উইমেন ইন ব্ল্যাক
উম্যান ইন ব্ল্যাক (হিব্রু ভাষায়: נשים בשחור, Nashim BeShahor) হল নারীদের একটি যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন, যার বিশ্বব্যাপী আনুমানিকভাবে ১০,০০০ সক্রিয় কর্মী রয়েছে। প্রথম ইন্টিফাডা আরম্ভের ঠিক পরই, ১৯৮৮ সালে ইসরায়েলের নারীদের সমন্বয়ে জেরুজালেমে এর প্রথম দল গঠিত হয়।[১]
ইতিহাস
সম্পাদনাফিলিস্তিনে ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে ইসরায়েলের সৈন্যদের আচরণকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে মনে করায়, এর ফলশ্রতিতে ঐ নারীরা সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে, কেন্দ্রীয় জেরুজালেমে প্রতি শুক্রবার কালো পোশাক পরিধান করে রাত্রিজাগরণ করেন। প্রথমত গোষ্ঠীটির কোনো নাম ছিল না কিন্তু তাদেরকে তাদের পরিধেয় কালো কাপড় দ্বারা খুব তাড়াতাড়ি চিহ্নিত করা হয়, যা তাদের বিক্ষোভগুলোতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও সাহায্য করে।[২]
উদ্যোগটি দ্রুততার সাথে ইসরায়েলের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং নারীরা তাদের শহরের প্রধান প্রধান চত্বরগুলিতে প্রতি সপ্তাহে কালো কাপড় পরিধান করে দাড়াতে থাকেন। পূর্ব নির্ধারিত ভাবে আন্দোলনে ইসরায়েলের অধিকরণের বিরোধীতা করা ব্যতীত কোনোপ্রকার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় নি। আঞ্চলিক দলগুলো কিছু কিছু সিদ্ধান্ত যেমনঃ নারীদের পাশাপাশি পুরুষরাও আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা তা স্বাধীনভাবে নির্ধারণ করে এবং স্থানভেদে তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখতে পাওয়া যায়।
ইন্টিফাদার চূড়ান্ত সময় পুরো ইসরায়েল জুড়ে ৩০টি বিভিন্ন স্থানে রাত্রিজাগরণ করার মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছিল। ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পর ফিলিস্তিনিদের সাথে শান্তি ফিরে আসবে মনে করে এসকল আন্দোলন দ্রুত হ্রাস পায়, কিন্তু পরবর্তীতে সহিংস কর্মকাণ্ডসমুহ চলতে থাকায় তা আবারো বাড়তে থাকে।
অন্যান্য দেশগুলোতে ইসরায়েলি গোষ্ঠীগুলোর সাথে একাত্ততা দেখানোর মাধ্যমে নিশিপালন করা শুরু হয়, তবে তাতে পরবর্তীকালে অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাবলি জড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য হলো প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়ার উম্যান ইন ব্ল্যাক, যারা ১৯৯০ সালে উগ্র জাতীয়তাবাদ, ঘৃণা আর রক্তপাতের বিরুদ্ধে আন্দোলনে প্রায়শই জাতীয়তাবাদীদের রোষানলের মুখে পড়ত।
ভারতের "উম্যান ইন ব্ল্যাক" হিন্দু মৌলবাদ এবং এর দ্বারা নারীদের উপর নেমে আসা নির্যাতনের বিরোধীতা করে। তাছাড়া "উম্যান ইন ব্ল্যাক" ইটালিতে যুদ্ধ ও সংঘটিত অপরাধ এবং অস্ট্রেলিয়ায় পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করে থাকে।[৩]
যদিও প্রতিটি দল তাদের নিজস্ব লক্ষ্যপুরণের জন্য তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তারা ই-মেইল ও ইন্টারনেট মাধ্যমে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রেখে চলে এবং বার্ষিক সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। তাদের সবচেয়ে প্রচলিত কৌশল হলো বিভিন্ন জনসমাগমের স্থানে একসাথে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা এবং আশপাশের পথচারীরা কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তখনই কথা বলা, যা মাঝেমধ্যে ঝগড়াবিবাদেরও সৃষ্টি করে। উম্যান ইন ব্ল্যাক এর বিরোধী গোষ্ঠী "উম্যান ফর ইসরায়েল'স টুমোরো" নামে পরিচত, যারা সাধারণত সবুজ ক্যাপ পরিধান করে থাকে।
রাজনৈতিক অবস্থান
সম্পাদনাইসরায়েলের বহুসংখ্যক চরম বামপন্থি দলসমূহের মধ্যে উম্যান ইন ব্ল্যাক অন্যতম।[৪]
বিতর্কিত দিক
সম্পাদনামার্কিন সৈন্যদের ব্যঙ্গ ও অসম্মান দেখানোর জন্য একবার যুক্তরাষ্ট্রের উম্যান ইন ব্ল্যাককে অভিযুক্ত করা হয়। অস্টিন, জর্জিয়ায় ২০০৭ সালের অক্টোবর মাসে এথেন্সের ব্যানার-হেরাল্ডে পাঠানো একটি চিঠিতে বলা হয় যে, একজন অজ্ঞাত বেসামরিক ব্যক্তি মার্কিন সেনাবাহিনীর পোশাকে ফ্যাসিবাদী বোতাম লাগিয়ে পরিধান করে, উম্যান ইন ব্ল্যাকের সাথে শান্তির চিহ্ন দেখাচ্ছিলেন।[৫]
অস্টিনের উম্যান ইন ব্ল্যাক, "সেপ্টেম্বর ১১" এর সন্ত্রাসী আক্রমণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তানে করে চলা বোমা হামলার প্রতিবাদে প্রতি সপ্তাহে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিল বলে বলা হয়েছিল।
পুরস্কারসমুহ
সম্পাদনা২০০১ সালে, জাতিসংঘের "ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ফর উম্যান" আন্দোলনটিকে "মিলেনিয়াম পিস প্রাইজ ফর উম্যান" পুরস্কার প্রদান করে। একই সালে, ইসরায়েল ও সার্বিয়ার উম্যান ইন ব্ল্যাক নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়।[৬]
তথ্যসূত্র
সম্পাদনা- ↑ Melanie S. Rich, Kalpana Misra (২০০৩)। Jewish feminism in Israel : some contemporary perspectives। Hanover, NH: Brandeis University Press, Published by University Press of New England। পৃষ্ঠা 114–5। আইএসবিএন 9781584653257।
- ↑ Dale Spender, Cheris Kramarae (২০০৪)। Routledge International Encyclopedia of Women: Global Women's Issues and Knowledge। Routledge। পৃষ্ঠা 1517। আইএসবিএন 9781135963156। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Waller, Marguerite; Rycenga, Jennifer (২০০৪-১১-২৩)। Frontline Feminisms: Women, War, and Resistance (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। আইএসবিএন 9781135954543।
- ↑ Svirsky, Marcelo (২০১৩)। Arab-Jewish Activism in Israel-Palestine। Ashgate Publishing। পৃষ্ঠা 5। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫।
- ↑ Charles A. Jones, Jr.: Peace protesters must respect U.S. soldiers ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ মার্চ ২০০৮ তারিখে Athens Banner-Herald, 3 October 2007
- ↑ Encyclopedia of women in today's world। Thousand Oaks, Calif.: Sage Reference। ২০১১। পৃষ্ঠা 1562–3। আইএসবিএন 9781412976855।