এস এম আব্রাহাম লিংকন
এস এম আব্রাহাম লিংকন (জন্ম: ১৪ নভেম্বর ১৯৬৬) একজন বাংলাদেশী সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী এবং আইনজীবী। সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালে তাকে একুশে পদক এবং ২০২৪ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করে।[১][২]
অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন | |
---|---|
জন্ম | কৃষ্ণপুর বকসীপাড়া, কুড়িগ্রাম | ১৪ নভেম্বর ১৯৬৬
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | আইনজীবী, সমাজকর্মী, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ |
কর্মজীবন | ১৯৯১-বর্তমান |
পরিচিতির কারণ | অধ্যক্ষ- কুড়িগ্রাম আইন কলেজ।
সিনেটর- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সদস্য বোর্ড অব গভর্নরস- বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সদস্য-কমিটি অব কোর্সেস, আইন অনুষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। চেয়ারম্যান বোর্ড ট্রাস্টি উত্তরবঙ্গ জাদুঘর। আহবায়ক- বাংলাদেশ ভারত বর্ডার ভিকটিম রেসকিউ লিগ্যাল এসিস্ট্যান্স ফোরাম আহবায়ক- সম্প্রীতি বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম জেলা লেখক, কলামিস্ট ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক। |
উল্লেখযোগ্য কর্ম |
|
পুরস্কার | একুশে পদক (২০২২), স্বাধীনতা পদক (২০২৩) |
প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন
সম্পাদনাএস এম আব্রাহাম লিংকন ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার কৃষ্ণপুর বকসীপাড়া গ্রামে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবার নাম মহিউদ্দিন আহমদ এবং মায়ের নাম আমেনা খাতুন। বাবা মহিউদ্দিন আহমদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। এই দম্পতির সাত ছেলের মধ্যে পঞ্চম হচ্ছেন আব্রাহাম লিংকন।[৩]
এস. এম. আব্রাহাম লিংকন তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন খলিলগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর কিছুদিন কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। তিনি খলিলগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাসের পর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ১৯৮৮ সালে তিনি রাকসুর সহকারী সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।[৩] এছাড়াও তিনি ফিলিপাইন থেকে গ্রামীণ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের ওপর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
সম্পাদনাএস এম আব্রাহাম লিংকন ১৯৯১ সালের ৯ অক্টোবর কুড়িগ্রামে আইনজীবী হিসেবে তার পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং ১৯৯৬ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের তালিকাভুক্ত আইনজীবী।[৪][৫] ২০০৭ সাল থেকে তিনি কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।[৬][৭][৮]
লিংকন ফেলানী খাতুন সীমান্ত হত্যাকাণ্ডের মামলায় ফেলানীর পরিবারের পক্ষে আইনি লড়াই করছেন,[৯][১০] যা বর্তমানে ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে চলমান। এছাড়াও তিনি মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবির পুনর্বাসনে সাহায্য করেছেন, যিনি মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।[১১]
তিনি উত্তরবঙ্গ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা,[১২] যেখানে ২০ বছরের গবেষণায় সংগ্রহ করা ঐতিহাসিক নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে।[১৩][১৪][১৫] লিংকন স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে ১৬টি বই রচনা করেছেন, যেগুলো বাংলা একাডেমি ও এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে প্রকাশিত হয়েছে।[১৬]
একজন শিক্ষাবিদ হিসেবে তিনি কুড়িগ্রাম আইন কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটর এবং আইন পরীক্ষণ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের কোর্স কমিটির সদস্য ছিলেন।[১৭][১৮][১৯]
লিংকন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ভুক্তভোগী উদ্ধার ও আইনি সহায়তা ফোরামের আহ্বায়ক, যা সীমান্ত সংঘর্ষের শিকারদের আইনি সহায়তা প্রদান করে।[২০][২১] তিনি বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন, যা বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৬১টি ছিটমহলের বিনিময়ে সহায়তা করেছে।[২২]
তিনি বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।[২৩][২৪]
পুরস্কার
সম্পাদনা২২ জানুয়ারি ২০২২ সালে লিংকনকে বাংলাদেশের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক প্রদান করা হয়।[২৫][২৬][২৭] পরে, ২০২৪ সালে, তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয়।[২৮][২৯][৩০][৩১]
ব্যক্তিজীবন
সম্পাদনালিংকন বিবাহিত এবং তার স্ত্রী নাজমুন নাহার সুইটি। এই দম্পতির একটি পুত্রসন্তান রয়েছে, যার নাম সশৌতা গৌরব সিদ্ধার্থ।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "২০২২ সালের একুশে পদক পাচ্ছেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক"। দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২।
- ↑ "একুশে পদক পাচ্ছেন বিশিষ্ট ২৪ নাগরিক"। দৈনিক যুগান্তর। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২।
- ↑ ক খ "একুশে পদক পেলেন কুড়িগ্রামের আব্রাহাম লিংকন"। সময় টিভি। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২।
- ↑ "A tapestry of triumph: North Bengal Museum"। The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১২-১৬। ২০২৪-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Agenda Promoting Navigational Usage of Inland Waterways Guwahati" (পিডিএফ)। ২৪ মে ২০২২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Judiciary: Bangladesh"। kurigram.judiciary.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Bangladesh: 25 Bangladeshis return home from Indian jail – ICSF" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Abraham Lincoln of Kurigram is receiving Freedom Award after Ekushey Padak"। Newsbangla24। ২০২৪-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "11 years of Felani Killing: Wait for justice gets longer"। Prothom Alo (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জানুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫।
- ↑ Roy, S. Dilip (৭ জানুয়ারি ২০২২)। "11 years of Felani killing: Family still waiting for justice"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ অক্টোবর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১০-২৫।
- ↑ "Abraham Lincoln of Kurigram won Ekushe Padak"। Somoy News। ২০২২-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৪।
- ↑ "একুশে পদক প্রাপ্তিতে আমার কৃতিত্ব নেই, জাতীয় শহীদদের উৎসর্গ করছি"। বাংলা ট্রিবিউন। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২২।
- ↑ "I have no credit for receiving Ekushey Padak, I am dedicating it to the national martyrs"। Bangla Tribune। ২০২২-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ Ali, Anwar (২০২৪-০৩-২৪)। "The north remembers"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৪-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ Khan, Nahaly Nafisa (২০২১-০৩-২৬)। "Familial home turned into an archive: the story of the North Bengal Museum"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ Khan, Nahaly Nafisa (২০২১-০৩-২৬)। "Familial home turned into an archive: the story of the North Bengal Museum"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Judiciary: Bangladesh"। kurigram.judiciary.gov.bd। ২০২৪-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Kurigram's Abraham Lincoln nominated for Swadhinata Padak"। Daily Sun (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৩-১৮। ২০২৪-১২-০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Rajshahi University Law Department Holds Lecture on "Peaceful Border: Duties and Responsibilities""। Department of Law (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৫-২২। ২০২৪-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "25 Bangladeshis return home from Indian jail"। South Asia Monitor (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Give legality to land ownership claims of ex-enclave dwellers"। The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-১১-০৯। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Abraham Lincoln of Kurigram won Ekushe Padak"। Somoy News। ২০২২-০২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০২-০৪।
- ↑ "Bangabandhu's Unfinished Memoirs, a crystal-clear history: academics | District"। BSS। ২০২৪-১২-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "The Story of a Leader, Poet, and Philosopher"। The Asian Age (ইংরেজি ভাষায়)। Bangladesh। ২০২৪-১২-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "24 personalities to get Ekushey Padak"। jagonews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-৩০।
- ↑ "24 distinguished citizens are receiving the Ekushey Padak of 2022"। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২।
- ↑ "Abraham Lincoln gets reception"। dailypost.net (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "10 personalities to get Independence Award 2024"। Daily Sun (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৩-১৫। ২০২৪-০৩-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-১৫।
- ↑ "Abraham Lincoln gets the Swadhinata Padak"। dailypost.net (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Jute poly bags inventor among 10 named for Swadhinata Padak"। The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।
- ↑ "Ten eminent persons to receive Independence Award"। Prothom Alo (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৪-০৩-১৬। ২০২৪-১২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৮।