কামরান মির্জা

মুঘল শাহজাদা

কামরান মির্জা, মাঝেমধ্যে কামরান, নামেও ডাকা হয়, (১৫০৯ – ৫ (অথবা ৬) অক্টোবর ১৫৫৭) ছিলেন মুগল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর এর দ্বিতীয় পুত্র এবং প্রথম মুগল সম্রাট। বাবরের উপপত্নী গুলরুখ বেগমের সন্তান হিসেবে কামরান মির্জা কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাবরের বড় ছেলে হুমায়ূনের সৎভাই ছিলেন, যিনি মুগল সিংহাসনে অধিষ্ঠিত এবং উত্তরাধিকারী হন কিন্তু তিনি বাবরের তৃতীয় পুত্র আশরাফীর আপন ভাই ছিলেন।

কামরান মির্জা
Kamran
মুঘল সাম্রাজ্য এর শাহজাদা
হুমায়ূন সবশেষে ১৫৫৩ সালে কাবুলের বিদ্রোহী কামরানকে পরাজিত করেন
জন্ম১৫০৯
কাবুল, মুঘল সাম্রাজ্য (বর্তমানে আফগানিস্তান)
মৃত্যু৫ অক্টোবর ১৫৫৭(1557-10-05) (বয়স ৪৭–৪৮)
মক্কা, সৌদি আরব
দাম্পত্য সঙ্গী
  • গুলরুখ বেগম
  • মুহতারিমা খানুম
  • হাজারা বেগম
  • মাহ বেগম
  • মীর আফরোজ বেগম
  • দৌলত বখত বেগম
  • মাহ চুচাক বেগম
  • আবদুল্লাহ খানের বোন
  • রাজপুত রাজা মেদিনী রাই এর কন্যা(উপপত্নী)
বংশধর
  • ইব্রাহীম মির্জা
  • আবুল কাশিম মির্জা
  • হাবিবা বেগম
  • গুলরুখ বেগম
  • গুলজার বেগম
  • হাজী বেগম(মীর আফরোজ বেগমের কন্যা)
  • আয়েশা বেগম(দৌলত বখত বেগমের কন্যা)
রাজবংশতিমুরিদ
পিতাবাবর
মাতাগুলরুখ বেগম
ধর্মইসলাম

বাবরের রাজত্বকাল

সম্পাদনা

১৫২৫ সালে যখন তাঁর বাবা বাবর উত্তর ভারত জয়লাভ করেন কামরান উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলকে সুরক্ষিত করার জন্য কান্দাহারে অবস্থান করেছিলেন। ১৫৩০ সালে তাঁর পিতা মারা গেলে তিনি নবগঠিত সাম্রাজ্যের উত্তরের অংশের দায়িত্বে নিয়েছিলেন। মুঘল ইতিহাসবিদ আবুল ফজল এর মতে বাবরের শেষ ইচ্ছা ছিল হুমায়ূনের উদ্দেশ্যে, “তোমার ভাইদের বিরুদ্ধে কিছু করো না, যদিও তারা এর যোগ্য নাও হতে পারে”।

ভারতবর্ষে

সম্পাদনা

১৫৩৮ সালে কামরান প্রাথমিকভাবে সাথে করে ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে আসেন অপরদিকে তাঁর ভাই হুমায়ূন বঙ্গ যুদ্ধ করে বেড়াচ্ছিলেন। হুমায়ুনের বিরুদ্ধে তাঁর ভাই হিন্দালের বিদ্রোহ দমন করার জন্য তিনি সেখানে হাজির হন। তবে হুমায়ুনের সাহায্যের আহবান থাকা সত্ত্বেও, কামরান তাঁকে কোনও সাহায্যের প্রস্তাব দেননি। চৌসার যুদ্ধে হুমায়ুন পরাজিত হওয়ার পর ফিরে আসেন, কামরান হুমায়ূনের নির্দেশেই তাঁর সৈন্যবাহিনীকে স্থানান্তর করতে অস্বীকার করেন কারণ তিনি নিজেই ক্ষমতায় আসার জন্য বেশি আগ্রহী ছিলেন। সুতরাং তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রাপ্তির আর কোন সুযোগ না থাকায় কামরান লাহোর ফিরে আসেন।

হুমায়ূন সাথে দ্বন্দ্ব

সম্পাদনা

১৫৪০ সালের মে মাসে কানৌজের যুদ্ধে শেরশাহ হুমায়ূনকে পরাজিত করেন এবং উত্তর ভারতের নতুন শাসক হিসেবে আবির্ভুত হন। এরপর তিনি হুমায়ূনকে ভারত ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। হুমায়ুন কাবুলের দিকে ফিরে আসেন কিন্তু কামরান তার ভাইয়ের কাছে শহরটি হস্তান্তর করতে রাজি ছিলেন না। ওই সময়ে কামরান হুমায়ূনের সঙ্গ ত্যাগ করে শের শাহের সাথে গোপন চুক্তিতে অধিক ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু তার সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে দেন সম্রাট হুমায়ূনের চির আস্থা-ভাজন বৈরাম খাঁ। বৈরাম খাঁয়ের হাতে বন্দী হন কামরান মির্জা। কিন্তু সম্রাট হুমায়ূন ছিলেন তার ভাইদের প্রতি অত্যন্ত দুর্বল যার জন্য শত্রুর সাথে গোপন চুক্তি করার পরও তিনি কামরান মির্জাকে ক্ষমা করে দেন। যার ফলস্বরূপ কামরান মির্জা আবারো তার সাথে প্রতারণা করে পালিয়ে যোগ দেন শত্রু শিবিরে। সম্রাট হুমায়ূনের জীবন-দশার শেষ দিকে দেখা যায় কামরান মির্জাকে আটক করে অন্ধ করে দেয়ার মত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। পরবর্তিতে কামরান মির্জাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় মক্কার উদ্দেশ্যে।

স্থাপত্য

সম্পাদনা
 
কামরান কি ব্রাদারী

কামরান এর নির্মিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য কাঠামো একমাত্র পাকিস্তানের লাহোর অবস্থিত। এটি কামরান কি ব্রাদারী নামে পরিচিত। বারা শব্দের অর্থ হলো বার এবং ডার শব্দের অর্থ দরজা। কামরান কি ব্রাদারী ছিল ১২টি দরজার ভবনের সমন্বয়ে তৈরী যেটি গড়ে উঠেছিল রবি নদীর তীরে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  • The Great Moghuls by Bamber Gascoigne
  • বাদশাহ নামদার - হুমায়ূন আহমেদ