খায়রুল জাহান
খায়রুল জাহান বীর প্রতীক পদকপ্রাপ্ত একজন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধা।[১]
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনা১৯৪৯ সালে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিফপুর গ্রামের তালুকদার বাড়িতে খায়রুল জাহানের জন্ম হয়। খায়রুল জাহানের বাবার নাম আবদুল হাই তালুকদার। মায়ের নাম শামসুন্নাহার।
বাড়ির পাশের লতিফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক পড়াশোনা করে ১৯৬৭ সালে কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করেন তিনি।
১৯৬৯ সালে ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন খায়রুল। তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে পরীক্ষা দিয়ে মনোনীতও হয়েছিলেন। পরে ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য চিঠি আসে মার্চ মাসের ২৭ তারিখ।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অফিসার হওয়ার চেয়ে যুদ্ধ করে মাতৃভূমিকে স্বাধীন করা সঠিক মনে করলেন খায়রুল জাহান।
যুদ্ধযাত্রা
সম্পাদনাকিশোরগঞ্জের মুক্তিকামী তরুণ-যুবকদের সংঘটিত করে খায়রুল জাহান বাড়ি থেকে বের হয়ে পড়েন ৭ জুন।
ভারতের মেঘালয়ে মেজর এটিএম হায়দারের অধীনে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে মেজর খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে ২ নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার হিসাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। নভেম্বরে চলে আসেন গ্রামের বাড়ি লতিফপুরে। বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে কিশোরগঞ্জ শহরে অপারেশন চালানোর পরিকল্পনা করেন তিনি।
যুদ্ধ ও মৃত্যু
সম্পাদনা১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠে রাজাকারদের ক্যাম্প দখল করার সিদ্ধান্ত নেন খায়রুল ও তার সহযোগী মুক্তিযোদ্ধারা। এই দিন কিশোরগঞ্জ জেলার হোসেনপুর উপজেলার চরপুমদী বাজার সংলগ্ন প্যারাডাঙ্গা পুলের কাছে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী মুজাহিদ ও রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বড় যুদ্ধ হয়। তখন খায়রুল জাহানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট একটি দল সেখানে অবস্থান করছিল। সেদিন মুজাহিদ আর রাজাকাররা মিলে মুক্তি-যোদ্ধাদের ঘিরে ফেলেছিল। তখন তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করে তাদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেন। তবে মুক্তিবাহিনীকেও অনেক মূল্য দিতে হয়।
সম্মুখযুদ্ধের এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দলনেতা খায়রুল জাহান বুঝতে পারেন এই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তখন তিনি তার দলকে রক্ষা করার জন্য একাই সামনে এগিয়ে গিয়ে গুলি করতে থাকেন। এ সময় মুজাহিদ আর রাজাকাররা তাঁকে ঘেরাও করে ফেলে। তাদের হাতে ধরা পড়ার পূর্ব মুহূর্তে খায়রুল নিজের ওপর নিজেই গ্রেনেড চার্জ করে আত্মাহুতি দেন। খায়রুল জাহান ও তার সহযোদ্ধা মো. সেলিম সেখানে শহীদ হন।
পদক ও স্মৃতি
সম্পাদনাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে গঠিত সরকার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা খায়রুল জাহানকে ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করে এবং তার স্মরণে প্যাড়াভাঙ্গায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে।[২]
ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট শহীদের স্মরণে একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করে শহীদ খায়রুল ছাত্রাবাস।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ১৪০। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ "খায়রুল জাহান: সম্মুখ লড়াইয়ের বীর"। banglanews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-২৯।
- আরোপ
- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ২৬-০৪-২০১১ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।