উসমান ইবনে তালহা
উসমান ইবনে তালহা (মৃত্যু ৪২ হিজরি) মুহাম্মাদের একজন সাহাবা ছিলেন । জাহিলী যুগ ও ইসলাম পরবর্তী যুগ উভয় সময়েই মক্কার কাবা শরীফের তত্ত্বাবধায়ক ও চাবির রক্ষক ছিলেন উসমান ইবনে তালহা ও তার পূর্বপুরুষ ও বংশধর [১]
উসমান ইবনে তালহা | |
---|---|
ইসলামের সাহাবা | |
জন্ম | বনু আমর শাখা, কুরাইশ বংশ, মক্কা, সৌদি আরব |
মৃত্যু | ৬৬২ খ্রিষ্টাব্দ আজনাদাইনের যুদ্ধ |
যার দ্বারা প্রভাবিত | মুহাম্মাদ |
পিতামাতা |
|
উল্লেখযোগ্য কাজ | কাবা ঘরের রক্ষক ও চাবির তত্ত্বাবধায়ক |
আত্মীয় | তিন চাচা মুসাফি, কিলাব ও হারেস |
নাম ও বংশ পরিচয়
সম্পাদনাউসমান ইবনে তালহার পিতার নাম তালহা ইবন আবী তালহা এবং মাতার নাম উম্মু সাঈদ সালামা। মক্কার কুরাইশ বংশের বনু আমর শাখার সন্তান। উসমান ইবন তালহার পিতা তালহা ও তার তিন ভাই মুসাফি, কিলাব ও হারেস ও তার পিতা তালহা ইবন আবী তালহা ও চাচা উসমান ইবনে আবী তালহা উহুদ যুদ্ধে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হন । তার পিতা আলী এর হাতে নিহত হন । [২]
ইসলাম গ্রহণের পূর্বে
সম্পাদনাউসমান ইবন তালহার ইসলাম পূর্ব জীবন সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়না । তবে একটি ঘটনা জানা যায়, মুসয়াব ইবন উমাইর ইসলাম গ্রহণের পর মক্কার দারুল আরকামে গোপনে নামায আদায় করতেন। একদিন উসমান ইবনে তালহা তা দেখে ফেলেন এবং তার মা ও গোত্রের কানে পৌঁছে দেন। ফলে তারা মুসয়াবকে বন্দী করে তার ওপর নির্যাতন চালায়। [৩] উম্মু সালামা যখন ইসলাম গ্রহণের পর তার কন্যাকে নিয়ে স্বামী আবু সালামা(রা:) এর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য একাকী মদীনার পথে রওয়ানা হলে উসমান ইবন তালহা তাকে সাহায্য করেন এবং তাকে মদিনার উপকন্ঠ কুবার বনী আমর ইবন আউফের পল্লীতে পৌছে দেন । [৪]
ইবন সাদ বর্ণনা করেছেন, কাবার চাবির দায়িত্বে ছিলেন উসমান ইবন তালহা । তিনি প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার কাবার দরজা খুলতেন। একবার রাসূল(সা:) তাকে ভিন্ন এক দিন দরজা খুলে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি অত্যন্ত শক্তভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
ইসলাম গ্রহণ
সম্পাদনাইসলাম গ্রহণের সময় নিয়ে ইতিহাসবিদগণের মধ্যে মতের ভিন্নতা রয়েছে । একটি বর্ণনামতে, উসমান হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় ইসলাম গ্রহণ করেন এবং খালিদ ও আমরের সাথে মদীনায় যান। [৫] অন্য বর্ণনায় দেখা যায়, মক্কা বিজয়ের পূর্বে ৮ম হিজরীর সফর মাসে খালিদ ইবনুল ওয়ালীদ ও আমর ইবনুল আস ও উসমান ইবন তালহা এক সাথে মদিনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন । [৬]। কবি আবদুল্লাহ ইবন যাবয়ারী তাদের স্বাগত জানিয়ে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। [৭]
কাবার চাবির দায়িত্ব
সম্পাদনামক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত কাবার তত্ত্বাবধায়ন ও চাবি রক্ষকের দায়িত্ব ছিলো উসমানের উপর । মক্কা বিজয়ের দিন নবী মুহাম্মাদ কাবার অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য তার নিকট চাবি চাইলেন ।উসমান বাড়ি গিয়ে তার মায়ের নিকট চাবি চাইলে তার মা চাবি দিতে অস্বীকার করলে উসমান জোর করে চাবি নিয়ে আসেন । রাসূল সা: দরজা খুলে কাবার উসমান ইবন তালহাকে সংগে ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পূর্বক কাবা শরীফ থেকে বের হয়ে আসলেন এবং কাবা শরীফের চাবির দায়িত্ব চিরদিনের জন্য উসমান ইবন তালহার গোত্রের উপর অর্পণ করলেন । যদিও এই চাবির দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আলী ও আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব চেষ্টা করেছিলেন ।
রাসূল সা: তার হাতে মতান্তরে উসমান ও তার চাচাতো ভাই শাইবার হাতে চাবিটি দিয়ে বলেছিলেন, "এই তোমার চাবি। এখন থেকে এই চাবি চিরদিনের জন্য তোমাদের হাতে থাকবে। কেউ তোমাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে সে হবে অত্যাচারী" । [৮] সেই থেকে আজও কাবার চাবি দায়িত্ব মক্কার শাইবী গোত্রের উপর । এই শাইবী গোত্র উসমান ইবন তালহার চাচাতো ভাই শাইবা ইবন উসমান ইবন আবী তালহার বংশধর। [৮] মক্কা বিজয়ের পর উসমান ইবন তালহা মদীনায় চলে যান এবং রাসূল মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। মুহাম্মাদের ইনতিকালের পর কাবার চাবি রক্ষকের দায়িত্ব পালনের জন্য আবার মক্কায় ফিরে যান এবং
মৃত্যু
সম্পাদনাতিনি মক্কায় হিজরী ৪২ সনে ইনতিকাল করেন । অন্য একটি বর্ণনামতে তিনি খলীফা হযরত উমারের রা: খিলাফতকালের প্রথম দিকে আজনাদাইনের যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন। [৯]