ওজেন পোতিয়ে
ওজেন এদিন পোতিয়ে[টীকা ১] (ফরাসি: Eugène Edine Pottier) (১৮১৬ - ৮ নভেম্বর, ১৮৮৭) ছিলেন ফরাসি সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী, কবি এবং পরিবহন কর্মী। পতিয়ে ১৮৭১ সালের মার্চে প্যারিস মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিল বা পারী কমিউনের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কমিউনের সময়ে তিনি আন্তর্জাতিক কবিতাটি লিখেছিলেন যেটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার সঙ্গীত হিসেবে শেষের বছরগুলোতে (১৮৭১-১৮৭৬)ব্যবহৃত হয়েছে, এবং সেই সঙ্গীতটি এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সমাজতান্ত্রিক ও বামপন্থী আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সংগঠনসমূহের দ্বারা ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
ওজেন পোতিয়ে | |
---|---|
স্থানীয় নাম | Eugène Pottier |
জন্ম | ১৮১৬ প্যারিস, ফ্রান্স |
মৃত্যু | ১৮ নভেম্বর ১৮৮৭ | (বয়স ৭০–৭১)
সমাধিস্থল | ফ্রান্স |
পেশা | পরিবহন শ্রমিক, বিপ্লবী |
ভাষা | ফরাসি, ইংরেজি |
জাতীয়তা | ফরাসি |
সময়কাল | ১৮৪০-১৮৮৭ |
জন্ম
সম্পাদনা১৮১৬ সালে প্যারিসের এক গরিব পরিবারে জন্ম। সারা জীবন তিনি গরীবই ছিলেন, ধনী হবার দুঃস্বপ্ন তাড়িত হয়ে উচ্ছিষ্টভোজীদের পঙ্ক্তিতে গিয়ে দাঁড়াননি। প্যাকিং শ্রমিক হিসেবে এবং পরবর্তীকালে কাপড়ে নকশা এঁকে তিনি রুটি যোগাড় করতেন।
বিপ্লবী জীবন
সম্পাদনা১৮৭১ সালে কমিউনে তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ৩৬০০ ভোটের মধ্যে ৩৩৬২ ভোট পেয়ে। কমিউনের সকল কাজকর্মে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। প্রায় ৯ বছর ইংল্যান্ডে ও আমেরিকায় প্রবাসজীবন কাটিয়ে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন ও ‘ওয়ার্কার্স পার্টি’তে যোগ দেন।
কবিতা ও বিপ্লবী সাহিত্য
সম্পাদনাতাঁর কাব্যের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ সালে ও দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৮৭ সালে ‘বিপ্লবী সঙ্গীত’ নামে। ১৮৪০ সাল থেকে ফরাসীদের জীবনে যতো বড়ো বড়ো ঘটনা ঘটেছে সে সবের প্রতিধ্বনি উঠেছে তার তেজোদ্দীপ্ত সঙ্গীতে। যারা পশ্চাৎপদ ছিলো তাদের চেতনা জাগিয়ে তুলেছিলেন তিনি। আহ্বান জানিয়েছিলেন শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ ও সংগঠিত হবার। তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন বুর্জোয়াদের ও ফরাসী সরকারকে।
মৃত্যু
সম্পাদনাওজেন পতিয়ে প্যারিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ১৮৮৭ সালের ৮ নভেম্বর। তাকে সমাহিত করা হয় শহীদ কমিউন যোদ্ধাদের সমাধিস্থলে। সমাধিস্থলের পথে তার শবযাত্রায় এক বিরাট জনতা লাল পতাকা হাতে অংশ নিয়েছিলো। জনতার হাত থেকে লাল পতাকা ছিনিয়ে নিতে পুলিশ বর্বর হামলা করেছিলো। সে বর্বরতার বিরুদ্ধে সবদিক থেকেই গর্জনধ্বনি উঠেছিলো- ‘পতিয়ে দীর্ঘজীবী হোক!’
লেনিন বলেছেন:
“ | দারিদ্রের মাঝে পতিয়ে-এর মৃত্যু হয়। কিন্তু তিনি এমন স্মৃতি রেখে গেছেন যা সত্য সত্যই মানুষের তৈরি যেকোনো কিছুর চেয়ে অনেক বেশি স্থায়ী। তিনি ছিলেন অন্যতম শ্রেষ্ঠতম সঙ্গীতের মাধ্যমে প্রচারক… ঐতিহাসিক সঙ্গীত আজ কোটি কোটি সর্বহারার কাছে পরিচিত। | ” |
তিনি আরো বলেছেন:
“ | একজন শ্রেণী সচেতন শ্রমিক, তিনি যে দেশেই থাকুন না কেন, দুর্ভাগ্য তাঁকে স্বদেশ ও বন্ধুদের মধ্য থেকে তুলে যেখানেই নিক্ষেপ করুক না কেন, এবং ভিন্ন পরিবেশে, ভিন্ন ভাষাভাষীদের মাঝে নিজেকে তিনি যতোই অচেনা ভাবুন না কেন- আন্তর্জাতিকের সুপরিচিত সুর শুনে কমরেড ও বন্ধু খুঁজে পাবেন। | ” |
‘আন্তর্জাতিক’ ছিলো এক দীর্ঘ কবিতা। তার অংশবিশেষ নিয়ে তৈরি করা হয় সঙ্গীত। সুর দিয়েছিলেন পিয়েরে দ্য গিটার। সারা দুনিয়ায় প্রায় সকল ভাষায় এই সঙ্গীত অনূদিত হয়েছে এবং গাওয়া হয় একই সুরে।
ভের্সেইলাইস কর্তৃক কমিউনার্ডদের রক্তাক্ত পরাজয়ের পনের বছর পরে, ওজেন পতিয়ে নিচের কবিতাটি তাদের বিপ্লবের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছিলেন।[১]
ফরাসি ভাষায় | ইংরেজি ভাষা(একটি আনুমানিক অনুবাদ) | |
---|---|---|
On l'a tuée à coups de chassepot, |
They killed her with their chassepot, |
টীকা
সম্পাদনা- ↑ এই ফরাসি নামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ শীর্ষক রচনাশৈলী নিদের্শিকাতে ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Tout ça n'empêche pas, Nicolas..."। le Monde Diplomatique। Benoît Bréville et Dominique Vidal। সংগ্রহের তারিখ 20 January 2012। এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন:
|তারিখ=
(সাহায্য)