গাইড (চলচ্চিত্র)
গাইড (হিন্দি: गाइड; বাংলা: পথপরিদর্শক) হচ্ছে ১৯৬৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হিন্দি ভাষার ভারতীয় প্রণয়ধর্মী চলচ্চিত্র। দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান ছবিটির মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেন। চলচ্চিত্রটির চিত্রনাট্য রচনা ও পরিচালনা করেন দেব আনন্দের ভাই বিজয় আনন্দ। আর. কে. নারায়ণ এর উপন্যাস দ্যা গাইড (১৯৫৮) অবলম্বনে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।[১]
গাইড | |
---|---|
পরিচালক | বিজয় আনন্দ |
প্রযোজক | দেব আনন্দ |
চিত্রনাট্যকার | বিজয় আনন্দ |
উৎস | আর. কে. নারায়ণ কর্তৃক দ্যা গাইড |
শ্রেষ্ঠাংশে |
|
সুরকার | শচীন দেববর্মণ |
চিত্রগ্রাহক | ফলি মিস্ত্রি |
সম্পাদক | বিজয় আনন্দ বাবু শেখ |
প্রযোজনা কোম্পানি | নবকেতন ফিল্মস |
মুক্তি |
|
স্থিতিকাল | ১৮৩ মিনিট |
দেশ | ভারত |
ভাষা | হিন্দি |
মুক্তির পর চলচ্চিত্রটি বক্স অফিসে সফলতা পায়।[২] চলচ্চিত্রটি এর অভিনেতা-অভিনেত্রী (দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান) এর অভিনয়, কাহিনী এবং শচীন দেববর্মণ এর সঙ্গীতের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছে। টাইম ম্যাগাজিন 'সেরা ধ্রুপদী বলিউড চলচ্চিত্র' তালিকায় গাইডকে চতুর্থ অবস্থানে রেখেছে।[৩]
চলচ্চিত্রটির ১২০ মিনিটের একটি সংস্করণ মার্কিন লেখিকা পার্ল এস বাক লিখেন এবং ট্যাড ড্যানিয়েলওয়েস্কি পরিচালনা এবং প্রযোজনা করেন।[৪] মুক্তির ৪২ বছর পর ২০০৭ সালে গাইড 'কান চলচ্চিত্র উৎসব' এ প্রদর্শিত হয়েছিলো।[৫]
কাহিনী
সম্পাদনাএই পরিচ্ছেদটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনো কম্পিউটার অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক অনুবাদ করে থাকতে পারেন। |
চলচ্চিত্রটি রাজু (দেব আনন্দ) এর কাহিনী দ্বারা শুরু হয় যে জেল থেকে মুক্তি পায়। রাজু একজন ফ্রিল্যান্স গাইড ছিলেন, যিনি ঐতিহাসিক স্থানগুলিতে পর্যটক ভ্রমণ করিয়ে করে তার জীবিকা অর্জন করেছেন। একদিন, এক ধনী ও বয়স্ক প্রত্নতত্ত্ববিদ মার্কো (কিশোর সাহু) তার অল্প বয়সী স্ত্রী রোজি (ওয়াহিদা রেহমান), যে একটি বারাঙ্গনার মেয়ের সাথে শহরে আসে। মার্কো শহরের বাইরে গুহায় কিছু গবেষণা করতে চায় এবং রাজুকে তার গাইড হিসাবে নিয়োগ করে।
যখন মার্কো নিজেকে গুহা আবিষ্কারের জন্য ব্যস্ত করে ফেলে, রাজু রোজিকে একটি সফরে নিয়ে যায় এবং তার নৃত্য-দক্ষতা আর সরলতার প্রশংসার করে। রাজু একজন কুমারী বারাঙ্গনার মেয়ে হিসেবে রোজির ইতিহাস জানতে পারে এবং কীভাবে যৌতুক দিয়ে মার্কোর পত্নী হয়েছে তাও জেনে নেয় । রোজিকে নাচের শখ ছেড়ে দিতে হয়েছিলো কারণ সেটা মার্কো পছন্দ করতনা। ইতোমধ্যে রোজি বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এই ঘটনা শুনে মার্কো গুহা থেকে রোজির কাছে এসে দেখে সে জীবিত এবং তার প্রতি রাগান্বিত হয়। সে বলে যে তার এটি ছিলো একটি নাটক, সে আত্মহত্যা করতে চাইলে অনেক ঘুমের ওষুধ খেত যাতে সে সত্যিই মারা যায়। যেই গুহাতে মার্কো কাজ করছিলো সেটাতে রোজি এসে দেখে যে মার্কো একজন আদিবাসী মেয়ের সাথে সময় কাটাচ্ছে। রোজি মার্কোর প্রতি ক্রোধান্বিত হয় এবং তাদের দুজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়, রোজি গুহা থেকে বের হয়ে যায়, আবার আত্মহত্যা করতে চায় সে।
রাজু রোজিকে শান্ত করে বলে যে আত্মহত্যা করা একটা পাপ, এবং তাকে আরো বলে তার উচিত তাকে তার স্বপ্নের পেছনে লেগে থেকে বেঁচে থাকা উচিত। রোজি অবশেষে মার্কোর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি টানে, তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। এখন রোজির সাহায্য এবং গৃহ দরকার। রাজু তাকে আশ্রয় দেয়। রাজু'র লোকজনেরা রোজিকে পতিতা মনে করে (কারণ রাজকীয় অনুষ্ঠানে ক্লাসিক্যাল নৃত্য প্রদর্শন করা পতিতাদেরই কাজ ছিলো), এটাতে অনেক সমস্যা তৈরি হয়, রাজুর মা আর ভাই রোজিকে ঘর থেকে বের করে দিতে বলে। রাজু রাজী হয়না আর তার মা তাকে ত্যাগ করে। রোজির কারণে রাজুর বন্ধু এবং গাড়িচালকও রাজুকে ত্যাগ করে। রাজু তার ব্যবসা হারায় এবং পুরো শহর রাজুর বিরুদ্ধে চলে যায়। অবস্থার অব্যাহত অবনতি দেখে রাজু রোজিকে গান এবং নাচ কর্মে নিয়োজিত করে এবং রোজি তারকা হয়ে যায়। রোজির তারকা হওয়া দেখে রাজু উচ্ছৃংঙ্খল হয়ে যায় - জুয়া খেলে এবং মদ খায়। মার্কো হঠাৎ চলে আসে। রোজিকে পুনরায় নিজের পত্নী বানানোর চেষ্টা করে, সে ফুল নিয়ে আসে এবং তার একটি লোককে রোজির কাছে পাঠায় এবং সে রোজির কাছে বলে 'সেইফ ডিপোজিট বক্স' এ কিছু স্বর্ণ আছে, ওগুলো ফেরত দিতে। রাজু, একটু হিংসাপরায়ণ, চায়না যে মার্কো রোজির সাথে যোগাযোগ করুক এবং রোজি স্বর্ণ দিয়ে দেবে বলে মিথ্যা কথা বলে। রোজি আর রাজুর মধ্যে বন্ধুত্বে কিছুটা ভাঙন ধরে; রোজি রাজুর সাথে কথা বলতে চায়না আর তাকে তার কক্ষ থেকে চলে যেতে বলে এই বলে যে সে বাইরে যাবে। এর আগে রোজি রাজুকে বলে যে কীভাবে একটা পুরুষ একটা নারীর আয়ে থাকতে পারে যেটা মার্কো তাকে বলেছিলো।
রাজু পাল্টা উত্তর দেয় যে রোজি ভুল বুঝছে যে সে নিজে নিজে তারকা হয়েছে; সে তারকা হয়েছে রাজুর উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার ফলে। রোজি পরে স্বর্ণ জালিয়াতি সম্বন্ধে জানতে পারে। স্বর্ণ জালিয়াতিতে রাজু অভিযুক্ত হয় এবং তার দু'বছরের কারাদণ্ডাদেশ হয়। রোজি বুঝতে পারেনা যে রাজু কেন জালিয়াতিতে জড়ালো, সে তার কাছে টাকা চাইতে পারতো এমনটা ভাবে সে। বিষয়টা আসলে টাকার ব্যাপার ছিলোনা, বিষয়টা আসলে রাজুর রোজির প্রতি ভালোবাসার আকর্ষণের কারণে ছিলো, রাজু চাইতোনা যে রোজি জানুক যে মার্কো তাকে দেখার জন্য আসতো এবং রাজু মার্কো আর রোজির পুনর্মিলনীর বিরুদ্ধে ছিলো। রাজু'র কারাগার থেকে মুক্তির দিনে তার মা এবং রোজি তাকে নিতে আসে কিন্তু তাদেরকে বলা হয় রাজুকে ছয়মাস আগেই তার ভালো আচরণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে রাজু একা একা ঘুরে বেড়ানো শুরু করে। হতাশা, দারিদ্র্যতা, জীর্ণশীর্ণ জামাকাপড়, ক্ষুধা এবং একাকীত্বে দিন কাটানো শুর করতে করতে সে একদা ঘুরে বেড়ানো সাধু পুরুষদের সাক্ষাৎ পায় যাদের সাথে সে একটি ছোট শহরে এক রাত একটা পরিত্যক্ত মন্দিরে রাত কাটায়। রাজু একটি মহিলাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করার জন্য যুক্তি দেখায় এবং মহিলাটি রাজী হয়, ভোলা নামের এক ব্যক্তি রাজুকে পবিত্র মানুষ মনে করে নেয়। প্রভাবিত হয়ে ভোলা এই খবরটি গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে দেয়। রাজু গ্রামে একজন পবিত্র মানুষ হিসেবে গৃহীত হয়ে যায়। রাজু গ্রামের স্বামীজী (প্রধান পবিত্র মানুষ) এর দায়িত্ব নেয় আর স্থানীয় পণ্ডিতদের সঙ্গে দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ে। অনাবৃষ্টির কারণে রাজু ১২ দিনের উপবাস করে যাতে বৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যে তার মা, বন্ধু আর রোজি তার সাথে মিলে যায়। পরে বৃষ্টি হয় কিন্তু রাজু মারা যায়।
অভিনয়ে
সম্পাদনা- দেব আনন্দ - রাজু
- ওয়াহিদা রেহমান - রোজি মার্কো/মিস নলিনী
- লীলা চিটনিস - রাজুর মা
- কিশোর সাহু - মার্কো
- গজনন জাগিরদার - ভোলা
- আনোয়ার হোসেন - গফুর
- রশিদ খান - জোসেফ
- রাম অবতার - পণ্ডিত
- নাজির কাশ্মীরি - গ্রামবাসী
- প্রবীণ পাল - ভোলার স্ত্রী
সঙ্গীত
সম্পাদনাগাইড | ||||
---|---|---|---|---|
কর্তৃক অ্যালবাম | ||||
মুক্তির তারিখ | ১৯৬৫ (ভারত) | |||
শব্দধারণের সময় | ১৯৬৪ | |||
ঘরানা | চলচ্চিত্রের সঙ্গীত | |||
দৈর্ঘ্য | ৩৮ঃ০১ | |||
সঙ্গীত প্রকাশনী | দ্যা গ্রামোফোন কম্পানি অব ইন্ডিয়া (প্রাইভেট) লিমিটেড | |||
প্রযোজক | শচীন দেববর্মণ | |||
শচীন দেববর্মণ কালক্রম | ||||
|
গাইড চলচ্চিত্রটির সঙ্গীত পরিচালনা করেন শচীন দেববর্মণ এবং গীতিকার ছিলেন শৈলেন্দ্র। গানগুলোতে কণ্ঠ প্রদান করেন মোহাম্মদ রফি, লতা মঙ্গেশকর, কিশোর কুমার, মান্না দে এবং শচীন দেববর্মণ। 'প্ল্যানেট বলিউড' ওয়েবসাইট 'সেরা ১০০ সর্বোৎকৃষ্ট বলিউড সাউন্ডট্র্যাক' তালিকায় গাইড এর সাউন্ডট্র্যাককে ১১ নম্বরে রেখেছিলো।[৬]
গান | গায়ক-গায়িকা(ণ) | চিত্রায়নে |
---|---|---|
"আজ ফির জিনে কি তামান্না" | লতা মঙ্গেশকর | দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান |
"দিন ঢাল জায়ে" | মোহাম্মদ রফি | দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান |
"গাতা রাহে মেরা দিল" | কিশোর কুমার এবং লতা মঙ্গেশকর | দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান |
"কিয়া সে কিয়া হো গায়া" | মোহাম্মদ রফি | দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান |
"পিয়া তোসে ন্যানা লাগে রে" | লতা মঙ্গেশকর | ওয়াহিদা রেহমান |
"সাইয়া বেইমান" | লতা মঙ্গেশকর | দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান |
"তেরে মেরে সাপনে" | মোহাম্মদ রফি | দেব আনন্দ এবং ওয়াহিদা রেহমান |
"ওয়াহা কন হে তেরা" | শচীন দেববর্মণ | দেব আনন্দ |
"হে রাম হামারে রামচন্দ্র" | মান্না দে এবং অন্যান্য | দেব আনন্দ |
"আল্লাহ মেঘ দে পানি দে" | শচীন দেববর্মণ | দেব আনন্দ |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Guide; a human odyssey"। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৫।
- ↑ "BoxOfficeIndia Top Earners 1960-1969 (Figures in Indian rupees)"। ৩ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৫।
- ↑ Corliss, Richard (২৭ অক্টোবর ২০১০), "Guide - 1965 - Best of Bollywood", Time.com, ২৮ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০১২
- ↑ "Tad Danielewski Filmography"। Fandango.com। ২৯ মার্চ ১৯২১। ২২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ আগস্ট ২০১১।
- ↑ Gitanjali Roy (১ মে ২০১৩)। "8 things you didn't know about Guide"। NDTV Movies। সংগ্রহের তারিখ ৩ মে ২০১৩।
- ↑ "100 Greatest Bollywood Soundtracks Ever-Part 4"। Planet Bollywood। ৬ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১১।
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেজে গাইড (ইংরেজি)