কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড
কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলায় অবস্থিত একটি ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম চিনি কল। তবে উপজাত হিসেবে এই কারখানা থেকে মদ্য উৎপাদিত হয়ে থাকে।
স্থানীয় নাম | কেরু এ্যান্ড কোং |
---|---|
ধরন | সরকারি |
শিল্প | চিনি শিল্প মদ শিল্প |
প্রতিষ্ঠাকাল | ১৯৩৮ |
প্রতিষ্ঠাতা | কেরু (ব্রিটিশ নাগরিক) |
সদরদপ্তর | , |
বাণিজ্য অঞ্চল | বিশ্বব্যাপী |
পণ্যসমূহ | চিনি, মদ, জৈব সার, চিটাগুড়, মন্ড |
মালিক | বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন |
বিভাগসমূহ | চিনিকল, ডিস্টিলারি, জৈব সার |
ওয়েবসাইট | www |
অবস্থান
সম্পাদনাবাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অধীন চুয়াডাঙ্গা জেলার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় এই শিল্প কমপ্লেক্সটি অবস্থিত।
ইতিহাস
সম্পাদনা১৯৩৮ সালে এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের অধীনে স্থাপিত হয়। সে সময় এর অধীনে একটি চিনি কারখানা, একটি ডিষ্টিলারী ইউনিট ও একটি ওষুধ কারখানা যাত্রা শুরু করে।[১] স্বাধীনতা লাভের পর, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার এই প্রতিষ্ঠানটিকে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে।[২][৩]
অবকাঠামো
সম্পাদনাএই বৃহদায়তন শিল্প-কমপ্লেক্সটি চিনি কারখানা, ডিষ্টিলারি ওয়াটার, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সারকারখানার সমন্বয়ে গঠিত। এর ভুমির পরিমান ৩ হাজার ৫৭২ একর। যার ২ হাজার ৪৫০ একর কৃষিজমি। এসব কৃষিজমিতে আখ চাষ করা হয়।[৪]
উৎপাদন ক্ষমতা
সম্পাদনাপ্রতিষ্ঠার সময় কেরু এ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিঃ এর দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১০১৬ মেট্রিক টন। জাতীয়করণের পরে ১৯৭৮-৮৫ সাল এই সময়ে অস্ট্রেলীয় কারিগরি সহযোগিতায় এর দৈনিক আখ মাড়াই ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫০ মেট্রিক টন এবং চিনি উৎপাদন ক্ষমতা প্রতি অর্থবছরে ১১৫০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরে কেরু এ্যান্ড কোম্পানি ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার প্রুফ লিটার মদ বিক্রি করে কোম্পানিটি এবং আয় করেছে প্রায় ৪৩৯ কোটি টাকা। এতে করে তার নিট (প্রকৃত) মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা বেশি। [৫]
উৎপাদিত পণ্য
সম্পাদনাএখানকার মূল পণ্য হচ্ছে আখ থেকে উৎপাদিত চিনি। তবে আখ থেকে চিনি বের করে নেওয়ার পর যে উপজাত-দ্রব্য (চিটাগুড়, ব্যাগাস ও প্রেসমাড) পাওয়া যায় তা থেকেও বিভিন্ন পণ্য উৎপাদিত হয়। উপজাত-দ্রব্য হতে উৎপাদিত পণ্যের মধ্যে উলেখযোগ্য হচ্ছে দেশি মদ, বিদেশি মদ, ভিনেগার, স্পিরিট ও জৈব সার এবং নতুন উৎপাদিত পণ্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার। এখানে নয়টি ব্র্যান্ডের ‘ফরেন লিকার’ বা বিদেশি মদ তৈরি হয়। ফরেন লিকারগুলো হচ্ছেঃ
- ইয়েলো লেভেল মল্টেড হুইস্কি
- গোল্ড রিবন জিন
- ফাইন ব্র্যান্ডি
- চেরি ব্র্যান্ডি
- ইমপেরিয়াল হুইস্কি
- অরেঞ্জ ক্রেকাউট
- সারিনা ভদকা
- রোজা রাম
- ওল্ড রাম
এই ফরেন লিকার ঢাকা, চট্টগ্রাম ও দর্শনায় কেরুর নিজস্ব নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র হতে ১৮০, ৩৭৫ ও ৭৫০ মিঃলিঃ লিটারের বোতলে বাজারজাত করা হয়। বছরে প্রায় ৩৯ লাখ ২০ হাজার বোতল ফরেন লিকার উৎপাদিত হয় এখানে। আর বাংলা মদের বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ২৬ লাখ লিটার। যা দেশের ১৩টি বিক্রয় কেন্দ্র হতে বাজারজাত করা হয়।
এখানে উৎপাদিত স্পিরিটগুলো হচ্ছেঃ
- কান্ট্রি স্পিরিট
- রেক্টিফায়েড স্পিরিট
- ডিনেচার্ড স্পিরিট
দুই ধরনের ভিনেগার উৎপাদিত হয়ঃ
- মল্টেড ভিনেগার
- সাদা ভিনেগার
এছাড়া ২০১৪ সাল থেকে নিজস্ব কৃষি খামারে "কেরুজ জৈব সার" নামে পরীক্ষামূলক জৈব সারের উৎপাদন শুরু হয়েছে। যার উৎপাদন ক্ষমতা ৭ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি কেজি সার ১০ টাকা দরে এই সার বিক্রয় করা হবে।[৪]
অর্থনীতি
সম্পাদনাবাংলাদেশের ১৫টি চিনিকলের মধ্যে একমাত্র কেরু এ্যান্ড কোম্পানিকে লোকসান গুনতে হয় না। এর লাভের প্রায় সম্পূর্ণটাই আসে এখানকার ডিস্টিলারি ইউনিট থেকে। টানা পাঁচ বছর ৬০ কোটি টাকা করে লাভ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি।।[৪] ২০২১-২২ অর্থবছরে কোম্পানির মোট বিক্রি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪০০ কোটি টাকা ছাড়ায়। যার মধ্যে শুধু মদ উৎপাদন থেকে কোম্পানির আয় হয় ৩৬৭ কোটি টাকা এবং এতে মুনাফা হয় ১০০ কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে কেরু অ্যান্ড কোং-এর ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে।[৬] এছাড়া বাংলা মদ দেশের ১৩টি সেন্টারে বিক্রি হয়।[৪]
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Shayaduzzaman। "Carew & Co (BD) Ltd"। bsfic.gov.bd।
- ↑ "কেরু এন্ড কোম্পানির মৌলিক তথ্যাদি"। ২ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০১৫।
- ↑ বিএসএফআইসি-এর গঠন ইতিহাস।
- ↑ ক খ গ ঘ "চিনি নয়, লাভ দেয় আখের উপজাত"।
- ↑ Pratidin, Bangladesh (২০২৩-০৮-০৩)। "মদ বিক্রিতে ৪৩৯ কোটি টাকা আয় কেরুর, নিট মুনাফা ৮০ কোটি টাকা"। বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-১১।
- ↑ "বিদেশি মদের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় বেড়েছে কেরুর চাহিদা"। ২০২২-০৮-১৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৮-১৫।
বহি:সংযোগ
সম্পাদনা- কেরু এ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড - বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন-এর তথ্য বাতায়ন।
- বাংলাদেশের চিনি কলগুলোর নাম ও যোগাযোগের ঠিকানা।