কালীঘাট–ফলতা রেল (কেএফআর) বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ম্যাকলেওড অ্যান্ড কোম্পানি নির্মিত চারটি রেললাইনের অন্যতম। উক্ত কোম্পানি লন্ডন-ভিত্তিক ম্যাকলেওড রাসেল অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের এক সহায়ক সংস্থা ছিল। কলকাতা নগরীর অভ্যন্তরস্থ ও পারিপার্শ্বিক অনুন্নত অঞ্চলগুলির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করে তোলার লক্ষ্যে এই লাইনগুলি স্থাপিত হয়। এই লাইনে চলাচলকারী ট্রেনগুলি ম্যাকলেওড লাইট রেলওয়েজ নামে একটি কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত হত। কেএফআর ছাড়াও আহমেদপুর-কাটোয়া, বর্ধমান-কাটোয়াবাঁকুড়া-দামোদর উপত্যকা লাইনেও এই কোম্পানি রেল পরিবহনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।

কালীঘাট–ফলতা রেল

২৬.৯৫ মাইল দীর্ঘ কেএফআর লাইনের উদ্বোধন হয় ১৯১৭ সালের ২৮ মে। প্রথমদিকে বেহালার ঘোলশাপুর থেকে ফলতা পর্যন্ত এই লাইন প্রসারিত ছিল। পরে মাঝেরহাট পর্যন্ত এর ০.৯২ মাইলের সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন হয় ১৯২০ সালের ৭ মে। এই রেলপথের লাইনে ব্যবহৃত হয়েছিল একটি ২'৬" গেজ রেলওয়ে ট্র্যাক।

ভারতে কেএফআর লাইনেই সর্বপ্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল তিনটি নবতম ২-৬-২ সাইড ট্যাঙ্ক একে১৬ লোকোমোটিভের একটি। ইংল্যান্ডের স্ট্যাফোর্ডের দ্য ক্যাসল ইঞ্জিন ওয়ার্কস ১৯১৬ সালের নভেম্বরে এই লোকোমোটিভ নির্মাণ করেছিলেন। ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেগুলি কেএফআর-এর পরিষেবায় নিযুক্ত হয়। ‘একে’ (AK) বলতে বোঝাত ‘আহমেদপুর-কাটোয়া’। এই ইঞ্জিনগুলি ‘ডেল্টা ক্লাস’ ইঞ্জিন নামেও পরিচিত ছিল। কারণ সবার আগে ইজিপ্সিয়ান ডেল্টা রেলওয়ে এদের অর্ডার দেয়। যদিও ভারতেই এগুলি অধিক সাফল্য লাভ করেছিল। এই সাফল্যের কারণে পরবর্তী বছরগুলিতে এইরকম আরও অনেক লোকোমোটিভ অর্ডার দেওয়া হয়। শেষ অর্ডারটি দেওয়া হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। ১৯১৬ সালে ব্যাগনাল লোকোমোটিভের তৈরি করা এমন একটি ইঞ্জিন আজও যুক্তরাজ্যের ফিলিস রাম্পটন ট্রাস্ট-এ সংরক্ষিত আছে।[].

স্বাধীনতার কয়েক বছর পর এই রেলওয়ের ব্রিটিশ মালিক ম্যাকলেওড ভারত থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিলে ১৯৫৭ সালে কালীঘাট ফলতা লাইনটি বন্ধ হয়ে যায়। নবনির্বাচিত ভারতপশ্চিমবঙ্গ সরকার এই রেলওয়ের কলকাতা শহরমধ্যস্থ জমি পুনরুদ্ধার করে নেন। যে পথে শহরে এই রেলওয়ের ট্র্যাক প্রসারিত ছিল আজ সেখানে একটি রাস্তা নির্মিত হয়েছে। এই রাস্তাটিই বেহালার জেমস লঙ সরণি।

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "AK16 Steam Locomotive"। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ মে ২০০৯