অধিকাংশ রাষ্ট্রে রাস্তার গতিসীমা হল ঐ রাস্তায় যানবাহনের সর্বোচ্চ (বা কখনো সর্বনিম্ন) বৈধ গতির নির্দেশক| কোনো কোনো জায়গায় গতিসীমা পরিবর্তনশীল বা অসীম ও হতে পারে| গতিসীমা সাধারণত কোনো ট্রাফিক চিহ্ণ দ্বারা নির্দেশ করা হয়|
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গতিসীমা স্থির করেন রাষ্ট্রের কোনো বিধানিক গোষ্ঠী বা প্রাদেশিক সরকার আর প্রয়োগ করেন জাতীয় বা আঞ্চলিক আরক্ষা এবং/অথবা বিচার বিভাগ|
প্রথম সর্বোচ্চ গতিসীমা চালু হয়েছিল ইংল্যান্ডে ১৮৬১ সালে যার মান ছিল ১০ মাইল প্রতি ঘণ্টা বা ১৬ কিমি প্রতি ঘণ্টা| অদ্যাবধি প্রকাশিত সর্বোচ্চ গতিসীমা ১৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বা ৮৭ মাইল প্রতি ঘণ্টা যা পোল্যান্ডবুলগেরিয়ার কিছু রাস্তায় প্রযোজ্য| টেক্সাস-এ ৪০ মাইল (৬৪ কিমি) দীর্ঘ একটি শুল্কভুক্ত রাস্তায় গতিসীমা ৮৫ মাইল প্রতি ঘণ্টা বা ১৩৭ কিমি প্রতি ঘণ্টা| কিছু রাস্তায় কয়েকটি বিশেষ শ্রেণির যানবাহনের উপর গতিসীমা প্রযোজ্য নয়| ম্যান দ্বীপের গ্রামীণ রাস্তা, বা ভারতের অঙ্গরাজ্য অন্ধ্র প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানায় গতিসীমার শৈথিল্য আছে|
সাধারণত, রাস্তায় যানচলাচলের গতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গতিসীমা নির্দেশ করা হয়| এর উদ্দেশ্য বহুবিধ| এতে পথ নিরাপত্তা বৃদ্ধি পায় ও পথ দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হ্রাস পায়| বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার World report on road traffic injury prevention প্রতিবেদনে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণকে পথ দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতি হ্রাসের একটি সম্ভব্য উপায়রূপে চিহ্ণিত করেছেন| হু এর হিসেব অনুযায়ী ২০০৪ সালে সমগ্র পৃথিবী জুড়ে রাস্তায় অনুমাণিক ১২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে ও অনুমাণিক ৫০০ লক্ষ মানুষ আহত হয়েছেন| পরিবেশের উপর যানবাহনের কুপ্রভাব (যথা-গাড়ির আওয়াজ, কম্পণ, নিঃসরণ) নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টা থেকেও গতিসীমা আরোপ করা হয়| স্থানীয় মানুষের পাড়ার গলিপথ ব্যবহারে যানচলাচল যাতে বিঘ্ন না ঘটায়, গতিসীমা তা নিশ্চিত করে| যদিও, এটাও প্রমাণ করা হয়েছে যে, কিছু ক্ষেত্রে গাড়ির গড় গতির উপর গতিসীমার তেমন কোনো প্রভাব নেই|
যেসব ক্ষেত্রে সরকারের বিবেচনা অনুযায়ী রাস্তার স্বাভাবিক গতি খুব বেশি, যেমন শহরাঞ্চলে যেখানে গতিসীমা ৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টার কম, সেখানে অনেক সময় traffic calming(যেমন-বাম্পার বা সরু গলি) ব্যবহার করা হয়| কয়েকটি বিশেষ শ্রেণির গাড়ির ক্ষেত্রে অনুবর্তিতা নিশ্চিত করতে গতি সীমিতকারকের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হতে পারে|
সূচনা থেকেই কিছু যানচালক সংগঠন এর বিরোধিতা করে|

মানচিত্রে ইউরোপীয় দেশগুলোতে গতিসীমা

ইতিহাস

সম্পাদনা


The United Kingdom Stage Carriage Act, ১৮৩২ -এ সর্বপ্রথম নিয়ন্ত্রণহীন যানচালনা দ্বারা যাত্রী বা পথচারীর নিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর ঘটনাকে অপরাধ রূপে চিহ্ণিত করা হয়| প্রথম সর্বোচ্চ গতিসীমা চালু হয় ইংল্যান্ডে একগুচ্ছ Locomotive Acts (১৮৬১,১৮৬৫ ও ১৮৭৮) এর মাধ্যমে| ১৮৬১-র আইন শহরের খোলা রাস্তায় ১৬ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিসীমা নির্দিষ্ট করে যা ১৮৬৫-র Red Flag আইনে কমিয়ে শহরে ৩ কিমি প্রতি ঘণ্টা ও গ্রামে ৬ কিমি প্রতি ঘণ্টা করা হয়| ১৮৯৬-র Locomotives on Highways আইনে গতিসীমা বাড়িয়ে ১৪ কিমি প্রতি ঘণ্টা করা হয়|
কেন্ট এর উত্তর পেকহ্যাম এর ওয়াল্টার আর্নল্ড প্রথম গতিসীমা লঙ্ঘনে অভিযুক্ত রূপে বিবেচিত হন যাকে ১৩ কিমি প্রতি ঘণ্টায় গাড়ি চালানোর জন্য ২৮ জানুয়ারী ১৮৯৬ সালে ১ শিলিং জরিমানা করা হয়|

২০ শতকের গোড়ার দিকে অস্ট্রেলিয়ায় যানচালকদের অনিয়ন্ত্রিত যানচালনার অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়| ১৯০৫ সালে ২০ মাইল প্রতি ঘণ্টা ‍‍‍‍‍বা ৩২ কিমি প্রতি ঘণ্টা গতিতে ওর অর্ধেক গতিতে চলমান একটি ট্রামকে পার হওয়ার জন্য একজন দোষী সাব্যস্ত হয়|

সাম্প্রতিক ঘটনা

সম্পাদনা

৭-ই মার্চ ২০১৭-এ হুগলীর গুড়াপের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে এক মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত লোকসঙ্গীত শিল্পী ও গবেষক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যর মৃত্যু হয়| দুর্ঘটনার প্রাথমিক কারণ হিসেবে তাঁর গাড়ির উচ্চ গতিকে দায়ী করা হয়|

নিয়মকানুন

সম্পাদনা

অধিকাংশ বিচারব্যবস্থা মেট্রিক নিয়ম অনুযায়ী কিমি প্রতি ঘণ্টাকে গতিসীমার একক হিসাবে ব্যবহার করে, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইংল্যান্ডের মতো কিছু রাষ্ট্রে মাইল প্রতি ঘণ্টায় গতিসীমা নির্দেশিত হয়| অস্ট্রেলিয়া প্রাথমিকভাবে ইংল্যান্ডেকে অনুসরণ করলেও ১৯৭০ সাল থেকে মেট্রিক নিয়মকে গ্রহণ করে|

প্রাথমিক নিয়ম

সম্পাদনা
পরিমিত গতি
সম্পাদনা

ক্ষেত্রবিশেষে, যানচালকদের নিরাপদ গতিতে গাড়ি চালাতে হয়|

অত্যধিক গতি
সম্পাদনা
সর্বোচ্চ গতিসীমা
সম্পাদনা
সর্বনিম্ন গতিসীমা
সম্পাদনা

যথার্থথা

সম্পাদনা


প্রাথমিক ভাবে গতিসীমা স্থির করা হয় পথ নিরাপত্তা ও যাত্রার সময়কালের মধ্যে ভারসাম্য রেখে| জ্বালানি খরচ কমানো বা পরিবেশ চেতনাও গতিসীমা ব্যবহারের কারণ|

পথ নিরাপত্তা
সম্পাদনা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০০৪ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০২ সালের মোট আঘাতজনিত মৃত্যুর ২২ শতাংশই পথ দুর্ঘটনাজনিত আঘাতে এবং নতুন উদ্যোগ ও প্রয়াস ব্যতীত ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে ক্ষতির হার বাড়বে ৬৫ শতাংশ| প্রতিবেদন অনুযায়ী সমস্যার কেন্দ্রবিন্দুতে আছে যানচালনার গতি| পথ দুর্ঘটনা শিশুমৃত্যুর অন্যতম কারণ(বছরে ২৬০,০০০ শিশু মারা যায়, ১০০ লক্ষ শিশু আহত হয়)|
গতিসীমা গতির একটি উচ্চসীমা নির্ধারণ করে দেয় যা ঠিকমতো পালন করা হলে একই সমযে একই রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনের গতির পার্থক্য কমিয়ে দিতে পারে| ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়াররা লক্ষ করেছেন ট্রাফিকের গড় গতির চেয়ে কম বা বেশি গতিতে চলমান যানবাহনের ক্ষেত্রে সংঘর্ষের সম্ভবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি| ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বিবেচনা করলে মধ্যক গতি বা তার কম গতির যানবাহনের ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ সবচেয়ে কম| উচ্চ গতির মোটরযানের ক্ষেত্রে তা সূচক হারে বাড়তে থাকে|
কিছু পরিস্থিতিতে যানের গতি হ্রাসের প্রয়াস কাম্য, কারণ গাড়ি সংঘর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত স্থিতি শক্তি, সংঘর্ষের গতির বর্গের সমানুপাতিক|

জ্বালানি কার্যকারিতা
সম্পাদনা

গতিসীমা নির্ধারণে অনেক সময় জ্বালানি কার্যকারিতা বা জ্বালানি সংরক্ষণের প্রভাব থাকে|

পরিবেশ চিন্তা
সম্পাদনা

গতিসীমা বায়ুর গুণগত মান বা পরিবেশের গুণগত মানের উন্নতিতে প্রয়োগ করা হতে পারে|

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা