এমআরটি লাইন ৫ (নর্দার্ন রুট)
নর্দার্ন রুট হলো ঢাকা মেট্রোরেলের অনুমোদিত এমআরটি লাইন ৫ রেলপথের একটি শাখা; অন্যটি হচ্ছে সাউদার্ন রুট। নর্দার্ন রুটের নির্মাণ কাজ ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে শুরু হয় যা ২০২৮ সালের মধ্যে চালু করার কথা রয়েছে।
ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন ৫ নর্দার্ন রুট | |||
---|---|---|---|
সংক্ষিপ্ত বিবরণ | |||
স্থিতি | নির্মাণাধীন | ||
মালিক | সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ | ||
অঞ্চল | ঢাকা, বাংলাদেশ | ||
বিরতিস্থল |
| ||
স্টেশন | ১৪ | ||
মানচিত্রে রং | ■ আকাশী (#00B5E2) | ||
পরিষেবা | |||
ধরন | দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা | ||
ব্যবস্থা | ঢাকা মেট্রোরেল | ||
পরিচালক | ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড | ||
ডিপো | হেমায়েতপুর, সাভার উপজেলা | ||
ইতিহাস | |||
নির্মাণকাজ | ৪ নভেম্বর ২০২৩ | ||
কারিগরি তথ্য | |||
রেলপথের দৈর্ঘ্য | ২০ কিলোমিটার (১২ মা) | ||
ট্র্যাকসংখ্যা | ২ | ||
বৈশিষ্ট্য | উড়াল ও পাতাল | ||
ট্র্যাক গেজ | ১,৪৩৫ মিলিমিটার (৪ ফুট ৮ ১⁄২ ইঞ্চি) আদর্শ গেজ | ||
|
ইতিহাস
সম্পাদনাউন্নয়ন
সম্পাদনা২০০৫ সালে বিশ্ব ব্যাংক একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ করে যেখানে বাংলাদেশ সরকারকে ঢাকায় একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করা হয়েছিলো। একই বছর মার্কিন পরামর্শক ফার্ম লুই বার্জার গ্রুপ ঢাকার জন্য একটি কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা তৈরি করে।[১] বিশ্বব্যাংক এই পরিকল্পনাটি তৈরি করতে সহায়তা করেছিলো যেখানে ঢাকায় পাঁচটি এমআরটি রেলপথ নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়।[২] সেই পাঁচ মেট্রো রেলপথ ছিলো এমআরটি লাইন ১, এমআরটি লাইন ২, এমআরটি লাইন ৪, এমআরটি লাইন ৫ ও এমআরটি লাইন ৬।[৩] ২০১৮ সালের ৭ আগস্টে সরকার নর্দার্ন রুট প্রকল্পে আগ্রহ প্রকাশ করে।[৪] ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) দ্বারা অনুমোদিত হয়। সেই সময়ে নর্দার্ন রুটের সম্ভাব্য নির্মাণ ব্যয় অনুমান করা হয়েছিলো প্রায় ৳৪১,২৩৮.৫৪ কোটি।[৫] সরকার এটিকে একটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করেছে।[৬] ২০২০ সালের জুনে নিপ্পন কোই কোম্পানি লিমিটেডকে রুটটি নকশা করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। যাইহোক, রুটের প্রস্তাবিত যাত্রাপথটি ঢাকা–আরিচা মহাসড়কের উপর দিয়ে যাবে বলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (আরএইচডি) এর নির্মাণে আপত্তি জানিয়ে প্রাক-নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। সমস্যাটি সমাধানের জন্য ২৩ মার্চ ২০২১ সালে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আরএইচডি যাত্রাপথটি পরিবর্তন করে দক্ষিণে স্থানান্তর করার জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেয়। কিন্তু হেমায়েতপুরে ডিপোর জন্য অধিগ্রহণকৃত জমি ও কারিগরি কারণে তা অসম্ভব হয়ে পড়ে।[৭] ২৮ জুন ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মধ্যে প্রকল্পটির অর্থায়নের জন্য মোট বাজেটের ৭১% অর্থের সমপরিমাণ একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[৮] ৩ অক্টোবর ২০২২ সালে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) ডিপোর জন্য অধিগ্রহণকৃত জমির মালিকানা পায়। ১৭ এপ্রিল ২০২৩-এ ডিএমটিসিএল জানায় যে পরের দিন নির্ধারিত পরিচালনা পর্ষদের সভার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে তারা একই বছরের জুলাই মাসে এর নির্মাণ কাজ শুরু করতে চায়।[৯] ২৩ মে ২০২৩-এ ডিপো নির্মাণের জন্য মেট্রো কর্তৃপক্ষের সাথে টিওই কর্পোরেশন ও স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের ৳১,১৮৯ কোটি টাকার একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।[১০] সেদিন আরএইচডি ও ডিএমটিসিএলের মধ্যে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় যেখানে আরএইচডি আবারও উপজেলায় নির্মিত লাইনের দুটি স্টেশনের অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য আবার অনুরোধ করে। আরএইচডির মতে মহাসড়কের মধ্যবর্তী স্থানে রেলপথ নির্মাণের ফলে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও মহাসড়কে রেলপথ নির্মাণের ফলে এটি দুর্ঘটনাপ্রবণ মহাসড়ক হয়ে উঠতে পারে। তবে আরএইচডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বলেছেন যে মেট্রো প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার এক্সপ্রেসওয়ের এ্যালাইনমেন্ট সংশোধন করবে। এছাড়া নর্দার্ন রুটের প্রকল্প পরিচালকের মতে লাইন নির্মাণের সময় মহাসড়কের একপাশ বন্ধ করে অন্য পাশে মহাসড়কের প্রস্থ বাড়ানো হলে কোনো অসুবিধা হবে না।[১১] একই মাসে দক্ষিণ কোরিয়া রুটের জন্য ১৫০ কোটি ডলার অর্থায়ন প্রদানের জন্য একটি ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্টে স্বাক্ষর করে।[১২] ২০২৩ সালের ২০ আগস্টে সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা করেছিলেন যে লাইনটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে হবে।[১৩] কিন্তু পরবর্তীতে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে প্রকল্প কর্মকর্তা জানান যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়সূচির কারণে সৃষ্ট সময়ের অভাবের জন্য নির্ধারিত তারিখে এটি সম্ভব হবে না।[১৪] ৪ নভেম্বর ২০২৩ সালে শেখ হাসিনা রুটটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।[১৫]
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
সম্পাদনাএই যাত্রাপথের একটি স্টেশন কচুক্ষেতে প্রস্তাব করা হয়েছে যা ঢাকা সেনানিবাসের অধীনস্থ এলাকা। তাই এই স্থানে স্টেশন নির্মাণের জন্য ডিএমটিসিএলের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছ থেকে অনাপত্তিপত্র নেওয়া প্রয়োজন ছিলো। অনাপত্তিপত্র আবেদন করার সময় সেনাবাহিনী রেলপথটিকে সংশোধন করে পশ্চিমে নবীনগর ও পূর্বে সেনাবাহিনী কর্তৃক উন্নয়নৃত জলসিঁড়ি আবাসন পর্যন্ত করার জন্য পরামর্শ দেয়। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বরে ডিএমটিসিএল সেনাবাহিনীকে জানায় যে ভবিষ্যতে লাইনটিকে সেনাবাহিনী কর্তৃক পরামর্শকৃত এলাকাগুলো পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে।[১৬]
যাত্রাপথ
সম্পাদনাএমআরটি লাইন ৫-এর নর্দার্ন রুটে ১৪টি প্রস্তাবিত স্টেশন আছে। ৯টি স্টেশন সহ এই রুটের ১৩.৫ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থে ও ৫টি স্টেশন সহ ৬.৫ কিলোমিটার মাটির উপরে নির্মিত হবে।[১৭]
কোড | নাম | সংযোগ | অবস্থান | চালু |
---|---|---|---|---|
১ | হেমায়েতপুর | সাভার উপজেলা | পরিকল্পিত | |
২ | বালিয়ারপুর | |||
৩ | বিলামালিয়া | |||
৪ | আমিনবাজার | |||
৫ | গাবতলী | এমআরটি লাইন ২ এমআরটি লাইন ৫দ |
মিরপুর থানা | |
৬ | দারুস সালাম | দারুস সালাম থানা | ||
৭ | মিরপুর ১ | মিরপুর থানা | ||
৮ | মিরপুর ১০ | এমআরটি লাইন ৬ | ||
৯ | মিরপুর ১৪ | |||
১০ | কচুক্ষেত | ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা | ||
১১ | বনানী | বনানী থানা | ||
১২ | গুলশান ২ | গুলশান থানা | ||
১৩ | নতুন বাজার | এমআরটি লাইন ১ | ভাটারা থানা | |
১৪ | ভাটারা |
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ রহমান, শামীম (২৩ ডিসেম্বর ২০২২)। "পুরোটাই উড়ালপথে নির্মাণ ভারতের 'মেট্রো ম্যান' শ্রীধরনের পরামর্শে"। বনিকবার্তা.নেট। ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ জামান, শেখ শাহরিয়ার (২৫ ডিসেম্বর ২০২২)। "মেট্রোরেল ছিল বিরাট এক চ্যালেঞ্জ"। বাংলা ট্রিবিউন। ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ "এয়ারপোর্ট থেকে কমলাপুর আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন হচ্ছে"। কালের কণ্ঠ। ১৪ অক্টোবর ২০১৯। ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ মার্চ ২০২২।
- ↑ "Government seeks EoI for 19.6-km underground, elevated metro rail"। ডেইলি সান (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ আগস্ট ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৩।
- ↑ "মেট্রোরেল ১ ও ৫ নির্মাণে 'দ্বিগুণ' ব্যয়, যা বলছে পরিকল্পনা কমিশন"। জাগো নিউজ। ১৬ অক্টোবর ২০১৯। ১৭ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৩।
- ↑ "'ফাস্ট-ট্র্যাক' প্রকল্পে মেট্রোরেল রুট ১ ও ৫"। বাংলানিউজ২৪.কম। ১৫ জুলাই ২০২০। ১৫ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৩।
- ↑ "Mrt-5 Northern Route Alignment: RHD, metro rail authority at odds"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। ১৫ মার্চ ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৩।
- ↑ "Govt, JICA sign $1.14b loan deal for 2 projects"। বিজনেসপোস্টবিডি.কম (ইংরেজি ভাষায়)। ২৯ জুন ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৩।
- ↑ "জুলাইয়ে শুরু ঢাকার তৃতীয় মেট্রোরেলের নির্মাণকাজ"। বনিকবার্তা.নেট। ১৮ এপ্রিল ২০২৩। ১৯ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৩।
- ↑ "Deal signed for developing MRT Line-5 depot"। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ মে ২০২৩। ২১ জুন ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২৩।
- ↑ অধিকারী, তুহিন শুভ্র (৫ জুলাই ২০২৩)। "Metro Line On Dhaka-Aricha Route: RHD fears it'll create chaos on highway"। দ্য ডেইলি স্টার। সংগ্রহের তারিখ ৬ জুলাই ২০২৩।
- ↑ বায়রন, রেজাউল করিম; বিন হাবিব, ওয়াসিম (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। "Funding for Gabtoli-Dasherkandi metro line confirmed"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "আগারগাঁও-মতিঝিল অংশের মেট্রোরেল উদ্বোধন ২০ অক্টোবর"। ঢাকা টাইমস। ২০ আগস্ট ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২৩।
- ↑ "১৬ সেপ্টেম্বর এমআরটি লাইন-৫ নির্মাণকাজের উদ্বোধন হচ্ছে না"। ঢাকা পোস্ট। ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "PM Hasina inaugurates construction of MRT Line-5" (ইংরেজি ভাষায়)। বিডিনিউজ২৪.কম। ৪ নভেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ১৮ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ ইসলাম, তাওহিদুল (৪ জানুয়ারি ২০২১)। "মেট্রোরেলের রুট বৃদ্ধির শর্তে জটিলতা"। আমাদের সময়। সংগ্রহের তারিখ ২৯ আগস্ট ২০২৩।
- ↑ "এমআরটি লাইন-৫ নর্দান রুট তৈরির জন্য ঠিকাদার কোম্পানির সাথে ডিএমটিসিএলের চুক্তি সই"। যমুনা টেলিভিশন। ২৩ মে ২০২৩। ২৯ মে ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০২৩।