এমিল দ্যুর্কাইম

ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী

দাভিদ এমিল দ্যুর্কাইম[টীকা ১] (ফরাসি: Émile Durkheim; ১৫ এপ্রিল ১৮৫৮ – ১৫ নভেম্বর ১৯১৭) ছিলেন একজন ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী। তিনি সমাজবিজ্ঞানকে একটি রৌপ উচ্চশিক্ষায়তনিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। দ্যুর্কাইম, মাক্স ভেবারকার্ল মার্ক্সকে একত্রে সামাজিক বিজ্ঞানের মূল স্থপতি ও সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।[][]

এমিল দ্যুর্কাইম
Emile Durkheim
এমিল দ্যুর্কাইম
জন্ম(১৮৫৮-০৪-১৫)১৫ এপ্রিল ১৮৫৮
এপিনাল, ফ্রান্স
মৃত্যুনভেম্বর ১৫, ১৯১৭(1917-11-15) (বয়স ৫৯)
শিক্ষাইকোলি নরম্যালি সুপিরিয়র
পরিচিতির কারণসমাজবিজ্ঞান বিধিবদ্ধকরণ
দাম্পত্য সঙ্গীদ্যুর্কাইম লুই দ্রেফ্যুস
সন্তানমেরী, আঁন্দ্রে
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রদর্শন, সমাজবিজ্ঞান, শিক্ষা, নৃবিজ্ঞান, ধর্মবিদ্যা
প্রতিষ্ঠানসমূহপ্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়,
বোঁরদা বিশ্ববিদ্যালয়,
সোঁরবো বিশ্ববিদ্যালয়

আধুনিক যুগে যেখানে পূর্বতন সামাজিক ও ধর্মীয় বন্ধনগুলো আর টিকে থাকতে পারছে না এবং নতুন নতুন সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কীভাবে সামাজিক ঐক্য ও সঙ্গতি বজায় রাখা যায়, সেটাই ছিল দ্যুর্কাইমের রচনার মূল লক্ষ্য। ১৮৯৫ সালে তিনি তার প্রথম উল্লেখযোগ্য সমাজবৈজ্ঞানিক গ্রন্থ সমাজের শ্রমবিভাগ রচনা করেন। দুই বছর পর তিনি সমাজবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বিধিমালা পুস্তকটি প্রকাশ করেন এবং ইউরোপের প্রথম সমাজবিজ্ঞান বিভাগ চালু করে ফ্রান্সের প্রথম সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন।[] ১৮৯৮ সালে তিনি লানে সোসিওলোজিক (L'Année Sociologique) নামক একটি উচ্চশিক্ষায়তনিক গবেষণা সাময়িকী প্রতিষ্ঠা করেন। দ্যুর্কাইম ক্যাথলিক ও প্রতিবাদী মণ্ডলীর খ্রিস্টানদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নিয়ে সুইসিদ (১৮৯৭) নামক একটি গবেষণাগ্রন্থ রচনা করেন। এটি আধুনিক সামাজিক গবেষণার সূচনা করে এবং সামাজিক বিজ্ঞানকে মনোবিজ্ঞানরাজনৈতিক দর্শন থেকে পৃথক একটি বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে ভূমিকা রাখে। তার রচিত ধর্মীয় জীবনের মৌলিক গঠন (১৯১২)- এ তিনি আধুনিক ও আদিবাসী সমাজের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের তুলনা করে ধর্মের একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেন।

দ্যুর্কাইম সমাজবিজ্ঞানকে একটি রৌপ বা বিধিবদ্ধ বিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। ওগ্যুস্ত কোঁতের দৃষ্টবাদকে তিনি পরিশীলিত করেন। সামাজিক বিজ্ঞানে জ্ঞানতাত্ত্বিক বাস্তববাদী দর্শন ও অনুকল্পীয়-অবরোহী প্রতিমান নামক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহারেও তিনি উৎসাহ প্রদান করেন। তাঁর মতে সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিজ্ঞান, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সংগঠিত সামাজিক বাস্তবতাকে তুলে ধরা। তিনি সমাজবিজ্ঞান ও নৃবিজ্ঞানের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে সাংগঠনিক-ক্রিয়াবাদকে (স্ট্রাকচারাল-ফাংশনালিজম) প্রতিষ্ঠা করতেও প্রধান ভূমিকা রাখেন। তাঁর মতে একটি সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে সমাজবিজ্ঞানের সর্বব্যাপী হওয়া উচিত, অর্থাৎ সমাজবিজ্ঞানের উচিত ব্যক্তিগত নির্দিষ্ট কার্যাবলী নিয়ে সীমাবদ্ধ না থেকে বরং সমাজকে পূর্ণাঙ্গরূপে পর্যালোচনা করা।

১৯১৭ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ফরাসি বিদ্বৎসমাজের একজন কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন। জ্ঞানের সমাজবিদ্যা, নৈতিকতা, সামাজিক স্তরবিন্যাস, ধর্ম, আইন, শিক্ষাসামাজিক বিচ্যুতি, প্রভৃতি বিষয়ে তিনি অসংখ্য বক্তৃতা ও রচনা লিখেছেন। "সমষ্টিগত চেতনা"র মতো দ্যুর্কাইমীয় শব্দগুলোও সেই থেকে জনপ্রিয় অভিধানে যুক্ত হয়েছে।[]

নির্বাচিত রচনাবলী

সম্পাদনা
  • Montesquieu's contributions to the formation of social science (১৮৯২)
  • The Division of Labour in Society (১৮৯৩)
  • The Rules of Sociological Method (১৮৯৫)
  • On the Normality of Crime (১৮৯৫)
  • Suicide (১৮৯৭)
  • The Prohibition of Incest and its Origins (১৮৯৭), L'Année Sociologique এ প্রকাশিত, ভলিউম. ১, পৃষ্টাঃ ১–৭০
  • Sociology and its Scientific Domain (১৯০০), "La sociologia e il suo dominio scientifico" নামক ইতালিয় রচনার অনুবাদ
  • The Elementary Forms of the Religious Life (১৯১২)
  • Who Wanted War? (১৯১৪), আর্নেস্ট ডেনিস এর সাথে মিলিতভাবে
  • Germany Above All (১৯১৫)

মৃত্যুর পর প্রকাশিত:

  • Education and Sociology (১৯২২)
  • Sociology and Philosophy (১৯২৪)
  • Moral Education (১৯২৫)
  • Socialism (১৯২৮)
  • Pragmatism and Sociology (১৯৫৫)

পাদটীকা

সম্পাদনা
  1. এই ফরাসি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ-এ ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Craig J. Calhoun (২০০২)। Classical sociological theory। Wiley-Blackwell। পৃষ্ঠা 107। আইএসবিএন 978-0-631-21348-2। সংগ্রহের তারিখ ১৯ মার্চ ২০১১ 
  2. Kim, Sung Ho (2007). "Max Weber". Stanford Encyclopedia of Philosophy (August 24, 2007 entry) http://plato.stanford.edu/entries/weber/ (Retrieved 17-02-2010)
  3. Kenneth Allan; Kenneth D. Allan (২ নভেম্বর ২০০৫)। Explorations in Classical Sociological Theory: Seeing the Social World। Pine Forge Press। পৃষ্ঠা 104আইএসবিএন 978-1-4129-0572-5 
  4. Simpson, George (Trans.) in Durkheim, Emile "The Division of Labour in Society" The Free Press, New York, 1993. p. ix

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা