কাশীপুর উদ্যানবাটী

কাশীপুর উদ্যানবাটী বা রামকৃষ্ণ মঠ, কাশীপুর হল রামকৃষ্ণ মঠমিশনের একটি শাখাকেন্দ্র। এই কেন্দ্রটি উত্তর কলকাতার কাশীপুর অঞ্চলে অবস্থিত। রামকৃষ্ণ পরমহংস ১৮৮৫ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৮৮৬ সালের ১৬ অগস্ট তার প্রয়াণ পর্যন্ত কাশীপুর উদ্যানবাটীতে বাস করেছিলেন। এই মঠের বাগানে একটি আমগাছের তলায় দাঁড়িয়ে ১৮৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি তার গৃহস্থ শিষ্যদের আশীর্বাদ করেছিলেন। এই ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর ১ জানুয়ারি কল্পতরু উৎসব পালিত হয়।[]

কাশীপুর উদ্যানবাটী
ধর্ম
অন্তর্ভুক্তিহিন্দুধর্ম
অবস্থান
অবস্থানকাশীপুর, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
স্থাপত্য
সৃষ্টিকারীরামকৃষ্ণ মিশন

কাশীপুর উদ্যানবাটী একটি দোতলা বাড়ি। দোতলায় যে ঘরটিতে রামকৃষ্ণ পরমহংস থাকতেন, সেটি এখন এই বাড়ির প্রধান উপাসনালয়। একতলায় দ্বিতীয় একটি উপাসনালয় এবং সারদা দেবীর পৃথম মন্দির রয়েছে। রামকৃষ্ণ সংঘে কাশীপুর উদ্যানবাটী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি মঠ। কারণ, এই বাড়িতেই রামকৃষ্ণ পরমহংস তার সন্ন্যাসী শিষ্যদের সন্ন্যাস গ্রহণ ও সংঘবদ্ধভাবে জনসেবার কাজে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, যা বাস্তবায়িত করতে পরবর্তীকালে স্বামী বিবেকানন্দ রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই উদ্যানবাটী একটি তীর্থস্থানের মর্যাদা পায়।[]

কাশীপুর উদ্যানবাটী ছিল বিশিষ্ট জমিদার রানি কাত্যায়নীর জামাই গোপাল লাল ঘোষের সম্পত্তি। রামকৃষ্ণ পরমহংসের ভক্তগণ তার কাছ থেকে মাসিক ৮০ টাকা ভাড়ায় প্রথমে ছয় মাস ও পরে আরও তিন মাসের জন্য বাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন। উদ্যানবাটীর মোট এলাকার আয়তন ছিল ১১ বিঘার কিছু বেশি।[]

বাগানটি চার দিকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। উত্তর সীমানার কাছে কয়েকটি ঘর রান্নাঘর ও ভাণ্ডারঘর হিসেবে ব্যবহৃত হত। এই ঘরগুলির সামনেই মূল দোতলা বাড়িটি অবস্থিত। এই বাড়ির নিচে চারখানি ও উপরে দুখানি ঘর আছে। উপরের বড়ো ঘরটিতে রামকৃষ্ণ পরমহংস থাকতেন। ছোটো ঘরটি তার স্নান ইত্যাদির জন্য ব্যবহৃত হত। বড়ো ঘরটি এখন মঠের প্রধান উপাসনালয়। বড়ো ঘরটির ঠিক নিচে একতলায় একটি হল ঘর আছে। এটি ছিল ভক্তদের বসার ঘর। এখন এটি মঠের দ্বিতীয় উপাসনালয়। এই ঘরের উত্তরে একটি সিঁড়ির ঘর আছে। তার পাশে পূর্বদিকের ঘরটিতে সারদা দেবী থাকতেন। এই ঘরটি এখন সারদা দেবীর মন্দির। হল ঘরের দক্ষিণের ঘরটিতে সেবকরা থাকতেন। এটি এখন একটি ক্ষুদ্র সংগ্রহালয়।[]

মূল বাড়ির পূর্বে ও পশ্চিমে সিঁড়ি আছে। বাড়িকে চার দিক দিয়ে ঘিরে আছে গোলাকার পথ। বাগানের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে উদ্যানবাটীর প্রধান ফটকটি অবস্থিত। এগুলি ছাড়াও বাগানে একটি ডোবা ও একটি বড়ো পুকুর ছিল। বাগানে আম, পনস, লিচু ইত্যাদি নানা ফলের গাছও আছে। বাগানের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বড়ো পুকুরটির পাশে একটি খেজুর গাছ ছিল। কথিত আছে, রামকৃষ্ণ পরমহংস অলৌকিক উপায়ে এই গাছে তলা থেকে একটি সাপতে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। এই গাছটির অবশিষ্টাংশ এখন মঠের অফিসঘরে রক্ষিত আছে।[]

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. Belur Math Pilgrimage, Swami Ashutoshananda, Sri Ramakrishna Math, Mylapore, Chennai, p. 87-90
  2. কাশীপুর উদ্যানবাটী, শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ, কাশীপুর, কলকাতা, পৃ. ২
  3. কাশীপুর উদ্যানবাটী, শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ, কাশীপুর, কলকাতা, পৃ. ২-৪
  4. কাশীপুর উদ্যানবাটী, শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ, কাশীপুর, কলকাতা, পৃ. ৪