কালাদিয়ারার যুদ্ধ
কালাদিয়ারার যুদ্ধ ১৭৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল বিহারের কালদিয়ারা নামক স্থানে বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের সৈন্যবাহিনী এবং সম্মিলিত আফগান বিদ্রোহী মারাঠা বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত হয়[১]। যুদ্ধে মারাঠারা ও বিদ্রোহী আফগানরা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়[১]। এই যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে বিহারে আফগান বিদ্রোহের অবসান ঘটে[১]।
কালাদিয়ারার যুদ্ধ | |||||||
---|---|---|---|---|---|---|---|
মূল যুদ্ধ: বর্গির হাঙ্গামা এবং বাংলায় মারাঠা আক্রমণ (১৭৪৫–১৭৪৯) | |||||||
| |||||||
বিবাদমান পক্ষ | |||||||
বাংলা |
মারাঠা সাম্রাজ্য বিদ্রোহী আফগান সৈন্যদল[১] | ||||||
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী | |||||||
আলীবর্দী খান |
মীর হাবিব সমশের খান[১] † সরদার খান[১] † | ||||||
শক্তি | |||||||
অজ্ঞাত | অজ্ঞাত | ||||||
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি | |||||||
অজ্ঞাত | অজ্ঞাত |
পটভূমি
সম্পাদনাবাংলার নবাব আলীবর্দী খান যখন মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন[১], তখন বিহারে আফগান সৈন্যরা বিদ্রোহ করে। বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা জৈনুদ্দিন আহমদ (নবাবের ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা) মারাঠা আক্রমণ থেকে বিহারকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে তাঁর সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধি করছিলেন[১]। এজন্য তিনি আলীবর্দী কর্তৃক পদচ্যুত আফগান সৈন্যাধ্যক্ষ সমশের খান এবং সরদার খানকে নিজ সৈন্যদলে গ্রহণ করেছিলেন[১]। কিন্তু ১৭৪৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি তাঁরা দু'জন বিশ্বাসঘাতকতাপূর্বক জৈনুদ্দিন ও তাঁর পিতা হাজি আহমদকে হত্যা করেন[১] এবং জৈনুদ্দিনের স্ত্রী ও সন্তানদের বন্দি করেন। এই সংবাদ পেয়ে আলীবর্দী বিহার অভিমুখে যাত্রা করেন। মারাঠা সৈন্যরাও বিদ্রোহী আফগানদের সঙ্গে যোগ দেয়ার জন্য বিহারের দিকে রওনা হয়েছিল। ভাগলপুরের যুদ্ধে নবাব তাদেরকে পরাজিত করেন[১]।
যুদ্ধের ঘটনাবলি
সম্পাদনাভাগলপুরের যুদ্ধের পর নবাব আলীবর্দী বিহারের রাজধানী পাটনার দিকে অগ্রসর হন। ১৭৪৮ সালের ১৬ এপ্রিল পাটনা থেকে ২৬ মাইল দূরে কালাদিয়ারা নামক স্থানে নবাব মারাঠা ও বিদ্রোহী আফগানদের সম্মিলিত বাহিনীর মুখোমুখি হন[১]। মারাঠাদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন মীর হাবিব, আর আফগানদের নেতৃত্বে ছিলেন নবাবের ভূতপূর্ব সেনাপতি শমসের খান ও সরদার খান[১]। উভয়পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে নবাবের বাহিনীর নিকট সম্মিলিত মারাঠা ও আফগান বাহিনী সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়[১]। আফগান বিদ্রোহীদের নেতা সমশের খান ও সরদার খান যুদ্ধে নিহত হন[১]।
ফলাফল
সম্পাদনাকালাদিয়ারের যুদ্ধে নবাবের জয়লাভের মধ্য দিয়ে বিহারে আফগান বিদ্রোহের অবসান ঘটে। বিদ্রোহী আফগানরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়[১], আর মীর হাবিবের নেতৃত্বে মারাঠা বাহিনী দ্রুত বিহার থেকে পশ্চাৎপসরণ করে। এই যুদ্ধের ফলে বাংলার নবাবের বিরুদ্ধে মারাঠা ও বিদ্রোহী আফগানদের মধ্যে মিত্রজোট গঠনের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়[১]। যুদ্ধের পর নবাব পাটনা পুনরুদ্ধার করেন এবং তাঁর কন্যা আমিনা বেগম ও তাঁর সন্তানদের মুক্ত করেন[১]। নবাব তাঁর বেগম শরফুন্নেসার পরামর্শে জৈনুদ্দিন ও আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলাকে বিহারের নতুন প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন[১]। রাজা জানকীরাম সিরাজের নায়েব নিযুক্ত হন। এর মধ্য দিয়ে বিহারে নবাবের কর্তৃত্ব পুন:প্রতিষ্ঠিত হয়[১]।