কামিনীকুমার ঘোষ
কামিনীকুমার ঘোষ (১ জানুয়ারি, ১৮৮৮ - ২৪ এপ্রিল, ১৯৭১) যিনি রায় সাহেব নামে পরিচিত, একজন বাঙালি সমাজসেবক, শিক্ষাবিদ এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা, চট্টগ্রামের শিক্ষা বিস্তারে যার অবদান চির স্মরণীয়।
কামিনীকুমার ঘোষ | |
---|---|
জন্ম | ১ জানুয়ারি ১৮৮৮ |
মৃত্যু | ২৪ এপ্রিল ১৯৭১ | (বয়স ৮৩)
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাকামিনীকুমার ঘোষ ১৮৮৮ সালের ১লা জানুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন।[১] ১৯০৬ সালে এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষায় তিনি বৃত্তিসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯০৮ এ উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯১০ সালে গণিতে অনার্স পাশ করেন। ১৯১২ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজ থেকে আইন বিষয়ে বৃত্তিসহ উত্তীর্ণ হন। ১৯১৩ সালে কলকাতা থেকে ফিরে তিনি তার চাচা বঙ্গচন্দ্র ঘোষের সাথে আইন পেশায় নিযুক্ত হন। তিনি বিয়ে করেছিলেন বাশখালী উপজেলার পালেগ্রাম চৌধুরীবাড়ীর কন্যা শৈলবালাকে। ব্যক্তিগত ভাবে তিনি ১১ সন্তানের জনক ছিলেন।
১৯২১ সালে তিনি মহাত্মা গান্ধীর ভারত শাসন আন্দোলনের ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি আইন পেশা ছেড়ে দেন এবং আন্দোলনে সর্বাত্মক ভাবে জড়িয়ে যান। অনেকের মতে তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের আন্দোলনের অন্যতম নায়ক।
সমাজসেবা এবং শিক্ষা বিস্তার
সম্পাদনা১৯২২ সালে তিনি তৎকালীন কাঞ্চনা, ডলুকূল, আমিলাইষ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হন। এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য হাসপাতাল গড়ে তুলেন। সাতকানিয়া-বাশঁখালী এডুকেশন সোসাইটি গঠন করে তিনি গ্রামে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেন। ১৯২৯ সালে সঙ্গীদের সহযোগীতায় তিনি স্থাপন করেছিলেন আমিলাইষ-কাঞ্চনা বঙ্গচন্দ্র ঘোষ ইনস্টিটিউট। এটি চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতকানিয়া সরকারি কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন কামিনীকুমার।[২] যা এখন চট্টগ্রামের একটি স্বনামধন্য সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
কর্ম জীবন
সম্পাদনাকামিনীর সমাজসেবামূলক ও শিক্ষা প্রসারণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাকে রায় সাহেব খেতাবে ভূষিত করেন। তিনি ২৮ বছর চট্টগ্রামের জেলা পরিষদের সদস্য এবং সাত বছর সভাপতি ছিলেন। ১৬ বছর তিনি চট্টগ্রাম জেলা স্কুল বোর্ডের সদস্য, কাঞ্চনা ইউনিয়নের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, বেঞ্চ কোর্টের সভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন।[৩]
মৃত্যু
সম্পাদনাবাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ২৪ই এপ্রিল শনিবার বেলা ১২টায় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী দোহাজারী ক্যাম্প থেকে কাঞ্চনায় আক্রমণ চালায়। হানাদার বাহিনী কামিনীকুমারের বাড়িতে আক্রমণ করলে বাড়ীর লোকজন বৃদ্ধ কামিনীকুমারকে বাড়ীর শৌচাগারে লুকিয়ে রাখে, পরবর্তীতে কামিনীকুমার শৌচাগার থেকে বেড়িয়ে বাড়ীতে যাওয়ার পথে এক রাজাকার তাকে শনাক্ত করে এবং হানাদার বাহিনী গুলি করে তাকে হত্যা করে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব"। জাতীয় তথ্য বাতায়ন। ৯ অক্টোবর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২১।
- ↑ "প্রাক্তন অধ্যক্ষবৃন্দ"। www.satkaniagovtcollege.edu.bd। ১৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২১।
- ↑ "শহীদ বুদ্ধিজীবী কামিনী কুমার ঘোষকে চিরস্মরণীয় রাখতে সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হবে,ড.আবু রেজা নদভী এমপি"। দুর্জয় বাংলা। ১৭ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ আগস্ট ২০২১।