উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শকলি
উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শক্লি (১৯১০-১৯৮৯) একজন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী যিনি ট্রানজিস্টরের যৌথ উদ্ভাবক ও পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে খ্যাতিলাভ করেন।[১] ট্রানজিস্টর একটি ক্ষুদ্র ইলেকট্রনীয় কলকৌশল যা ২০শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আধুনিক সমাজের চেহারা বদলে দেয়। শকলি ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকে নতুন ধরনের নকশার মাধ্যমে ট্রানজিস্টর বাজারজাতকরণ শুরু করেন। তার এই উদ্যোগের মাধ্যমেই মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ব ইলেকট্রনিক্স বাজারে সর্বোচ্চ খ্যাতি অর্জন করে এবং বিশ্বের প্রথম সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। শেষ জীবনে শকলি স্ট্যানফোর্ডে অধ্যাপনা করেন।
উইলিয়াম শকলি | |
---|---|
জন্ম | ফেব্রুয়ারি ১৩, ১৯১০ |
মৃত্যু | আগস্ট ১২, ১৯৮৯ |
মাতৃশিক্ষায়তন | ক্যালটেক এমআইটি |
পরিচিতির কারণ | ট্রানজিস্টরের সহ-উদ্ভাবক |
পুরস্কার | পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯৫৬) |
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন | |
প্রতিষ্ঠানসমূহ | বেল টেলিফোন ল্যাবরেটরিস শকলি সেমিকন্ডাক্টর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় |
ডক্টরাল উপদেষ্টা | জন সি. স্লেটার |
শৈশব ও শিক্ষাজীবন
সম্পাদনাশকলি ১৯১০ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ইংল্যান্ডের লন্ডন শহরে মার্কিন পিতা-মাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা উইলিয়াম হিলম্যান শকলি ছিলেন একজন খনন প্রকৌশলী, আর তার মা মে শকলি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী খনি পরিদর্শকদের একজন ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক। তিন বছর বয়সে তিনি পরিবারের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত এসে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালো অ্যাল্টো শহরে বাস করা শুরু করেন। তিনি ১৯৩২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অভ টেকনোলজি থেকে স্নাতক উপাধি লাভ করেন ও পরবর্তীতে ১৯৩৬ সালে ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অভ টেকনোলজি থেকে অধ্যাপক জে সি স্লেটারের তত্ত্বাবধানে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট উপাধি অর্জন করেন। তার অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল সোডিয়াম ক্লোরাইডের শক্তিব্যান্ডের কাঠামো।
কর্মজীবন
সম্পাদনাশকলি ১৯৩৬ সাল থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত নিউ জার্সিতে অবস্থিত বেল টেলিফোন গবেষণাগারে কাজ করেন। প্রথমে তিনি সংস্থাটিতে কারিগরি কর্মীদলের অংশ হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি রাডার নিয়ে গবেষণা করার সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ সালের মে মাস থেকে তিনি মার্কিন নৌবাহিনীর ডুবোজাহাজ-প্রতিরোধী যুদ্ধ বিষয়ক গবেষক দলের পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি রাডার ব্যবহার করে কী করে আরও সঠিকভাবে বি-২৯ বোমারু যুদ্ধবিমান থেকে বোমা ফেলে লক্ষ্যভেদ করা যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তার গবেষণাকর্মের সাহায্যে মার্কিন বিমানবাহিনী আটলান্টিক মহাসাগরে জার্মান ডুবোজাহাজগুলি শিকারের অনেক বেশি দক্ষতা অর্জন করে। মার্কিন বিমানবাহিনীর জাপানি শহরগুলিতে অগ্নি-বোমাবর্ষণের পেছনে তার গবেষণার কেন্দ্রীয় ভূমিকা ছিল। ১৯৪৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপান আক্রমণের আগে সম্ভাব্য হতাহতের ব্যাপারে যুদ্ধ মন্ত্রণালয় একটি প্রতিবেদন লিখতে বলে। তার প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে মার্কিনীরা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ করে এবং জাপান শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করে।
যুদ্ধের পরে ১৯৪৫ সালে শকলিকে বেল গবেষণাগারের কঠিন অবস্থার পদার্থবিজ্ঞান কর্মসূচিটির পরিচালকের পদ প্রদান করা হয়। সেখানে তিনি স্ট্যানলি মর্গান, জন বারডিন, ওয়াল্টার ব্র্যাটেইন, জেরাল্ড পিয়ারসন, রবার্ট গিবনি ও হিলবার্ট মুরকে নিয়ে একটি গবেষণা দল গঠন করেন, যাদের উদ্দেশ্য ছিল সেসময় বেল দূরালাপনী প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত অনির্ভরযোগ্য কাচের নির্বাত নল ও তড়িৎ-যান্ত্রিক সুইচের একটি কঠিন-অবস্থার বিকল্প খুঁজে বের করা ও অর্ধপরিবাহী পদার্থকে ইলেকট্রনীয় সংকেতের বিবর্ধক ও নিয়ন্ত্রক হিসেবে ব্যবহার করা। অনেক প্রচেষ্টা ও ব্যর্থতার পরে দলটি তাঁদের ফলাফলগুলি ১৯৪৬ সালে একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশ করে। এর এক বছর পরে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে শকলির তত্ত্বাবধানে জন বারডিন ও ওয়াল্টার ব্র্যাটেইন বিন্দু-সংস্পর্শ ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন করেন। এর পরের বছর ১৯৪৮ সালে শকলি এককভাবে বিন্দু-সংস্পর্শ ট্রানজিস্টরের চেয়ে বেশি কার্যকর সংযোগস্থল ট্রানজিস্টর (জাংশন ট্রানজিস্টর) উদ্ভাবন করেন। ট্রানজিস্টর নামটি শকলি, বার্ডিন বা ব্র্যাটেইন রাখেননি। তারা বিন্দু-সংস্পর্শ কঠিন-অবস্থা বিবর্ধক (Point-contact solid state amplifier) নামের পরিবর্তে সংক্ষিপ্ত একটি নাম খুঁজছিলেন। ব্র্যাটেইন বেল গবেষণাগারের আরেক সহযোগী ও বন্ধু জন পিয়ার্সকে নাম নিয়ে এই সমস্যাটির কথা বলার পর পিয়ার্স বলেন যে নির্বাত নলগুলি যেরকম রূপান্তরী পরিবাহিতা (ট্রান্সকন্ডাকটেন্স) প্রদর্শন করে, ঠিক তার প্রতিবিম্ব হিসেবে শকলিদের নতুন বিবর্ধকটি রূপান্তরী রোধ (ট্রান্সরেজিস্টেনস) প্রদর্শন করে। সেসময় আরও কিছু ইলেকট্রনীয় কলকৌশল উদ্ভাবিত হয়েছিল, যেগুলির নামের শেষে -অর প্রত্যয়টি যুক্ত করা হয়, যেমন ভ্যারিস্টর, থার্মিস্টর, ইত্যাদি। তাই পিয়ার্স প্রস্তাব দেন যে কলকৌশলটির নাম "ট্রান্সরেজিস্টর" কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ "ট্রানজিস্টর" রাখা হোক। ব্র্যাটেইন নামটি গ্রহণ করেন ও এভাবেই ট্রানজিস্টর নামটির জন্ম হয়। উল্লেখ্য যে প্রায় একই সময় ১৯৪৮ সালে ইউরোপে ফ্রান্সে কর্মরত দুই জার্মান বিজ্ঞানী হের্বার্ট মাটারে ও হাইনরিখ ভেলকার বিন্দু-সংস্পর্শ কঠিন-অবস্থা বিবর্ধক উদ্ভাবন করেছিলেন ও ট্রানজিস্টর থেকে নিজেদের উদ্ভাবন আলাদা করতে এর নাম রাখেন "ট্রানজিসট্রন"। তবে শকলির জাংশন ট্রানজিস্টর এগুলিকে কার্যকারিতায় ছাড়িয়ে যায়।
জার্মেনিয়াম ও সিলিকন জাতীয় অর্ধপরিবাহী পদার্থগুলিতে ভেজালের উপস্থিতি সেগুলির তড়িৎ পরিবাহিতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। জার্মেনিয়াম ও সিলিকন পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ শক্তিস্তরে ৪টি ইলেকট্রন থাকে। তাই সর্ববহিঃস্থ স্তরে ৫টি ইলেকট্রনবিশিষ্ট পরমাণু যেমন আর্সেনিক পরমাণু যদি ভেজাল হিসেবে উপস্থিত থাকে, তাহলে ভেজালযুক্ত সিলিকন বা জার্মেনিয়ামে একটি অতিরিক্ত ইলেকট্রন যুক্ত হয়, ফলে ঐ সব পদার্থে বিদ্যুৎপ্রবাহ ঋণাত্মক ইলেকট্রন দ্বারা পরিবাহিত হয় এবং বলা হয় যে, এটি এন-প্রকারের পরিবাহিতা (এন-টাইপ, যেখানে এন হল ইংরেজি শব্দ নেগেটিভের সংক্ষিপ্ত রূপ)। উল্টোদিকে যদি সর্ববহিঃস্থ স্তরে ৩টি ইলেকট্রন ধারণকারী বোরন পরমাণুকে ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ঐ ভেজালযুক্ত অর্ধপরিবাহীতে একটি ইলেকট্রন অনুপস্থিত থাকে, অর্থাৎ ধনাত্মক একটি গর্ত তৈরি হয়, যা পার্শ্ববর্তী পরমাণু একটি ইলেকট্রন এসে পূরণ করতে পারে। অন্যভাবে দেখলে ঐ সব পদার্থে ধনাত্মক গর্তগুলির চলনের মাধ্যমে বিদ্যুৎপ্রবাহ পরিবাহিত হয়। এই ধরনের পরিবাহিতাকে ধনাত্মক প্রকার তথা পি-প্রকারের (পি-টাইপ) পরিবাহিতা বলে (যেখানে পি হল ইংরেজি শব্দ পজিটিভের সংক্ষিপ্ত রূপ)। শকলি পি- ও এন-প্রকারের পদার্থ নিয়ে পরীক্ষণ সম্পাদন করে দেখান যে এগুলি একমুখীকারক হিসেবে কাজ করতে পারে। তিনি দুইটি এন-প্রকারের অর্ধপরিবাহী অঞ্চলের মধ্যে এক ফালি পি-প্রকারের অর্ধপরিবাহী অনুপ্রবিষ্ট করে প্রথম সংযোগস্থলীয় ট্রানজিস্টর (জাংশন ট্রানজিস্টর) তৈরি করেন। এই এন-পি-এন জাংশন ট্রানজিস্টরটিকে বিদ্যুৎপ্রবাহ বিবর্ধনে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। ট্রানজিস্টর পরবর্তীতে অপেক্ষাকৃত বৃহদাকার, স্থূল ও কম-দক্ষ নির্বাত নলকে প্রতিস্থাপিত করে ও অতিক্ষুদ্র ইলেকট্রনীয় সামগ্রীর যুগের সূচনা করে।
শকলি তার গবেষক দলের গবেষণা ফলাফলগুলিকে সংকলন ও ব্যাখ্যা করে ১৯৫০ সালে ৫৫৮ পৃষ্ঠার একটি পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল ইলেকট্রনস অ্যান্ড হোলস ইন সেমিকন্ডাকটর্স উইথ অ্যাপ্লিকেশনস টু ট্রানজিস্টর ইলেকট্রনিকস (Electrons and Holes in Semiconductors with Applications to Transistor Electronics, অর্থাৎ "অর্ধপরিবাহী পদার্থগুলিতে ইলেকট্রন ও গর্তসমূহ এবং ট্রানজিস্টর ইলেকট্রনবিজ্ঞানে এগুলির প্রয়োগ")। এই বইটি পরবর্তীতে অর্ধপরিবাহী প্রযুক্তির উপর গবেষণাকর্ম সম্পাদনকারী বিজ্ঞানীদের জন্য একটি পাথেয় হিসেবে কাজ করেছিল। ১৯৫১ সালে বেল গবেষণাগার শকলির উদ্ভাবিত জাংশন ট্রানজিস্টরগুলির বাণিজ্যিক উৎপাদনে সক্ষম হয়। ঐ বছরই শকলিকে মাত্র ৪১ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমিতে সদস্য নির্বাচন করা হয়। পরবর্তী বছরগুলিতে তিনি আরও বহুসংখ্যক পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫২ সালে বেল গবেষণাগার ট্রানজিস্টর প্রযুক্তির উপরে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে, যাতে ৪০টি প্রযুক্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। ঐ সম্মেলনে উপস্থাপিত গবেষণাপত্রগুলিকে দুই খণ্ডে ট্রানজিস্টর টেকনোলজি নামের একটি গ্রন্থে প্রকাশ করা হয়। এই বইটি ছিল প্রথম প্রজন্মের অর্ধপরিবাহী প্রযুক্তি নির্মাতাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আকরগ্রন্থ, তাই এটিকে "বেল মায়ের রান্নার বই" (মাদার বেলস কুকবুক, Mother Bell's Cookbook) ডাকনাম দেয়া হয়। বেল গবেষণাগার ঐ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের উদ্ভাবিত ট্রানজিস্টর প্রযুক্তিটির কৃতিস্বত্ব ব্যবহারের অনুমতিপত্র ২৫ হাজার মার্কিন ডলারের বিনিমিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করে। সমন্বিত বর্তনীর উদ্ভাবক জ্যাক কিলবি, জাপানি সোনি কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মাসারু ইবুকাসহ আরও অনেকেই এই সম্মেলন ও অনুমতিপত্র কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সুবাদে অর্ধপরিবাহী প্রযুক্তিক্ষেত্রে অবদান রাখেন।
১৯৫৪-৫৫ সালে শকলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অস্ত্রব্যবস্থা মূল্যায়ন দলের উপপরিচালক হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তিনি পরিক্রিয়াদি গবেষণাবিদ্যায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখেন ও যুদ্ধ পরিচালনায় পরিসংখ্যানিক কৌশল প্রয়োগ করেন। ১৯৫৬ সালে শকলি ট্রানজিস্টর বিষয়ে গবেষণাকর্মগুলির জন্য বারডিন ও ব্র্যাটেইনের সাথে যৌথভাবে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ঐ বছর তিনি বেল গবেষণাগার ত্যাগ করে ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালো অ্যাল্টো শহরে শকলি ট্রানজিস্টর কর্পোরেশন নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। এটিই ছিল স্যান্টা ক্লারা উপত্যকার ইতিহাসে প্রথম অর্ধপরিবাহী ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এর আগে এ জাতীয় প্রতিষ্ঠান কেবল মার্কিন পূর্ব উপকূলেই প্রতিষ্ঠিত হত। কিন্তু তার এই ব্যবসা সফল হয়নি। শকলি প্রায়শই তার সহযোগীদের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন ও তাদের অপমান করতেন, যে ব্যাপারটিকে এই ব্যর্থতার জন্য আংশিক দায়ী হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু অন্য দিকে শকলির এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিকেই ক্যালিফোর্নিয়ার স্যান্টা ক্লারা উপত্যকার সিলিকন উপত্যকায় রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াটি শুরু করার কৃতিত্ব দেয়া হয়, কেননা যেসব অসাধারণ বিজ্ঞানীকে শকলি তার ব্যবসায় নিযুক্ত করেছিলেন ও পরবর্তীতে মনোমালিন্যের কারণে চাকুরি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন, তারাই পরবর্তীতে ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর ও ইন্টেল কর্পোরেশন নামক জগদ্বিখ্যাত অর্ধপরিবাহী প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলি প্রতিষ্ঠা করেন।
ব্যবসার পাশাপাশি শকলি ১৯৫৮ সাল থেকে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে চাকরি নেন এবং ব্যবসায় নিদারুণ ব্যর্থতার পরে ১৯৬৩ সালে সেখানকার প্রকৌশল বিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে চাকরি পাকাপোক্ত করেন। ১৯৭৪ সালে অবসর গ্রহণের পরে তিনি স্ট্যানফোর্ডে অবসরোত্তর সাম্মানিক (ইমেরিটাস) অধ্যাপক হিসেবে বর্তমান ছিলেন।
বুদ্ধিমত্তা বিষয়ে বিতর্কিত দৃষ্টিভঙ্গি
সম্পাদনা১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ থেকে শকলি প্রমিত বুদ্ধি অভীক্ষা ও বুদ্ধ্যঙ্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বুদ্ধির পার্থক্য করা সম্ভব এবং বুদ্ধিমত্তা মূলত এক ধরনের বংশগত বৈশিষ্ট্য, এই মতামত প্রকাশ করে বিতর্কিত হয়ে ওঠেন। তার মতে কৃষ্ণাঙ্গরা বংশগত কারণে শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় ঐসব পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ করত। এইসব মতের জন্য তিনি ব্যাপকভাবে নিন্দিত হন।
শেষজীবন
সম্পাদনা১৯৮৯ সালে প্যালো অ্যাল্টো শহরে প্রস্থিত গ্রন্থির কর্কটরোগে (প্রোস্টেট ক্যানসার) তার মৃত্যু হয়।
রচনাসমগ্র
সম্পাদনা- Electrons and holes in semiconductors, with applications to transistor electronics, Krieger (১৯৫৬) আইএসবিএন ০-৮৮২৭৫-৩৮২-৭.
- Mechanics Merrill (১৯৬৬).
- Shockley on Eugenics and Race: The Application of Science to the Solution of Human Problems Scott-Townsend (১৯৯২) আইএসবিএন ১-৮৭৮৪৬৫-০৩-১. (রজার পিয়ারসনের সাথে যৌথভাবে)
কৃতিস্বত্ব
সম্পাদনাশকলি ৫০টি কৃতিস্বত্বের অধিকারী।[১]
পুরস্কার ও সম্মাননা
সম্পাদনা- মেডেল অব মেরিট, ১৯৪৬
- মরিস লিবম্যান স্মারক পুরস্কার (Morris Leibmann Memorial Prize), ইনস্টিটিউট অব দ্য রেডিও ইঞ্জিনিয়ার্স, ১৯৫২
- অলিভার ই বাকলি কঠিন অবস্থা পদার্থবিজ্ঞান পুরস্কার (Oliver E. Buckley Solid State Physics Prize), আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি, ১৯৫৩
- পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার, ১৯৫৬
- হলি পদক (Holley Medal), আমেরিকান সোসাইটি অব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স, ১৯৬৩[১]
শকলি সম্বন্ধে রচনাবলী
সম্পাদনা- Joel N. Shurkin; Broken Genius: The Rise and Fall of William Shockley, Creator of the Electronic Age. New York: Palgrave Macmillan. ২০০৬. আইএসবিএন ১-৪০৩৯-৮৮১৫-৩
- Michael Riordan and Lillian Hoddeson; Crystal Fire: The Invention of the Transistor and the Birth of the Information Age. New York: Norton. ১৯৯৭. আইএসবিএন ০-৩৯৩-৩১৮৫১-৬ pbk.
আরও দেখুন
সম্পাদনাতথ্যসূত্র
সম্পাদনাবহিঃসংযোগ
সম্পাদনা- National Academy of Sciences biography
- Nobel biography ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ আগস্ট ২০০৪ তারিখে
- PBS biography
- Time Magazine 100 Biography of William Shockley ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ জুন ২০০৭ তারিখে
- Interview with Shockley biographer Joel Shurkin
- Nobel Lecture
- History of the transistor
- Shockley and Bardeen-Brattain patent disputes
- Series of Slate.com Articles on the controversial sperm bank
- The genius factory
- William Shockley vs. Francis Cress-Welsing (Tony Brown Show, 1974)
- A Shockley website (shockleytransistor.com) has been established, using the company name, to honor Shockley and those who first processed silicon in Silicon Valley.