ওয়াসিম রাজা

পাকিস্তানী ক্রিকেটার

ওয়াসিম হাসান রাজা (উর্দু: وسیم حسن راجہ‎‎; জন্ম: ৩ জুলাই, ১৯৫২ - মৃত্যু: ২৩ আগস্ট, ২০০৬) পাঞ্জাবের মুলতানে জন্মগ্রহণকারী পাকিস্তানি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৮৫ সময়কালে পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

ওয়াসিম রাজা
২০০৩ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে ওয়াসিম রাজা
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নাম
ওয়াসিম হাসান রাজা
জন্ম(১৯৫২-০৭-০৩)৩ জুলাই ১৯৫২
মুলতান, পাঞ্জাব, পাকিস্তান অধিরাজ্য
মৃত্যু২৩ আগস্ট ২০০৬(2006-08-23) (বয়স ৫৪)
মার্লো, বাকিংহ্যামশায়ার, ইংল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনবামহাতি
বোলিংয়ের ধরনলেগ স্পিন
ভূমিকাব্যাটসম্যান, কোচ, রেফারি
সম্পর্করমিজ রাজা (ভাই)
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ৬৭)
২ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৫ জানুয়ারি ১৯৮৫ বনাম নিউজিল্যান্ড
ওডিআই অভিষেক
(ক্যাপ ১১)
১১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ বনাম নিউজিল্যান্ড
শেষ ওডিআই১০ মার্চ ১৯৮৫ বনাম ভারত
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট ওডিআই
ম্যাচ সংখ্যা ৫৭ ৫৪
রানের সংখ্যা ২৮২১ ৭৮২
ব্যাটিং গড় ৩৬.১৬ ২২.৩৪
১০০/৫০ ৪/১৮ -/২
সর্বোচ্চ রান ১২৫ ৬০
বল করেছে ৪০৮২ ১০৩৬
উইকেট ৫১ ২১
বোলিং গড় ৩৫.৮০ ৩২.৭১
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট -
সেরা বোলিং ৪/৫০ ৪/২৫
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ২০/- ২৪/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৯ জুন ২০১৮

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর পাকিস্তানি ক্রিকেটে লাহোর ও সারগোদা এবং ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে ডারহামের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। দলে তিনি মূলতঃ বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, দলের প্রয়োজনে লেগ স্পিন বোলিং করতেন ওয়াসিম রাজা। পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবন

সম্পাদনা

পাঞ্জাবের মুলতানে জন্মগ্রহণকারী ওয়াসিম রাজার পিতা উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। লাহোরের সরকারি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী লাভ করেন তিনি।

বিশিষ্ট পাকিস্তানি সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক রমিজ রাজা তার সহোদর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ছিলেন। তার বাবা রাজা সলিম আখতারের ন্যায় আরেক ভাই জাইম রাজা প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ইংল্যান্ডে অভিবাসিত হন তিনি। ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন বিষয়ে অধ্যয়ন করেন। এক পর্যায়ে সারের ক্যাটারহাম স্কুলে ভূগোল, গণিত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষকতা করেন। সেখানে ইংরেজ রমণী অ্যানের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাদের সংসারে আলী ও আহমদ নামীয় দুই পুত্র সন্তান ছিল।

২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত হ্যাসলমেয়ার প্রিপারেটরি স্কুলে ক্রিকেট শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সম্মানার্থে স্মারকসূচক প্লাক লাগানো হয়। এছাড়াও, ইংল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাংশে প্রথম-শ্রেণীর মর্যাদা লাভের পূর্বে ডারহামে খেলেন।

টেস্ট ক্রিকেট

সম্পাদনা

খেলোয়াড়ী জীবনে ওয়াসিম রাজা মূলতঃ মাঝারিসারির বামহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। দর্শনীয়ভাবে ব্যাট উচিয়ে ক্রিজে অবস্থান করতেন। দৃষ্টিনন্দন স্টোক মারতেন। এছাড়াও রিস্ট স্পিন বোলিং করে ৫১ টেস্ট উইকেট লাভ করেন যাতে ক্লাইভ লয়েড, রয় ফ্রেডেরিক্স, গ্লেন টার্নারভিভ রিচার্ডসের ন্যায় খেলোয়াড়ের উইকেট ছিল। সর্বমোট ২৫০টি প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নিয়ে ৩৫.১৮ গড়ে ১৭ সেঞ্চুরি সহযোগে ১১,৪৩৪ রান এবং ২৯.০৫ গড়ে ৫৫৮টি উইকেট পেয়েছেন।

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে ৫৭ টেস্ট ও ৫৪টি একদিনের আন্তর্জাতিকে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় তার। ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৩ তারিখে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক ঘটে তার।

১৯৭৬-৭৭ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যান। এ সফরেই তার স্বর্ণালী সময় অতিবাহিত হয়। ৫৭.৪০ গড়ে ৫১৭ রান তুলে পাকিস্তানিদের মধ্যে ব্যাটিং গড়ে শীর্ষস্থান অধিকার করেন। এছাড়াও, ১৮.৭০ গড়ে ৭ উইকেট লাভ করে মজিদ খানের পর দ্বিতীয় স্থান দখল করেন। ঐ টেস্ট সিরিজে ১৪টি ছক্কা হাঁকান তিনি। চারবার তার গড়া এ রেকর্ডে ভাগ বসানো হলেও অদ্যাবধি নিজ দেশের বাইরে এ রেকর্ডটি বহাল তবিয়তে টিকে রয়েছে।

বার্বাডোসে অনুষ্ঠিত সিরিজের ড্র হওয়া প্রথম টেস্টের উভয় ইনিংসে দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন। তন্মধ্যে, দ্বিতীয় ইনিংসে অ্যান্ডি রবার্টসকলিন ক্রফটের তোপে পড়ে পাকিস্তানের সংগ্রহ একপর্যায়ে ১৫৮/৯ হয়। তখন পাকিস্তান দল মাত্র ১৪৪ রানে এগিয়ে ছিল। কিন্তু, চতুর্থ দিনের অর্ধেক সময় শেষ উইকেট জুটিতে ওয়াসিম বারি'র সাথে ১৩৩ রান তুলে ৩০৬ রানের লক্ষ্যমাত্রায় নিয়ে যান। পঞ্চম দিন শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ২৫১/৯ হলে খেলাটি ড্রয়ে পরিণত হয়।

ওডিআইয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ

সম্পাদনা
ক্রমিক প্রতিপক্ষ মাঠ তারিখ অবদান ফলাফল
ইংল্যান্ড গাদ্দাফি স্টেডিয়াম, লাহোর ১৩ জানুয়ারি, ১৯৭৮ ০ (৪ বল); ৪.৬–০–২৩–৩, ১ কট   পাকিস্তান ৩৬ রানে বিজয়ী[]
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অ্যাডিলেড ওভাল, অ্যাডিলেড ৫ ডিসেম্বর, ১৯৮১ ১ (৩ বল); ৭–০–২৫–৪, ১ কট   পাকিস্তান ৮ রানে বিজয়ী[]

খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কোচের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ২০০২ থেকে ২০০৪ সময়কালে ১৫ টেস্ট ও ৩৪টি ওডিআইয়ে ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব পালন করেন।

দেহাবসান

সম্পাদনা

২৩ আগস্ট, ২০০৬ তারিখে বাকিংহ্যামশায়ারের মার্লো এলাকায় ৫৪ বছর বয়সে তার জীবনাবসান ঘটে। এ সময় তিনি সারের পঞ্চাশোর্ধ্ব দলের সদস্যরূপে ক্রিকেট খেলছিলেন ও খেলা চলাকালীন হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা

আরও দেখুন

সম্পাদনা

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা