দাসত্ব

(ক্রীতদাস প্রথা থেকে পুনর্নির্দেশিত)

দাসত্ব (ইংরেজি: slavery বা thralldom) বলতে বোঝায় কোনো মানুষকে জোরপূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা। এক্ষেত্রে কোনো মানুষকে অন্য মানুষের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। কাউকে তার ইচ্ছার পরিবর্তে দাস করা যেতে পারে। এটি হতে পারে তার আটক, জন্ম, ক্রয় করার সময় থেকে। দাসদের অনুমতি ব্যতিরেকে স্থান বা মালিককে ত্যাগ করা, কাজ না করার, বা শ্রমের মজুরি পাবার অধিকার নেই। কিছু সমাজে নিজের দাসকে হত্যা করা আইনসঙ্গত, এবং অন্যান্য স্থানে এটি একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।[]

রাশিয়ার ইতিহাসে পূর্ব স্লাভ অঞ্চলের একটি দাসের বাজার। সের্গেই ইভানভের অঙ্কিত চিত্র।

দাসত্ববিরোধ আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যান্টি-স্ল্যাভেরি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে।[][] এই সংখ্যা ইতিহাসের যে-কোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমন কী প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও এর প্রায় অর্ধেক।[][][]

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জোরপূর্বক শ্রম দেওয়াকে দাসত্ব হিসেবে ধরে না। তাদের হিসাব অনুযায়ী এখনো বিশ্বের ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব, ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী।[]

এই দাসের বেশির ভাগই ঋণ শোধের জন্য দাসে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মহাজনদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে পরবর্তী অর্থ শোধ দিতে না পারায় দাসে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা কয়েক প্রজন্মের জন্য দাস।[] মানুষ পরিবহন মূলত হয়ে থাকে নারীশিশুদের যৌন ব্যবসায় ব্যবসায় খাটানোর জন্য।[] এটিকে বর্ণনা করা হয় ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দাস বাণিজ্য’ হিসেবে। অবৈধ মাদকদ্রব্য পরিবহনে ব্যবহার করার কারণে একই সাথে এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অপরাধ ক্ষেত্র।[][] প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনা বেচার একটি প্রথা ছিল। যা দ্বারা বিভিন্ন মূল্যের বিনিময়ে মানুষ কেনা যেত। এই প্রচলিত প্রথাটিকেই দাস প্রথা বলা হয়ে থাকে। দাস অথবা দাসী বর্তমান বাজারের পণ্যের মতই বিক্রি হত। বর্তমানে যেমন পণ্য বেচা কেনার বাজার আছে অতীতেও দাসদাসী বিক্রি অথবা ক্রয় এর জন্য আলাদা বাজার ছিল। তখন দাসদাসী আমাদানী এবং রপ্তানীতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হত এবং এটা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তো। সাধারণত দাসদাসীরা আফ্রিকান হত। আফ্রিকান দাস এর মধ্যে হাবশিকাফ্রির চাহিদা ছিল বেশি। বাংলায় এসব দাসদাসী থেকে টাকায় কেনা যেত এবং স্বাস্থ্যবান দাস প্রায় ২০ থেকে ২২ টাকায় কেনা যেত ।দাসদের দিয়ে ধরনের কাজ করানো হত— কৃষি কাজ এবং গার্হস্থ্য কাজ। তখন সমাজে গুটি কয়েক দাস রাখা একটি সামাজিক মর্যাদার ব্যাপার ছিল। তাছাড়া উচ্চ বিত্তরা তাদের দাসদের দিয়ে বিভিন্ন কৃষি কাজ করাতেন। যেমন: হালচাষ, সেচ এর পানি, মাটি উর্বর করানো, গবাদী পশু পালন, তাদের রক্ষনাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজ করতো। দাসীদের সাধারণত রাখা হতে যৌন লোভ লালসা পূরণ করার জন্য। তাদের উপপত্নি করে রাখা হত এবং তাদের সন্তানদেরও দাস রুপে রাখা হত বা বিক্রি করা হত। ব্রিটেনের সরকার এই দাস প্রথা নিরুৎসাহিত করে এবং ১৮৪৩ সালে অ্যাক্ট ফাইভ আইন দ্বারা দাসদাসী আমদানী ও রপ্তানী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "Welcome to Encyclopćdia Britannica's Guide to Black History"। Britannica.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-১৪ 
  2. UN Chronicle | Slavery in the Twenty-First Century
  3. "sex trafficking in South Africa: World Cup slavery fear"। ১৭ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১০ 
  4. Bales, Kevin (১৯৯৯)। "1"। Disposable People: New Slavery in the Global Economy। University of California Press। পৃষ্ঠা 9আইএসবিএন 0-520-21797-7 
  5. "Forced labour - Themes"। Ilo.org। ২০১০-০২-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-১৪ 
  6. "Slavery in the 21st century"। ২৭ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১০ 
  7. "Experts encourage action against sex trafficking"। ২০১১-০৫-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৩-২০ 
  8. Asia's sex trade is 'slavery'

গ্রন্থপঞ্জি

সম্পাদনা
সূত্রবিহীন উৎস
যুক্তরাষ্ট্র
আধুনিক যুগে দাসত্ব

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা
ঐতিহাসিক