গাজর (ইংরেজি: Carrot) (বৈজ্ঞানিক নাম Daucus carota) একপ্রকার মূল জাতীয় সবজি। গাজর গাছ Apiaceae পরিবারভুক্ত। এর আদি নিবাস দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপ। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক গাজরই চীন দেশে উৎপাদিত হয়। নানা প্রকার খাদ্য তৈরিতে গাজর ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে সালাদে এর ব্যবহার ব্যাপক। একে সাধারণত গৃহ বাগানের সবজি হিসেবে উৎপাদন করা হয়।[][]

গাজর
Daucus carota
গাজর
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
শ্রেণীবিহীন: Asterids
বর্গ: Apiales
পরিবার: Apiaceae
গণ: Daucus
প্রজাতি: D. carota
দ্বিপদী নাম
Daucus carota subsp. sativus
(Hoffm.) Schübl. & G. Martens
Daucus carota subsp. maximus

বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

গাজর বর্ষজীবী উদ্ভিদ। খাদ্য সঞ্চয়ের ফলে গাজরের মূলের উপরের অংশ মোটা হয়ে যায় এবং নিচের অংশ ক্রমশ সরু হয়। ফলে এই পরিবর্তিত মূল শঙ্কুর আকার ধারণ করে। এই মূলের রং হলুদ অথবা কমলা হয়। গাজরের মূল এবং পাতা মানুষ খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। কাঁচা অবস্থায় কিংবা রান্না করে গাজর ব্যবহার করা যায়।[]

উপকারিতা

সম্পাদনা

গাজরকে বলা হয় সুপার ফুড।[] বিশেষ করে শীতকালীন এই সকল সাধারণ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার সব চাইতে ভালো সবজি হচ্ছে এই গাজর। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, যার ফলে সর্দি-ঠাণ্ডা ও কাশি থেকে মুক্তির জন্য আমাদের দেহে কাজ করে থাকে। এছাড়াও নিম্নে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকার সম্পর্কে আলোচনা করা হল

  • ভিটামিনের যোগান:

গাজরে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। গাজরের মধ্যে থাকা বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। চোখের অন্যান্য সমস্যা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ইত্যাদির মতো সমস্যায় বাধা দেয়। এতো বিজ্ঞানের বইতেও আমরা পড়েছি। তাই বাড়ির লোক কিন্তু ভুল বলতেন না।

  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সহায়ক:

গাজরের মধ্যে ক্যারটিনয়েড অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ক্যান্সার প্রতিরোধে এবং রক্ত শুদ্ধিকরণের সাহায্য করে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এছাড়াও মুখের থেকে দাগ ছোপ দূর করে, বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে গাজরের জুস।

  • ক্যানসার প্রতিরোধে:

হজমের পর খাদ্যের কিছু উচ্ছিষ্ট আমাদের শরীরে থেকে যায়। যাকে ফ্রি র‍্যাডিকেলস বা মৌল বলে, এই ফ্রি র‍্যাডিকেলস শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার এই ধরনের মৌলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। শরীরে ক্যানসারের কোষ উৎপাদন কম হয়।

  • হৃৎপিণ্ড সুরক্ষায়:

শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চাপ মুক্ত থাকলে হার্ট সুস্থ থাকে। গাজর ডায়েটরি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ থাকে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোনো কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, হার্টকে সুস্থ রাখে।

  • উজ্জ্বল ত্বক:

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজের উপস্থিতি আছে গাজরে। এই উপাদানগুলো ত্বককে রাখে সুস্থ এবং সতেজ, এসব পুষ্টি উপাদান ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, স্কিন টোনকে উন্নত করা এবং ত্বকে দাগ পড়া থেকে রক্ষা করে।

  • কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ:

কোলেস্টেরল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে গাজর ভীষণভাবে সাহায্য করে। গাজরের মধ্যে থাকা পটাশিয়ামই এর মূল কারণ। গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে, ফলে ওজন কমে।

আরও উপকারিতা:

সম্পাদনা

১. আগে গাজর না খেয়ে থাকলে এবার শুরু করে দিন। কারণ গাজর দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এতে আছে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের লিভারে গিয়ে ভিটামিন এ তে বদলে যায়। পরে সেটি চোখের রেটিনায় গিয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে, সেই সাথে রাতের বেলায় অন্ধকারেও চোখে ভাল দেখার জন্য দরকারি এমন এক ধরনের বেগুনি পিগমেন্টের সংখ্যা বাড়িয়ে দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে সাহায্য করে।

২. গাজর খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কম থাকে। গাজরে আছে ফ্যালকেরিনল এবং ফ্যালকেরিনডায়ল যা আমাদের শরীরে অ্যান্টিক্যান্সার উপাদানগুলোকে পূর্ণ করে। তাই গাজর খেলে ব্রেস্ট, কোলন, ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৩. গাজর শুধু শরীরের জন্য ভাল তাই নয় এটি আমাদের জন্য অ্যান্টি এজিং উপাদান হিসেবেও কাজ করে। এতে যে বিটা ক্যারোটিন আছে তা আমাদের শরীরের ভেতরে গিয়ে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে আমাদের শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত কোষগুলোকে ঠিকঠাক করে।

৪. সুন্দর ত্বকের জন্যও গাজর খেতে পারেন। এটি আপনার ত্বককে ভেতর থেকে সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করবে। এর ভিটামিন এ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আপনার ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করবে। সেই সাথে ভিটামিন এ ত্বকের অযাচিত ভাঁজ পড়া, কালো দাগ, ব্রন, ত্বকের রঙের অসামঞ্জস্যতা ইত্যাদি দূর করে আপনাকে সুন্দর হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

৫. এছাড়াও গাজর ভাল অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবেও কাজ করে। এটি শরীরে কোনো ক্ষত হলে তা ইনফেকশন হওয়া থেকে রক্ষা করে। কোথাও কেটে বা পুড়ে গেলে সেখানে লাগিয়ে নিন কুচি করা গাজর বা সিদ্ধ করা গাজরের পেস্ট। আপনার ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

৬. এছাড়া গাজর বাইরে থেকেও ত্বকের অনেক উপকার করে। ফেশিয়ালের উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

৭. হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখে এটি খুব ভাল কাজ করে। এর ক্যারোটিনয়েডগুলো হৃৎপিণ্ডের নানা অসুখের ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

৮. গাজরে উপস্থিত ভিটামিন এ লিভারে গিয়ে তাকে শরীর থেকে নানা ধরনের টক্সিন জাতীয় খারাপ উপাদান পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এছাড়াও গাজরের এই উপাদান লিভার থেকে অতিরিক্ত চর্বি সরিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে গাজরের ফাইবার কোলন পরিষ্কার রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যর হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করে।

৯. সুন্দর ও সুস্থ সবল দাঁতের জন্য গাজরের জুড়ি মেলা ভার। গাজর আপনার দাঁত ও মুখের ভেতর পরিষ্কার রাখে। গাজরের মিনারেলগুলো দাঁত মজবুত রাখতে সাহায্য করে।

১০. হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সপ্তাহে ছয়টির বেশি গাজর খান বা খাচ্ছেন তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি যারা এর থেকে কম পরিমানে কম বা একটি গাজর খাচ্ছেন তাদের তুলনায় অনেক কম হয়। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে হলে এখনি নিজের খাবারের তালিকায় যুক্ত করুন গাজর। সালাদ হিসেবেও খেতে পারেন বা তরকারিতেও দিতে পারেন।

গুণাগুণ, গুরুত্ব ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

সম্পাদনা

গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। এই বিটা ক্যারোটিন শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার চোখের পুষ্টি জোগায়, চোখের স্নায়ুকে করে শক্তিশালী। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কচি গাজর খায়, তাদের চোখের অসুখ হয় তুলনা মূলক কম। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়াতে গাজরের গুরুত্ব অনেক।

নতুন দাঁত বের হয়েছে বা সবজি দিয়ে খিচুড়ি খেতে পারে, এমন শিশুদের জন্য গাজর দিয়ে তৈরি খিচুড়ি যথেষ্ট উপকারী। গাজর খেলে দাঁতের মাড়ির দুর্বলতা কমে, খাবার হজম হয় ভালোভাবে। কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আঁশজাতীয় উপাদান। এই উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

মায়ের দুধের পরিবর্তে কৌটার দুধ খায়, এমন শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য হয় বেশি। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেবে গাজরের খিচুড়ি। শিশু গাজরের খিচুড়ি না খেলে দিতে পারেন গাজরের হালুয়া। গাজরের হালুয়া শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে সাহায্য করে। কারণ, চিনি থাকে হালুয়ায়। চিনি মানে গ্লুকোজ, যা মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে।

গাজরের রস দেহে চর্বির মাত্রা কমায়। তাই ওজন কমাতে চান এমন ব্যক্তিরা কচি গাজর, কাঁচা পেপে, কচি বাঁধাকপির টুকরা খেতে পারেন ভাত, আলু, রুটির পরিবর্তে। গাজর রক্তের প্রধান উপাদান আরবিসিকে সক্রিয় করে। এতে রক্তে বেড়ে যায় হিমোগ্লোবিনের মাত্রা। রক্ত বাড়াতে হলে তাই প্রতিদিন অন্তত একটি কচি গাজর খান।

শরীরের যেসব কোলেস্টেরল রক্তের মধ্যে মিশে রক্তে জমাট বেঁধে যায়, হূৎপিণ্ড থেকে রক্ত সারা শরীরে পৌঁছাতে বাধা তৈরি করে, সেসব কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় গাজর। আর কিছু কোলেস্টেরল বা চর্বি রয়েছে, যা ত্বকে কোলেস্টেরলের বা লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

যেকোনো বড় অস্ত্রোপচারের পর রক্তের ঘাটতি হয়। এই ঘাটতি পূরণ করবে গাজর। মানুষের মেধাশক্তি বাড়ানোর জন্য কাজ করে গাজর। মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে করে দ্বিগুণ কর্মক্ষম। তাই গাজর হোক আপনার বন্ধু।

ন্যাচারাল অ্যান্টি অক্সিডেন্টের পরিমাণ গাজরে অনেক বেশি, যা তারুণ্য ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে খনিজ লবণও রয়েছে পর্যাপ্ত হারে, যা মানুষের হাড়, দাঁত, নখ, চুলের জন্য বয়ে আনে সুফল। শর্করা বা কার্বোহাইড্রেটও এর উপাদান। তাই গাজর বেশি মিষ্টি হলে কিডনি রোগে আক্রান্ত, অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তি ও ডায়াবেটিসের রোগীরা গাজর খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। মাটির নিচে জন্মানোর জন্য এতে শর্করার পরিমাণ থাকে বেশি, ডায়াবেটিসের রোগীরা গাজরের পরিমাণ কমিয়ে সালাদে বাড়িয়ে দিন শসার পরিমাণ।

গাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু এবং খাদ্যআঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি ও সালাদ হিসেবে গাজর খাওয়া যায়। এ ছাড়া গাজর দিয়ে অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। তবে রান্না করে খাওয়ার চেয়ে গাজর কাঁচা খাওয়া বেশি ভালো। কারণ এতে পুষ্টির অপচয় কম হয়।

গাজর স্বাদে অত্যন্ত সুস্বাদু, পুষ্টিকর এবং আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। কাঁচা ও রান্না দু’ভাবেই এটি খাওয়া যায়। তরকারি ও সালাদ হিসাবেও গাজর অত্যন্ত জনপ্রিয়। গাজর অতি পুষ্টিমান সমৃদ্ধ সবজি। এতে উচ্চমানের বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকারটি হ’ল দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। এ ছাড়াও আছে আরও অনেক স্বাস্থ্যগত সুবিধা।

সালাদ অথবা সবজি কিংবা সামান্য লবণ মেখে এমনিতেই খাওয়া যায় গাজর। এ ছাড়া আছে গাজরের হালুয়া। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যদি গাজর থেকে সর্বোচ্চ পুষ্টিটা পেতে হয় তবে কাঁচা গাজর খাওয়াই সর্বোত্তম। তাই গাজরের জুস বানিয়ে খেলেই পাওয়া যাবে গাজরের সর্বোচ্চ পুষ্টি উপাদান। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস গাজরের জুস স্বাস্থ্যের উন্নতি করবে কয়েকগুণ। নিম্নে এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকার সম্পর্কে আলোচনা করা হ’ল-

১. দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক :

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ভিটামিন ‘এ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। লাল-কমলা রঙের ফল-মূল অথবা সবজি যেমন গাজর, মিষ্টি কুমড়া এবং তরমুজে বেটা-ক্যারোটিন নামের এক ধরনের উপাদান থাকে। এই উপাদানটি শরীরে ভিটামিন ‘এ’-তে পরিণত হয়। আর এতেই শরীরের অন্যান্য স্বাস্থ্যগত উপকারের পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

২. ঠিক রাখে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট :

শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামক একটি উপাদানের কারণে বয়সের ছাপ চলে আসে। গাজরের মধ্যে যে ক্যারটিনয়েড থাকে তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে বয়সের ছাপ আসার গতিকে ধীর করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে বিষমুক্ত করে, হৃদরোগ এবং ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়তা করে।

৩. ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হয় :

হজম প্রক্রিয়া শেষে খাদ্যের যে উচ্ছিষ্টাংশগুলো আমাদের শরীরে থেকে সেগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিকেলস বা মৌল বলে। এই ফ্রি র‌্যাডিকেলস শরীরের কিছু কোষ নষ্ট করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার এই ধরনের মৌলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। শরীরে ক্যান্সারের কোষ জন্ম নেওয়ার প্রবণতা কমে যায়। গবেষণায় দেখা যায়, প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে ৩৩ শতাংশ ভিটামিন ‘এ’, ৯ শতাংশ ভিটামিন ‘সি’ এবং ৫ শতাংশ ভিটামিন ‘বি-৬’ পাওয়া যায়। এগুলো এক হয়ে ফ্রি র‌্যাডিকেলসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

৪. রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি :

প্রতিদিন এক গ্লাস গাজরের জুস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আশ্চর্যজনক ভাবে বৃদ্ধি করে। শরীরে ক্ষতিকর জীবাণু, ভাইরাস এবং বিভিন্ন ধরনের প্রদাহের বিরুদ্ধে কাজ করে। গাজরের জুসে ভিটামিন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের খনিজ, পটাশিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি থাকে যা হাড় গঠন, নার্ভাস সিস্টেমকে শক্ত করা ও মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৫. হার্ট সবল রাখে :

একটি সুস্থ হার্টের জন্য শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চাপ মুক্ত থাকাটা খুব দরকার। প্রয়োজন সঠিক খাদ্য তালিকার। গাজর ডায়েটরি ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ থাকে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোন কিছুর আস্তর জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। সুস্থ রাখে হার্টকে।

৬. ত্বকের শুষ্কতা দূর করে :

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং পটাশিয়ামের মতো খনিজের উপস্থিতি আছে গাজরে। এই উপাদানগুলো ত্বককে রাখে সুস্থ এবং সতেজ। এসব পুষ্টি উপাদান ত্বক শুকিয়ে যাওয়া, স্কিন টোনকে উন্নত করা এবং ত্বকে দাগ পড়া থেকে রক্ষা করে।

৭. কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ :

কোলেস্টরেল এবং ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও গাজরের জুস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গাজরের মধ্যে থাকা পটাশিয়ামই এর মূল কারণ। গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের উপাদান খুবই কম। এ ছাড়া ডায়াবেটিস প্রতিরোধে যে সব ভিটামিন এবং খনিজের প্রয়োজন তাও বিদ্যমান। চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজনও কমে। তাই চিকিৎসকেরা শরীরে পুষ্টির পরিমাণ বাড়াতে খাওয়ার আগে বা পড়ে এক গ্লাস গাজরের জুস খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

গাজর এবং সব রঙিন সবজি ও ফলে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়। এটি শরীরে ভিটামিন এ-এর প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। বেশি এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন গাজর খেলে তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও শরীরে শক্তি জোগায়।

বিটা ক্যারোটিনের উৎস সমূহ: গাজর, মিষ্টি আলু, মিষ্টি কুমড়া, পালংশাক, বাঁধাকপি, শালগম, টমেটো, লাল মরিচ, মটর ও ব্রকলিতে বিটা ক্যারোটিন পাওয়া যায়।

চিকিৎসায় এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে ক্যারোটিনের ব্যবহার: বিটা ক্যারোটিন এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট। এ এন্টিঅক্সিডেন্ট অক্সিডেশনকে প্রতিরোধ করে এবং শরীরকে ফ্রি রেডিকেলের হাত থেকে রক্ষা করে। ফ্রি রেডিকেল অক্সিডেশনের মাধ্যমে কোষের ক্ষতি করে। এটা ফ্রি রেডিকেল কোষের ক্ষতির মাধ্যমে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে।

গবেষণায় দেখা যায়, এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফ্রি রেডিকেল প্রতিরোধ করে এবং হার্টে সমস্যা ও ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ: যারা বেশি পরিমাণ ক্যারোটিনয়েড খায় তাদের স্তন, কোলন এবং ফুসফুস ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। এন্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতার জন্য ক্যারোটিনয়েড ক্যান্সারের বিরুদ্ধে কাজ করে। বিটা ক্যারোটিন ক্যান্সার কোষ সৃষ্টিতে বাধা দেয়।

বয়স জনিত চোখের ত্রুটি: অন্ধত্বের কারণ এটি রেটিনার ক্ষতি করে। দ্য ন্যাশনাল আই ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিদিন বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে অগউ ঝুঁকি কমে যায়। বিটা ক্যারোটিন দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে, চোখের ফাংশন ঠিক রাখে এবং অগউ ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

হৃদরোগ: যারা খাবারে প্রতিদিন বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান তাদের হার্টের বিভিন্ন সমস্যার ঝুঁকি কমে যায়। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন ই এর মতো কাজ করে যা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল বের করে দেয় যা এথারোস্কেলোরোসিস এবং স্ট্রোক ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

শ্বাসতন্ত্র: বেশি পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি খেলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে তার পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস এবং এমফিসেমা প্রতিরোধ করে।

মুখের ক্ষত: যারা দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন করেন তাদের মুখে বিভিন্ন ক্ষত যেমন মুখে অথবা জিহ্বায় সাদা ক্ষত দেখা যায়।

গবেষণায় দেখা যায়, যেসব লোকদের মুখে ক্ষত রয়েছে তারা বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার খেলে তাদের মুখে ক্ষত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে: গবেষণায় দেখা যায়, বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ খাবার রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।

বাত ব্যথায়: বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি বাত ব্যথার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

স্বাস্থ্য তথ্য

সম্পাদনা
  • গাজরের বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন-'এ'-তে রূপান্তরিত হয়ে দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। এটি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হিসেবেও কাজ করে।
  • গবেষণায় দেখা গেছে, গাজরে বিদ্যমান ফ্যালক্যারিনল ও ফ্যালক্যারিডিওল ফুসফুস ও অন্ত্রের ক্যান্সারসহ অন্যান্য ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
  • গাজরের আলফা ক্যারোটিন ও লুটিন নামক উপাদান হৃদরোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
  • গাজর থেকে প্রাপ্ত ভিটামিন-'এ' রক্তের ক্ষতিকর টঙ্কি উপাদানগুলো দেহ থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
  • গাজর শ্বাসনালির প্রদাহ নিরাময় করে।
  • গাজর দাঁত ও মাড়ির সুস্থতা রক্ষা করে।
  • গর্ভবতী মায়েরা গাজরের রস খেলে শিশুর জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি কমে।
  • এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
  • গাজর শরীরের যেকোনো ক্ষত নিরাময় করে। গাজরের পাতা মধুর সঙ্গে মিলিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
  • গাজরের স্যুপ ডায়রিয়া রোগে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • গাজর কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে।
  • গাজরের সঙ্গে কয়েক কোয়া রসুন মিশিয়ে খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

সৌন্দর্য রক্ষায় গাজর

সম্পাদনা
  • গবেষণায় পাওয়া গেছে, গাজরে ক্যারোটিনয়েড রঞ্জক পদার্থ রয়েছে। এ উপাদানটি ত্বকের কোষ পরিষ্কার করে ত্বককে করে তোলে আকর্ষণীয়।
  • ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে গাজর কার্যকরী।
  • গাজর চুল, ত্বক ও নখের সৌন্দর্য রক্ষা করে।
  • এটি ত্বকের ভাঁজ, খসখসে ভাব ও ব্রণ দূর করে।
  • গাজরের সঙ্গে মধু মিশিয়ে ত্বকের প্রলেপ হিসেবে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়।

সতর্কতা

সম্পাদনা

যাঁরা নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাঁদের জন্য গাজরের রস সেবনে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কারণ এতে যকৃতে toxic উপাদান তৈরি হতে পারে। তাই সকাল ও রাতে খাওয়ার পর এবং ওষুধ সেবনের দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর গাজর খাওয়া ভালো।

খাদ্য ও পুষ্টিগুণ

সম্পাদনা

১০০ গ্রাম (এক কাপ) পরিমাণ গাজর থেকে ৮২৮৫ মাইক্রোগ্রাম বিটাক্যারোটিন এবং ১৬৭০৬ ওট ভিটামিন 'এ' পাওয়া যায়। এ ছাড়া ৪১ কিলোক্যালোরি খাদ্যশক্তি, ২.৮ গ্রাম খাদ্যআঁশ, ভিটামিন 'বি-১' ০.০৪ মিলিগ্রাম, ভিটামিন 'বি-২' ০.০৫ মিলিগ্রাম; ২.২ মিলিগ্রাম লৌহ, ৫.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন 'সি', ১৩.২ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন 'কে', ১৯ মাইক্রোগ্রাম ফলেট, ৩২০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৩৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।

গাজর, কাঁচা অবস্থায়
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি১৭৩ কিজু (৪১ kcal)
৯.৬ g
চিনি৪.৭ g
খাদ্য তন্তু২.৮ g
০.২৪ g
০.৯৩ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
ভিটামিন এ সমতুল্য
১০৪%
৮৩৫ μg
৭৭%
৮২৮৫ μg
২৫৬ μg
থায়ামিন (বি)
৬%
০.০৬৬ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি)
৫%
০.০৫৮ মিগ্রা
নায়াসিন (বি)
৭%
০.৯৮৩ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি)
৫%
০.২৭৩ মিগ্রা
ভিটামিন বি
১১%
০.১৩৮ মিগ্রা
ফোলেট (বি)
৫%
১৯ μg
ভিটামিন সি
৭%
৫.৯ মিগ্রা
ভিটামিন ই
৪%
০.৬৬ মিগ্রা
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
৩%
৩৩ মিগ্রা
লৌহ
২%
০.৩ মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম
৩%
১২ মিগ্রা
ম্যাঙ্গানিজ
৭%
০.১৪৩ মিগ্রা
ফসফরাস
৫%
৩৫ মিগ্রা
পটাশিয়াম
৭%
৩২০ মিগ্রা
সোডিয়াম
৫%
৬৯ মিগ্রা
জিংক
৩%
০.২৪ মিগ্রা
অন্যান্য উপাদানপরিমাণ
Fluoride3.2 µg

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।
উৎস: ইউএসডিএ ফুডডাটা সেন্ট্রাল
গাজর, সেদ্ধ করা অবস্থায়
প্রতি ১০০ গ্রাম (৩.৫ আউন্স)-এ পুষ্টিমান
শক্তি১৪৭ কিজু (৩৫ kcal)
৮.২২ g
চিনি৩.৪৫ g
খাদ্য আঁশ৩ g
০.১৮ g
০.৭৬ g
ভিটামিনপরিমাণ দৈপ%
ভিটামিন এ সমতুল্য
১০৭%
৮৫২ μg
৭৭%
৮৩৩০ μg
৬৮৭ μg
থায়ামিন (বি)
৬%
০.০৬৬ মিগ্রা
রিবোফ্লাভিন (বি)
৪%
০.০৪৪ মিগ্রা
নায়াসিন (বি)
৪%
০.৬৪৫ মিগ্রা
প্যানটোথেনিক
অ্যাসিড (বি)
৫%
০.২৩২ মিগ্রা
ভিটামিন বি
১২%
০.১৫৩ মিগ্রা
ফোলেট (বি)
৪%
১৪ μg
ভিটামিন সি
৪%
৩.৬ মিগ্রা
ভিটামিন ই
৭%
১.০৩ মিগ্রা
ভিটামিন কে
১৩%
১৩.৭ μg
খনিজপরিমাণ দৈপ%
ক্যালসিয়াম
৩%
৩০ মিগ্রা
লৌহ
৩%
০.৩৪ মিগ্রা
ম্যাগনেসিয়াম
৩%
১০ মিগ্রা
ম্যাঙ্গানিজ
৭%
০.১৫৫ মিগ্রা
ফসফরাস
৪%
৩০ মিগ্রা
পটাশিয়াম
৫%
২৩৫ মিগ্রা
সোডিয়াম
৪%
৫৮ মিগ্রা
জিংক
২%
০.২ মিগ্রা
অন্যান্য উপাদানপরিমাণ
পানি৯০.২ g

প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য মার্কিন সুপারিশ ব্যবহার করে শতাংশ অনুমান করা হয়েছে।

কাঁচা গাজরে ৮৮% জল, ৯%শর্করা, ০.৯% আমিষ, ২.৮% খাদ্য আঁশ, ১% ছাই এবং ০.২% স্নেহ পদার্থ।[] গাজরের খাদ্যতালিকাগত ফাইবার বেশিরভাগ সেলুলোজ, হেমিসেলুলোজ, লিগনিন এবং স্টার্চ অল্প অনুপাতে থাকে।[] গাজরে সংযোজিত শর্করার মধ্যে রয়েছে সুক্রোজ, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ[]

 
গাজর
 
নানা রঙের গাজর

চাষ পদ্ধতি

সম্পাদনা

মাটি পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে এমন বেলে দোঁআশ ও দোআঁশ মাটি গাজর চাষের জন্য উপযোগী।

বীজ বপন সময় আশ্বিন থেকে কার্তিক মধ্য সেপ্টেম্বর মধ্য নভেম্বর মাস বীজ বপনের উত্তম সময়।

বীজ হার প্রতি হেক্টরে ৩-৪ কেজি বীজ লাগে।

বীজ বপনের দূরত্ব সারি-সারির দূরত্বঃ ২০-২৫ সেমি গাছ-গাছের দূরত্বঃ ১০ সেমি

জমি তৈরী ১) গাজর চাষের জন্য ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে তৈরী করতে হবে। ২) জমির মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরী করতে হবে। ৩) গাজরের বীজ সারিতে বপন করা ভাল। এতে গাজরের যত্ন নেয়া সহজ হয়। ৪) গাজরের বীজ খুব ছোট বিধায় ছাই বা গুঁড়া মাটির সাথে মিশিয়ে বপন করা ভাল। এজন্য ভাল বীজের সাথে ভাল শুকনা ছাই বা গুঁড়া মাটি মিশিয়ে বপন করা যেতে পারে।

সার প্রয়োগ গাজর চাষে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।


সার সারেরপরিমাণ(প্রতিহেক্টরে)

{{সারের পরিমাণ

note_=গাজর}}
গোবর/জৈবসার_টন=১০}}
ইউরিয়া_কেজি=১৫০}}
টিএসপি_কেজি=১২৫}}
এসওপি/এম ও পি_=২০০}}

সার প্রয়োগ পদ্ধতি

১) সম্পূর্ণ গোবর ও টিএসপি এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও এমপি সার জমি তৈরির সময় প্রয়োগ করতে হবে।

২) বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সমান দুই কিসিৱতে চারা গজানোর ১০-১২দিন ও ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

৩) বাকি অর্ধেক এমপি সার চারা গজানোর ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

পরিচর্যা মাটিতে রস কম হলে পানি সেচ দিতে হবে। সেচের পর জো এলে নিড়ানি দিয়ে চটা ভেঙ্গে মাটি আলগা করে দিতে হবে। আগাছা জন্মালে দমন করতে হবে। ফসল সংগ্রহ চারা গজানোর ৭০-৮০ দিন পর সবজি হিসেবে গাজর খাওয়ার জন্য তোলার উপযুক্ত হয়। ফলন হেক্টরপ্রতি গাজরের ফলন ২০-২৫ টন।[]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Rose, F. (২০০৬)। The Wild Flower Key। London: Frederick Warne। পৃষ্ঠা 346। আইএসবিএন 0-7232-5175-4 
  2. Mabey, R. (১৯৯৭)। Flora Britannica। London: Chatto and Windus। পৃষ্ঠা 298আইএসবিএন 1-85619-377-2 
  3. বই উদ্ধৃতি= জীবন বিজ্ঞান (সপ্তম)| লেখক=তুষারকান্তি ষন্নিগ্রহী| শিরোনাম=গাজর | প্রকাশক=সর্ব ভারতীয় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী কংগ্রেস, পশ্চিমবঙ্গ শাখা| বছর=১৯৮৩ | পাতা=৮৮
  4. "11 Health Benefits of Carrots: Superfood for Improving Eyesight"GuideDoc (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৪-০২-১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০৫ 
  5. "Nutrition facts for carrots, raw [Includes USDA commodity food A099], per 100 g, USDA Nutrient Database for Standard Reference, version SR-21"। Conde Nast। ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ 
  6. Rubatsky, Quiros & Siman (1999), পৃ. 256
  7. কৃষি তথ্য সার্ভিস,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারlink. http://www.ais.gov.bd/site/ekrishi/ac807dbc-2aaa-43cb-8932-1340f0b00cb9/%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%B0

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
  • বিশ্ব গাজর জাদুঘর
  • Carrot and Garlic Genetics - diverse information on carrots, with links to more (USDA)
  •   উইকিমিডিয়া কমন্সে Daucus carota সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
  •   উইকিমিডিয়া কমন্সে গাজর সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।
  •   উইকিঅভিধানে গাজর-এর আভিধানিক সংজ্ঞা পড়ুন।
  •   "Carrot"। নিউ আমেরিকান সাইক্লোপিডিয়া। ১৮৭৯। [[বিষয়শ্রেণী:উইকিপিডিয়া নিবন্ধ উইকিসংকলন তথ্যসূত্রসহ নিউ আমেরিকান সাইক্লোপিডিয়া থেকে একটি উদ্ধৃতি অন্তর্ভুক্ত]]