ক্যামেরুনে ইসলাম
ক্যামেরুনে ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ও প্রভাবশালী ধর্ম। ২০১৭ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার অনুমান করে যে [১], ক্যামেরুনে ৭,৬৯২,২৮৯ মুসলিম বসবাস করে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০%।[২] তাদের ২৭% নিজেদের সুন্নি, ৩% শিয়া ও ২% নিজেদের ইসলামের অন্যান্য শাখার দিকে সম্পৃক্ত করে পরিচয় দেয়।[৩] ক্যামেরুনে প্রায় ৪৮% মুসলিম ফুলানি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং তারা সুফি তরিকার অনুসারী। [৪]
মোট জনসংখ্যা | |
---|---|
৭,৬৯২,২৮৯ (৩০%) | |
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল | |
ডুয়ালা, ইয়াউন্ডে, বামেন্ডা, গারুয়া, মারুয়া, নগাউন্ডেরে | |
ধর্ম | |
সুন্নি ইসলাম, সুফিবাদ, শিয়া (সংখ্যালঘু) | |
ভাষা | |
ফরাসি, আরবি, ইংরেজি, ফুলা, ইওন্ডো |
ফুলানিরা মূলত যাযাবর গোষ্ঠী ছিল; ১৯ শতকের গোড়ার দিকে তারা পশ্চিম আফ্রিকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও সুফি তরিকার (কাদিরি ও তিজানি) মাধ্যমে ইসলামের প্রচার করেন এবং উত্তরাঞ্চলে আমিরাত প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমান দেশের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশগুলিতে ফুলানি মুসলিমরা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক প্রভাবশালী। এছাড়া অন্যান্য কিছু জাতিগোষ্ঠী- যারা সম্মিলিতভাবে কির্দি নামে পরিচিত-তারা সাধারণত ইসলামের কিছু রূপ পালন করে মাত্র। পশ্চিম প্রদেশে বসবাসকারী বামুন জাতিগোষ্ঠীও মূলত মুসলিম।
ইতিহাস
সম্পাদনাক্যামেরুনে ইসলাম বাণিজ্যের মাধ্যমে পৌঁছয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে এসে ফুলানি মুসলিম সম্প্রদায়গুলি বসতি স্থাপন করে পেশাদার বাণিজ্যে শুরু করে। একপর্যায়ে তারা দেশে ইসলামি আমিরাত গঠন করে এবং এভাবে উত্তর ক্যামেরুন থেকে দেশটির কেন্দ্রে ইসলাম প্রবেশ করে। নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধে বেনু নদীর অববাহিকা ও ক্যামেরুনের কেন্দ্রীয় মালভূমিতে ইসলাম প্রভাব বিস্তার করে। এছাড়া অনেক স্থানীয় ইসলাম প্রচারক ক্যামেরুনে ইসলাম প্রচারে অবদান রাখেন। ১৮৮৪ সালে ক্যামেরুনে জার্মান দখলদারিত্ব আরোপিত না হওয়া পর্যন্ত ইসলাম উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে অগ্রসর হতে থাকে। জার্মান দখলের পর খ্রিস্টান মিশনারিরা ক্যামেরুনের দক্ষিণ অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে দক্ষিণাঞ্চলে খ্রিস্টান জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।[৫]
ঔপনিবেশিক আমলে ইসলাম
সম্পাদনা১৮৮৪ সালে ঔপনিবেশিক জার্মানি প্রথম ক্যামেরুনে প্রবেশ করে এবং ১৯০২ সালে উত্তর ক্যামেরুনে উপনিবেশ কায়েম করে। তবে তখন স্থানীয় মুসলিম শাসকরা নিজেদের ক্ষমতায় থেকে যায়। তাদের স্থানীয়ভাবে আদামাওয়াতে লামিডো ও সুলতান বলা হত। তবে তখন তাদের প্রভাব ঊনবিংশ শতাব্দীর তুলনায় অনেক সীমিত ছিল। কারণ তাদের শাসনের বৈধতা জার্মানদের কাছে ছিল এবং তারা খুবই সীমিত ক্ষমতা তাদের প্রদান করেছিল। তবে মুসলিম ও দেশীয় আইনসহ বিদ্যমান রাজনৈতিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানগুলি অক্ষত রাখা হয়েছিল।[৫]
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মধ্য ক্যামেরুনে বসবাসকারী উপজাতি; যেমন: বামুম, দিওরা, লাকাদের মধ্যে ইসলামের প্রসার বৃদ্ধি পায়। তখন ইসলামি দাওয়াত পশ্চিম ক্যামেরুনের পাহাড়ে বসবাসকারী কোটেন, জিদরা, ফালি, মুফো ও মুতাকারিম উপজাতিদের মধ্যে পৌঁছে যায়। এছাড়াও দক্ষিণের মাউন্দং ও মুসগোম উপজাতিদের মধ্যেও ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে।[৫][৬]
১৯৬০ সালে ফরাসি ক্যামেরুন ফ্রান্স থেকে ও ১৯৬১ সালে ব্রিটিশ ক্যামেরুন ব্রিটেন থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং উভয় অংশ নিয়ে বর্তমান ক্যামেরুন গঠিত হয়। স্বাধীন হওয়ার পর ক্যামেরুনে সকল গোষ্ঠীকে পূর্বেকার মত ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা হয়।[৫][৬]
ইসলামি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান
সম্পাদনাক্যামেরুনে বেশ কয়েকটি ইসলামি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এসবের মধ্যে কোরআন অনুবাদক কমিটি, ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশন অফ ক্যামেরুন, ইসলামিক কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন বিশেষভাবে উল্লখযোগ্য। বর্তমান ক্যামেরুনে ফরাসি ও আরবি ভাষায় ৫০টির মত প্রাথমিক ইসলামি বিদ্যালয় এবং ৫টি প্রস্তুতিমূলক স্কুল চালু রয়েছে।[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Cameroon"। The World Factbook (ইংরেজি ভাষায়)। Central Intelligence Agency। ২০২২-১১-১৬।
- ↑ "Cameroon Muslims"। ২০১৮-০৮-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "The World's Muslims: Unity and Diversity" (পিডিএফ)। Pew Forum on Religious & Public life। আগস্ট ৯, ২০১২। অক্টোবর ২৪, ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ১৪, ২০১২।
- ↑ "The World's Muslims: Unity and Diversity"। The Pew Forum: On Religion and Public Life। মার্চ ১০, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১০, ২০১৫।
- ↑ ক খ গ ঘ "الإسلام في الكاميرون"। ويكيبيديا (আরবি ভাষায়)। ২০২২-০৬-০২।
- ↑ ক খ গ World's Muslims: Unity and Diversity। The Pew Forum: On Religion and Public Life. Retrieved March 10, 2015.। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)