এক্রোস্টিক কবিতা
এক্রোস্টিক কবিতা যার সব গুলো পঙক্তির আদ্যক্ষর মিলে একটি নাম বা অর্থবোধক শব্দ বা বাক্য তৈরি হয়। যতদূর জানা যায় এক্রোস্টিক কবিতার সুত্রপাত হিব্রু ভাষায়। গঠন অভিনবত্ব ও মৌলিকতার কারণে পরবর্তীতে তা বিভিন্ন ভাষায় চর্চা শুরু হয়। মধ্যযুগে ইতালিতে উদ্ভূত হয়ে ষোড়শ শতাব্দীতে টমাস ওয়াট ও স্যার ফিলিপ সিডনির হাত ধরে ইংরেজি সাহিত্যে প্রবেশ করে এই কবিতা। সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা যার হাত ধরে বাংলা সাহিত্যে আগমন করে সেই কবি মাইকেল মধুসুদন দত্তের হাত ধরেই এক্রোস্টিক কবিতা বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করে ছিলো। তার কবিতাটির সবগুলো পঙক্তির আদ্যক্ষর এক সাথে মিল করলে তার এক বন্ধু গউর দাস বসাক এর নাম হয়। কবি কায়কোবাদ গিরিবালা দেবিকে নিয়ে এ ধরনের কবিতা রচনা করে ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের প্রথম এক্রোস্টিক কাব্যগ্রন্থ মুজিবগাথা। বাঙালি প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত কবি শেখ খলিলুর রহমানের এই এক্রোস্টিক কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। এই গ্রন্থে একশত কবিতা রয়েছে প্রতিটা কবিতার প্রত্যেক লাইনের প্রথম বর্ন মিল করলে শেখ মুজিবুর রহমান হয়। বইটি বাঙালি প্রকাশনী ও রকমারি. কম থেকে খুজে নেয়া যায়। Oxford Dictionary তে Acrostic শব্দের অর্থ ছন্দবদ্ধ ধাঁধা। এক্রোস্টিক কবিতার বাংলায় কোন যথার্থ প্রতিশব্দ পাওয়া যায় না। তবে এই কবিতা নিয়ে হাসান ইমতি বাংলা কবি ও কবিতার ওয়েবসাইটে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও চর্চা করেছেন। তিনি এই কবিতার নাম দিয়েছেন মুখরা কবিতা। এই নাম করনে তিনি যে কারণ দেখিয়েছেন তা হল- এই কবিতার সবগুলো লাইনের অদ্যাক্ষর বা মুখশব্দ মিলে আরেকটি নাম, অর্থবহ শব্দ বা বাক্য হয় যা কবিতার মুল সুরের মতই গুরুত্ববহ, তাই বলা হয় কবিতার প্রতিটি প্রথম বর্ণ এক একটি মুখ যা আরেকটি নাম, অর্থবহ শব্দ বা বাক্য গঠনের হাতিয়ার বলেই এই কবিতার নাম মুখরা কবিতা। মুখরা শব্দটি সাধারণত তেজস্বী রমণীদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যাদের কথার যশ আছে, এই কবিতাও একই সাথে দুটো ভাব ও ভাবনার ছবি আঁকতে পারে বলে মুখরা রমণীদের মতই বক্তব্যবহুল। কবিতাটির ও কবিতার অদ্যাক্ষরের দুটো আলাদা বক্তব্য এই মুখরা কবিতাকে শাশ্বত রমণীর মত রহস্যময় করে তোলে বলে এগুলো মুখরা কবিতা। বাঁধ ভাঙা আওয়াজ ব্লক এ দেবার্নব রায় তার দুটো এক্রোস্টিক কবিতা লিখেছেন। তবে কবি শেখ খলিলুর রহমানের বাংলা সাহিত্যের প্রথম এক্রোস্টিক কাব্যগ্রন্থ মুজিবগাথা' বাংলা এক্রোস্টিক কবিতার এক বিস্ময়কর মাইল ফলক।[১]
উদাহরণ
সম্পাদনামাইকেল মধুসুদন দত্ত গৌরদাস বসাক কে নিয়ে এক্রোস্টিক শ্রেণির কবিতা লিখেন।
গভীর গর্জন সদা করে জলধর,
উথলিল নদ নদী ধরণী উপর।
রমণী রমণ লয়ে, সুখে কেলি করে
দানবাদি দেব যক্ষ সুথিত অস্তরে।
সমীরণ ঘন ঘন ঝন ঝন রব,
বরুণ প্রলয় দেখি প্রবল প্রভাব ।
স্বাধীন হইয়া পাছে পরাধীন হয় ।
কলহ করয়ে কোন মতে শাস্ত নয়।।
এখানে প্রতিটা বাক্যের প্রথম বর্ণকে একত্র করলে মধুসুদনের বাল্যকালের বন্ধু গৌরদাস বসাকের নাম হয়।
শেখ খলিলুর রহমান, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে মুজিবগাথা নামে একটি কাব্যগ্রন্থ লিখেন। এখানের সব কবিতায় এক্রোস্টিক কবিতা। এরকম একটি কবিতা হলো তার নাম বাংলাদেশ
শেখ মুজিব যার অগ্নিঝরা ডাক,
খতম করলো হাজার হাজার পাক।
মুক্ত হলো বাংলাদেশ হারলো পাকিস্তান,
জিতলো সারা বাংলাদেশের সাহশী সন্তান।
বুঝলো সবাই শেখ মুজিবের অমর কৃর্তি বানি,
রচনা হয় নতুন স্বদেশ সোনার বাংলা খানি।
রইলো মুজিব সবার মনে দিক বিজয়ী বীর,
হয়না তাঁহার তুলনা সে গর্ব পৃথিবীর।
মাথায় তাঁহার স্বদেশ প্রীতির রাঙানো আবেশ,
নন্দিত এই মুজিব মনেই সোনার বাংলাদেশ।
জাতির পিতাকে নিয়ে লেখা এক্রোস্টিক এই কবিতার প্রত্যেক লাইনের প্রথম বর্ন মিল করলে "শেখ মুজিবুর রহমান" হয়।
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ gatha, mujib (২০১৭)। mujibgatha। 1/a, puranapolton lan, 3rd flor, rum no:2, polton, dhaka-1000: arif nazrul। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 978-984-92417-6-8।