ঊনকোটি
উনাকোটি, যা উত্তর-পূর্বের আংকর বাট নামেও পরিচিত[১] হল একটি ভাস্কর্য প্রতীক এবং প্রাচীন শৈব স্থান যেখানে পাথরে খোদাই করা প্রতিমা এবং দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে।[২] ঊনকোটি শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল "এক কোটির থেকে এক কম"। স্থানীয় কোকবোরোক ভাষায় একে বলা হয় সুব্রাই খুং। এটিকে ২০২২ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের অস্থায়ী তালিকায় রাখা হয়েছিল। এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার কৈলাশহর মহকুমার উনাকোটি জেলার প্রধান পর্যটন স্থান।[৩][৪]
ঊনকোটি | |
---|---|
সুব্রাই খুং | |
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দু ধর্ম |
জেলা | ঊনকোটি |
উৎসব | অশোকষ্টমী উৎসব |
অবস্থান | |
অবস্থান | কৈলাসহর |
রাজ্য | ত্রিপুরা |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২৪°১৯′ উত্তর ৯২°৪′ পূর্ব / ২৪.৩১৭° উত্তর ৯২.০৬৭° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | ভাস্কর্য শিল্প |
সম্পূর্ণ হয় | ৬০০ থেকে ৭০০ CE |
কম্বোডিয়ার আংকর বাট মন্দিরের নামে, উনাকোটিকে "উত্তর-পূর্বের আংকর বাট" বলা হয়। এর ভাস্কর্যগুলি ত্রিপুরার রঘুনন্দন পর্বতশ্রেণীর মধ্যে একটি পাহাড়ে খোদাই করা আছে। জানা যায় যে এখানে নিরানব্বই লাখ নিরানব্বই হাজার নয়শত নিরানব্বইটি (৯৯,৯৯,৯৯৯) মূর্তি পাওয়া গেছে।[৫]
বর্ণনা
সম্পাদনাউনাকোটিতে প্রাপ্ত শিল্পকলা দুই প্রকারের: যথা- পাথরে খোদাই করা মূর্তি এবং পাথরের ছবি।পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা মূর্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জটাধারী শিব এবং ৩০ ফুট উঁচু কালভৈরবের মূর্তি। কেন্দ্রীয় শিবের মাথার পোশাকের প্রতিটি পাশে দুটি পূর্ণ আকারের মহিলা মূর্তি রয়েছে - একটি সিংহের উপর দাঁড়িয়ে থাকা দুর্গা এবং অন্য পাশে আরেকটি নারী মূর্তি। এছাড়াও, নন্দী ষাঁড়ের তিনটি বিশাল মূর্তি মাটিতে অর্ধেক পুঁতিত অবস্থায় পাওয়া যায়। এছাড়া গণেশ, দুর্গা, বিষ্ণু, রাম, রাবণ, হনুমান এবং শিবের বাহন নন্দীর মূর্তি। ঊনকোটির একটি প্রধান দ্রষ্টব্য হল গণেশকুন্ড। কুন্ড সংলগ্ন পাথরের দেওয়ালে দক্ষ হাতে খোদাই করা আছে তিনটি গণেশ মূর্তি। এদের ডান পাশে রয়েছে চতুর্ভুজ বিষ্ণু মূর্তি। ঐতিহাসিকদের মতে, ঊনকোটির অভিনব ভাস্কর্য তৈরী হয়েছিল অষ্টম বা নবম শতাব্দীতে।[৬]
কিংবদন্তি
সম্পাদনাহিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, ভগবান শিব একবার কাশী যাওয়ার পথে এখানে একটি রাত কাটিয়েছিলেন। ৯৯,৯৯,৯৯৯ দেব-দেবী (শিব সহ এক কোটি) তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন। তিনি তার অনুসারীদের সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠে কাশীর দিকে যেতে বলেছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, ভগবান শিব ছাড়া আর কেউ জেগে ওঠেনি। তিনি একা কাশীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করার আগে, অন্যদের উপর অভিশাপ দিয়েছিলেন যে তারা পাথরে পরিণত হবে এবং এভাবেই স্থানটির নাম হয়েছিল ঊনকোটি।[৭]
স্থানীয় আদিবাসীরা বিশ্বাস করেন যে এই মূর্তিগুলির নির্মাতা ছিলেন কাল্লু গুর্জার। তিনি পার্বতীর ভক্ত ছিলেন এবং শিব-পার্বতীর সাথে কৈলাস পর্বতে তাদের বাসস্থানে যেতে চেয়েছিলেন। পার্বতীর পীড়াপীড়িতে, শিব অনিচ্ছায় কাল্লুকে কৈলাসে নিয়ে যেতে রাজি হন, কিন্তু এই শর্তে যে তাকে এক রাতের মধ্যে এক কোটি শিবের মূর্তি তৈরি করতে হবে। কাল্লু তত্ক্ষণাত এই কাজে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যখন ভোর হল, তখন মূর্তিগুলোর মধ্যে "এক কোটির থেকে একটি মূর্তি" (বা ঊনকোটি) কম ছিল। কাল্লুর কাছ থেকে রেহাই পেয়ে, শিব তার এই মূর্তিগুলো উনাকোটিতে রেখে যান এবং এই অজুহাত বানিয়ে হাঁটতে থাকেন।[৮]
অবস্থান
সম্পাদনাঊনকোটি রাজধানী আগরতলা থেকে ১৭৮ কি মি দূরত্বে অবস্থিত। কৈলাসহর হইতে ৮ কি মি দূরে পাহাড়-জঙ্গল ঘেরা রঘুনন্দন পাহাড়ে অবস্থিত।
যাতায়াত ব্যবস্থা
সম্পাদনা- সড়কপথ : সড়কপথে আগরতলা থেকে কৈলাসহর নিয়মিত বাস চলাচল করে।ছোট প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়ে ও যাওয়া যেতে পারে। তাছাড়া ত্রিপুরা পর্যটন দপ্তর ও বাস পরিসেবা দিয়ে থাকেন (প্যাকেজ ব্যবস্থাও আছে)।
- রেলপথ :সরাসরি রেল যোগাযোগ হল কুমারঘাট এবং ধর্মনগরের সাথে,তারপর সেখান থেকে সড়ক যোগে যেতে হবে।
- বিমান ব্যবস্থা :কৈলাসহরে একটি ছোট বিমান বন্দর আছে,তবে বর্তমানে তা বন্ধ আছে।
উৎসব
সম্পাদনাপ্রতি বছর এপ্রিল মাসে অশোকষ্টমী মেলা এখানে উদযাপিত হয়। উৎসবে হাজার হাজার তীর্থযাত্রী আসেন। আরেকটি ছোট উৎসব জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হয়।[৯]
সংরক্ষণ
সম্পাদনাএই স্থানটি শতাব্দীর পর শতাব্দী অবহেলার শিকার হয়েছে যার ফলে শিলা শিল্পের অবক্ষয় এবং যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট হিসাবে গ্রহণ করার পর থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, যদিও যথেষ্ট খনন সহ অনেক কাজ করা বাকি রয়েছে।[১০]
ঊনকোটিকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের অস্থায়ী তালিকায় যুক্ত করা হয়েছিল[১১]
চিত্র সমূহ
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ "Unakoti, the 'Angkor Wat of the North-East', is vying for world heritage tag"। Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১২-১০। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৩।
- ↑ "Unakoti Heritage Site | Unakoti District Website | India" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৩।
- ↑ "All about Tripura's Unakoti, the 'Angkor Wat of the North-East' seeking UNESCO world heritage tag"। The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২২-১২-১২। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৩।
- ↑ "Untitled Page"। ২১ আগস্ট ২০০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Sculptures Of Unakoti: পাহাড়ে ৯৯,৯৯৯,৯৯৯ মূর্তি, ভারতের এই জায়গাটি কি বিশ্ব ঐতিহ্যের ট্যাগ পাবে?"। Aaj Tak বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৩।
- ↑ "Tripura's Unakoti, the Angkor Wat of the Northeast, to compete for UNESCO World Heritage tag"। Times of India Travel (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০১-০৩।
- ↑ "A Mystery from Tripura That You Might Never Have Heard About"। ৬ জুলাই ২০২১।
- ↑ "UNAKOTI: A WONDER IN THE FOREST"।
- ↑ "Tripura: Fairs & Festivals"।
- ↑ "TRIPURAINFOWAY: Tripura's Latest News, Views & IT Portal"। www.tripurainfoway.com।
- ↑ Bureau, The Hindu (২০২২-১২-২০)। "Vadnagar town, Modhera Sun Temple, Unakoti sculptures added to UNESCO's tentative list of World Heritage Sites"। The Hindu (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0971-751X। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-২১।
- ↑ "Unakoti Heritage Site | Unakoti District Website | India" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১১।
- ↑ India, Mystery Of (২০১৫-০১-২০)। "Beautiful stone carvings of Unakoti | Mystery of India" (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১১।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]