ঊষা (পৌরাণিক চরিত্র)

হিন্দু ধর্মানুসারে বাণাসুরের কন্যা এবং অনিরুদ্ধের স্ত্রী

পৌরাণিক মতে ঊষা ছিল প্রাচীণ শোণিতপুরের (বৰ্তমান তেজপুর) রাজা বাণাসুরের কন্যা, শ্ৰীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধর পত্নী ও চিত্ৰলেখার সখী।[]

ঊষা
ঊষা অনিরুদ্ধকে স্বপ্নে দেখছে
গ্রন্থসমূহভাগবত পুরাণ, বিষ্ণুপুরাণ, শিবপুরাণ, মহাভারত
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম
শোণিতপুর (বৰ্তমান আসামের তেজপুর)
মাতাপিতা
দম্পত্য সঙ্গীঅনিরুদ্ধ
সন্তানবজ্র

কিংবদন্তি

সম্পাদনা
 
অনিরুদ্ধ এবং ঊষা একটি জঙ্গলে দাঁড়িয়ে আছে এবং পুকুরে ভাসমান এক জোড়া রাজহাঁস

পুরাণ অনুসারে, ঊষা ছিল প্রাচীন শোণিতপুর (বর্তমান তেজপুর) রাজ্যের শক্তিশালী অসুর রাজা বাণাসুরের পরম রূপবতী কন্যা। বাণাসুর ছিল শিবের এক মহান ভক্ত এবং তার ১০০০টি বাহু ছিল। ঠিক তার বাবার মত ঊষাও শিব ও পার্বতীর ভক্ত ছিল। একবার সে পার্বতীকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে তার স্বামী কে হবে। পার্বতী জবাব দিয়েছিল যে "বৈশাখ মাসে একজন ব্যক্তি তোমার স্বপ্নে হাজির হবে এবং সেই হবে তোমার স্বামী।"[]

একদিন স্বপ্নে এক যুবক রাজকুমারকে দেখে ঊষা তার প্রেমে পড়ে যায়। সেই রাজপুত্রটি ছিল শ্রীকৃষ্ণের নাতি এবং প্রদ্যুম্নের পুত্র অনিরুদ্ধ। ঊষার সখী চিত্রলেখা অতিপ্রাকৃত শক্তির মাধ্যমে অনিরুদ্ধকে দ্বারকা থেকে অপহরণ করে ঊষার কাছে নিয়ে আসে।[]

এটি জানতে পেরে কৃষ্ণ একটি বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে এসে বাণাসুরের রাজ্য শোণিতপুর আক্রমণ করেন। বাণও কৃষ্ণের সেনাবাহিনীকে সমান শক্তিতে আক্রমণ করেছিল, কিন্তু সে শ্রীকৃষ্ণের সামনে শক্তিহীন বোধ করতে শুরু করে। এরপর সে শিবকে তার পক্ষ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছিল। ওই মুহুর্তে শিব কৃষ্ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন কারণ তিনি বাণাসুরকে সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কৃষ্ণ নিজে শিবকে এমন অস্ত্র নিক্ষেপ করেছিলেন যা শিবকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল। এর পর কৃষ্ণ বাণের সহস্র হস্ত এক এক করে কেটে ফেলেছিলেন। কৃষ্ণ সুদর্শনচক্রের নিক্ষেপ করে বাণের মাথা বিচ্ছিন্ন করতে উদ্যত হলে শিব নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন ও কৃষ্ণের নিকটে এসে বাণের জীবন বাঁচাতে বলেন। এর পর কৃষ্ণ বাণকে ক্ষমা করেছিলেন।[]

যুদ্ধের পরে ঊষা অনিরুদ্ধকে বিয়ে করেছিল। পরে সে বজ্র নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেয়। তবে তাকে কখনও কখনও অনিরুদ্ধের প্রথম স্ত্রী রোচনার পুত্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়।[]

পুনর্জন্ম

সম্পাদনা

শিব পুরাণ মতে, ঊষা ও অনিরুদ্ধ পরবর্তী জীবনে বেহুলালখিন্দর রূপে পুনর্জন্ম নিয়েছিল এবং তারা পুনরায় বিবাহ করেছিল।[]

চিত্রশালা

সম্পাদনা

তথ্যসূত্র

সম্পাদনা
  1. Fables and Folk-tales of Assam (ইংরেজি ভাষায়)। Firma KLM। ১৯৯৮। 
  2. Chaturvedi, B. K. (২০১৭-০১-০২)। Vishnu Puran (ইংরেজি ভাষায়)। Diamond Pocket Books Pvt Ltd। আইএসবিএন 978-93-5083-749-8 
  3. Bhagat, Dr S. P. (২০১৬-০৯-১৮)। Shrimad Bhagavata Purana (ইংরেজি ভাষায়)। Lulu Press, Inc। আইএসবিএন 978-1-365-40462-7 [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  4. Bhandari, C. M. (১৯৯৫)। Saving Angkor (ইংরেজি ভাষায়)। White Orchid Press। আইএসবিএন 978-974-89229-4-2 
  5. Dalal, Roshen (২০১৪-০৪-১৮)। Hinduism: An Alphabetical Guide (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। আইএসবিএন 978-81-8475-277-9 
  6. McDaniel, June (২০০৪-০৮-০৫)। Offering Flowers, Feeding Skulls: Popular Goddess Worship in West Bengal (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-029056-6