এম শমশের আলী
মুহাম্মাদ শমশের আলী (জন্ম: ২১ নভেম্বর ১৯৩৭) হলেন বাংলাদেশের একজন আন্তর্জাতিক পরমাণু বিজ্ঞানী। তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির প্রাক্তন সভাপতি, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য।[২][৩]
এম শমশের আলী, মুহাম্মদ শমসের আলী | |
---|---|
জন্ম | ২১ নভেম্বর ১৯৩৭ কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | যশোর জিলা স্কুল[১] |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় |
পরিচিতির কারণ | জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান |
দাম্পত্য সঙ্গী | সাকেবা আলী |
সন্তান | জীশান আলী (বড় ছেলে) এবং জেহান আলী (ছোট ছেলে) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
কর্মক্ষেত্র | তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি |
অভিসন্দর্ভের শিরোনাম | (১৯৬৫) |
ওয়েবসাইট | mshamsherali |
প্রাথমিক জীবন
সম্পাদনাতিনি ১৯৩৭ সালের ২১ নভেম্বর কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক সূত্রে তিনি যশোর সদর থানার সিঙ্গিয়া গ্রামের (বর্তমানে বসুন্দিয়া) লোক ছিলেন। তার বাবার নাম আমীর আলী এবং মাতা রহিমা খাতুন।
শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাশমশের আলীর শিক্ষা শুরু হয় চুয়াডাঙ্গা এলাকার স্থানীয় ইউসুফ মাস্টারের স্কুলে। পিতার চাকরির কারণে তারা সপরিবারে চলে যান ভারতের চব্বিশ পরগনার রানাঘাটে। সেখানে শমশের আলীকে ভর্তি করে দেওয়া হয় লালগোপাল স্কুলে। এখানে দুবছর লেখাপড়ার পর ভারত ভাগের কারণে ১৯৪৮ সালে তারা সপরিবারে ফিরে আসেন যশোরে। এবং এখানেই বসবাস করতে শুরু করেন। এরপর তাকে ভর্তি করে দেওয়া হয় যশোর জিলা স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে। এবং এই স্কুল থেকেই তিনি ১৯৫৪ সালে ম্যাট্টিক পাস করেন। তিনি ১৯৫৪ সালে ভর্তি হন রাজশাহী কলেজে। ১৯৫৬ সালে এই কলেজ থেকে আই. এস. সি. পাস করেন। কলেজ জীবন শেষে তিনি ১৯৫৬ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার পছন্দের বিষয় ছিল পদার্থবিজ্ঞান। ১৯৫৯ সালে শ্রেষ্ঠত্বের সাথে অনার্স এবং ১৯৬০ সালে এম. এস. সি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬১ সালে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি ডিগ্রি সম্পূর্ণ করেন এবং ১৯৬৫ সালে সেই ম্যানচেস্টার থেকেই থিওরেটিক্যাল নিউক্লিয়ার ফিজিক্স বিষয়ে পি. এইচ. ডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[৪]
কর্মজীবন
সম্পাদনা১৯৬১ সালে পাকিস্তান আণবিক শক্তি কমিশনে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু হয়। পি. এইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করার পর ১৯৬৫ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি ঢাকায় আণবিক শক্তি কেন্দ্রে সিনিয়র সায়িন্টিফিক অফিসার হিসেবে যোগ দেন। কর্মদক্ষতার জন্য তিনি ১৯৭০ সালে অত্যন্ত অল্প বয়সে আণবিক শক্তি কমিশনের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬১-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর যাবৎ ড. আলী আণবিক শক্তি কমিশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটা স্পেশাল সাইটেশনের মাধ্যমে ড. আলীকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি প্রফেসর অব ফিজিক্স করে তাকে একটা বিরল সম্মাননা প্রদান করে। ১৯৮২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই দায়িত্ব অব্যাহত ছিলেন। ১৯৯২-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০২ সাল হতে ২০১০ সাল সময় পর্যন্ত সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।[৫] এছাড়াও ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।[৬]
রচনাবলী
সম্পাদনাগবেষণামূলক প্রবন্ধ
সম্পাদনা- Scientific Indications in the Holy Quran ।
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলমানদের অবদান।
- BRAIN TWISTER (Delightful Mathematics)
- Alladin's Real Lamp: Science and Technology, ২০১১
- আলাদিন রিয়েল ল্যাম্প (সুচিপত্র, ২০১৩. ওসিএলসি 769102360. ২৪৮ পৃষ্টা)
কুরআন ও বিজ্ঞান নির্ভর গ্রন্থ
সম্পাদনা- পবিত্র কোরআনে বৈজ্ঞানিক ইঙ্গিত (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মুসলিম অবদান (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)
- "অলিভার লেমন" কোরআন: একটি বিশ্বকোষ (রাউটলেজ, ২০০৫) আইএসবিএন ৯৭৮-০৪১৫৭৭৫২৯৮. ৮০০ পৃষ্টা) (যৌথভাবে)
- সায়েন্টিস্ট ইন্ডিকেশন অন দি হলি কোরান প্রজেক্ট (১৯৯০)
আগ্রহের বিষয়
সম্পাদনাআগ্রহের বিষয়ের মধ্যে একটি হচ্ছে বিজ্ঞান আর অন্যটি হচ্ছে ধর্ম। ধর্ম বলতে তিনি শুধুমাত্র ইসলামকে নয় সকল ধর্মকে বুঝিয়েছেন। আগ্রহের অন্য বিষয়গুলো হচ্ছে -
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জনপ্রিয়করণ (তিনি রেডিও ও টেলিভিশনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কিত প্রায় ৫০০টিরও বেশি বিষয় উপস্থাপন করেন)।
- তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উন্নয়ন সম্পর্কিত বিষয়াদি।
- বিজ্ঞান ও ধর্মের মধ্যে সামঞ্জস্য।[৭]
সদস্যপদ
সম্পাদনাশমসের আলী বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সংস্থার সদস্য ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে:
- বাংলাদেশ পদার্থবিজ্ঞান সোসাইটির ফেলো
- বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো
- সদস্য, গভর্নর বোর্ড, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ (১৯৭৮-৮১)
- ভাইস-প্রেসিডেন্ট, অ্যাসোসিয়েশন অফ একাডেমি অফ সায়েন্স, এশিয়া
- সিনিয়র এবং সহযোগী অধ্যাপক, আবদুস সালাম আন্তর্জাতিক পদার্থবিজ্ঞান কেন্দ্র , ইতালির ত্রিস্টিক
- ফেলো, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস (আইএএস), জর্ডান
- ফেলো বাংলা একাডেমি
- বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির আজীবন সদস্য
- আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ গণিত সোসাইটি
- সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ সায়েন্টিস্টস অ্যান্ড সায়েন্টিফিক প্রফেশনস
- বিজ্ঞান এবং বিশ্ব বিষয়ক সম্পর্কিত পগওয়াশ সম্মেলন সদস্য
- সদস্য, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি
- সদস্য, এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য বিজ্ঞান জন্য আন্তর্জাতিক কাউন্সিলের আঞ্চলিক কমিটি।
- কাউন্সিল সদস্য, ফেডারেশন অফ এশিয়ান সায়েন্টিফিক একাডেমি অ্যান্ড সোসাইটি
- কার্যনির্বাহী সদস্য, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আন্তঃ একাডেমী প্যানেল (আইএপি) (২০০৩-২০০৯)
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনাশমসের আলী একাধিক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত
- নিউক্লিয়ার ফিজিক্সে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক হরি প্রসন্ন রায় স্বর্ণপদক
- বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি হতে ১৯৮৫ সালে স্বর্নপদক
- ১৯৯০ সালে বিজ্ঞানের জনগণের বোঝাপড়ার প্রচারের জন্য টিডব্লিউএনএসও (তৃতীয় বিশ্ব নেটওয়ার্ক অফ সায়েন্টিফিক অর্গানাইজেশনস) পুরস্কার প্রদান করা হয়।
- মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক
- খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ স্বর্ণপদক।
- ওয়ার্ল্ড ইনোভেশন ফাউন্ডেশনের সম্মানিত ফেলোশিপ (সর্বোচ্চ পুরস্কার), (যুক্তরাজ্যের এইচকিউ) নোবেল বিজয়ী গ্লেন সিবোর্গ প্রতিষ্ঠিত।
- ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে Honorary Professor of Physics
- ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হরিপ্রসন্ন রায় স্বর্ণপদক (পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য)
- ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি কর্তৃক একাডেমি স্বর্ণপদক পুরস্কার প্রদান
- জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক
- আকরম খাঁ স্বর্ণপদক
- মাওলানা ভাসানী স্বর্ণপদক
- ২০০৫ সালে তিনি খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ স্বর্ণপদক
- ২০০৯ সালে তিনি মালয়েশিয়াতে International University Leadership Colloquies কর্তৃক আজীবন সম্মাননা পদক
- ১৯৮৯ সালে Third world Academy of Science এর Fellow হয়েছিলেন।[৮]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Curriculum Vitae of M. Shamsher Ali" (পিডিএফ)। M. Shamsher Ali। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "সিভি, এম শমসের আলী" (পিডিএফ)।
- ↑ "::: Star Campus :::"। archive.thedailystar.net। ২০১৬-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৭।
- ↑ Adnan, Rajib, Bipul, Shanto,। "ড. এম শমশের আলী / D. M. Shamsher Ali (1937) - Jessore, Jhenaidah, Magura, Narail"। jessore.info। ১৫ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "Welcome to my site- Professor Dr. M. Shamsher Ali"। web.archive.org। ২০০৯-০৮-০৭। Archived from the original on ২০০৯-০৮-০৭। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৭।
- ↑ Nation, The New। "Prof Dr M Shamsher Ali, former Founder Vice-Chancellor of Bangladesh Open University and former President of Bangladesh Academy of Sciences, inaugurating a discussion meeting on"। The New Nation (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২১-০৭-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-০৭।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৮ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬।
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩০ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ আগস্ট ২০১৬।