ওভার (ক্রিকেট)
ওভার বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেটের একটি পরিভাষা। ওভার বলতে ক্রিকেট পীচের এক প্রান্তে অবস্থান করে একজন বোলার কর্তৃক ব্যাটসম্যানকে আউট করার উদ্দেশ্যে ও উইকেট লক্ষ্য করে পরপর ছয়টি বল যথাযথভাবে ছোড়াকে বুঝায়। সাধারণতঃ একটি ওভারে একজন বোলারই ছয়টি বল ছুঁড়ে থাকেন। একটি ওভার শেষ হবার পর মাঠে অবস্থানরত খেলা পরিচালনাকারী কর্মকর্তা হিসেবে আম্পায়ার ‘ওভার’ বলে থাকেন। এরপর উইকেটের অপর প্রান্ত থেকে অন্য একজন বোলার নতুন আর একটি ওভার শুরু করবেন। কিন্তু ঐ সময় ব্যাটসম্যানের অবস্থানের কোন পরিবর্তিত হবে না।
বিবরণ
সম্পাদনাএকটি ওভারে অবশ্যই ছয়টি বৈধ ডেলিভারি থাকতে হবে। প্রতি ৬টি বৈধ বলে একটি ওভারের সফল সমাপ্তি ঘটে। ছয়টি বল করার পর আম্পায়ার ‘ওভার’ বলে থাকেন; তাই ওভার পরিভাষার সৃষ্টি হয়েছে। কোন কারণ বোলার ওয়াইড বা নো বল করেন, তাহলে তা অবৈধ ডেলিভারি হিসেবে গণ্য হবে যা বোলারের ছয়-বলের হিসেবের সাথে যুক্ত হবে না। এরফলে তাকে বলের হিসেব সংরক্ষণে ও ওভার সমাপ্তির লক্ষ্যে আরও একটি (কখনো একাধিক) বল করতে হবে।[১]
কোন কারণে বোলার অসুস্থ, আহত হলে কিংবা আম্পায়ার কর্তৃক সঠিকভাবে বল না ছুঁড়ে বিমার ছুড়লে তিনি বোলিংয়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষিত হতে পারেন। ফলে, ফিল্ডিংকারী দলের অন্য কোন একজন খেলোয়াড় ঐ ওভারটি সম্পন্ন করে থাকেন।
কোন ওভারে একটি রানও সংগৃহীত না হলে তা ‘মেইডেন ওভার’ নামে পরিচিত। লেগ বাই ও বাই রান মেইডন ওভারে যুক্ত হয় না। মেইডন ওভারে উইকেট লাভ করলে তা ‘উইকেট মেইডেন’, ‘ডাবল উইকেট মেইডন’, ‘ট্রিপল উইকেট মেইডেন’ ইত্যাদি নামে পরিচিতি পায়।
অবস্থান
সম্পাদনাওভার শেষে উইকেটের অপর প্রান্ত থেকে অন্য আরেকজন বোলার বল করার জন্য প্রস্তুত থাকেন। ফিল্ডিংয়ে অবস্থানকারী অধিনায়ক সিদ্ধান্ত নিবেন যে, কোন বোলারকে তিনি পরবর্তী ওভার করার জন্য আমন্ত্রণ জানাবেন। তবে, কোন বোলারই ধারাবাহিকভাবে দুই ওভার করতে পারবেন না। ওভার শেষে ব্যাটিং ও বোলিং করা দল প্রান্ত বদল করে এবং ফিল্ডিং দলকে বোলার পরিবর্তন করতে হয়। এসময় আম্পায়ারদ্বয় তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেন। এরফলে ফিল্ডিংয়ের অবস্থান পরিবর্তনসহ স্কয়ার লেগে অবস্থানকারী আম্পায়ারও পরিবর্তন হয়ে উইকেটের পিছনে অবস্থান করেন। তবে, ব্যাটসম্যান তার নিজ অবস্থানে থেকেই বোলারকে মোকাবেলা করে থাকেন। তখন ব্যাটসম্যান ‘স্ট্রাইকার’ ও পিচের অন্য প্রান্তে অবস্থানকারী ব্যাটসম্যান ‘নন-স্ট্রাইকার’ নামে পরিচিত।
বল সংখ্যা
সম্পাদনাবিভিন্ন ধরনের খেলায় ওভার সংখ্যার বিভিন্নতা রয়েছে। সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলা হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিকে ও টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিকে প্রত্যেক দল কেবলমাত্র একবার ব্যাটিং করে থাকে। সকল উইকেটের পতন কিংবা নির্দিষ্ট ওভার সংখ্যা শেষ হলে ঐ ইনিংসটি শেষ হবে। এ ধরনের খেলায় বোলারদের জন্য ওভার সংখ্যা নির্দিষ্ট করা থাকে। সাধারণ নিয়ম অনুসারে কোন বোলারই ইনিংসের ২০% এর বেশি বল করতে পারবেন না। অর্থাৎ, কমপক্ষে ৫জন বোলার ইনিংসের সমূদয় ওভার বোলিং করবেন। ঐ হিসেবে ৫০-ওভারের একদিনের আন্তর্জাতিকে একজন বোলার সর্বোচ্চ ২০% বা ১০ ওভার এবং ২০-ওভারের টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ২০% বা ৪ ওভার বোলিং করতে পারবেন।
অন্যদিকে, টেস্ট এবং প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ওভার সংখ্যার অনির্দিষ্ট থাকায় একজন বোলার অগণিত ওভার বোলিং করতে পারেন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে একটি ওভারে বলের সংখ্যা বিভিন্ন ধরনের হয়েছে। ১৯৭৯-৮০ মৌসুম থেকে সকল ধরনের টেস্টে এক ওভারে ৬ বল করা হচ্ছে। কিন্তু কখনো কখনো ওভারে বলের সংখ্যা ছয়ের বেশি বা ছয়ের কম হয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে শুরুর দিকে প্রতি ওভারে ৪ বল করার প্রচলন ছিল। ফলে বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ১৯৭৯-৮০ মৌসুম পর্যন্ত ওভারে বল সংখ্যার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়েছে। সাধারণতঃ সংশ্লিষ্ট দেশের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের জন্য প্রণীত নিয়মাবলীর আলোকে ওভারে বল সংখ্যায় বৈচিত্রতা এসেছে।[২]
- ইংল্যান্ডে
- ১৮৮০ থেকে ১৮৮৮: ৪
- ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৯: ৫
- ১৯০০ থেকে ১৯৩৮: ৬
- ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫: ৮ (ভিক্টোরি টেস্টের জন্য প্রযোজ্য নয়)[৩]
- ১৯৪৬ থেকে অদ্যাবধি: ৬
- অস্ট্রেলিয়ায়
- ১৮৭৬-৭৭ থেকে ১৮৮৭-৮৮: ৪
- ১৮৯১-৯২ থেকে ১৯২০-২১: ৬
- ১৯২৪-২৫: ৮
- ১৯২৮-২৯ থেকে ১৯৩২-৩৩: ৬
- ১৯৩৬-৩৭ থেকে ১৯৭৮-৭৯: ৮
- ১৯৭৯-৮০ থেকে অদ্যাবধি: ৬
- দক্ষিণ আফ্রিকায়
- ১৮৮৮-৮৯: ৪
- ১৮৯১-৯২ থেকে ১৮৯৮-৯৯: ৫
- ১৯০২-০৩ থেকে ১৯৩৫-৩৬: ৬
- ১৯৩৮-৩৯ থেকে ১৯৫৭-৫৮: ৮
- ১৯৬১-৬২ থেকে অদ্যাবধি: ৬
- নিউজিল্যান্ডে
- ১৯২৯-৩০ থেকে ১৯৬৭-৬৮: ৬
- ১৯৬৮-৬৯ থেকে ১৯৭৮-৭৯: ৮
- ১৯৭৯-৮০ থেকে অদ্যাবধি: ৬
- পাকিস্তানে
- ১৯৫৪-৫৫ থেকে ১৯৭২-৭৩: ৬
- ১৯৭৪-৭৫ থেকে ১৯৭৭-৭৮: ৮
- ১৯৭৮-৭৯ থেকে অদ্যাবধি: ৬
এছাড়া, ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টেস্ট খেলাগুলোয় ছয় বলের ওভার হয়েছে।