কুয়েনলুন পর্বতমালা
কুয়েনলুন পর্বতমালা বা কুনলুন পর্বতমালা (চীনা - 崑崙山 / 昆仑山; ফিনিন প্রতিবর্ণীকরণ - Kūnlún Shān; উচ্চারণ - [kʰu̯ə́nlu̯ə̌n ʂán]; মঙ্গোলীয় - Хөндлөн Уулс; উচ্চারণ - হুন্ডলুন) হল মধ্য এশিয়ার একটি অন্যতম দীর্ঘ ও উচ্চ পর্বতমালা। ৩০০০ কিলোমিটারেরও চেয়ে বেশি দীর্ঘ ও ৭০০০ মিটারেরও বেশি উচ্চ এই পর্বতশ্রেণী পামির গ্রন্থি থেকে উদ্ভূত হয়ে তিব্বতীয় মালভূমির উত্তর সীমা বরাবর পূর্বে উত্তর চীনের সমভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত। এর উত্তরে রয়েছে তারিম বেসিন, কানসু করিডোর ও ওয়েই নদী। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল লিউশি শান (৭১৬৭ মিটার)।
কুয়েনলুন পর্বতমালা | |
---|---|
崑崙山 | |
সর্বোচ্চ বিন্দু | |
শিখর | লিউশি শান |
উচ্চতা | ৭,১৬৭ মিটার (২৩,৫১৪ ফুট) |
তালিকাভুক্তি | |
মাপ | |
দৈর্ঘ্য | ৩,০০০ কিমি (১,৯০০ মা) N/S |
নামকরণ | |
স্থানীয় নাম | কুয়েনলুন শান {{স্থানীয় নামের পরীক্ষক}} ত্রুটি: প্যারামিটারের মান ত্রুটিপূর্ণ (সাহায্য) |
ভূগোল | |
দেশ | চীন |
অঞ্চল | তিব্বত, ছিংহাই, শিনচিয়াং |
সীমানা | গোবি মরুভূমি |
ভূগোল
সম্পাদনাসীমানা ও বিস্তৃতি
সম্পাদনাপশ্চিমে এই পর্বতশ্রেণীর শুরু তাজিকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত পামির গ্রন্থি থেকে। এখানে ইয়ারখন্দ নদী উপত্যকা প্রাকৃতিকভাবে তাকে পামির গ্রন্থি থেকে পৃথক করেছে; এরপর কিছুদূর পূর্বে এগিয়ে এসে পড়ে কারাকোরাম গিরিবর্ত্ম (৫৫৭৫ মিটার)। এই গিরিবর্ত্ম কারাকোরাম পর্বতমালা ও কুয়েনলুন পর্বতশৃঙ্খলের মধ্যে প্রাকৃতিক সীমানা হিসেবে স্বীকৃত। এরপর চীনের দুই প্রদেশ জিনজিয়াং ও তিব্বত স্বশাসিত অঞ্চলের সীমানা বরাবর এই পর্বতমালা আরও পূর্বদিকে বিস্তৃত হয়ে পূর্ব-মধ্য চীনের সিংহাই প্রদেশের মধ্য দিয়ে বিস্তৃত সিনো-তিব্বতীয় পর্বতমালার সাথে মিলিত হয়েছে। প্রস্থে এই পর্বতমালা বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দৈর্ঘ্যের হলেও খুব কম সময়ই তা ২০০ কিলোমিটার বা ১২৫ মাইলেরও বেশি।[১]
এই পর্বতশৃঙ্খলের সুদীর্ঘ উত্তরসীমানা জুড়ে রয়েছে তারিম বেসিন, তাকলামাকান মরুভূমি ও গোবি মরুভূমি। কিন্তু এর দক্ষিণদিকে তিব্বতীয় মালভূমি। এই মালভূমির নিজেরই উচ্চতা যেহেতু গড়ে ১৫০০০ ফিট বা ৪৬০০ মিটার, ফলে কুয়েনলুন পর্বতের দক্ষিণদিকের ঢালের উচ্চতা খুব বেশি নয়, ৫০০০ ফিট (১৫০০ মিটার) বা তার কম। কিন্তু উত্তরের মরুভূমি অঞ্চল থেকে দক্ষিণে তিব্বতীয় মালভূমিতে আসার ক্ষেত্রে এই পর্বতমালা এক সুউচ্চ বরফঢাকা দুর্গম প্রাচীরের মতোই অবস্থান করে তিব্বতকে পশ্চিম চীনের শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চল থেকে সম্পূর্ণ পৃথক করে রেখেছে।[১]
ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাএই পর্বতমালা বাস্তবে তিনটি সমান্তরাল পর্বতশৃঙ্খল নিয়ে তৈরি। বিশেষ করে পশ্চিম কুয়েনলুনে এই তিনটি সমান্তরাল পর্বতশৃঙ্খল যথেষ্ট পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়। পামির গ্রন্থি থেকে যেখানে কুয়েনলুন পর্বতমালার উৎপত্তি, সেখানে পূর্বদিকে বেরিয়ে আসা একটি বাহুতে বস্তুত এই পর্বতশ্রেণীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গগুলি অবস্থিত। এর মধ্যে কোঙ্গুর পর্বত (২৫,৩২৫ ফিট বা ৭৭১৯ মিটার), মুজতাগাতা পর্বত (২৪,৭৫৭ ফিট বা ৭৪৫৬ মিটার), প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞের মতে এই পর্বতগুলি কুয়েনলুনের থেকে পামির গ্রন্থির সাথেই বেশি সংযুক্ত। সেই হিসেবে এই পর্বতমালার সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গ হল তিব্বত ও জিনজিয়াং প্রদেশের সীমানায় অবস্থিত লিউশি শান (২৩,৫১৪ ফিট বা ৭১৬৭ মিটার)।[২] এই পর্বতটি কুয়েনলুন পর্বতমালার প্রধান পর্বতশৃঙ্খলের কেরিয়া অঞ্চলে অবস্থিত।
নদী
সম্পাদনাবেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নদীর উৎস এই পর্বতে অবস্থিত। এদের মধ্যে কারাকাশ নদী (কালো জেড নদী) ও ইউরুংকাশ নদী (শ্বেত জেড নদী) উল্লেখযোগ্য। দ্বিতীয় নদীটি খোটান মরুদ্যানের মধ্য দিয়ে তাকলামাকান মরুভূমির মধ্যে বয়ে গেছে।
আগ্নেয়গিরি
সম্পাদনা৭০টিরও বেশি আগ্নেয়পর্বত নিয়ে কুয়েনলুন আগ্নেয়মেখলা গঠিত। তবে এই পর্বতগুলোকে পৃথিবীর বিভিন্ন জানা আগ্নেয়পর্বতগুলির তালিকার মধ্যে সাধারণভাবে এখনও গণ্য করা হয় না। তবে এগুলি রীতিমতোই উঁচু পর্বত (সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৯,০৫৫ ফিট বা ৫৮০৮ মিটার)। যদি এগুলিকে আগ্নেয়পর্বতের তালিকায় গণ্য করা হয়, তবে এগুলি চীন তথা এশিয়ার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরির সম্মান জিতে নেবে। একমাত্র কিলিমাঞ্জারো পর্বতই আগ্নেয়গিরি হিসেবে এগুলির চেয়ে উচ্চ। বর্তমানে অবশ্য এশিয়ার সর্বোচ্চ আগ্নেয়গিরির স্বীকৃতি পেয়ে থাকে উত্তর ইরানে তেহরান শহরের কাছে অবস্থিত সক্রিয় আগ্নেয়গিরি দামভান্দ পর্বত (৫৬৭০ মিটার)। কুয়েনলুন পর্বতমালার আগ্নেয়মেখলা থেকে শেষ যে অগ্নুৎপাতের খবর জানতে পারা যায় তা ১৯৫১ সালের।[৩]
যোগাযোগ ব্যবস্থা
সম্পাদনাদুর্গম ও জনবিরল এই সমগ্র অঞ্চলটিতে যোগাযোগব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট অনুন্নত। তবে কয়েকটি রাস্তা এই পর্বতাঞ্চলের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। এগুলির মধ্যে ২১৯ নং হাইওয়ে জিনজিয়াং প্রদেশের ইয়েছেং থেকে তিব্বতের লাৎসে যাওয়ার পথে কুয়েনলুন পর্বত অতিক্রম করেছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ১০৯ নং হাইওয়ে এই পর্বতমালার মধ্য দিয়ে লাসা থেকে গোলমুদ পর্যন্ত বিস্তৃত।
ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
সম্পাদনাভূতাত্ত্বিক দিক থেকে কুয়েনলুন একটি নবীন ভঙ্গিল পর্বতশ্রেণী। এই পর্বতশ্রেণী ইউরেশীয় প্লেট ও ভারতীয় উপমহাদেশীয় প্লেটের সংযোগস্থলের একরকম উপরে অবস্থিত। তুলনামূলকভাবে স্থির ইউরেশীয় পাত ও ক্রমশ উত্তর মুখে আগুয়ান উপমহাদেশীয় পাতের সংঘর্ষের ফলে প্রাগ্-ঐতিহাসিক টেথিস সাগরের অবলুপ্তি ঘটে যে বিভিন্ন পর্বতমালা ও উচ্চ মালভূমি অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে, এই পর্বতশ্রেণী তারই অঙ্গ।
উল্লেখযোগ্য শৃঙ্গ
সম্পাদনাকুয়েনলুন পর্বতমালায় ৬০০০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার পর্বতের সংখ্যা ২০০'রও বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক'টি শৃঙ্গ হল -
- লিউশি শান (৭১৬৭ মিটার)
- উলুঘ মুজতাঘ (৬৯৭৩ মিটার)
- বুকাডাবাং ফেং (৬৮৬০ মিটার)
- ইয়ুঝু শান (৬১৭৮ মিটার)
- মালান (৬০৫৬ মিটার)
- তেকিলিকতাক (৫৪৬৬ মিটার)
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ "Kunlun Mountains". Encyclopædia Britannica. সংগৃহীত ২৯ নভেম্বর, ২০১৫।
- ↑ Liushi Shan, China. peakbagger.com. সংগৃহীত ২৯ নভেম্বর, ২০১৫।
- ↑ Kunlun Volcanic Group. GLOBAL VOLCANISM PROGRAM. সংগৃহীত ৩০ নভেম্বর, ২০১৫।
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- Munro-Hay, Stuart Aksum. Edinburgh: University Press. 1991. আইএসবিএন ০-৭৪৮৬-০১০৬-৬
- Josef Guter: Lexikon der Götter und Symbole der Alten Chinesen. Marix, Wiesbaden 2004, আইএসবিএন ৩-৯৩৭৭১৫-০৪-৫
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- Kunlun Shan ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ মে ২০১৬ তারিখে