: ESSO Colombian Novel Award for "Bad Time"
  • ১৯৭১: Honorary Degree from the University of Columbia in New York
  • ১৯৭২: Rómulo Gallegos Prize for "Hundred Years of Solitude"
  • ১৯৮১: Medal French Legion of Honor in Paris
  • ১৯৮২: নোবেল সাহিত্য পুরস্কার[১৮]
  • ১৯৮২: Mexico Aztec Eagle Award
  • ১৯৮৫: Award forty years of the Association of Journalists of Bogotá
  • ১৯৯৩: Honorary Member of the Instituto Caro y Cuervo in Bogotá
  • ১৯৯৪: Honorary Degree from the University of Cádiz

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Macondo"। ৩০ জানুয়ারি ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০০৭ 
  2. Gabriel García Márquez, Conjurer of Literary Magic, Dies at 87
  3. "Familia de Gabo decidirá publicación de texto inédito"। ২৮ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৪ 
  4. Gabriel García Márquez, Nobel Prize-winning explorer of myth and reality, dies at 87
  5. [১]
  6. http://www.prothomalo.com/we_are/article/200755/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B8_%E0%A6%B6%E0%A7%82%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF_%E0%A6%B9%E0%A6%B2%E0%A6%A6%E0%A7%87_%E0%A6%8F%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B2#.U1qhDVWSzSk
  7. "গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাসের নায়ক"। ২৭ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৪ 
  8. "Consterna a Fidel muerte de Gabo"। ১৭ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১৪ 
  9. "Gabriel García Márquez Biography"। ১৯ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০১৪ 
  10. অনন্ত নির্জনতায় মার্কেজ
  11. Gabriel Garcia Marquez's death mourned throughout the world
  12. Remains of García Márquez to be cremated in private ceremony
  13. Gabriel García Márquez's Remains Will Be Cremated
  14. Gabriel García Márquez Death: Author's Body Is Moved To Funeral Home
  15. Mexico and Colombia hold Gabriel Garcia Marquez memorials
  16. আইএমডিবি
  17. Mexico City screens tribute to Gabriel Garcia Marquez[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  18. Nobel Prize in Literature 1982

গ্রন্থসূত্র

সম্পাদনা
  • গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের আত্মজীবনী বিবির পারা কোন্তারলা, দাসেসা সালবিদারের লেখা বিয়াহে আ লা সেমিইয়া, এল তিয়েম্পো

আরো দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা