একেশ্বরবাদের সমালোচনা

একেশ্বরবাদের সমালোচনা সমগ্র ইতিহাসজুড়ে রয়েছে। মার্কিন বাইবেল বিশেষজ্ঞ ও প্রাচীন বিষয়ের উপর ইতিহাসবেত্তা মার্ক এইচ স্মিথ এবিষয়ের উপর বলতে গিয়ে বলেন, একেশ্বরবাদ এমন একটি "সর্বগ্রাসী বিষয়" (ইংরেজি: totalizing discourse) যা সমাজের সমগ্র বিশ্বাস ব্যবস্থার দিককেই ধারণ করে, যার ফলে অন্য বিশ্বাস ব্যবস্থার বহিস্করণ ঘটে।[] অভিযোগকারীরা একেশ্বরবাদকে অজ্ঞতা, নির্যাতন এবং সহিংসতার কারক হিসেবে চিত্রায়িত করেন।

বৈপরীত্য

সম্পাদনা

সংজ্ঞা অনুসারে এবং অর্থভেদে বৃহত্তর একেশ্বরবাদী ধর্ম গুলো এই ঐকমত্যে পৌঁছেছে যে, এক ঈশ্বর মাত্রই সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, দয়ালু এবং পরম ক্ষমা প্রদর্শন কারী। যাই হোক একজন বিশেষজ্ঞ এই বিষয়ের বিরোধিতা করে বলেন, "আমাদের পার্থিব জীবনে আমরা সৃষ্টিব্যবস্থার যা অবস্থা দেখি তার সাথে ঈশ্বরের সংজ্ঞা কখনোই সাদৃশ্যপূর্ণ নয়।"[]

কিছু নারীবাদী বিশেষজ্ঞ একেশ্বরবাদী ধারণাটির সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে এই একেশ্বরবাদী মডেলটি পিতৃতন্ত্র পর্যায়ের সর্বোচ্চ রূপ এবং এ মডেলটিতে যে ঈশ্বরকে আনয়ন করা হয় সেই ঈশ্বর পুরুষ। তাই এই ঈশ্বর কামনা, প্রকৃতি, যৌনতা এবং নারীত্ব সংশ্লিষ্ট প্রতিটা পরিবর্তনকেই বিরোধিতা করে বা খারিজ করে দেয়।[]

এক বিশ্বাসের বলপ্রয়োগ

সম্পাদনা
 
ডেভিড হিউম.

ডেভিড হিউমের ((১৭১১-১৭৭৬) মতে যেহেতু একেশ্বরবাদ; বহুত্ববাদী ঈশ্বরকে স্বীকার করে না, এবং একেশ্বরবাদের মাধ্যমে ব্যক্তি তার বিশ্বাসকে পায়রার খোপের মতো একটি স্থানে আবদ্ধ করে ফেলে; সে কারণে একেশ্বরবাদ বহুইশ্বরবাদের তুলনায় কম সহনশীল[] একই সুরে সুর মিলিয়ে অগাস্ট কোঁৎ বলেছেন, একেশ্বরবাদী ভাবনা তার অনুসারীদেরকে এক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করার প্রতি আবদ্ধ করে। এই কারণে একাধিক দয়ালু সত্তার উপস্থিতি থাকার পক্ষে তারা কোন রকম মতামত বা আস্থা কে আপন করে নিতে পারে না। এধরনের বিশ্বাসের প্রতি তারা শত্রুভাবাপন্ন মানসিকতা পোষণ করে।[] জ্যাকব নেইসার [...] দাবী করেছেন, 'একেশ্বরবাদ অন্য ধর্মকে কম সহ্য করতে পারে।' []

জেমস লাভলক একেশ্বরবাদ এর সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, "এটি শুধুমাত্র সর্বোৎকৃষ্ট স্রষ্টার কথা বলে। এখানে কোন প্রকার বৈচিত্র নেই।" তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলতে গিয়ে বলেন, "এটি দেখে যেন মনে হয় কেউ একজন মহাজাগতিক বৈধ কোন কিছুর সংস্পর্শের মাধ্যমেই চিন্তা করে বা তার প্রতিই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং সে বিস্মিত হওয়ার সহজাত ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে"।[]

একেশ্বরবাদে সহিংসতা

সম্পাদনা

আধুনিক সময়ে, প্রাচীন একেশ্বরবাদী ভাবনাকে সহিংসতার অনুঘটক হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে। একদা ইসরায়েলীরা তাদের একেশ্বরবাদী ভাবনার জন্য বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী ক্যানানাইটিসদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।[]

সারভেপালি রাধাকৃষ্ণাণ সহিংসতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন:

ইতিহাসের পরতে পরতে একেশ্বরবাদ এর কারণে যে সহিংসতা হয়েছে তা রক্তাক্ত অক্ষরে লিপিবদ্ধ করা আছে। এই সহিংসতা প্রথম সূত্রপাত হয়েছিল ইসরাইলিদের ক্যানন এলাকায় সহিংসতার মাধ্যমে। একেশ্বরবাদের পূজারীরা ভিন্ন বিশ্বাস এবং সংস্কৃতির প্রতি প্রতিনিয়ত বিষেদাগার পোষণ করতে থাকে। কোনো কিছুকে বিজয়ের পর, বিজিতের প্রতি সীমাহীন নির্যাতনের বৈধতা তারা ঐশ্বরিক শক্তিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে দিয়ে থাকে। ইসরায়েলীদের এ সহিংস ভাবনা পরবর্তীতে উত্তরাধিকারের মত খ্রিষ্ঠান সম্প্রদায় এবং ইসলামিক সম্প্রদায়ের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে।[]

মসজিদে আকসার ইতিহাস

সম্পাদনা

বার্ট্রান্ড রাসেল এর মতে সাম্প্রতিক ইতিহাসে উইলিয়াম জেমস একেশ্বরবাদী ভাবনাকে জনপ্রিয়করণ করতে গিয়ে যে যুক্তি ব্যবহার করেছেন, তা হলো একেশ্বরবাদী ভাবনার জন্য মানুষ ন্যায়বিরুদ্ধ স্বভাব থেকে দূরে থাকে। তবে রাসেল উদাহরণের মাধ্যমে দেখান রাজনীতিক এবং শিক্ষাবিদেরাই সাধারণ মানুষকে এক ঈশ্বরে বিশ্বাসের পক্ষে চিন্তা করার রসদ যুগিয়েছে। তবে কেওই উইলিয়াম জেমসের নৈতিক বিতর্ক প্রমাণ করতে পারবেন না।[১০]

আরও দেখুন

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Smith, Mark S."The Origins of Biblical Monotheism: Israel's Polytheistic Background and the Ugaritic Texts", (August 2001). p. 11. Oxford University Press. (Google Books).
  2. "Worship as a Hindrance to Self"। ২০০৮-০৭-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-১৯ 
  3. Encyclopedia of religion - Volume 9 - Page 6161, by Lindsay Jones
  4. "David Hume argued that unlike monotheism, polytheism is pluralistic in nature, unbound by doctrine, and therefore far more tolerant than monotheism, which tends to force people to believe in one faith." [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. The Catechism of Positive Religion, page 251
  6. Berchman, Robert M. (২০০৮)। "The Political Foundations of Tolerance in the Greco-Roman Period"। Neusner, Jacob; Chilton, BruceReligious Tolerance in World Religions। Templeton Foundation Press। পৃষ্ঠা 61। আইএসবিএন 9781599471365। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৭-০৩Jacob Neusner suggests that "the logic of monotheism ... yields little basis for tolerating other religions". 
  7. "A Reenchanted World: The Quest for a New Kinship with Nature", by James William Gibson, p. 98, Publisher = Macmillan, Year = 2009
  8. The Curse of Cain: The Violent Legacy of Monotheism আইএসবিএন ৯৭৮-০-২২৬-৭৪১৯৯-৪
  9. "A Primal Perspective on the Philosophy of Religion", by Arvind Sharma, page 29
  10. Is There a God?,(Commissioned by Bertrand Russell, but never published in, Illustrated Magazine, in 1952) "Archived copy"। জুলাই ২০, ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ২০, ২০১৩