ক্লোদ সিমোঁ

ফরাসি লেখক

ক্লোদ সিমোঁ (ফরাসি: [klod simɔ̃]; ১০ অক্টোবর ১৯১৩ – ৬ জুলাই ২০০৫)[] একজন ফরাসি ঔপন্যাসিক ছিলেন। তার লেখা অন্যতম উপন্যাস হল লা রুত দে ফ্লন্দ্র (১৯৬০) ও লে জেওর্গিক (১৯৮১)। তার লেখনীতে "কবি ও চিত্রশিল্পীর সৃজনশীলতা" এবং "মানুষের অবস্থার বর্ণনায় সময়ের গভীর সচেতনতা" দেখানোর জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।[][]

ক্লোদ সিমোঁ
১৯৬৭ সালে সিমোঁ
১৯৬৭ সালে সিমোঁ
স্থানীয় নাম
ফরাসি: Claude Simon
জন্ম(১৯১৩-১০-১০)১০ অক্টোবর ১৯১৩
তানানারিভ, ফরাসি মাদাগাস্কার
মৃত্যু৬ জুলাই ২০০৫(2005-07-06) (বয়স ৯১)
পারি, ফ্রান্স
পেশাঔপন্যাসিক
ভাষাফরাসি ভাষা
জাতীয়তাফরাসি
সময়কালফরাসি নব্য উপন্যাস
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
১৯৮৫
দাম্পত্যসঙ্গীরিয়া সিমোঁ (মৃ. ২০১৭)

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

সিমোঁ ১৯১৩ সালের ১০ই অক্টোবর মাদাগাস্কারের দ্বীপ তানানারিভে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামাতা ফরাসি ছিলেন। তার পিতা সেনা বাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হন।[][] তখন সিমোঁর বয়স এক বছরও পূর্ণ হয়নি। সিমোঁর শৈশব কাটে রুসিয়োঁ জেলার প্যরপিনিয়ায় তার মায়ের পরিবারে সাথে। তার যখন ১১ বছর বয়স, তখন তার মায়ের মৃত্যু হয়।[]

তিনি প্রথমে চিত্রশিল্পী হতে চেয়েছিলেন এবং সে উদ্দেশ্যে অন্দ্রে লোত অকাদেমিতে ভর্তি হন। কিন্তু অচিরেই বুঝতে পারে নিজের ভরণপোষণের জন্য এই পেশা যথেষ্ট নয়।[] এরপর তিনি স্পেন, জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ইতালি, ও গ্রিস জুড়ে ভ্রমণ করেন। ১৯৩০-এর দশকে তিনি দুইবার যুদ্ধে যান। প্রথমে কাতালোনিয়ায় রিপাবলিকানদের পক্ষে অনিয়মিত বন্দুক সরবরাহকারী হিসেবে এবং ১৯৩৯-৪০ সালে ফরাসি অশ্বারোহী রেজিমেন্টের মধ্যম শ্রেণির যোদ্ধা হিসেবে। ১৯৪০ সালের মে-জুনে মোজের যুদ্ধে তাদের রেজিমেন্ট ধরা পরে এবং কারাবন্দী করা হয়। কিছুদিন যুদ্ধবন্দী শিবিরে আটকে থাকার পর তিনি সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হন এবং ফরাসি প্রতিরোধে অংশ নেন।[] এরপর মিদি-পিরেনেতে ফিরে আসেন ও লেখালেখি শুরু করেন। তার এই বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ ও যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তার একাধিক উপন্যাসের বিষয়বস্তু।[]

সাহিত্যজীবন

সম্পাদনা

সিমোঁ ১৯৪০ সালে মিদিতে ফিরে এসে তার প্রথম উপন্যাস ল্য ত্রিশো রচনা শুরু করেন। বইটি ১৯৪১ সালে সম্পন্ন হয়, কিন্তু যুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে প্রকাশিত হয়।[] ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত ল্য ভঁ ও ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত লের্ব তার কর্মজীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই দুই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে তার বিমূর্ত বর্ণনা শৈলী সম্পূর্ণ সফলতা অর্জন করে। দুটি গল্পই পূর্ব পিরেনের পটভূমিতে রচিত, যেখানে সিমোঁ তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন। ল্য ভঁ উপন্যাসে দেখা যায় একজন লোক উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমির কর্তৃত্ব নিতে একটি ছোট শহরে ফিরে আসেন। এরপর তিনি আর্থিক, যৌনতা, সম্মান ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন।[]

লা রুত দে ফ্লন্দ্র (১৯৬০) উপন্যাসে তার নিজের যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত অভিজ্ঞতাকে অসাধারণ প্রভাবের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। এটি তার রচিত অন্যতম সুন্দর একটি উপন্যাস।[] বইটির জন্য তিনি ১৯৬১ সালে পারিভিত্তিক সংবাদপত্র লেক্সপ্রেস থেকে পুরস্কার অর্জন করেন।[] ১৯৬২ সালের ল্য পালাস বইটি স্পেনের গৃহযুদ্ধের সময়কালে তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত ইস্তোয়া উপন্যাসটি প্রি মেদিসি অর্জন করে।[]

১৯৮১ সালে প্রকাশিত লে জেওর্গিক বইটিও স্পেনের গৃহযুদ্ধর সময়কালে তার অভিজ্ঞতার আলোকে রচিত।[][] "কবি ও চিত্রশিল্পীর সৃজনশীলতা" এবং "মানুষের অবস্থার বর্ণনায় সময়ের গভীর সচেতনতা" দেখানোর জন্য তিনি ১৯৮৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। পুরস্কারমূল্য হিসেবে তিনি ২২৫,০০০ মার্কিন ডলার পান।[][] লাঁভিতাশিঁও (১৯৮৭) রচনার পর তিনি রচনার সংখ্যা কমিয়ে দেন। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত লাকাসিয়া একটি সাধারণত গভীর ফকনেরিয়ান উপন্যাস, যেখানে তিনি তার আগের কথাসাহিত্যের বিষয়বস্তুতে ফিরে যান, অন্তত যুদ্ধের বিষয় নয়। ল্য জার্দাঁ দে প্লন্ত (১৯৯৭) তার আত্মজীবনীমূলক এবং তার শেষ উপন্যাস ল্য ত্রামওয়ে তার ছেলেবেলার নিয়ে আবর্তিত।[]

সৃষ্টিকর্ম

সম্পাদনা
  • ল্য ত্রিশো (Le Tricheur, ১৯৪৬)
  • লা কোর্দ রেদ (La Corde Raide, ১৯৪৭)
  • গালিভার (Gulliver, ১৯৫২)
  • ল্য সাক্র দ্যু প্রঁতেম (Le Sacre du printemps, ১৯৫৪)
  • ল্য ভঁ: তঁতাতিভ দ্য র‍্যতিত্যুশিঁও দ্যুন রেতাব্ল বারোক (Le vent: Tentative de restitution d 'un rétable baroque, ১৯৫৭)
  • লের্ব (L'Herbe, ১৯৫৮)
  • লা রুত দে ফ্লন্দ্র (La Route des Flandres, ১৯৬০)
  • ল্য পালাস (Le Palace, ১৯৬২)
  • লা স্যপারাশিঁও (La Separation, ১৯৬৩); লের্ব উপন্যাস থেকে উপযোগকৃত নাটক
  • ফ্যম, স্যু ২৩ পেন্ত্যুর দ্য জোন মিরো (Femmes, sur 23 peintures de Joan Miró, ১৯৬৬); নতুন সংস্করণ, লা শ্যভ্যল্যুর দ্য বেরেনিস (La Chevelure de Bérénice, ১৯৮৪)
  • ইস্তোয়া (Histoire, ১৯৬৭)
  • লা বাতেই দ্য ফার্সাল (La Bataille de Pharsale, ১৯৬৯)
  • ওরিঁও আভোগ্ল: এসাই (Orion aveugle: Essai, ১৯৭০)
  • লে কর্প কঁদ্যুক্তোর (Les Corps conducteurs, ১৯৭১)
  • ত্রিপ্তিক (Triptyque, ১৯৭৩)
  • ল্যকঁ দ্য শোজ (Leçon de choses, ১৯৭৫)
  • লে জেওর্গিক (Les Géorgiques, ১৯৮১)
  • লাঁভিতাশিঁও (L'Invitation, ১৯৮৭)
  • লাকাসিয়া (L'Acacia, ১৯৮৯)
  • ল্য জার্দাঁ দে প্লন্ত (Le jardin des plantes, ১৯৯৭)
  • ল্য ত্রামওয়ে (Le tramway, ২০০১)

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. স্টারক, জন (১১ জুলাই ২০০৫)। "Obituary - Claude Simon"দ্য গার্ডিয়ান (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০২৪ 
  2. লোর, স্টিভ (১৮ অক্টোবর ১৯৮৫)। "CLAUDE SIMON OF FRANCE WINS THE NOBEL PRIZE IN LITERATURE"দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২৪ 
  3. মাইলস, জ্যাক (১৮ অক্টোবর ১৯৮৫)। "Nobel Prize for Literature Awarded to French Novelist"লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২৪ 
  4. আল মনসুর, দুলাল (২৯ মার্চ ২০১৮)। "ক্লদ সিমোঁ লেখার বিষয়বস্তু ছিল সময়কে মানুষের অভিজ্ঞতায় দেখানো"দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০২৪ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা