এভনডেইল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র

এভনডেইল কৃষি গবেষণা কেন্দ্র বা এভনডেইল আবিষ্কার খামারটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কৃষি ও খাদ্য বিভাগের দ্বারা পরিচালিত ‎তেরটি খামার এবং কেন্দ্রের মধ্যে একটি। তার গবেষণা কর্মের সাথে সাথে এভনডেইলের আছে ঐতিহাসিক দালান সমূহ, একটি কৃষি যন্ত্রপাতির ‎জাদুঘর এবং এটি একটি কৃষি শিক্ষা কেন্দ্র পরিচালনা করছে যা প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিশুদেরকে খামার করার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ‎বিশেষায়িত এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় এটি তার ইতিহাস শিক্ষা দিচ্ছে।

যাদুঘরের একটি প্রদর্শনী
এভনডেইলের আস্তাবলের ভিতরে

বেভারলি শহরের ১০ কিলোমিটার (৬.২ মাইল) উত্তর পশ্চিমে, ডেইল এবং এভন নদীর সংযোগস্থলে একটি জমির উপর এভনডেইল এর অবস্থান। এটি প্রকৃত ‎পক্ষে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রথম গভর্নর ক্যাপ্টেন (পরবর্তীতে অ্যাডমিরাল স্যার) জেমস্ স্টারলিং এবং ক্যাপ্টেন মার্ক কুরি আর এন এর জন্য ১৮৩৬[] সালে মঞ্জুরী কৃত জমিতে অবস্থিত। এই মঞ্জুরী গুলো ১৮৪৯ সালে একীভূত হয় এবং আরো অতিরিক্ত ক্রয় কৃত জমি নিয়ে এভনডেইল এস্টেট নামে পরিচিতি ‎পায় যা ১৩,৩৩০ একর (৫৩.৯ বর্গ কিমি) বিস্তৃত ছিল।

৪ এপ্রিল ১৯২৪ এভনডেইলের বাকি ১,৭৪০ একর (৭.০ বর্গ কিমি) কৃষি ও খাদ্য বিভাগের হাতে চলে যায়। শুরুতে এভনডেইল এ গ্রুপ সেটেলমেন্ট ‎স্কীম বা শ্বেতাংগ বসতি স্থাপন চলতে থাকে, ১৯২৬ সালের পর হতে এটির গবেষণা কর্ম শুরু হয়। ১৯৩০ সালে ড. হেরল্ড বেনেটস্ এর ‎Bacillus ovitoxicus এর সফল গবেষণার জন্য এখানে গবেষণাগার গড়ে তোলা হয়। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ১৯৭৯ সালে ১৫০ তম বার্ষিকী ‎পালনের একটি অংশ হিসেবে একটি যন্ত্রপাতি যাদুঘর তৈরি করা হয় এবং অন্যান্য দালান সমূহ পুনঃনির্মাণ করে তাদের আগের অবস্থায় নেওয়া হয়।[]

খামারের শুরুর বছরগুলো

সম্পাদনা
 
আসল সীমানা প্রাচীর যেটি কুরী এবং স্টারলিং এর অংশের মধ্যে রয়েছে, দেয়ালটি ১৯৭৮ সালে নির্মিত

১৮৩৫ সালের নভেম্বরে গভর্নর জেমস স্টারলিং এর নেতৃত্বাধীন অভিযানটি কিং জর্জ সাউন্ড-এ সার্ভেয়ার জেনারেল জন সেপ্টিমাস রো এর ‎নেতৃত্বাধীন আরেকটি দলের সাথে মিলিত হয়। জন সেপ্টিমাস রো উভয় দলের জন্যই সোয়ান রিভার কলোনীতে ফিরে যাওয়ার বিকল্প পথের ব্যবস্থাপনা তৈরি ‎করেছিলেন। এই পথটি নব প্রতিষ্ঠিত উইলিয়ামস এর উপনিবেশ সহ কিং জর্জ সাউন্ড এর উপনিবেশ, ইয়র্ক এবং সোয়ান রিভার কলোনীকে সংযুক্ত ‎করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল। অভিযানটি এভনডেইল এলাকার উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় ডেইল নদী এবং একটি গ্রানাইট পাহাড় দেখতে পায়, জন সেপ্টিমাস রো ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ যেটির নাম দিয়েছিলেন বাল্ড হিল। এই এলাকাকে জরিপ করার জন্য বাল্ড হিল প্রাথমিক নির্দেশকে পরিণত ‎হয়।[]

১৮৩৬ সালে সার্ভেয়ার থমাস ওয়াটসন এলাকাটিতে ফিরে আসেন এবং বাল্ড হিলকে প্রধান ত্রিকোণমিতিক নির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করেন। ‎ওয়াটসনকে বেভারলি শহরের জন্য পশ্চিম সীমানা সহ অনেকগুলো খন্ড জমির মানচিত্র তৈরি করতে হয়েছিল। জরীপকৃত খন্ড জমি দুটি ছিল ৫,০০০ একরের ‎‎(২০ বর্গ কিমি) 'এভন লোকেশন-১৪' এবং ৪,০০০ একরের (১৬ বর্গ কিমি) 'এভন লোকেশন-কে'; 'লোকেশন ১৪' দেওয়া হয়েছিল "ফ্রিম্যান্টল" বন্দরের হার্বার ‎মাস্টার "ক্যাপ্টেন মার্ক কুরী" কে আর 'লোকেশন-কে' দেওয়া হয়েছিল "স্টার্লিং" কে। "স্টার্লিং" গভর্নর হিসেবে এবং "কুরী" হার্বার মাস্টার হিসেবে কলোনী ‎থেকে কোন বেতন পেতেন না কিন্তু তাদের সেবার বিনিময়ে তাদেরকে জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে সার্ভেয়াররা বর্তমান যন্ত্রপাতি দিয়ে ‎এই বাসস্থান গুলোর সঠিক অবস্থান নির্ণয়ের কাজ করেছিল এবং ১৪২ বছর আগের ওয়াটসনের জরিপকে অতুলনীয় বলে মন্তব্য করেছিল।[]

কুরী তার বরাদ্দ ₤৩৩০ এর বিনিময়ে নিকোলাস কেরী এর কাছে ১৮৩৮ সালে বিক্রি করে দেন। ডিসেম্বরে কেরী গভর্নর স্টারলিং এর সাথে তার বরাদ্দের ‎ব্যাপারে লীজ চুক্তিতে আবদ্ধ হন যাতে উল্লেখ ছিল যে, কেরী ১৮৪৬ সালে লীজ সমাপ্তির পর এই সম্পদ ₤৭৫০ এর বিনিময়ে কিনে নিচ্ছেন। কেরী ‎লোকেশন ১৪ এর পশ্চিমের ৩,০০০ একর (১২ বর্গ কিমি) ও কিনে নেন। ১৮৪৯ সালে তিনি আরো অতিরিক্ত জমি বরাদ্দ পান। এভন নদী এবং ডেইল ‎নদী যেখানে ভি আকার ধারণ করেছে সেখানে সম্পূর্ণ জমির আকার ১৩,৩৩০ একর (৫৩.৯ বর্গ কিমি) এবং এর নাম এভনডেইল এস্টেট। ১৮৪০ ‎সালের শেষের দিকে এভনডেইলের তত্বাবধান একজন অজ্ঞাত তত্ত্বাবধায়কের হাতে ন্যস্ত করে "কেরী" 'গুয়ের্ণসী'তে চলে যান।[]

 
ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত আস্তবল ১৮৯০ সালের দিকে নির্মিত

কেরীর মৃত্যুর পর তার ভাইয়ের নাতি ১৬ বছর বয়সী উইলিয়াম হার্বার্ট দ্য লিজলে উত্তরাধিকার সূত্রে এভনডেইলের মালিক হন। দ্য লিজলে ১৮৯৩ ‎সালে আসেন এবং বসবাস শুরু করেন এবং ধরা হয় ১৮৯৪ সালে জমির স্বত্ব গ্রহণ করেন। দ্য লিজলের আগমনের আগ পর্যন্ত এভনডেইল পতিত ‎সম্পত্তি হিসেবে ছিল, পরবর্তী দশ বছরে এভডেইলের অংশ বিশেষ বিক্রি করে দেয়া হয় এর উন্নয়নের পয়সা যোগানর জন্য। এই সময়টাতে ঘরটি ‎বড় করা হয়েছিল এবং আস্তাবল তৈরি করা হয়েছিল, যাতে অন্তর্ভুক্ত ছিল ফাঁপা দেয়াল বিশিষ্ট ২০ টি ঘোড়ার ঘর এবং একটি উপরিস্থ খাদ্য মজুদের ‎জায়গা।[] ফাঁপা দেয়ালের মাধ্যমে উপরিস্থ খাদ্য মজুদের জায়গা থেকে সরাসরি প্রতিটা ঘরের খাবারের পাত্রে খাবার পড়ার সুব্যবস্থা ছিল।[]

অবশিষ্ট ৫,২৩২ একর (২১.২ বর্গ কিমি) ১৯০৪ সালে উইলিয়াম জেমস্ বুচার এবং চার্লস হান্ট বুচার এর কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়। বুচাররা পার্শ্ববর্তী ‎জমি কিনে আরো ৪,৪০৩ একর (১৭.৮ বর্গ কিমি) যোগ করেন যা এভনডেইলকে ৯,৬৩৫ একরে (৩৯.০ বর্গ কিমি) বর্ধিত করে। ১৯০৮ সালে তারা ‎এভনডেইলকে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ান সরকারের কাছে একর প্রতি ₤৫/১০/- দরে বিক্রির প্রস্তাব দেন। সরকার একর প্রতি ₤৫/৫/- দরের পাল্টা প্রস্তাব দেয় ‎যা গৃহীত হয়। ১৯১০ সালের মার্চ মাসে এভনডেইলকে কৃষি জমি ক্রয় আইনের অধীনে ক্রয় করা হয় সর্বমোট ₤৫১,৪৯৪/১২/৬ দরের বিনিময়ে, যা ছিল ‎২০০৬ সালের প্রায় A$৫,৫০০,০০০ সম মূল্যের।[]

১৯১০ থেকে ১৯২৪

সম্পাদনা

যদিও বুচার ভাইরা জানুয়ারী ১৯১১ সাল পর্যন্ত খামার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে তদুপরি সরকার সীমানা ভাগ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। ১৯১০ সালের ‎এপ্রিলে জন হলকে এভনডেইলে পাঠানো হয় সকল উন্নতিকে চিহ্নিত করার জন্য এবং যেখানে সম্ভব বিদ্যমান বেড়া অনুযায়ী মধ্যবর্তী বিভাজন ‎রেখা অঙ্কনের জন্য। তার আগমন উল্লেখযোগ্য মতবিরোধ সৃষ্টি করে কারণ তিনি গলফ মাঠে তার ক্যাম্প স্থাপন করেন কিন্তু গলফ ক্লাবও এভনডেইলের ‎৪০ একর (১৬০,০০০ বর্গ মি) জমি লীজ নিয়েছিল যা শহরের প্রান্ত অবধি যুক্ত। তদন্তে দেখা যায় যখন জমিটি বিক্রি হয়েছিল তখনই লীজ শেষ হয়ে ‎গিয়েছিল।[]

হল এভনডেইলকে নয়টি বড় আকারের খামারে ভাগ করেন ‍যেগুলোর সীমানা তখন পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল, যে ৪০ একর (১৬০,০০০ বর্গ ‍মি) জমি ‎গলফ মাঠ দখল করে ছিল সেটিকে ছোট ছোট জমির খণ্ডে ভাগ করেন এবং তা পরে আরো বিভক্ত হয়। ভূমি বিভাগের হিসাব রক্ষণ শাখা হিসাব করে ‎দেখেছিল যে জমি গুলো বিক্রি করে খরচা বাদে £৮,৭৬৮/৩/৩ আয় করা সম্ভব এবং এস্টেটটি গ্যাজেটেড হয় এবং ২১ ডিসেম্বর ১৯১০ সালে, জমি বিক্রির জন্য সহজলভ্য হয় ‎। নয়টি বড় আকারের খন্ড জমির মধ্যে মাত্র চারটি গ্রহণ করা হয় যেহেতু অধিবাসীরা একর প্রতি £৬ করে দাম দিতে ‎অসমর্থ ‍ছিল। ১ নং লটটি গ্রহণ করেন মাইনিং ম্যাগনেট ল্যাং হ্যানকক এর পিতা জর্জ হ্যানকক এবং জর্জের ভাই রিচার্ড লট নং ২ গ্রহণ করেন । লট নং ‎৩ গ্রহণ করেন জি. ডব্লিউ. ইসবিস্টার এবং লট নং ৪ গ্রহণ করেন সাবেক প্রিমিয়ার স্যার নিউটন মুর, যিনি পরবর্তীতে পরিকল্পনা সমূহ সহ লন্ডনের ‎দিকে অগ্রসর হন। যেহেতু এজেন্ট জেনারেল নিউটনকে বাসিন্দাদেরকে এভনডেইলের খন্ড জমিগুলো প্রস্তাব করতে হয়েছিল যদিও এভনডেইলের লটের ‎প্রাপ্যতা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অনেক টেলিগ্রাম পাঠানো হয়েছিল তথাপি লন্ডনে কোন লট বরাদ্দের রেকর্ড পাওয়া যায় না।[]

 
ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত ওজন যন্ত্র, ১৯৩৬ সাল এবং পিছনে ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত শস্যগুদাম, ১৯২৭ সাল

যেহেতু অবশিষ্ট ৫ টি বড় লট নভেম্বর ১৯১১ পর্যন্ত গৃহীত হয়নি সেহেতু এগুলোর মধ্যে ৪ টি কে ভূমি বিভাগের দায়িত্বে খামার অব্যাহত রাখতে ‎একটি কৃষি কলেজের ব্যবহারের জন্য প্রদানের সুপারিশ করা হয়। বাকি একটি লট যেটি ড্রামক্লায়ার নামে পরিচিত ছিল সেটি অবিকৃত ছিল, ১৯১৪ ‎সালে ডউরীন নামক এলাকার একজন কৃষক, খরার কারণে সেখানে তার সম্পত্তি হারিয়ে ড্রামক্লায়ার লীজ নেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু গ্রহণযোগ্য মূল্য দিতে অপারগ ‎ছিল। ডিসেম্বরে হ্যানকক ভাইয়েরা লট ১ ও ২ পরিত্যাগ করে, ইসবেস্টারও লট ১৩ পরিত্যাগ করেন যদিও সঠিক সময় জানা যায় না, শুধু ৭৮০ ‎একর (৩.২ বর্গ কিমি) ব্যক্তি মালিকানায় থেকে যায়। ১ম বিশ্বযু্দ্ধ আরম্ভ হওয়ার সাথে কৃষি কলেজের পরিকল্পনাও পরিত্যক্ত হয়।[]

১৯১৬ সালের শেষের দিকের কাছাকাছি সময়ে বেভারলি সম্প্রদায় এভনডেইলকে ফেরত আসা সৈনিকদের জন্য ২০টি লটে বিভক্ত করার অনুরোধ ‎করেছিলেন। এটাও সুপারিশ করা হয় যে এভডেইল একটি পরিচর্যা কেন্দ্র হিসেবে থাকবে যেখানে সৈনিকরা স্বল্প বরাদ্দ পাবেন এবং যারা সফল হবেন ‎তারা রাজ্যের অন্য কোথাও অধিকতর বরাদ্দ পাবেন। ১৯১৮ সালের জুলাইতে এই সিদ্ধান্ত হয় যে এভনডেইলের ৬ টি লট বেভারলির ‎চাকুরিজীবিদের জন্য সুলভ করা হবে এবং খামার বাড়ির আশে পাশের ১,৭৪০ একর (৭.০ বর্গ কিমি) ভূমি বিভাগের নিয়ন্ত্রণে থাকবে।[]

কৃষি বিভাগ

সম্পাদনা

প্রকৃত খামার বাড়ির ব্লকটি ১৯২৪ সালে কৃষি বিভাগের কাছে ন্যস্ত হওয়ার আগে বহু বছর অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ছিল। শুরুতে বিশুদ্ধ ভুট্টা এবং ‎যবের বীজ উৎপাদনই উদ্দেশ্য ছিল, কয়েক বছর পর্যন্ত খুব অল্প উৎপাদন হত। এভনডেইল দুগ্ধবতী গাভী রাজ্যের দক্ষিণ পশ্চিমের বাসিন্দাদের ‎কাছে পাঠানোর আগে জড়ো করা এবং মজুদের যায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হত। সেই সময় ১০০ টন ধারণ ক্ষমতার শস্য গুদামটি তৈরি করা হয়, শস্য গুদামটি ‎এখন ঐতিহ্য তালিকায় স্তান করে নিয়েছে।[][]

স্থানীয় কৃষক সম্প্রদায় আশঙ্কা ব্যক্ত করে যে গবাদি পশু এই এলাকার জন্য উপযোগী নয়, যখন তাৎক্ষনিক ভাবে আশঙ্কাটি আমলে নেওয়া হল না ‎তখন এভনডেইল বীজ উৎপাদন এবং গবেষণার দিকেই ফিরে গেল। প্রথম গবেষণাটি ১৯২৬ সালে শুরু হয়েছিল, এটা ছিল সুপার ফসফেট এর ‎ব্যবহার এর বিকল্প এবং ব্যবহারের সময়। প্রাথমিক ফলাফল Journal of Agriculture –এ ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়।[]

গবেষণা

সম্পাদনা
 
ড. বেনেটসের গবেষণার জন্য ঐতিহ্য তালিকাভূক্ত গবেষণাগার

১৯১৫ সালে বেভারলি ইয়র্ক এলাকায় ব্রাক্সি সদৃশ একটি রোগের উদ্ভব হয়। পরবর্তী ১৫ বছরে এটি রাজ্যের অধিকাংশ খামার প্রধান জেলাতে ‎ছড়িয়ে পড়ে। পালের মধ্যে সাধারণত ৫% ক্ষতি হত যদিও ৩০% পর্যন্ত ক্ষতির প্রমাণ পাওয়া যায়। ১৯১৮ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ণ অস্ট্রেলিয়ার প্রফেসর ডাকিন রোগটিকে ব্যকটেরিয়া থেকে উদ্ভূত বিষক্রিয়া হিসেবে শনাক্ত করেন কিন্তু এর উৎস শনাক্ত করতে ব্যর্থ হন।[]

১৯২৫ সালের মে মাসে রাজ্যের প্রথম ভেটেরিনারি প্যাথোলজিস্ট হিসেবে নিয়োগ পান ড. হেরোল্ড বেনেটস। বেনেটস তাৎক্ষণিক ভাবে রোগটির ‎বিষয়ে তদন্ত শুরু করেন এজন্য তিনি বিভাগের শহর অফিসগুলোর পাশের খালি জায়গা এবং গলি পথ ব্যবহার করেন গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় ‎ভেড়ার বাসস্থান নির্মানে।[] ১৯৩০ সালে এভনডেইলে একটি মাঠ পরীক্ষাগার তৈরি করা হয়, ১০০ ভেড়া কেনা হয় খাদ্য পরীক্ষা করার জন্য।[] ১৯৩১ ‎সালে বেনেটস রোগের কারণ হিসেবে Bacillus ovitoxicus কে শনাক্ত করেন।[] এই জ্ঞান ব্যবহার করে তিনি সংক্রামক enterotoxaemia ‎ভ্যাকসিন তৈরি করতে সক্ষম হন, তার এই অবদানের জন্য বেনেটস অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার পদক পান।[]

বেনেটসের এভনডেলে যে পরিমান ভেড়ার দরকার হয়েছিল তা আরো গবেষণার সুযোগ করে দেয়। ১৯৩১ সাল থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত এই ‎উদ্দেশ্যে গবেষণা চলতে থাকে যে কীভাবে সর্বোচ্চ উৎপাদনক্ষম রপ্তানীযোগ্য ভেড়ার বাচ্চা নির্বাচন করা যায়। এটি বিভিন্ন জাত এবং সঙ্কর জাতের ‎উপর গবেষণা করে দেখে যে, সঙ্কর জাতের ভেড়ীগুলো বিশুদ্ধ মেরিনো জাতের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেশি উৎপাদনক্ষম।[]

১৯৩৪ সালে বেনেটস রাজ্য সরকারের উদ্ভিদ বিজ্ঞানী চার্লস গার্ডনারের সাথে দলগঠন করেন ভেড়ার উপর স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতিগুলোর বিষক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ‎করার জন্য। গার্ডনার উদ্ভিদ জোগাড় করে সতেজ অবস্থায় বেনেটসের কাছে পাঠাতেন তিনি সেগুলো ভেড়াকে খাওয়াতেন। তারা ২৪ টি উদ্ভিদ ‎প্রজাতিকে বিষাক্ত হিসেবে নিশ্চিত করেন, যেগুলোর অধিকাংশই স্থানীয় pea গণের অন্তর্ভুক্ত Gastrolobium এবং Oxylobium থেকে আগত। ‎এটি এবং পরবর্তী গবেষণার ভিত্তিতে গার্ডনার এবং বেনেটস ১৯৫৬ সালে The Toxic Plants of Western Australia প্রকাশ করেন।[] ১৯৩৫ ‎সালে পুরুষ ভেড়ার বাচ্চা খোঁজাকরনে যান্ত্রিক সাঁড়াশি অথবা ছুরি ব্যবহারের উপর তুলনা মুলক প্রভাবের গবেষণা হয়, তখন থেকে এই উভয় ‎পদ্ধতি রাবার ইলাস্ট্রেটর রিং দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। ৪৯৯ টি ভেড়ার উপর করা এই পরীক্ষাটি দেখায় যে মৃত্যুর হার, বয়োপ্রাপ্তির হার এবং মাংসের ‎গুনাগুনের উপর এগুলোর উল্লেখযোগ্য কোন পার্থক্য নেই।[]

ড. এরিক আন্ডারউড এই ভেড়ার পাল ব্যবহার করেই এভনডেইলে ১৯৩০ সালের মাঝামাঝি তার গবেষণা শুরু করেন। আন্ডারউডের প্রথম ‎গবেষণা ছিল ভেড়ার পশম বৃদ্ধির উপর সালফারের প্রভাব নিয়ে, এরপর তিনি ১৯৩৫ সালে ভেড়ার বটুলিজম এর উপর গবেষণা করেন। এই ‎গবেষণা গুলোতে আন্ডারউড ছিলেন পরবর্তী ৩০ বছরের মধ্যে অনেকের মধ্যে প্রথম। ১৯৪০ সালে তিনি ভেড়ার খড় এবং জমির ঘাস এর পুষ্টি গুণের ‎উপর গবেষণা করেন, Studies in Cereal Hay production in Western Australia থেকে প্রাপ্ত চলমান ফলাফল গুলো Journal of ‎Agriculture এ প্রকাশিত হয়।[][১০][১১]

 
আয় সহায়ক হিসেবে মৎস চাষ, এই প্রদর্শনীটি যন্ত্রপাতির শেডের ভিতরে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এভনডেইল খামার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় তিল এবং তিষি চাষের উপর গবেষণা করে, যদিও এগুলো চাষের জন্য জায়গাটি ‎সবচেয়ে উপযুক্ত ছিলনা। তিনটি প্রজাতির তিলের উপর পরীক্ষা চালানো হয়ঃ Riga Crown, দ্রুত পরিপক্ব জাত, Italian এটিও দ্রুত পরিপক্ব জাত ‎এবং Walsh, একটি মধ্য ঋতু পরিপক্ব জাত। এটা আবিষ্কৃত হয় যে, এরা প্রত্যেকেই কাট ওয়ার্ম এর প্রতি বেশি সংবেদনশীল এবং ঋতুর শেষভাগে ‎হলে এটি বেশি ক্ষতি করে, প্রথম দিকেই কীটনাশক ডিডিটি প্রয়োগ এর মোকাবিলায় ভাল ফল দেয় বলে বলা হয়।[১২]

অন্যান্য অবদান

সম্পাদনা

১৯৪২ সালে কন্টর ব্যাংকসের উন্নতি এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগামীতা ছিল, এই যন্ত্রটিতে একজন চালক, দুইজন শ্রমিক, ৪ টি ঘোড়া বা দুটি "‎ক্লাইডেসডেইল" একটি দল প্রয়োজন হত। ১৯৫০ এর দশক জুড়ে এভনডেইল তার গবেষণার অংশ হিসেবে ভেড়ার পালের প্রজনন ক্ষমতার উপর ‎গো খাদ্য হিসেবে ক্লোভারের জাত Dwalganup এর প্রভাব পর্যবেক্ষণ করে।[১৩] ১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর দশকে প্রজনন এবং পশ্চিম অস্ট্রেলিয়াতে ‎ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন শস্যের উপর গবেষণায় এভনডেইল নিয়োজিত থাকে। ১৯৮০ র দশকের প্রথম দিকে এভনডেইল মেরুন চাষের মত খামারে ‎বিকল্প বাড়তি আয় এর সাথে প্রাকৃতিক এবং লাগসই খামার করার দিকে মনোযোগ দেয়।[]

 
জ্যাকো নামের ক্লাইডেস্টাইল যেটি নর্থহামের কাছের একটি খামার থেকে অবসর নিয়েছে, ডিসেম্বর ২০০৫

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ খামারের মত এভনডেইলেও ঘোড়া এবং ক্লাইডেস্টাইলদেরকে বিশেষ ভাবে খামারের যন্ত্রপাতি টানার কাজে ‎ব্যবহার করা হত। ১৯৩০ এর দশকের খামার অর্থনীতি বোঝায় যে ক্লাইডেস্টাইলগুলো সরকারের ঘাসের জমি উপভোগ করার জন্য অবসরে ‎যাবেনা। ১৯৩৭ সালে কৃষি মন্ত্রিকে দেয়া একটি চিঠিতে যেসব ঘোড়া আর ব্যবহার উপযোগী নয় তাদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিস্তারিত লেখা হয়,‎

স্টেশনের সেই দুইটি ঘোড়ার প্রসঙ্গে যেগুলো বৃদ্ধ এবং আর কোন কাজ করার উপযোগী নয়। আমি এই প্রাণী গুলোর ব্যাপারে অনুমোদনের ‎অনুরোধ করছি যে, এগুলো স্টেশনে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরিবর্তে ‍সিংহের খাবার হিসেবে চিড়িয়াখানার কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান...‎

— খামার ব্যবস্থাপক, ১৯৩৭ সালের সুত্র মোতাবেক[]

চিঠিটি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করেছে কীভাবে পার্থ চিড়িয়াখানা এই পরিবহনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল এবং মন্ত্রী এই আদান প্রদান অনুমোদন করেন। ‎অনেক ক্লাইডেস্টাইলকে প্রথম দুটি উপসাগরিও ঘোটকীর অনুগামী হতে হয়েছিল যাদের সাথে এই প্রাপ্তি চিরকুট ছিল যে, সিংহের খাদ্যের জন্য, ‎যাতায়াত খরচ প্রাপক বহন করবে। এই চর্চা ১৯৫০ এর দশক পর্যন্ত চলতে থাকে যতক্ষণ ট্রাক্টর খামারে ঘোড়ার জায়গায় ব্যবহৃত হতে শুরু না হয়। ‎১৯৭৮ সালে যাদুঘর উদ্বোধন হতে শুরু করে এভনডেইল আবার পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রদর্শনের জন্য ক্লাইডেসডেইল ব্যবহার শুরু করে এগুলো ‎কাজের অনুপযোগী হয়ে গেলে গৃহপালিত ঘোড়া হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হত।[]

১৯৭৬ থেকে অদ্যাবধি

সম্পাদনা
 
ঘাসের মাঠের সাইনবোর্ড সমূহ, এই মাঠটি প্রাণী খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের Atriplex (saltbush) নিয়ে গবেষণায় ব্যবহৃত হচ্ছে

১৯৭৬ সালে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ১৯৭৬ সালের দেড়শত বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি হিসেবে পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার কৃষকদের অর্জনকে ‍তুলে ধরতে ‎কৃষি বিভাগ ঐতিহাসিক এভন্ডেইল খামারকে তার আসল অবস্থায় সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেয়।[] এই ঘোষণায় ব্যাপক ভাবে সাড়া দিয়ে পুরো রাজ্যের ‎খামারীরা তাদের পুরাতন কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি দান করে দেয়। অধিকাংশ যন্ত্রই কৃষি বিভাগের কারিগররা সারিয়ে তোলেন। ১৯৭৮ সালে প্রিন্স ‎চার্লসকে এভনডেইলের কৃষি প্রদর্শনী দেখা ও উদ্বোধন করার জন্য আমন্ত্রণ করা হয়, এটি গৃহীত হয় এবং খামারের প্রবেশ মুখে স্মারক বৃক্ষ ‎রোপনের মাধ্যমে ১৬ ই মার্চ ১৯৭৯ এভনডেইল আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হয়।[]

খামারটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার শর্তাধীনে খামার করা ও খামার চর্চার উন্নতি কল্পে গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। এভনডেইলের প্রদর্শনী ‎জনসাধারণের জন্য বনভোজনের সুবিধা সহ উন্মুক্ত, প্রদর্শনীতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে আসল খামার প্রাঙ্গণ, ক্লাইডেস্টাইল সহ আস্তাবল এবং যন্ত্রপাতির ‎শেড। খামারে চতুর্দিকে রাস্তায় প্রতিটি মাঠের বর্তমান ব্যবহার ব্যাখ্যা করে তথ্য বোর্ড দেয়া আছে।[১৪][১৫]

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. "2004 Year of the Built Environment"Heritage Council of Western Australia। ২০০৫-০৬-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১২ 
  2. Jones, H. and D. Johnston (১৯৯৭)। The Story of AvondaleDepartment of Agriculture, Western Australiaআইএসবিএন 0-7244-8743-3 
  3. "Interim Entry No. 05566 Register of Heritage Places" (পিডিএফ)Heritage Council of Western Australia। ২০০৭-০৯-০১ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১২ 
  4. "Heritage Assessment Document 15/08/2003" (পিডিএফ)Register of Heritage Places, Heritage Council of Western Australia। ২০০৭-০৮-৩১ তারিখে মূল (pdf) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৭ 
  5. "Associates of Profession"Australian Veterinary Association। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] [অকার্যকর সংযোগ]
  6. Maughan, Jill (১৯৯৩)। "Bennetts, Harold William (1898–1970)"অস্ট্রেলিয়ান ডিকশনারি অফ বায়োগ্রাফি (ইংরেজি ভাষায়)। ক্যানবেরা: অস্ট্রেলীয় জাতীয় বিশ্ববিদালয়। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-১৭ 
  7. "RESEARCH AT AVONDALE"Western Mail (Perth, WA : 1885-1954)। Perth, WA: National Library of Australia। ৩১ জুলাই ১৯৩০। পৃষ্ঠা 41। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০১১ 
  8. "Harold William Bennetts CBE DVSc 1898–1970" (pdf)Australian Veterinary History Society। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১০-২১ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. The toxic plants of Western Australia, Gardner and Bennetts (1956), p. xxi
  10. Underwood, Eric.J; A.J. Millington (মার্চ ১৯৪৪)। "The influence of time of cutting upon yield"। Journal of Agriculture WA: 35। 
  11. Underwood, Eric.J; R.J. Moir (মার্চ ১৯৪৪)। "The influence of time of cutting upon the chemical composition and digestibility of Wheaten and Oaten hay"। Journal of Agriculture WA: 41। 
  12. Millington, A.J (মার্চ ১৯৪৬)। "Flax and Linseed Breeding in WA"। Journal of Agriculture WA: 39। 
  13. Farmnote No 41/2005[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ] Western Australian Department of Agriculture
  14. "A day in the country at Avondale"Avondale Discovery Farm। ২০০৮-০১-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১৯ 
  15. "Explore the landscape"Avondale Discovery Farm। ২০০৮-০১-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-১২-১৯ 

বহিঃসংযোগ

সম্পাদনা