ওয়াসফিয়া নাজরীন
ওয়াসফিয়া নাজরীন (জন্ম ২৭ অক্টোবর ১৯৮২) একজন বাংলাদেশী পর্বতারোহী। তিনি এখনও পর্যন্ত সর্বকনিষ্ঠ বাংলাদেশী এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী হিসেবে ২০১২ সালের ২৬ মে শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেষ্টের চূড়ায় আরোহণ করেন।[১][২] তিনি বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় (সেভেন সামিট) করেছেন।[৩] ২০২২ সালের ২২ জুলাই, প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কে২ এর চূড়ায় আরোহণ করেন।[৪]
ওয়াসফিয়া নাজরীন | |
---|---|
জন্ম | লক্ষীপুর | ২৭ অক্টোবর ১৯৮২
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | সর্বকনিষ্ঠ বাংলাদেশী এবং দ্বিতীয় বাংলাদেশী নারী হিসেবে মাউন্ট এভারেস্ট বিজয় |
প্রারম্ভিক জীবন
সম্পাদনাওয়াসফিয়া ১৯৮২ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার দাদার বাড়ি ফেনী জেলায়। এরপর তার পরিবার খুলনায় স্থানান্তরিত হয়। পাঁচ বছর বয়সে তিনি পরিবারের সাথে চলে যান চট্টগ্রামে।[৫]
ওয়াসফিয়া ঢাকার স্কলাসটিকা স্কুল থেকে ও এবং এ লেভেল সম্পন্ন করার পর যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় এগনেস স্কট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। তার বিষয় ছিল সামাজিক মনোবিজ্ঞান ও স্টুডিও আর্ট। এরপর স্কটল্যান্ডে কিছুদিন পড়াশোনা করেন। ছাত্রজীবনে তিনি যুদ্ধবিরোধী এবং মানবতার পক্ষে বিভিন্ন বৈশ্বিক ইস্যুতে সক্রিয় আন্দোলনকর্মী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি উন্নয়নকর্মী হিসেবেও কাজ করেছেন।[৬]
কর্মজীবন
সম্পাদনাতিব্বতের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে জীবনের বেশ কিছু বছর তিনি ধর্মশালা, হিমাচল প্রদেশে কাটিয়েছেন।[৭] ১৪তম দালাই লামার সাথে একটি ছবি প্রকাশের পর ২০০৭ সাল থেকে নাজরীন চীনের সরকার কর্তৃক তিব্বত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা পান।[৮] নাজরীন ব্রাক (এনজিও) এর সর্বপ্রথম শুভেচ্ছাদূত হিসেবে নিযুক্ত হন।[৯][১০] এছাড়াও বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবকমূলক দল, জাগো ফাউন্ডেশনের যুব শুভেচ্ছাদূত হিসেবেও তিনি নিযুক্ত।[১১] ২০১১ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত আদিবাসী ইস্যুতে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তিনি আদিবাসীদের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন।[১২] আন্তর্জাতিক মানবতাবাদী গ্রুপ কেয়ার (CARE) এর হয়ে ওয়াসফিয়া নাজরীন কাজ করেছেন। পর্বত অভিযান চালানোর পাশাপাশি, ২০০৬ সালে চীন সরকার কর্তৃক মানবাধিকার বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কাজের প্রতিবাদে তিনি তিব্বতে কাজ করেন।[১৩] সেভেন সামিটের পর থেকে নাজরীন নিজের "উসেল" ফাউন্ডেশনের জন্য কাজ করছেন। তার ভাষ্যে, এই ফাউন্ডেশন ঘরের বাইরে শিক্ষা পদ্ধতিকে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে যা মূলতঃ উঠতি বয়সী মেয়েদের আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার এবং প্রকৃতির মধ্যে থেকে জ্ঞান লাভে সক্রিয় অবদান রাখবে।[১৪]
এভারেস্টের চূড়ায়
সম্পাদনানাজরীন ২০১২ সালের ২৬ মে শনিবার সকাল ৭টায় এভারেস্ট চূড়ায় পা রাখেন।[১৫] তিনি তার এই সাফল্য বাংলাদেশের নারীদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।[১৬][১৭]
সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়
সম্পাদনাবাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে ওয়াসফিয়া সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। ২০১৫ সালের ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চল দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার (ওশেনিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড জয়ের মধ্য দিয়ে সাতটি পর্বত জয়ের কাজটি সম্পন্ন করেন তিনি। বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১১ সালে ওয়াসফিয়া তার সেভেন সামিট অভিযান শুরু করেন। ১৬ হাজার ২৪ ফুট উচ্চতার কারস্তনেজ পিরামিডের স্থানীয় নাম পুনাক জায়া। সেভেন সামিটের অংশ হিসেবে ওশেনিয়া অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হিসেবে ধরা হয় এটিকে। এটি ছিল সেভেন সামিটের ৭ নম্বর চূড়া জয়।[১৮][১৯][২০][২১][২২]
বিভিন্ন অভিযান
সম্পাদনাওয়াসফিয়ার লক্ষ্য সাত মহাদেশের সাতটি চূড়া জয়। এর আগে ২০১১ সালের ২ অক্টোবর তিনি আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো এবং ২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বত অ্যাকোনকাগুয়া জয় করেন। এর আগে ২০১১ সালের জুলাই মাসে ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বত এলবার্সের চূড়ার ৩০০ মিটার নিচে থেকে খারাপ আবহাওয়ার জন্য ফিরে আসেন ওয়াসফিয়া। এছাড়া তিনি ২০০৯ সালে নেপালের লু রী পর্বত, ২০১০ সালে আইল্যান্ড পিক জয় করেন। ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এলব্রুস জয় করেন। রাশিয়ার স্থানীয় সময় সকাল সাতটা ৫১ মিনিটে তিনি এলব্রুস চূড়ায় আরোহণ করে বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা ওড়ান।[২৩] ২০২২ সালের ২২ জুলাই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ পাকিস্তানের কে টু জয় করেন।
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনান্যাশনাল জিওগ্রাফির বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব পেয়েছেন এভারেস্টজয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী ওয়াসফিয়া নাজরীন। দুঃসাহসী অভিযানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নিজের অঙ্গীকার ও কর্মতৎপরতার জন্য ওয়াসফিয়াকে ২০১৪ সালের অন্যতম বর্ষসেরা হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে।[২৪] এছাড়া অনন্যা শীর্ষ দশ পুরস্কার পান।
আরো দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "বিডিনিউজ২৪.কম"। ২৯ মে ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মে ২০১২।
- ↑ বিবিসি
- ↑ দৈনিক প্রথম আলো৷
- ↑ "কে-টু জয় করলেন ওয়াসফিয়া"। দৈনিক প্রথম আলো। ২২ জুলাই ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুলাই ২০২২।
- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো"। ২০১৪-১১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-২৯।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২০১৪-১১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-২৯।
- ↑ ওয়াসফিয়া নাজরীন : এক সংগ্রামী পবর্তারোহী। Dainik Destiny। ৩ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Climbers assist Bangladeshi's dreams"। Rocky Mountain Outlook। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "ব্র্যাকের শুভেচ্ছা দূত হলেন ওয়াসফিয়া"। Poriborton। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Wasfia Nazreen's 2012 Vinson Massif Expedition"। BRAC।
- ↑ "International Women's Day"। Volunteer for Bangladesh। ১৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Chittagong Hill Tracts at the UNPFII in New York"। UNPO।
- ↑ "The Activist: Wasfia Nazreen"। National Geographic। ২১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Bangladeshi Climber shares her Spiritual journey"। Nat Geo Adventure।
- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো"। ২০১৪-০৪-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-২৯।
- ↑ "'V'is for Women"। The Daily Star।
- ↑ "Touching the Heavens"। bdnews24.com। ২৮ মে ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ বিবিসি৷
- ↑ "বিডিনিউজ ২৪ ডট কম৷"। ২৬ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৫।
- ↑ একুশে টিভি৷
- ↑ "দৈনিক বণিক বার্তা৷"। ২০১৫-১১-৩০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৫-১১-২৬।
- ↑ দৈনিক যুগান্তর৷
- ↑ http://archive.prothom-alo.com/detail/date/2013-03-29/news/340601[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "বাংলানিউজ. টিফোর.কম"। ৯ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১৪।