এম. জি. রামচন্দ্রন

ভারতীয় চলচ্চিত্র অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, রাজনীতিবিদ এবং তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী
(এম জি রামচন্দ্রন থেকে পুনর্নির্দেশিত)

মারুদুর গোপালান রামচন্দ্রন (তামিল: மருதூர் கோபாலன் இராமச்சந்திரன்; ১৭ জানুয়ারী ১৯১৭ - ২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৭), জনপ্রিয়ভাবে এমজিআর হিসেবে পরিচিত, ছিলেন একজন ভারতীয় তামিল চলচ্চিত্র অভিনেতা, চলচ্চিত্রনির্মাতা এবং রাজনীতিবিদ যিনি ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। এমজিআর ছিলেন ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের একজন সাংস্কৃতিক মূর্তি, এবং তাকে তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম প্রভাবশালী অভিনেতা ধরা হয়।[] তিনি জনপ্রিয়ভাবে 'মাক্কাল তিলাগাম' হিসেবে পরিচিত ছিলেন যার বাংলা অর্থ হচ্ছে জনগণের রাজা কারণ তিনি জনগণের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন।[]

এম জি রামচন্দ্রন
எம். ஜி. ராமச்சந்திரன்
তামিলনাড়ুর ৪র্থ মুখ্যমন্ত্রী
কাজের মেয়াদ
৯ জুন ১৯৮০ – ২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৭
পূর্বসূরীরাষ্ট্রপতির শাসন
উত্তরসূরীভি আর নেদুনচেড়িয়ান (ভারপ্রাপ্ত)
কাজের মেয়াদ
৩০ জুন ১৯৭৭ – ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৮০
পূর্বসূরীরাষ্ট্রপতির শাসন
উত্তরসূরীরাষ্ট্রপতির শাসন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মমারুদুর গোপালান রামচন্দ্রন
(১৯১৭-০১-১৭)১৭ জানুয়ারি ১৯১৭
ক্যান্ডি, ব্রিটিশ সিলন (বর্তমানে শ্রীলঙ্কা)
মৃত্যু২৪ ডিসেম্বর ১৯৮৭(1987-12-24) (বয়স ৭০)
মাদ্রাজ শহর (এখন চেন্নাই), তামিলনাড়ু, ভারত
নাগরিকত্বভারতীয়
রাজনৈতিক দলসর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম
দাম্পত্য সঙ্গীতাঙ্গামণি (১৯৪২ সালে মৃত্যু)
সত্যনন্দবতী (১৯৬২তে মৃত্যু)
ভি এন জনকী ('৯৬তে মৃত্যু)
সন্তানঅপু রবীন্দ্রন, সুরেন্দ্রন রামচন্দ্রন
মাতামারুদুর সত্যবামা
পিতামেলাক্কাত গোপাল মেনন
আত্মীয়স্বজনএম জি চক্রপানি (ভাই)
পেশাঅভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, রাজনীতিবিদ
পুরস্কারভারত রত্ন (১৯৮৮)

যুবক থাকা অবস্থায় এমজিআর এবং তার ভাই এম জি চক্রপানি মঞ্চ নাটকে যোগদান করেন তাদের পরিবারকে সাহায্য করার জন্য। গান্ধীয় মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এমজিআর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। কয়েক বছর মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের পর তিনি তামিল চলচ্চিত্র সাথী লীলাবতীতে সহ-চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান, চলচ্চিত্রটি ১৯৩৬ সালে মুক্তি পায়। ১৯৪০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি তামিল সিনেমা জগতের মুখ্য নায়কের মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হন এবং পরবর্তী তিন দশক ধরে তিনি এক্ষেত্রে রাজত্ব ধরে রাখেন। তিনি সি.এন. আন্নাদুরাইয়ের রাজনৈতিক দল দ্রাভিড়া মুন্নেট্রা কাড়াগাম (ডিএমকে) এর সদস্যপদ লাভ করেন এবং খুব দ্রুত ছোট পদ থেকে বড় পদে উঠে যান, এক্ষেত্রে তার চলচ্চিত্র-অভিনেতার মর্যাদা এবং জনপ্রিয়তা কাজে লেগেছিলো। ১৯৭২ সালে, আন্নাদুরাইয়ের মৃত্যুর তিন বছর পর, তিনি ডিএমকে ছেড়ে দেন, তখন দলটি করুণানিধি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, এই করুণানিধি এমজিআরের বন্ধু ছিলেন যদিও, কিন্তু তারপরেও এমজিআর তার বিরোধী দল হিসেবে সর্বভারতীয় আন্না দ্রাবিড় মুনেত্র কড়গম (অল ইন্ডিয়া আন্না দ্রাভিড়া মুন্নেট্রা কাড়াগাম, এআইএডিএমকে) নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। পাঁচ বছর পর তিনি তার এই এআইডিএমকে দলটিকে তামিলনাড়ুর প্রাদেশিক নির্বাচনে জিতিয়ে দেন ডিএমকে কে পেছনে ফেলে। তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন, ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র-অভিনেতা যিনি আবার একটি প্রদেশের সরকারপ্রধানও হয়েছেন। ১৯৮০ সালে ছয়মাসের জন্য তাকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তে, ১৯৮৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদিবস পর্যন্ত তিনি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এবং তার জীবদ্দশায় তার এআইএডিএমকে দু'দুবার ক্ষমতায় আসে, ১৯৮০ ও '৮৪তে।

এমজিআরের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'নান ইয়েন পিরান্দেন' ('আমি কেন জন্মেছিলাম') ২০০৩ সালে দুটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়।[]

পূর্ব জীবন এবং পেছনের কাহিনী

সম্পাদনা

এম জি রামচন্দ্রন শ্রীলঙ্কার কান্ডিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন,[] তার বাবার নাম ছিলো মেলাক্কাত গোপালান এবং মার নাম মারুদুর সত্যবামা[], গোপালান এবং সত্যবামা আগে কেরালার পালক্কাড়ের অধিবাসী ছিলেন।[]

এমজিআর একসময় খুবই ধার্মিক ছিলেন এবং কার্তিক (দেবতা)কে পছন্দ করতেন যাকে তামিল ভাষায় শ্রী মুরুগান বলা হয়, এছাড়াও এমজিআরের মা বিষ্ণুর মালয়ালম অবতার শ্রী গুরুভায়ুরাপ্পানকেও পছন্দ করতেন যাকে এমজিআরও পুজা করতেন।[] রাজনৈতিক দল ডিএমকে'তে যোগদান করার পর এমজিআর নাস্তিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যান।[]

 
১৯৪৮ সালের চলচ্চিত্র মোহিনীতে এমজিআর এবং ভি এন জনকী

এমজিআর প্রথমে সিতারীকুলম বার্গভি (তাঙ্গামণি) নামের একজনকে বিয়ে করলেও মেয়েটি অসুস্থ হয়ে তাড়াতাড়িই মারা যায়। এরপর এমজিআর সত্যনন্দবতী নামের তার দ্বিতীয় স্ত্রীকেও হারান, ইনারও গুরুতর অসুস্থতা ছিলো।[] ১৯৬৫ সালে এমজিআর তামিল চলচ্চিত্রাভিনেত্রী ভি এন জনকীকে বিয়ে করেন।[১০] জনকী তার স্বামী গণপতিকে তালাক দিয়েছিলেন।

অভিনয় জীবন

সম্পাদনা

রামচন্দ্রন অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো ১৯৩৬ সালের চলচ্চিত্র সাথী লীলাবতী ,[১১] যেটি এলিস ডাঙ্গান নামের একজন মার্কিন ব্যক্তি পরিচালনা করেছিলেন।[১২] প্রণয়ধর্মী অথবা রোমাঞ্চকর ঘরানার চলচ্চিত্রে সাধারণত অভিনয় করা এমজিআর ১৯৫০ সালের চলচ্চিত্র মন্তিরি কুমারী দ্বারা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন, এই চলচ্চিত্রটির কাহিনী লিখেছিলেন এম করুণানিধি। ১৯৫৪ সালের চলচ্চিত্র মালাইক্কিলান এমজিআরকে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে নিয়ে যায়। তিনি তামিল চলচ্চিত্র শিল্পের প্রথম অর্ধরঙ্গিন চলচ্চিত্র আলিবাবাভুম ৪০ তিরুদারগালুম (১৯৫৫)তে অভিনয় করে সুনাম কুড়ান। তামিল চলচ্চিত্র দর্শকদের মনে তিনি স্থায়ীভাবে জায়গা করতে সক্ষম হন তিরুদাদে, এঙ্গা ভেট্টু পিল্লাই, আয়িরাতিল ওরুভান, আনবে ভা, মহাদেবী, পানাম পাড়াইতাভান, উলাগাম সুট্রুম ভালিভান-এর মাধ্যমে। ১৯৭২ সালের চলচ্চিত্র রিকশাকরণ এ অভিনয় করে তিনি সেরা অভিনেতার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছিলেন। তিনি এমন কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন যেগুলো ভারতের ধনী সম্প্রদায় এবং এমনকি গরীবদেরও মন-মানসিকতার উপর আঘাত এনেছিলো। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র উলাগাম সুট্রুম ভালিভান তার পেছনে অভিনয় করা চলচ্চিত্রগুলোর চেয়ে বেশি আয় করেছিলো। ঐ সময় সাধারণত তামিল ভাষার চলচ্চিত্র বিদেশে খুব কমই শুটিং করা হত; এই চলচ্চিত্রটির শুটিং সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, হংকং এবং জাপানে হয়েছিলো। রাজনৈতিক দল ডিএমকে চলচ্চিত্রটির অবৈধ প্রদর্শনে বাঁধা সৃষ্টির অনেক চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলো। এমজিআর অভিনীত শেষ চলচ্চিত্র ছিলো ১৯৮৭ সালের উল্লাগাম সুদি পারু, এই চলচ্চিত্রে এমজিআর তার কিডনিতে সমস্যা থাকার পরেও অভিনয় করেছিলেন।[১৩]

এমজিআরের আদর্শ ছিলেন তামিল মঞ্চনাটক অভিনেতা নারায়ণ পদয়াচ্চী রত্ন (১৮৯৭-১৯৫০) এবং কে পি কেশভ।[১৪]

রাজনৈতিক জীবন

সম্পাদনা
 
রামচন্দ্রনের সাথে সেদাপট্টি মুডুগু

এমজিআর ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের সদস্য ছিলেন, এবং তিনি খাদি পোশাক পরতেন তখন। একই বছরেই তিনি দ্রাবিড় মুন্নেত্র কড়গম (ডিএমকে) রাজনৈতিক দলে যোগ দেন, দলটির প্রতিষ্ঠাতা সি.এন. আন্নাদুরাইয়ের প্রতি তিনি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তিনি দ্রাবিড়ীয় জাতীয়তাবাদী এবং ডিএমকে রাজনৈতিক দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন। দ্রাবিড়ীয় আন্দোলনে তিনি নতুন মাত্রা যোগ করেন। ১৯৬২ সালে তিনি প্রাদেশিক আইনসভার সদস্যপদ লাভ করেন। ৫০ বছর বয়সে ১৯৬৭ সালে তামিলনাড়ু রাজ্য আইনসভায় তিনি নির্বাচিত হন। আন্নাদুরাইয়ের মৃত্যুর পর ১৯৬৯ সালে এমজিআর ডিএমকে দলের কোষাধ্যক্ষ হন, ঐ বছরই করুণানিধি মুথুবেল প্রাদেশিক মুখ্যমন্ত্রী হন।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "India at 70 70 most influential Politicians of post-independence India" 
  2. Sachi Sri Kantha (৮ এপ্রিল ২০১৫)। "MGR Remembered – Part 26"Sangam.org। ১৬ আগস্ট ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মে ২০১৭ 
  3. "Janaki's son alone has copyright to MGR's autobiography: court"। The Hindu। ৪ জুলাই ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ৬ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  4. Attar Chand (১৯৮৮)। M.G. Ramachandran, My Blood Brother। Gyan Publishing House। GGKEY:XEDQREZGYA6 Page 1। 
  5. வள்ளல் பிறந்தார்..! || vallal born. Cinema.maalaimalar.com (19 February 2014). Retrieved 21 May 2014.
  6. Mani Shankar Aiyar (১ জানুয়ারি ২০০৯)। A Time of Transition: Rajiv Gandhi to the 21 Century। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 38–। আইএসবিএন 978-0-670-08275-9 
  7. Linda Woodhead Religions in Modern World. Fletcher, Kawanam. p. 39
  8. M.S.S. Pandian (1992) The image trap. SAGE Publications. আইএসবিএন ০৮০৩৯৯৪০৩৬. p. 131
  9. திருமணமும் தகுதி உயர்வும் || Marriage qualifying high. Cinema.maalaimalar.com (19 February 2014). Retrieved 21 May 2014.
  10. பொன்மனச் செம்மலின் வெற்றி வரலாறு (பகுதி 5): வி.என். ஜானகியை வாழ்க்கைத் துணைவியாக ஏற்றார்! || Mgr Cinema History. Cinema.maalaimalar.com (19 February 2014). Retrieved 21 May 2014.
  11. M. G. Ramachandran. bookrags.com
  12. টেমপ্লেট:CHENNAIite news
  13. "MGR-Sivaji-Gemini: TRINITY Album Launched"IndiaGlitz। ২২ জানুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১২ 
  14. "MGR Remembered – Part 4"Ilankai Tamil Sangam। ২০১৩-০২-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-১১-১৭ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা