কালিম সিদ্দিকী

ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত, ধর্মপ্রচারক, শিক্ষাবিদ ও তাবলিগ জামাতের সদস্য

কালিম সিদ্দিকী ( জন্ম: ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭) হলেন একজন ভারতীয় ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, তাবলিগ জামাতের সদস্য ও ইসলাম ধর্মপ্রচারক। তাকে ভারতে বৃহত্তম ধর্মান্তরকরণ কাজ চালানোর অভিযোগে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার কর্তৃক গ্রেফতার করা হয়। [] পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তার কাছে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছে।[] তিনি হলেন মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভিআবুল হাসান আলী নদভীর শিষ্য। "আপনার আমানত" তার একটি বহুল জনপ্রিয় বই।[]

কালিম সিদ্দিকী
২০২১ সালে কালিম সিদ্দিকী
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম (1957-09-23) ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৭ (বয়স ৬৭)
পুলাত, মজঃফরনগর, উত্তরপ্রদেশ, ভারত
জাতীয়তাভারতীয়
প্রাক্তন শিক্ষার্থী
ব্যক্তিগত তথ্য
পিতামাতা
  • হাজি মুহাম্মদ আমিন (পিতা)
  • জুবাইদা খাতুন (মাতা)
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
আন্দোলনদেওবন্দি
প্রধান আগ্রহদাওয়াহ
উল্লেখযোগ্য কাজ
  • জামিয়া ইমাম ওয়ালি উল্লাহ ট্রাস্ট
  • গ্লোবাল পিচ সেন্টার
ঊর্ধ্বতন পদ
এর শিষ্য
সাহিত্যকর্মআপনার আমানত

তাঁর কাছে ইসলাম গ্রহণকারী অমুসলিমদের অন্যতম হলেন বলবীর সিং, যিনি বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারী প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তিনি নিজের নাম রাখেন মুহাম্মদ আমির। একটি মসজিদ ধ্বংসের বদলে তিনি প্রায় ১০০টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। []

প্রারম্ভিক জীবন

সম্পাদনা

কালিম সিদ্দিকী ১৩৭৭ হিজরির ৯ রবিউল আউয়াল মোতাবেক ১৯৫৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের উত্তরপ্রদেশের মজঃফরনগর জেলার ফুলাত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[] তার পিতা হাজি মুহাম্মদ আমিন একজন প্রসিদ্ধ জমিদার ও মাহমুদ হাসান দেওবন্দির মুরিদ ছিলেন। তার মাতার নাম জুবাইদা খাতুন।[] তিনি রশিদ আহমদ গাঙ্গুহির প্রতিষ্ঠিত ফুলাতের মাদ্রাসা ফয়জুল ইসলামে প্রাথমিক পড়াশোনা করেন, যেটি বর্তমানে জামিয়া ইমাম ওয়ালি উল্লাহ।[] পঞ্চম শ্রেণিতে তিনি ৭ পারা কুরআন মুখস্থ করেন। প্যাক্ট ইন্টার কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন।[] মিরাট কলেজ থেকে বিএসসি সমাপ্ত করেন। তারপর তিনি এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সারা ভারতে ৫৭ তম স্থান অধিকার করেন।[] পরবর্তীতে তিনি আবুল হাসান আলী নদভীর সংস্পর্শে আসেন এবং তার মাধ্যমে ইসলামি বিষয়ে অধ্যয়নের জন্য দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায় ভর্তি হন। এমবিবিএসে ভর্তির সুযোগ পেয়েও ভর্তি হন নি।[]

ধর্মপ্রচার

সম্পাদনা

৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি তাবলিগ জামাত দ্বারা অনুপ্রাণিত হন। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

১৯৮০ সালে আবুল হাসান আলী নদভীর সাথে রাজকীয় আমন্ত্রণে তিনি সৌদি আরবে হজ্জে গমন করেন।[১০] এই সময় মজঃফরনগর জেলার ঝানঝানায় একটি ধর্মীয় পরিবারে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।[১০] মিরাট কলেজে পড়ার সময় মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির সাথে তার আধ্যাত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে।[১১] এছাড়াও তিনি আবুল হাসান আলী নদভী, ইরাকের আহমদ মুজতাবা আলাভী মালেকী ও মদিনার সালেহ হামুদী শাযালী তাকে খেলাফত প্রদান করেছেন।[১২]

তিনি জামিয়া ইমাম ওয়ালি উল্লাহ এবং গ্লোবাল পিচ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। দাতব্য ও দাওয়াতের জন্য তিনি জামিয়া ইমাম ওয়ালি উল্লাহ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বেশ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার পরিচালনা করেন।[] এই সংস্থার যথাযথ কার্যকারিতা দেখার জন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে কেন্দ্র রয়েছে। তিনি উর্দুতে মাসিক আরমুগান, হিন্দিতে সর্বশান্তি এবং আরবিতে আল-খায়ের প্রকাশ করেন।

২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাসবিরোধী স্কোয়াড (এটিএস) ভারতের বৃহত্তম ধর্মান্তরকরণ চক্র চালানোর জন্য মিরাট থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছিল৷ এই মামলার তদন্তে এটিএস-এর ছয়টি দল গঠন করা হয়। তাদের আরও অভিযোগ, সিদ্দিকী জামিয়া ইমাম ওয়ালি উল্লাহ ট্রাস্টের মাধ্যমে প্রচুর বিদেশী তহবিল পেয়েছিলেন যার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসা পরিচালনা করতেন।[১৩]

পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তিনি প্রায় ৫ লক্ষ মানুষকে ইসলাম গ্রহণ করিয়েছেন।[] তবে ২০১০ সালের একটি সাক্ষাৎকারে তার হাতে ইসলাম গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন,

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ তার গ্রেফতারের পর প্রতিবাদ করে বিবৃতি দেন। বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ দেখা গিয়েছে। অনেকে এটিকে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের মুসলমানদের হয়রানি মূলক পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন।[১৫][১৬]

প্রকাশনা

সম্পাদনা

তার সবচেয়ে জনপ্রিয় বই ‘আপকি আমানত আপকি সেওয়া মে’[] তার অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে:[১৭]

  • হামে হেদায়েত কেসে মিলি
  • দাওয়াতে দ্বীন : কুচ গলদ ফাহমিয়া কুচ হাকায়িক
  • হাদিয়া দাওয়াত
  • তোহফাহ দাওয়াত
  • দাওয়াত ফিকর ওয়া আমল
  • আরমুগানে দাওয়াত
  • উসওয়া নবিয়ে রহমত আওর হামারি জিন্দেগী
  • রফিক বানো ফারিক নেহি
  • হার মার্জ কি দাওয়া হায় সাল্লি আলা মুহাম্মদ
  • দ্বীনি মাদারিস আওর হামারি জিম্মেদারিয়া
  • নাসিম হিদায়ত কে জোকে ইত্যাদি

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. নিয়াজি, সুরাইয়া (২২ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "মুসলিম স্কলার এরেস্টেড ওভার 'রিলিজিয়াস কনভারশনস' ইন ইন্ডিয়া"আনাদুলু এজেন্সি 
  2. তাসকিন, বিসমী (১৪ অক্টোবর ২০২১)। "৫ লাখ 'ফোর্সেড' ইনটু ইসলাম, ফান্ডস ফ্রম গাল্ফ, ইউকে: হোয়াট ইউপি এটিএস ফাউন্ড ইন 'করভারশন রেকেট' প্রোব" [৫ লক্ষ জনকে ‘বাধ্যতামূলক’ ইসলাম গ্রহণ, উপসাগরীয় দেশ ও যুক্তরাজ্য থেকে তহবিল সংগ্রহ : উত্তর প্রদেশের এটিএস ‘ধর্মান্তরকরণের জাল’ খুঁজে পেয়েছে]। দি প্রিন্ট 
  3. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ৫৩।
  4. নিয়াজি, সুরাইয়া (৪ ডিসেম্বর ২০১৯)। "হিন্দু ফ্যানাটিক, পার্ট অব বাবরি মস্ক ডিমোলিশন নাউ বিল্ডস মস্কস"আনাদুলু এজেন্সি 
  5. নদভী, উমর নাসেহী (মে–জুন ২০১০)। "মাওলানা কালিম সিদ্দিকী সাহেব দা. বা. এর আত্মজীবনীমূলক সাক্ষাৎকার" (পিডিএফ)মাসিক আরমুগান। হিলফুল ফুজুল প্রকাশনী (বাংলা অনুবাদ): ১০। ৫ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০২১ 
  6. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ১১।
  7. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ১৩।
  8. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ১৪।
  9. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ১৫।
  10. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ১৬।
  11. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ১৯।
  12. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ৩২।
  13. বাহাদুর সিং, জিতেন্দ্র (২২ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "ইউপি এটিএস এরেস্টস মাওলানা কালিম সিদ্দিকী ইন রিলিজিয়াস কনভার্সন রেকেট ফ্রম মিরাট" [ধর্মান্তর করার অভিযোগে মীরাটের কালিম সিদ্দিকী গ্রেফতার]। ইন্ডিয়া টুডে 
  14. নদভী মে–জুন ২০১০, পৃ. ৪২।
  15. তানডেল, ফয়সাল (১ অক্টোবর ২০২১)। "মুম্বই: টাউসেন্ডস গ্যাদার এন্ড প্রটেস্ট এগেইন্সট এরেস্ট অব মাওলানা কালিম সিদ্দিকী, ইস্যু মেমোরেন্ডাম টু মুম্বাই পুলিশ"ফ্রি প্রেস 
  16. চতুর্বেদী, হিমেন্দ্র (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "কনভার্সন রেকেট কেইস : এএমইউ স্টুডেন্ট প্রটেস্ট এগেইন্সট এরেস্ট অব ইসলামিক স্কলার কালিম সিদ্দিকী"হিন্দুস্তান টাইমস 
  17. "মাওলানা কালিম সিদ্দিকীর বই"রকমারি.কম