ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও মুক্তি সংগ্রামের অভ্যুত্থান
(ঊনসত্তরের গণ অভ্যুত্থান থেকে পুনর্নির্দেশিত)
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান হলো পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশের) জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ১৯৬৯ সালের সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ একটি আন্দোলন। ইতিহাসে এটি ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান নামে পরিচিত৷[১] এটি নিপীড়নমূলক সামরিক শাসন, রাজনৈতিক নিপীড়ন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারাবদ্ধ করার প্রতিবাদে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়। সকল গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়৷
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান | |||
---|---|---|---|
১৯৬৮-৬৯ পাকিস্তান বিপ্লব-এর অংশ | |||
তারিখ | জানুয়ারি ১৯৬৯ – মার্চ ১৯৬৯ | ||
অবস্থান | |||
কারণ | কর্তৃত্ববাদ | ||
লক্ষ্য | রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের পদত্যাগ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ছয় দফা | ||
পদ্ধতি | প্রতিবাদ মিছিল | ||
ফলাফল | আইয়ুব খানের পদত্যাগ ইয়াহিয়া খান রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত | ||
পক্ষ | |||
নেতৃত্ব দানকারী | |||
ঘটনাপ্রবাহ
সম্পাদনা- ৪ঠা জানুয়ারি - সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের ঐতিহাসিক ১১ দফা কর্মসূচি পেশ করেন।[২]
- ৭ ও ৮ জানুয়ারি - গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে রাজনৈতিক ঐক্য ডেমোক্রেটিক অ্যাকশন কমিটি বা ড্যাক (DAC) গঠিত হয়।
- ২০ জানুয়ারি - ছাত্রদের মিছিলে গুলিবর্ষনের ঘটনায় নিহত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান।
- ২৪ জানুয়ারি - পুলিশের গুলিতে নিহত হন নবকুমার ইন্সটিটিউটের কিশোর ছাত্র মতিয়ুর রহমান-সহ আরো অনেকে।
- ১৫ ফেব্রুয়ারি - কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে আটক আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অন্যতম আসামী সার্জেন্ট জহুরুল হক কে হত্যা । [৩]
- ১৮ ফেব্রুয়ারি - রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মৌন মিছিলে গুলি চালালে নিহত হন শিক্ষক ড. শামসুজ্জোহা।
- ২২ ফেব্রুয়ারি - আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার এবং বন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দান
- ২৬ ফেব্রুয়ারি - বিরোধী নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার জন্য আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক আহবান করেন। পরবর্তীতে গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলে আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন।
উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের তালিকা
সম্পাদনা- ৮ ডিসেম্বর ১৯৬৮ - নীলক্ষেতে ওয়াবদার কর্মচারী আব্দুল মজিদ ও গুলিস্তানে সাইকেল মিস্ত্রি আবু।
- ৯ ডিসেম্বর ১৯৬৮ - ফৌজদার হাটে শ্রমিক মুসা মিয়া।
- ২৯ ডিসেম্বর ১৯৬৮ - হাতির দিয়ায় কৃষক মিয়া চাঁন, হাসান আলী, চেরাগ আলী এবং শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান।
- ১৮ জানুয়ারি ১৯৬৯ - রূপগঞ্জে ছাত্র হাফিজ আহমেদ।
- ২০ জানুয়ারি ১৯৬৯ - ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্র ও কৃষক সংগঠক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান আসাদ।
- ২৪ জানুয়ারি ১৯৬৯ - সেক্রেটারিয়েটের সামনে ছাত্র মতিয়ুর রহমান মল্লিক[৪],রচ্স্তম আলী ও ময়মনসিংহে ছাত্র আলমগীর মনসুর এবং চট্টগ্রামে শ্রমিক হাসানুজ্জামান ও জানু মিঞা।
- ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৯ - নাখালপাড়ায় গৃহবধু আনোয়ারা বেগম, তেজগাঁতে ছাত্র আব্দুল লতিফ, ধানমণ্ডি এলাকায় চাকুরীজীবি রহিমদাদ।
- ২৬ জানুয়ারি ১৯৬৯ - ঢাকায় শ্রমিক সরল খান, শিমুলিয়া রেলস্টেশনে আনোয়ার আলী, সিদ্দিরগঞ্জে জুলহাস শিকদার।
- ২৭ জানুয়ারি ১৯৬৯ - গৌরিপুরে ছাত্র হারচ্ন আব্দুল আজিজ।
- ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৯ - বরিশালে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র আলাউদ্দিন খান।
- ৩০ জানুয়ারি ১৯৬৯ - জাজিরায় ছাত্র আলাউদ্দীন ও নৌকার মাঝি আব্দুল জব্বার মাঝি
- ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - জলির পাড় ছাত্র মহানন্দ সরকার ছাত্র।
- ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - ঢাকায় শ্রমিক আব্দুল আলী।
- ৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - রাজারগাঁও ছাত্র মজিবর রহমান ও কামাল উদ্দীন আকন্দ।
- ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - নবীনগর, নারায়ণগঞ্জে ছাত্র মাজাহার আহমেদ ও ঢাকা সেনানিবাসে বিমানসেনা সার্জেন্ট জহুরুল হক।
- ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - নাজিরা বাজারে প্রেসকর্মী ইসহাক।
- ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - সোনাদিঘীর পাড়, রাজশাহীতে সিটি কলেজ ছাত্র ও ছাত্রনেতা নূরুল ইসলাম খোকা , রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা ও নাজিরাবাজারে চাকুরীজীবি রহমতুল্লাহ।
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - ঢাকায় শ্রমিক লোকমান, মুজিবুর রহমান, মালিবাগে দর্জি আতাহার খান, হোটেল বয় শামসু আইসক্রীম বিক্রেতা আব্দুল আলী, কাঠমিস্ত্রী আবুল হাশেম, সেনবাগে ছাত্র শামসুল হক এবংখোরশেদ আলম, সেনবাগ- নোয়াখালীতে শ্রমিক হাফিজুর রহমান, আব্দুর রহমান, ছাত্র আবুল কালাম, , কুষ্টিয়ায় চাকুরীজীবি আব্দুর রাজ্জাক।
- ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - ঢাকা সেনানিবাসে মু. দেলওয়ার হোসেন।
- ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - দৌলতপুরে ছাত্র আবদুস সাত্তার, মনিরচ্জ্জামান, নৈশবিদ্যালয়ের ছাত্র ও শ্রমিক মাহতাক আলী, শ্রমিক ইসরাফিল বান্দো, আলতাব, হাবিবুর রহমান,নাসির, লোকনাথ।
- ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ - বরিশালে ছাত্র আলাউদ্দীন, ঢাকায় শ্রমিক আব্দুস সাত্তার।
- ৭ মার্চ ১৯৬৯ - টাঙ্গাইলে ছাত্র বিশ্বনাথ সাহা।
- ৮ মার্চ ১৯৬৯ - শেরপুরে ছাত্র দারোগ আলী।
- ২৩ মার্চ ১৯৬৯ - মানিকগঞ্জে ছাত্র আবদুল কাদের।
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ ডেস্ক, পড়াশোনা (২০২৩-০২-১১)। "আজ ঐতিহাসিক গণ–অভ্যুত্থান দিবস"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১১-১৬।
- ↑ বাংলাদেশ প্রতিcccghhccc((hhদিন ২৪ জানুয়ারি ২০১৫
- ↑ বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান, সম্পাদকঃ সেলিনা হোসেন ও নূরুল ইসলাম, ২য় সংস্করণ, ২০০৩, বাংলা একাডেমী, ঢাকা, পৃ. ১৭২
- ↑ যুগান্তর
আরও পড়ুন
সম্পাদনা- [Tariq Ali, Pakistan : Military Rule or People’s Power, London & New York , 1970]
- মেসবাহ কামাল, আসাদ ও উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, ঢাকা, ১৯৮৬
- লেনিন আজাদ, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান : রাষ্ট্র সমাজ রাজনীতি, ঢাকা, ১৯৯৭।
- বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র (২য় খন্ড) (পটভূমি ১৯০৫-১৯৫৮) নভেম্বর ১৯৮২ ও মার্চ ২০০৪: পৃষ্ঠা-৫২২
- [বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস (১৮৩০-১৯৭১) : ড. মোহাম্মদ হাননান : ১৯৯৯]
- আসাদ থেকে গণঅভ্যুত্থান : মোস্তফা কামাল: এশিয়া পাবলিকেশন্স, ঢাকা : ২০০০ পৃষ্ঠা- ১০৬-১০৮
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস : বায়েজিদ আহমেদ: শেকড় সন্ধানী ফাউন্ডেশন, রাজশাহী: ডিসেম্বর-২০০৫: পৃষ্ঠা-২১৬
বহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- বাংলাদেশের ইতিহাস, ডিসকভারিবাংলাদেশ.কম
- গণঅভ্যুত্থান, বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি