কসাই পাখি
কসাই পাখি (ইংরেজি: Shrike) বা লাটোরা একদল ছোট ও মাঝারি আকারের মাংসাশী পাখি। পৃথিবীতে ৪ গণে যে ৩১ প্রজাতির (মতান্তরে ৩ গণে ৩০ প্রজাতি) কসাই দেখতে পাওয়া যায়, তারা সকলেই Laniidae (ল্যানিডি) গোত্রের অন্তর্গত।[১] এরা সকলেই প্যাসারিফর্মিস বর্গের অন্তর্ভুক্ত। সবচেয়ে বড় গণ ল্যানিয়াস নাম এসেছে ল্যাটিন lanius থেকে যার অর্থ কসাই। এদের অদ্ভুত শিকার ধরার এবং সংরক্ষণ করার প্রবণতার জন্য এদের নাম হয়েছে কসাই। এরা শিকার ধরে ঠিক কসাইয়ের দোকানে মাংস গাঁথার মত করে শিকারকে কাঁটা বা অন্য কোন চোখা জিনিসে গেঁথে রাখে।[২]
কসাই | |
---|---|
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | Passeriformes |
উপবর্গ: | Passeri |
পরিবার: | Laniidae Rafinesque, 1815 |
গণ | |
বিস্তৃতি
সম্পাদনাঅধিকাংশ কসাই পাখির আবাস ইউরেশিয়া আর আফ্রিকায়। কেবল দুইটি প্রজাতি, মোটামাথা কসাই (Lanius ludovicianus) আর বড় মেটেকসাই (Lanius excubitor) উত্তর আমেরিকায় প্রজনন ও বংশবৃদ্ধি করে। দক্ষিণ আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়ায় এর কোন প্রজাতি দেখা যায় না, তবে একটি প্রজাতি নিউ গিনি পর্যন্ত বিস্তৃত। কসাই পাখিদের বিস্তৃতিতে বিভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- বড় মেটেকসাইয়ের আবাস প্রায় পুরো উত্তর গোলার্ধ জুড়ে অথচ নিউটনের ফিসক্যালের নিবাস শুধু ছোট দ্বীপ সাঁউ তুমিতে।[৩]
অধিকাংশ কসাই পাখি খোলা তৃণভূমি, আবাদি জমি, সাভানা বা স্তেপ অঞ্চলে বসবাস করে। গুটিকয়েক প্রজাতিকে ঘন বনে দেখা যায়। কিছু প্রজাতি গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধে প্রজনন করে এবং শীতকালে দক্ষিণে পরিযায়ী হয়ে আসে।
বাংলাদেশে কসাই পাখি সাধারণ ৪ রঙের হয়ে থাকে। প্রথমত ধূসর রঙের। গাঢ় বাদামী রঙের। সাদা-কালো আর বেলে বাদামী।
ধূসর রঙের পাখি সবচাইতে ছোট সাইজের হয়ে থাকে। বেলে বাদামী এবং সাদা কালো কসাই গুলো সবচেয়ে বড়ো হয়ে থাকে।
এই পাখিগুলো অনেক দূর থেকেও তাদের শিকার দেখতে পায়। প্রত্যেকটা পাখির একটা করে অঞ্চল নির্ধারিত থাকে। এই অঞ্চলের মধ্যে অন্য কোন শিকারী পাখি শিকার করতে পারে না। তবে ফিঙ্গে পাখি অনেক সময় কসাই পাখির সাথে জায়গা দখলের তুমুল লড়াইয়ে লিপ্ত হয়।
সাধারনত অক্টোবর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই পাখিকে বেশি দেখা যায়। এরা জনসমক্ষেই শিকার করে। ধানি জমির পাশে একক কোন গাছে এরা নিজের শিকারের জায়গা পছন্দ করে। বছরের বাকী সময়টা( মে থেকে সেপ্টেম্বর) বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এরা বনেজঙ্গলে লুকিয়ে থাকে।
সাধারণ কেঁচো, পোকামাকড়, ঘাসফড়িং এদের প্রধান খাবার। এদের ঠোঁট খুব ধাঁরালো এবং তীক্ষ্ণ। ঠোঁট দিয়ে শিকারকে এরা ছিন্নভিন্ন করে ফেলে।
কসাই পাখিকে বাংলাদেশে লেজ কসাই, বাঘা টিকি, অঞ্জনা, চামচ কসাই, লেনজা লাটোরা,তামা পিঠ লেটোরা, চিকচিকে নামেও পরিচিত। তবে সিলেট অঞ্চলে একে বাঘাডাইয়া নামে সবাই চিনে।
বিবরণ
সম্পাদনাকসাই পাখিরা আকারে ২০ থেক ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়। এদের ঠোঁট খুব বলিষ্ঠ, পাশে চাপা, আগায় 'দাঁত' বা গভীর খাঁজ থাকে। শিকারী পাখির মত এদের উপরের ঠোঁট বড়শির মত করে বাঁকানো। নাকের ছ্যাঁদা প্রায় গোলাকার। এদের পালক দৃঢ়, ডানা গোলাকার ও প্রান্তে সূচালো, লেজ ডানার সমান কিংবা বড় এবং ক্রম সজ্জিত।[১] দেহে ধূসর বা বাদামি রঙের প্রাধান্য থাকে, সাথে সাধারণত লালচে, কালো বা সাদা রঙের সহাবস্থান থাকে। ডাক খুব তীক্ষ্ন।[২]
স্বভাব ও খাদ্যাভ্যাস
সম্পাদনাকসাই পাখি বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে শুরু করে ইঁদুর, টিকটিকি, ছোট পাখি ইত্যাদি শিকার করে। অর্থাৎ তাদের শিকারোপযোগী সব কিছুই তারা খায়। এরা শিকারকে গেঁথে রাখে। কারণ এর ফলে শিকার ছোট টুকরায় বিভক্ত হয় আর তাতে খাওয়া সহজ হয়। আবার এটা খাদ্য সংরক্ষণেরও একটা উপায়। শিকারের অর্ধভুক্ত অংশ পরে এসে খাওয়া যায়।[৪] আবার এভাবে বিষাক্ত পোকামাকড় গেঁথে রাখলে তাদের বিষ নিঃশেষ হয়ে যায় এবং দুই-একদিন পরে তা খাওয়া যায়।[৫]
কসাই পাখি এলাকাকাতর আর এক এলাকার পাখি তার এলাকায় অন্য পাখির অনুপ্রবেশ বরদাশত করে না। এমনিতে এরা একাকী চলাফেরা করে এবং প্রজনন মৌসুমে জোড় বাঁধে। এসময়ও এদের এলাকাকাতরতা প্রকাশ পায়। পরিযানের সময় এরা নিজেদের জন্য আলাদা এলাকা ঠিক করে নেয়[৩] এক এলাকায় অনেক কসাই পাখি অবস্থান করলে এলাকার দখল নিয়ে এদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
কসাই পাখি সাধারণত শিকার ধরার উদ্দেশ্যে বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তরের কোন এক উঁচু ডালে বসে থাকে। নিজ এলাকায় অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য এভাবে বসে বসে এলাকা নজরে রাখে।
প্রজাতিসমূহ
সম্পাদনাগোত্র: LANIIDAE
- গণ: Lanius
- বাঘা কসাই, Lanius tigrinus
- ষাঁড়মাথা কসাই, Lanius bucephalus
- লালপিঠ কসাই, Lanius collurio
- ইসাবেলাইন কসাই, Lanius isabellinus
- খয়েরি কসাই, Lanius cristatus
- বর্মি কসাই, Lanius collurioides
- ইমিনের কসাই, Lanius gubernator
- সুজার কসাই, Lanius souzae
- তামাপিঠ কসাই, Lanius vittatus
- ল্যাঞ্জা কসাই, Lanius schach
- মেটেপিঠ কসাই, Lanius tephronotus
- পাহাড়ি কসাই, Lanius validirostris
- ক্ষুদে মেটেকসাই, Lanius minor
- মোটামাথা কসাই, Lanius ludovicianus
- বড় মেটেকসাই, Lanius excubitor
- দক্ষিণে মেটেকসাই, Lanius meridionalis
- চীনা মেটেকসাই, Lanius sphenocercus
- মেটেপিঠ ফিসক্যাল, Lanius excubitoroides
- ল্যাঞ্জা ফিসক্যাল, Lanius cabanisi
- টাইটা ফিসক্যাল, Lanius dorsalis
- সোমালি ফিসক্যাল, Lanius somalicus
- ম্যাকিননের কসাই, Lanius mackinnoni
- দক্ষিণে ফিসক্যাল, Lanius collaris
- Uhehe Fiscal, Lanius collaris marwitzi
- নিউটনের ফিসক্যাল, Lanius newtoni
- Woodchat Shrike, Lanius senator
- মুখোশপরা কসাই, Lanius nubicus
- গণ: Corvinella
- হলদেঠুঁটি কসাই, Corvinella corvina
- গণ: Urolestes
- আফ্রিকান ল্যাঞ্জা কসাই, Urolestes melanoleucus
- গণ: Eurocephalus
- উত্তুরে ধলাঝুঁটি কসাই, Eurocephalus rueppelli
- দক্ষিণে ধলাঝুঁটি কসাই, Eurocephalus anguitimens
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ক খ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9843000002860
|আইএসবিএন=
এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য)। - ↑ ক খ "shrike"। Encyclopaedia Britannica। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০১৩।
- ↑ ক খ Yosef, Reuven (২০০৮)। "Family Laniidae (Shrikes)"। Josep, del Hoyo; Andrew, Elliott; David, Christie। Handbook of the Birds of the World. Volume 13, Penduline-tits to Shrikes। Barcelona: Lynx Edicions। পৃষ্ঠা 732–773। আইএসবিএন 978-84-96553-45-3.
- ↑ Clancey, P.A. (১৯৯১)। Forshaw, Joseph, সম্পাদক। Encyclopaedia of Animals: Birds। London: Merehurst Press। পৃষ্ঠা 180। আইএসবিএন 1-85391-186-0।
- ↑ "Evolutionary Ecology, Volume 6, Number 6"। SpringerLink। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৯-০৮।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- কসাই পাখির ভিডিও ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে, the Internet Bird Collection.