খয়েরা

হেসপেরিডি পরিবারের প্রজাপতি

খয়েরা[](বৈজ্ঞানিক নাম: Suastus gremius (Fabricius)) 'হেসপারিডি' (Hespaeriidae) বা স্কিপারস (Skippers) গোত্র ও 'হেসপারিনি' (Hesperiinae) উপ-গোত্রের অন্তর্ভুক্ত ছোট আকৃতির প্রজাপতি, যার শরীর ও ডানা মূখ্যত ধূসর খয়েরি বর্নের এবং তাতে কালো ফুটকি দেখা যায়। এদের গড়ন এবং ডানার রঙ এর জন্য অন্যান্য সুইফটদের সাথে সাদৃশ্য দেখা মেলে।[]

খয়েরা
Oriental Palm Bob
ডানা বন্ধ অবস্থায়
ডানা খোলা অবস্থায়
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Animalia
পর্ব: Arthropoda
শ্রেণী: Insecta
বর্গ: Lepidoptera
পরিবার: Hesperiidae
গণ: Suastus
প্রজাতি: S. gremius
দ্বিপদী নাম
Suastus gremius
(Fabricius, 1798) []

খয়েরা এর প্রসারিত অবস্থায় ডানার আকার ৩২-৪২ মিলিমিটার দৈর্ঘ্যের হয়।[]

উপপ্রজাতি

সম্পাদনা

ভারতে প্রাপ্ত খয়েরা এর উপপ্রজাতি হল-[]

  • Suastus gremius gremius (Fabricius, 1798) – Indian Palm Bob

বিস্তার

সম্পাদনা

ভারতের প্রায় সর্বত্র [][][], নেপাল, বাংলাদেশ, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মায়ানমার এর বিভিন্ন অঞ্চলে এদের পাওয়া যায়।[][১০][১১][১২]

বর্ণনা

সম্পাদনা

প্রজাপতির দেহাংশের পরিচয় বিষদ জানার জন্য প্রজাপতির দেহ এবং ডানার অংশের নির্দেশিকা দেখুন:-

ডানার উপরিতল জলপাই -বাদামি। সামনের ডানায় কোস্টার নিচ থেকে ডরসামের উপর পর্যন্ত কয়েকটি বিভিন্ন আকৃতির ছোট- বড় লালচে হলুদ-সাদা (ochreous - white) ও অর্ধ-স্বচ্ছ ছোপ বর্তমান। উক্ত ছোপগুলির মধ্যে ডীস্কো-সেলুলার অংশের মধ্যভাগে একটি ছোট ছোপ; শীর্ষভাগের সাম্যান্য নিচে (sub-apical) ৩ টি ছোট ছোপ (সবার উপরেরটি ক্ষুদ্রতম); ৩ টি বড় ও তীর্যক রেখায় অবস্থিত ডিসকাল ছোপ ১,২ ও ৩ নং শিরামধ্যে। (মধ্যের ছোপটি বৃহত্তম, কিছুটা ডিম্বাকৃতি ও বাইরের দিকে দন্তাকৃতি খাঁজকাটা)। উক্ত ডিসকাল ছোপ তিনটির আকার বিভিন্ন নমুনায় পরিবর্তনশীল। কোনো কোনো নমুনায় মধ্যবর্তী ডিসকাল ছোপটির একদম নিচেই একটি সরু লম্বাটে ছোট ছোপ দৃশ্যমান। পিছনের গোলাকৃতি ডানা সামনের ডানার তুলনায় অধিকতর ফ্যাকাশে ও চওড়া কালো কোস্টাল প্রান্ত-পটি যুক্ত। পিছনের ডানা দাগ-ছোপহীন। উভয় ডানার সিলিয়া বা প্রান্তরোয়া হলদেটে বাদামি।[১৩]

ডানার নিম্নতল ধূসর বাদামি বা ধূসর ও গোলাপি আভাযুক্ত। সামনের ডানায় সাব-কোস্টাল শিরার নিচে ভিতরের দিকের অংশ খানিক চওড়াভাবে কালচে আঁশে ছাওয়া ও বাকি অংশ ধূসর-গোলাপি।সামনের ডানার উপরিতলের ছোপগুলি স্বচ্ছতার কারণে নিম্নতলে অস্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। টার্মিনাল প্রান্তরেখা পুরু ও কালচে ।পিছনের ডানা বাদামির উপরে ধূসর আঁশে ছাওয়া ও কতগুলি সুস্পষ্ট কালো ছোট ছোপযুক্ত যেগুলির সাহায্যে এই প্রজাতিকে সহজেই অন্যান্য স্কিপারদের থেকে আলাদা করা যায়। উক্ত কালো ছোপগুলির মধ্যে সেল এর বহিঃপ্রান্তে একটি গোলাকৃতি কালো ছোপ; ৩-৪ টি ডিসকাল ছোপের একটি বাঁকানো অসম্পূর্ণ সারি চোখে পড়ে। কালো ছোপগুলি সবকটিই ফ্যাকাশে সাদা বলয়যুক্ত (ringed) এবং কালো ছোপের সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন নমুনায় পরিবর্তনশীল।[১৩]

শুঙ্গ কালো; শুঙ্গের শীর্ষে মুগুরাকৃতি অংশের (club) ডগা কমলা।মাথা, বক্ষদেশ ও উদর উপরিতলে ঘন বাদামি বা কালচে বাদামি ও নিম্নতলে ধূসর ।পা গুলি ধূসর বর্ণের।[১৩]

স্ত্রী

সম্পাদনা

স্ত্রী প্রকার সাধারণত পুরুষ অপেক্ষা ফ্যাকাশেতর। ডানার দাগ-ছোপ অনুরূপ; তবে সামনের ডানার ছোপগুলি পুরুষ অপেক্ষা স্ত্রী প্রকারে বৃহত্তর। স্ত্রী প্রকারে সামনের ডানার উপরের ডিসকাল ছোপদুটি চৌকো, সেল-এর বহিঃপ্রান্তে দুটি সংযুক্ত বড় ছোপ বিদ্যমান। স্ত্রী প্রকার সাধারণত পুরুষ অপেক্ষা আকারে বড়।[১৩][]

সুলভ-দর্শন এই প্রজাতি তীব্র বেগে সরলরেখায় স্বল্পদূরত্ব ওড়ে। অন্যান্য স্কিপারদের ন্যায় এদের উড়ান এলোমেলো নয়। এক বসার জায়গা থেকে অন্য বসার জায়গায় তীরের বেগে উড়ে যায়। এরা ভূমির কাছাকাছি নিচ দিয়ে ও বড় গাছের উচ্চতায় সমান স্বচ্ছন্দে ওড়ে। এরা প্রায়শই গাছের ডাল, পাতা, ঝোপঝাড়, ফুল ও মাটি বা পাথরে অবস্থান করে, তবে খুবই সীমিত কালের জন্য; দু-এক মুহূর্ত বসেই আবার উড়ে যায় অন্য বসার জায়গায়। ভিজে মাটি, পাথরের ভিজে ছোপ, পাকা ফল ও পাখির বিষ্ঠায় অবস্থান করে খাদ্যরস আহরণ করতে এই প্রজাতিকে নিয়মিতভাবে দেখা যায়। ইহারা রোদ পোহাতে ভীষণ পছন্দ করে। পুরুষ প্রকারকে সামনের ডানা সামান্য মেলে ও পিছনের ডানা অনুভুমিক ভাবে মেলে পাতায়, ডালে, মাটিতে ও পাথরে বসে রোদ পোহাতে প্রায়ই দেখা যায়।গ্রামাঞ্চলে ভিজে বা স্যাঁতস্যাতে মাটির দেওয়ালে মাঝেমধ্যেই এই প্রজাতিকে বিশ্রামরত অবস্থায় চোখে পড়ে। পাহাড়ি জঙ্গলে, সমতলের জঙ্গল বা ঝোপঝাড়পূর্ণ পরিবেশে, জঙ্গলের সীমানায় খোলাজায়গায় সর্বত্রই এদের দর্শন মেলে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ১২০০ মি, উচ্চতা পর্যন্ত প্রায় সারাবছরই এদের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়।[১৪][১৫]

বৈশিষ্ট্য

সম্পাদনা

ইটের মতো লাল, অর্ধ-গোলাকার। পাম জাতীয় [১৬] বিভিন্ন গাছের পাতার কিনারায় এরা ডিম পাড়ে।[]

শূককীট

সম্পাদনা

শুককীট (larva) ফ্যাকাশে সবুজ ও পিঠের উপর দিয়ে একটা গাঢ় সবুজ রেখা গেছে শরীরের সামনে থেকে পিছন অবধি। শরীরের এখানে ওখানে কিছু কিছু নীলচে সবুজের ছোপ দেখা যায়।শ্বাসছিদ্রগুলি ক্ষুদ্র কালো বিন্দুর মতো, দেহত্বকে কোঁচকানো ভাব। মাথা ময়লা সাদা। গোলমরিচ গুঁড়োর মতো কালচে খয়েরির ছিটা দিয়ে তৈরি দুটি লম্বা ছোপ দুই গাল দিয়ে নিচের দিকে নেমে এসেছে ও ক্রমশ চওড়া হয়েছে। নিচের দিকে মাঝামাঝি ওরকম আর একটি বাঁকা ছোপ পূর্বোক্ত ছোপ দুটিকে সংযুক্ত করেছে। শুককীট বাস করে পাম গাছের পাতাকে মুড়ে একটি খোপের মতো বানিয়ে। এই আস্তানা থেকে বাইরে বেরিয়ে বেরিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে শুককীট।[]

মূককীট

সম্পাদনা

মুককীট তৈরি হয় পাতার ডগার দিকে অনুরূপ একটা খোপের ভিতর। মুককীটের মাথা, বক্ষ ও ডানার আবরণী অংশ ঘাসের মতো সবুজ; বাকি অংশ হলদেটে সবুজ।[][১৭]

চিত্রশালা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Fabricius, 1798 Supplementum Entomologiae Systematicae Ent. Syst. (Suppl.) : 1-572, (index) 1-53
  2. দাশগুপ্ত, যুধাজিৎ (২০০৬)। পশ্চিমবঙ্গের প্রজাপ্রতি (১ম সংস্করণ সংস্করণ)। কলকাতা: আনন্দ। পৃষ্ঠা 162–163। আইএসবিএন 81-7756-558-3 
  3. W. H., Evans (১৯৪৯)। A Catalogue of the Hesperiidae from Europe, Asia, and Australia in the British Museum। London: British Museum (Natural History). Department of Entomology। পৃষ্ঠা 296। 
  4. Isaac, Kehimkar (২০১৬)। BHNS Field Guides Butterflies of India। Mumbai: Bombay Natural History Society। পৃষ্ঠা 107। আইএসবিএন 9789384678012 
  5. "Suastus gremius (Fabricius, 1798) – Oriental Palm Bob"। ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৯ 
  6. Payra, A., Mishra, R. K., & Mondal, K. (2017). (Lepidoptera-Rhopalocera) of coastal areas of Southern West Bengal, India. Tap chi Sinh hoc, 39(3), 276-290.
  7. Biswas, J., Dookia, S., & Faisal, M. (2017). of Delhi with new additions and an annotated checklist from Delhi, India. International Journal of Zoological Studies, 2(6), 4-10.
  8. Bora, A., & Meitei, L. R. (2014). of butterflies (Order: Lepidoptera) in Assam university campus and its vicinity, Cachar district, Assam, India. Journal of Biodiversity and Environmental Sciences, 5(3), 328-339.
  9. R.K., Varshney; Smetacek, Peter (২০১৫)। A Synoptic Catalogue of the Butterflies of India। New Delhi: Butterfly Research Centre, Bhimtal & Indinov Publishing, New Delhi। পৃষ্ঠা 50। আইএসবিএন 978-81-929826-4-9ডিওআই:10.13140/RG.2.1.3966.2164 
  10. Seitz, A., 1912-1927. Die Indo-Australien Tagfalter Grossschmetterlinge Erde 9
  11. Corbet, A. S. & Pendlebury, H. M., 1956. The Butterflies of the Malay Peninsula Edn. 2. Edinburgh Oliver and Boyd xi+537 pp, 159 figs, 55 pls.
  12. E. Y., Watson (১৮৯১)। Hesperiidae Indicae : being a reprint of descriptions of the Hesperiidae of India, Burma, and Ceylon। Madras: Vest and Company। পৃষ্ঠা 51। 
  13. Wynter-Blyth, M.A. (1957) Butterflies of the Indian Region, pg 471.
  14. Pratap Singh, Arun (২০১১)। Butterflies of India (1st সংস্করণ)। Utter Pradesh: Om Books International। পৃষ্ঠা 172। আইএসবিএন 978-93-80069-60-9 
  15. Boruah, A., & Das, G. N. (2017). Butterflies (Lepidoptera) of Dangori Reserve Forest, Upper Assam, India. Zoo's Print, 32(11), 12-23.
  16. Biswas, S., Mukhopadhyay, S., & Dey, R. (2022). Butterfly fauna (insecta: Lepidoptera: Papilionoidea) and larval host plant in Bongaon town, West Bengal, India. Academia Journal of Biology, 44(2), 79-90.
  17. Harinath, P., Suryanarayana, K., Lakshmi, P. N., & Ramana, S. P. (2017). History of the Indian Palm Bob (Suastus Gremius Fabricius, 1798)(Lepidoptera: Rhopalocera: Satyridae) From Southern Andhra Pradesh. Bulletin of Pure & Applied Sciences-Zoology, 36(2), 50-56.